চিঠিতে লেখা সেই নারী কে?
কক্সবাজারে
সাবেক সচিবের মৃত্যু নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। আপাতত নারীঘটিত
ব্যাপারে তার মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে কোন নারী তাকে
মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে তা শনাক্ত করা যায়নি। হোটেল কক্ষ থেকে সচিবের
লেখা ৮ পৃষ্ঠার চিরকুটে তিনি নারীসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেশ কিছু ক্ষোভের কথা
লিখে গেছেন। তিনি লিখেছেন, এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন। আজ না হয় কাল
মরতেই হবে। চিরকুটে সবচেয়ে বেশি লিখা হয়েছে নারী প্রসঙ্গ নিয়ে। লিখেছেন,
নারীর প্রতি সবারই মোহ থাকে। নারীর কারণে অনেক বিখ্যাত লোককেও কারাগারে
যেতে হয়েছে। এ কারণেই আমেরিকার ২১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা একজন গভর্নরকেও
বিদায় নিতে হয়েছে। এমনকি বিল ক্লিনটনের মতো প্রেসিডেন্টকেও বিদায় নিতে
হয়েছে নারীর কারণেই। এসব কারণেই পরিবারের সঙ্গে নারীঘটিত মান-অভিমানের কোনো
বিষয় রয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এ কারণে তিনি পরিবারের
কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছিলেন। সদর মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন
বলেন, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার লুন্তি নোয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন
তিনি। কক্সবাজার এসে হোটেল সি-হেভেন গেস্ট হোম হোটেলটির ১০১ নম্বর কক্ষে
টানা ২৬ দিন অতিবাহিত করেছেন সাবেক এই সচিব। গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি বিকালে
কলাতলীস্থ হোটেল সি-হ্যাভেনের ১০১নং কক্ষ থেকে ওই লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
উদ্ধারের পর কোনো পরিচয় না পাওয়ায় লাশটি ১লা মার্চ বেলা ৩টার দিকে শহরের
ঘোনারপাড়াস্থ বড় কবরস্থানে দাফন করে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। লাশ
দাফনের পর তার কাছে পাওয়া এক মোবাইল নাম্বর থেকে জানা যায় তিনি সাবেক
ভূমিসচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন (৬২)। তিনি
বান্দরবান জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
(রাজস্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বান্দরবান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা
গেছে, মরহুম মো. দেলোয়ার হোসেন ১৯৯৬ সালের ২রা সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৯ সালের
৫ই এপ্রিল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন পার্বত্য বান্দরবান জেলায়। ওসি বলেন, লাশের
সঙ্গে উদ্ধার করা হয় আট পৃষ্ঠার একটি সুসাইড নোট। তবে সেখানে আত্মহত্যার
জন্য কাউকে দায়ী করেননি তিনি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা কক্সবাজার সদর মডেল
থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম বলেন, হোটেল কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে
গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়েছিল। সুইসাইড নোটে শুধু নাম
উল্লেখ ছিল, হোটেলের খাতায় পরিচয় এন্ট্রি নেই। পুলিশ জানায়, অবসরপ্রাপ্ত
সাবেক সচিব ঢাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত সোনা মিয়া। তার ১ ছেলে ২
মেয়ে রয়েছে। তিনি সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার সাভারে সরকারি
কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লোক প্রশাসন কেন্দ্রে। তিনি স্বেচ্ছায়
অবসরপ্রাপ্ত হন। প্রাথমিক অবস্থায় দেখা যায়, গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা
করেন তিনি। তবে কেন আত্মহত্যা করেছেন তা এখনও জানা যায়নি। এ ব্যাপারে হোটেল
সি-হেভেন গেস্টহোমের জিএম শেখ মকবুল আহমদ বলেন, মুরব্বি ২ মাসের জন্য গত
৩রা ফেব্রুয়ারি হোটেলে উঠেন ও ২ মাসের ভাড়া বাবৎ ২৪ হাজার টাকা জমা দেন।
তখন নিজের নাম শাহরিয়ার কামাল বলে জানিয়েছিলেন। এদিকে সাবেক ওই সচিবের
মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার সকালে মোবাইল কোম্পানি টেলিটকে
কর্মরত তার একমাত্র পুত্র রাজিব এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সরকারের একজন ডেপুটি
সেক্রেটারি (ডিএস)-সহ কয়েকজন আত্মীয় কক্সবাজার আসেন। তারা মরহুম সচিব
দেলোয়ার হোসেনের কবর জিয়ারত করেন। আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছেন, তারা নিহতের
মরদেহ নিয়ে যাবেন না।
No comments