সমর্থকদের ধার-কর্জ শোধ করছি : মাশরাফি
প্রশ্ন : কাল রাত্তির থেকে আপনার দুটি ফোনই বন্ধ। বাংলাদেশী সাংবাদিকরাই বলছেন তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না- এমন অবস্থা?
মাশরাফি : কাল রাতে প্রেস কনফারেন্স করলাম তো, যা বলার বলে দিয়েছি। তারপর ফোন বন্ধ করে রেখেছি।
প্রশ্ন : সেটাই তো অবাক লাগছে। গোটা বাংলাদেশ উদ্বেলিত টিমের এশিয়া কাপ ফাইনাল ওঠা নিয়ে। আর আপনি আসল লোক ফোন বন্ধ করে বসে আছেন? ফোন তো লোকে ম্যাচ হারলে বন্ধ করে?
মাশরাফি : আজকের (বৃহস্পতিবার) দিনটা রেস্ট নেয়ার জন্য রেখেছি। তাছাড়া জিতেছি বলে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাব কেন? জীবনে প্রচুর হেরেছি। ইদানীং কিছু ম্যাচ জিতছি। জিনিসগুলো স্বাভাবিকভাবে নেয়াই ভালো।
প্রশ্ন : কী বলছেন, কাল ওইভাবে জেতার পর স্বাভাবিক থাকা সম্ভব নাকি? আপনার টিম তো উইনিং স্ট্রোকে বল বাইরে যেতে না যেতেই মাঠে ঢুকে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল?
মাশরাফি : হ্যাঁ, ওটুকু হয়েছে। ড্রেসিংরুম অবধি খুব হয়ে থাকে। ওই পর্যন্ত। এর বাইরে হোটেলে গিয়ে আর একপ্রস্থ উল্লাস। কেক কাটা এগুলো হয় না। আমরা সব ড্রেসিংরুমেই ফেলে আসি।
প্রশ্ন : ক্রিকেট যেভাবে গোটা বাংলাদেশী সমাজকে এক করে দিয়েছে, এটা দেখে চমৎকৃত লাগছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এসে এই যে তিন ঘণ্টা খেলা দেখছেন এটাও তো আশ্চর্য?
মাশরাফি : হ্যাঁ, উনি আসা মানে একটা দায়িত্ব চেপে যায় যে জিততে হবে।
প্রশ্ন : সেটা তো একটা বাড়তি চাপও যে ওনার সামনে খারাপ খেললে চলবে না?
মাশরাফি : না, চাপ তো নিতেই হবে। চাপ না নিলে চলবে কী করে।
প্রশ্ন : আমি বলতে চাইছিলাম ওই মুহূর্তটা। সাকিব ওরকম বিশ্রী আউট হলেন। উইকেটে মারলেন ব্যাট দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বসে আছেন। আপনার টিম হারের মুখে। আর আপনি গিয়েই দুটি চার মেরে দিলেন। তাও কিনা আমিরকে। এটা করতে তো দম লাগে?
মাশরাফি : আমি ঠিক করে রেখেছিলাম ওভারে একটা বাউন্ডারি মারবই। ওই ওভারে প্রত্যেকটা বল চালাব এটা প্ল্যানই ছিল।
প্রশ্ন : সেটাই তো অবাক লাগছে। তখন আপনার উইকেট যাওয়া মানে তো বিপন্নতা আরও বাড়ত?
মাশরাফি : উপায় ছিল না। পরের ওভার অবধি রেখে দিলে শেষ দুই ওভারে মোটামুটি ২৩ রান করতে হতো। ওই ঝুঁকি নেব কেন? আমি তো পেছনে একজন ব্যাটসম্যান রেখেই দিয়েছিলাম। মিঠুনকে। আমার শুধু দেখার ছিল বল যাতে নষ্ট না করি। আউট তো প্রথম বলেই আউট।
প্রশ্ন : এই যে জাতীয় ক্রিকেট দলকে একাট্টা সমর্থনের জন্য এত মানুষ মিরপুরে জড়ো হচ্ছেন- এসব আগুনে সমর্থকদের সামনে খেলতে কেমন লাগে?
মাশরাফি : আমরা তো ক্রিকেট খেলে আমাদের দেশের জনগণকে কিছু দিতে পারিনি। দিনের পর দিন ওরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তখনও টিমে ভালো প্লেয়ার ছিল। সুমন ছিল। আশরাফুল ছিল। কিন্তু এক-দু’জন ভালো খেলত। টিমটা জিতত না। ২০০৭ ওয়ার্ল্ডকাপের ইন্ডিয়া ম্যাচটা আমরা প্রথম বড় খেলা জিতলাম। ওই ম্যাচটা যতদিন বেঁচে আছি মনে রাখব। কী কী প্লেয়ার ছিল ইন্ডিয়ার- শচীন, রাহুল, কুম্বলে, দাদা। ওই ম্যাচ থেকে আমাদের আত্মবিশ্বাস পাওয়া শুরু। ইদানীং আমরা দেশের মাঠে কিছু জিতছি। বলতে পারেন সমর্থকদের কাছে যে ধার-কর্জ হয়েছিল তার কিছু কিছু শোধ করছি। এবার বিদেশেও ভালো খেলতে হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে আপনার আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু প্রেসবক্সেও আপনি যে সমর্থন পান ভাবা যায় না। আপনার বলের গতি কমে গেছে, নতুন পেসার চাই, এটুকু বলায় দু’দিক দিয়ে সিনিয়র দুই সাংবাদিক ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আপনাকে ঘিরে এই সøেহ অনুরাগের বলয় ভাবাই যায় না। এর রহস্য কী?
মাশরাফি : দেখুন, আমি শচীনের একটা ইন্টারভিউ পড়েছিলাম। যেখানে ও বলেছিল, ভালো ক্রিকেটার তো অনেকেই হতে পারে। সঙ্গে ভালো মানুষ হওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি ওই কথাটা মনে রেখেছি। ক্রিকেট তো ক’দিনের। ভালো মানুষ হিসেবে যেন সবার মনে বেঁচে থাকতে পারি। তাই বলে চোট রয়েছে, সাতবার অপারেশন হয়েছে এই সহানুভূতি নিয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই না। আমার যেন ছোট ছোট অবদান থাকে। হাফিজের উইকেটটা। আমার দুটি বাউন্ডারি। এগুলোও থাকতে হবে।
প্রশ্ন : আপনার ওপর বের হওয়া একটা বইয়ে কিছু কথা পড়ে রীতিমতো অবাক লাগল।
মাশরাফি : যেমন?
প্রশ্ন : যেমন আপনি বলেছেন, ক্রিকেটকে জাতীয়তাবাদের স্তম্ভ হিসেবে দেখাটা আপনি সমর্থন করেন না।
মাশরাফি : আমি নিজের মনের কথা বলেছি। আমি মনে করি, দিনের শেষে খেলাটা একটা বিনোদন। তাও তো ক্রিকেট হল স্পোর্টসের একটা অংশ। পুরো খেলা নয়। সেখানে এত হিরো ওয়ারশিপের দরকার কী?
প্রশ্ন : আপনার চোখে হিরো কারা?
মাশরাফি : সবচেয়ে বড় হিরো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের জন্যই তো আজ স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রয়েছি। আমি ওদের অসম্ভব সম্মান করি। আমি সম্মান করি বৈজ্ঞানিকদের। ওদের এক-একটা আবিষ্কার জাতিকে কত বছর এগিয়ে নিয়ে যায়। আমি সম্মান করি ডাক্তারদের। যারা মানুষের জীবন বাঁচান। এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কী হতে পারে। আমাদের নিয়ে যত নাচানাচিই হোক, আমরা কি কারও জীবন বাঁচাতে পারি?
প্রশ্ন : একটা এত বড় ফাইনালে ওঠার পর আপনার মুখে কথাগুলো সত্যিই ব্যতিক্রমী।
মাশরাফি : আমি ভেতর থেকে বিশ্বাস করি, আমাদের সমর্থন করছেন খুব ভালো। আমার টিম কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই মেয়েটিকেও করুন যে এসএ গেমসে সোনা জিতে সবার অলক্ষ্যে ঢাকা ফিরেছে। আমরা যদি স্পোর্টসের লোক হই তো ওই মেয়েটিও স্পোর্টসেরই লোক। সাপোর্ট জীবনের সব বিভাগে করুন। তাহলেই তো বাংলাদেশ এগোতে পারবে। শুধু ক্রিকেটে পড়ে থেকে কী লাভ!
প্রশ্ন : আপনার ক্যাপ্টেন্সি মডেল নিয়ে সবাই এত উচ্ছ্বসিত। একটু বুঝিয়ে বলবেন মডেলটা ঠিক কী?
মাশরাফি : আমি যখন ক্যাপ্টেন হই তখন ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। বাবার সঙ্গে কথা বলি যে এত চোটাঘাত আর শরীরে সাতটা অপারেশন নিয়ে আমার ক্যাপ্টেন হওয়া আদৌ উচিত কিনা? বাবা বললেন, হয়েই যাও। তুমি পারবে। কিন্তু আমার মনে সেই ভয়। আবার না ইনজুরিতে পড়ি। ভাবলাম কেমন ক্যাপ্টেন হব আমি? মনে হল আমি যেমন আবেগপ্রবণ সৌরভ গাঙ্গুলীর স্টাইলের ক্যাপ্টেন্সিটাই আমাকে স্যুট করবে। ওই যে লর্ডসে জার্সি খোলা, ওটা নিয়ে কত কথা হয়েছে। কিন্তু আবেগ চাই ওটা করার জন্য।
প্রশ্ন : মনে হল আপনার সেই আবেগ আছে?
মাশরাফি : হ্যাঁ। তার পর ঠিক করলাম ড্রেসিংরুমটাকে ঠিক রাখতে হবে। ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবব। একসঙ্গে অনেকটা নয়। আর জুনিয়র-সিনিয়রে কোনো গ্যাপ হতে দেব না। ইউটিউবে অনেক ক্যাপ্টেনের ইন্টারভিউ এই সময় দেখে আমি ক্যাপ্টেন্সি ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করেছি। একটা শো রয়েছে ওখানে, যেখানে ভিভিএস লক্ষ্মণ আর দাদা ৪৫ মিনিট কথা বলেছেন। ওইটা শুনে আমি ঠিক করি ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি কীভাবে এগোব। ম্যাচ হারতে পারি, কিন্তু আবেগটা যেন সত্যিকারের হয়। যেন সব সময় টিম সেরাটা দেয়।
প্রশ্ন : ফাইনালে কী হবে?
মাশরাফি : খুব পরিষ্কারভাবেই ভারত ফেভারিট। এটা তো র্যাংকিংয়ে এক নম্বরের সঙ্গে দশ নম্বরের খেলা। আমাদের অবশ্য কনফিডেন্স আছে ভালো লড়ব। মুস্তাফিজকে মিস করছি। ও থাকলে পাকিস্তান ১০০ করতে পারত না। ও থাকলে ফাইনালে অনেক সুবিধা হতো। তবে লড়ব, যা হওয়ার হবে। আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে।
মাশরাফি : কাল রাতে প্রেস কনফারেন্স করলাম তো, যা বলার বলে দিয়েছি। তারপর ফোন বন্ধ করে রেখেছি।
প্রশ্ন : সেটাই তো অবাক লাগছে। গোটা বাংলাদেশ উদ্বেলিত টিমের এশিয়া কাপ ফাইনাল ওঠা নিয়ে। আর আপনি আসল লোক ফোন বন্ধ করে বসে আছেন? ফোন তো লোকে ম্যাচ হারলে বন্ধ করে?
মাশরাফি : আজকের (বৃহস্পতিবার) দিনটা রেস্ট নেয়ার জন্য রেখেছি। তাছাড়া জিতেছি বলে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাব কেন? জীবনে প্রচুর হেরেছি। ইদানীং কিছু ম্যাচ জিতছি। জিনিসগুলো স্বাভাবিকভাবে নেয়াই ভালো।
প্রশ্ন : কী বলছেন, কাল ওইভাবে জেতার পর স্বাভাবিক থাকা সম্ভব নাকি? আপনার টিম তো উইনিং স্ট্রোকে বল বাইরে যেতে না যেতেই মাঠে ঢুকে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল?
মাশরাফি : হ্যাঁ, ওটুকু হয়েছে। ড্রেসিংরুম অবধি খুব হয়ে থাকে। ওই পর্যন্ত। এর বাইরে হোটেলে গিয়ে আর একপ্রস্থ উল্লাস। কেক কাটা এগুলো হয় না। আমরা সব ড্রেসিংরুমেই ফেলে আসি।
প্রশ্ন : ক্রিকেট যেভাবে গোটা বাংলাদেশী সমাজকে এক করে দিয়েছে, এটা দেখে চমৎকৃত লাগছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এসে এই যে তিন ঘণ্টা খেলা দেখছেন এটাও তো আশ্চর্য?
মাশরাফি : হ্যাঁ, উনি আসা মানে একটা দায়িত্ব চেপে যায় যে জিততে হবে।
প্রশ্ন : সেটা তো একটা বাড়তি চাপও যে ওনার সামনে খারাপ খেললে চলবে না?
মাশরাফি : না, চাপ তো নিতেই হবে। চাপ না নিলে চলবে কী করে।
প্রশ্ন : আমি বলতে চাইছিলাম ওই মুহূর্তটা। সাকিব ওরকম বিশ্রী আউট হলেন। উইকেটে মারলেন ব্যাট দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বসে আছেন। আপনার টিম হারের মুখে। আর আপনি গিয়েই দুটি চার মেরে দিলেন। তাও কিনা আমিরকে। এটা করতে তো দম লাগে?
মাশরাফি : আমি ঠিক করে রেখেছিলাম ওভারে একটা বাউন্ডারি মারবই। ওই ওভারে প্রত্যেকটা বল চালাব এটা প্ল্যানই ছিল।
প্রশ্ন : সেটাই তো অবাক লাগছে। তখন আপনার উইকেট যাওয়া মানে তো বিপন্নতা আরও বাড়ত?
মাশরাফি : উপায় ছিল না। পরের ওভার অবধি রেখে দিলে শেষ দুই ওভারে মোটামুটি ২৩ রান করতে হতো। ওই ঝুঁকি নেব কেন? আমি তো পেছনে একজন ব্যাটসম্যান রেখেই দিয়েছিলাম। মিঠুনকে। আমার শুধু দেখার ছিল বল যাতে নষ্ট না করি। আউট তো প্রথম বলেই আউট।
প্রশ্ন : এই যে জাতীয় ক্রিকেট দলকে একাট্টা সমর্থনের জন্য এত মানুষ মিরপুরে জড়ো হচ্ছেন- এসব আগুনে সমর্থকদের সামনে খেলতে কেমন লাগে?
মাশরাফি : আমরা তো ক্রিকেট খেলে আমাদের দেশের জনগণকে কিছু দিতে পারিনি। দিনের পর দিন ওরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তখনও টিমে ভালো প্লেয়ার ছিল। সুমন ছিল। আশরাফুল ছিল। কিন্তু এক-দু’জন ভালো খেলত। টিমটা জিতত না। ২০০৭ ওয়ার্ল্ডকাপের ইন্ডিয়া ম্যাচটা আমরা প্রথম বড় খেলা জিতলাম। ওই ম্যাচটা যতদিন বেঁচে আছি মনে রাখব। কী কী প্লেয়ার ছিল ইন্ডিয়ার- শচীন, রাহুল, কুম্বলে, দাদা। ওই ম্যাচ থেকে আমাদের আত্মবিশ্বাস পাওয়া শুরু। ইদানীং আমরা দেশের মাঠে কিছু জিতছি। বলতে পারেন সমর্থকদের কাছে যে ধার-কর্জ হয়েছিল তার কিছু কিছু শোধ করছি। এবার বিদেশেও ভালো খেলতে হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে আপনার আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু প্রেসবক্সেও আপনি যে সমর্থন পান ভাবা যায় না। আপনার বলের গতি কমে গেছে, নতুন পেসার চাই, এটুকু বলায় দু’দিক দিয়ে সিনিয়র দুই সাংবাদিক ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আপনাকে ঘিরে এই সøেহ অনুরাগের বলয় ভাবাই যায় না। এর রহস্য কী?
মাশরাফি : দেখুন, আমি শচীনের একটা ইন্টারভিউ পড়েছিলাম। যেখানে ও বলেছিল, ভালো ক্রিকেটার তো অনেকেই হতে পারে। সঙ্গে ভালো মানুষ হওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি ওই কথাটা মনে রেখেছি। ক্রিকেট তো ক’দিনের। ভালো মানুষ হিসেবে যেন সবার মনে বেঁচে থাকতে পারি। তাই বলে চোট রয়েছে, সাতবার অপারেশন হয়েছে এই সহানুভূতি নিয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই না। আমার যেন ছোট ছোট অবদান থাকে। হাফিজের উইকেটটা। আমার দুটি বাউন্ডারি। এগুলোও থাকতে হবে।
প্রশ্ন : আপনার ওপর বের হওয়া একটা বইয়ে কিছু কথা পড়ে রীতিমতো অবাক লাগল।
মাশরাফি : যেমন?
প্রশ্ন : যেমন আপনি বলেছেন, ক্রিকেটকে জাতীয়তাবাদের স্তম্ভ হিসেবে দেখাটা আপনি সমর্থন করেন না।
মাশরাফি : আমি নিজের মনের কথা বলেছি। আমি মনে করি, দিনের শেষে খেলাটা একটা বিনোদন। তাও তো ক্রিকেট হল স্পোর্টসের একটা অংশ। পুরো খেলা নয়। সেখানে এত হিরো ওয়ারশিপের দরকার কী?
প্রশ্ন : আপনার চোখে হিরো কারা?
মাশরাফি : সবচেয়ে বড় হিরো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের জন্যই তো আজ স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রয়েছি। আমি ওদের অসম্ভব সম্মান করি। আমি সম্মান করি বৈজ্ঞানিকদের। ওদের এক-একটা আবিষ্কার জাতিকে কত বছর এগিয়ে নিয়ে যায়। আমি সম্মান করি ডাক্তারদের। যারা মানুষের জীবন বাঁচান। এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কী হতে পারে। আমাদের নিয়ে যত নাচানাচিই হোক, আমরা কি কারও জীবন বাঁচাতে পারি?
প্রশ্ন : একটা এত বড় ফাইনালে ওঠার পর আপনার মুখে কথাগুলো সত্যিই ব্যতিক্রমী।
মাশরাফি : আমি ভেতর থেকে বিশ্বাস করি, আমাদের সমর্থন করছেন খুব ভালো। আমার টিম কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই মেয়েটিকেও করুন যে এসএ গেমসে সোনা জিতে সবার অলক্ষ্যে ঢাকা ফিরেছে। আমরা যদি স্পোর্টসের লোক হই তো ওই মেয়েটিও স্পোর্টসেরই লোক। সাপোর্ট জীবনের সব বিভাগে করুন। তাহলেই তো বাংলাদেশ এগোতে পারবে। শুধু ক্রিকেটে পড়ে থেকে কী লাভ!
প্রশ্ন : আপনার ক্যাপ্টেন্সি মডেল নিয়ে সবাই এত উচ্ছ্বসিত। একটু বুঝিয়ে বলবেন মডেলটা ঠিক কী?
মাশরাফি : আমি যখন ক্যাপ্টেন হই তখন ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। বাবার সঙ্গে কথা বলি যে এত চোটাঘাত আর শরীরে সাতটা অপারেশন নিয়ে আমার ক্যাপ্টেন হওয়া আদৌ উচিত কিনা? বাবা বললেন, হয়েই যাও। তুমি পারবে। কিন্তু আমার মনে সেই ভয়। আবার না ইনজুরিতে পড়ি। ভাবলাম কেমন ক্যাপ্টেন হব আমি? মনে হল আমি যেমন আবেগপ্রবণ সৌরভ গাঙ্গুলীর স্টাইলের ক্যাপ্টেন্সিটাই আমাকে স্যুট করবে। ওই যে লর্ডসে জার্সি খোলা, ওটা নিয়ে কত কথা হয়েছে। কিন্তু আবেগ চাই ওটা করার জন্য।
প্রশ্ন : মনে হল আপনার সেই আবেগ আছে?
মাশরাফি : হ্যাঁ। তার পর ঠিক করলাম ড্রেসিংরুমটাকে ঠিক রাখতে হবে। ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবব। একসঙ্গে অনেকটা নয়। আর জুনিয়র-সিনিয়রে কোনো গ্যাপ হতে দেব না। ইউটিউবে অনেক ক্যাপ্টেনের ইন্টারভিউ এই সময় দেখে আমি ক্যাপ্টেন্সি ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করেছি। একটা শো রয়েছে ওখানে, যেখানে ভিভিএস লক্ষ্মণ আর দাদা ৪৫ মিনিট কথা বলেছেন। ওইটা শুনে আমি ঠিক করি ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি কীভাবে এগোব। ম্যাচ হারতে পারি, কিন্তু আবেগটা যেন সত্যিকারের হয়। যেন সব সময় টিম সেরাটা দেয়।
প্রশ্ন : ফাইনালে কী হবে?
মাশরাফি : খুব পরিষ্কারভাবেই ভারত ফেভারিট। এটা তো র্যাংকিংয়ে এক নম্বরের সঙ্গে দশ নম্বরের খেলা। আমাদের অবশ্য কনফিডেন্স আছে ভালো লড়ব। মুস্তাফিজকে মিস করছি। ও থাকলে পাকিস্তান ১০০ করতে পারত না। ও থাকলে ফাইনালে অনেক সুবিধা হতো। তবে লড়ব, যা হওয়ার হবে। আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে।
No comments