যেভাবে সময় কাটছে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের by কাজী সুমন
গুলশান-২
এর ৬৯ নম্বর রোড। সুনসান নীরব পরিবেশ। ওই রোডের ১০ নম্বর বাড়িটির নাম
‘গ্রাউন্ড প্রেসিডেন্ট বিকন্ড’। বাড়ির চতুর্থতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। ঠিক একটি বাড়ির পশ্চিমেই
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবন। ফলে ওই রোডের নিরাপত্তাও নিশ্ছিদ্র।
সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা
পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও থাকেন তৎপর। অনেকটা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
বলয়েই নীরবে-নিভৃতে অবসর সময় কাটছে আলোচিত সাবেক এই প্রেসিডেন্টের। একসময়
ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও তিনি এখন বৃত্তের বাইরের মানুষ। অনেকটা
নির্বাসন জীবনযাপন করছেন। রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক কোনো আচার-অনুষ্ঠানে
দেখা যায় না। রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেলেও যোগ দেন না। থাকেন
ছোট ছেলে সোহেল আহমদের ফ্ল্যাটেই।
৮৭ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ভুগছেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে। শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে বাসায় চিকিৎসা করান। প্রয়োজনে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ডাক্তার এসে চেকআপ করে ওষুধপত্র দিয়ে যান। আহারও গ্রহণ করেন খুবই অল্প। বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন ফলের জুস ও তরল জাতীয় খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করেন। ছেলের বউ ও কয়েকজন কাজের লোক তার সেবা-শুশ্রূষা করেন। তবে অসুস্থ হওয়ার আগে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আধাঘণ্টা মর্নিংওয়াক করতেন। ৬৯ নম্বর রোড থেকে হাঁটা শুরু করে দক্ষিণ পাশের ৫৮ নম্বর হয়ে ৬২ নম্বর সড়ক ঘুরে বাসায় ফিরতেন। এসময় তার সঙ্গে একজন স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সদস্য থাকতেন। খুবই ধীরপায়ে এই কয়েকশ’ গজ রাস্তা হাঁটতেন। ওইসময় কোনো পথচারী তাকে সালাম দিলে মাথা নেড়ে উত্তর দিতেন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে তিনি মর্নিংওয়াকে বের না হওয়ায় এসবি’র ওই সদস্য মাঝেমধ্যে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের খোঁজখবর নিতে যান। অবসরের পর সবাই ভেবেছিলেন- লেখালেখি করবেন কিংবা নিজের আত্মজীবনী বের করবেন। কিন্তু সেপথে হাঁটেননি তিনি। ১০ নম্বর ওই বাড়িটির নিরাপত্তা রক্ষী সোহাগ জানান, স্যার অ্যাপার্টমেন্টের চতুর্থতলায় তার ছেলের সঙ্গে থাকেন। অসুস্থ হওয়ার আগে সকাল বেলা নিয়মিত হাঁটতেন। তিনি কারও সঙ্গে দেখাও করেন না এবং কথাও বলেন না। তবে গত তিন মাস ধরে স্যারের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। তাই তিনি এখন আর সকালে হাঁটতে বের হন না। সময় কাটছে বাসাতেই।
দুইবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালনকারী সাহাবুদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১লা জানুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে। পিতা তালুকদার রিসাত আহমদ ছিলেন একজন সমাজসেবী। নেত্রকোনায় প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষে সাহাবুদ্দীন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। প্রথমেই ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন তিনি। ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ১৯৭২ সালের ২০শে জানুয়ারি তাকে হাইকোর্টের বেঞ্চে বিচারক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে হন প্রধান বিচারপতি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে অনেকটা নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায় আসেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯০ সালের ৫ই ডিসেম্বর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলে তাকে ওই পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। পরদিন প্রেসিডেন্ট এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে আস্থাহীনতা দেখা দেয়। পরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনকারী সাহাবুদ্দীন আহমদকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হয়। ১৯৯১ সালের ২৭শে জানুয়ারি তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ২৩শে জুলাই তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সততা ও প্রজ্ঞা দিয়ে দেশের সকল স্তরের মানুষের মন জয় করেন। ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন অতি সাধারণ জীবনযাপন করা এই মানুষটি।
৮৭ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ভুগছেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে। শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে বাসায় চিকিৎসা করান। প্রয়োজনে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ডাক্তার এসে চেকআপ করে ওষুধপত্র দিয়ে যান। আহারও গ্রহণ করেন খুবই অল্প। বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন ফলের জুস ও তরল জাতীয় খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করেন। ছেলের বউ ও কয়েকজন কাজের লোক তার সেবা-শুশ্রূষা করেন। তবে অসুস্থ হওয়ার আগে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আধাঘণ্টা মর্নিংওয়াক করতেন। ৬৯ নম্বর রোড থেকে হাঁটা শুরু করে দক্ষিণ পাশের ৫৮ নম্বর হয়ে ৬২ নম্বর সড়ক ঘুরে বাসায় ফিরতেন। এসময় তার সঙ্গে একজন স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সদস্য থাকতেন। খুবই ধীরপায়ে এই কয়েকশ’ গজ রাস্তা হাঁটতেন। ওইসময় কোনো পথচারী তাকে সালাম দিলে মাথা নেড়ে উত্তর দিতেন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে তিনি মর্নিংওয়াকে বের না হওয়ায় এসবি’র ওই সদস্য মাঝেমধ্যে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের খোঁজখবর নিতে যান। অবসরের পর সবাই ভেবেছিলেন- লেখালেখি করবেন কিংবা নিজের আত্মজীবনী বের করবেন। কিন্তু সেপথে হাঁটেননি তিনি। ১০ নম্বর ওই বাড়িটির নিরাপত্তা রক্ষী সোহাগ জানান, স্যার অ্যাপার্টমেন্টের চতুর্থতলায় তার ছেলের সঙ্গে থাকেন। অসুস্থ হওয়ার আগে সকাল বেলা নিয়মিত হাঁটতেন। তিনি কারও সঙ্গে দেখাও করেন না এবং কথাও বলেন না। তবে গত তিন মাস ধরে স্যারের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। তাই তিনি এখন আর সকালে হাঁটতে বের হন না। সময় কাটছে বাসাতেই।
দুইবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালনকারী সাহাবুদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১লা জানুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে। পিতা তালুকদার রিসাত আহমদ ছিলেন একজন সমাজসেবী। নেত্রকোনায় প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষে সাহাবুদ্দীন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। প্রথমেই ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন তিনি। ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ১৯৭২ সালের ২০শে জানুয়ারি তাকে হাইকোর্টের বেঞ্চে বিচারক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে হন প্রধান বিচারপতি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে অনেকটা নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায় আসেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯০ সালের ৫ই ডিসেম্বর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলে তাকে ওই পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। পরদিন প্রেসিডেন্ট এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে আস্থাহীনতা দেখা দেয়। পরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনকারী সাহাবুদ্দীন আহমদকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হয়। ১৯৯১ সালের ২৭শে জানুয়ারি তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ২৩শে জুলাই তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সততা ও প্রজ্ঞা দিয়ে দেশের সকল স্তরের মানুষের মন জয় করেন। ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন অতি সাধারণ জীবনযাপন করা এই মানুষটি।
No comments