৪৮ গরিব রাষ্ট্র বিপদে
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বিপদে রয়েছে ৪৮টি গরীব রাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তনে নেয়া পরিকল্পনা পূরণে বিশ্বের ৪৮টি গরিব রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে প্রয়োজন হবে মাত্র ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ফান্ড। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ২০২০-২০৩০ সালের মধ্যে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের। ফ্রান্সের প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে এ পরিকল্পনার খসড়া প্রেরণ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ৯৩ বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করবে দরিদ্র দেশগুলো। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর ইনভার্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইইডি) রিপোর্ট অনুসারে, এ পরিকল্পনার আওতায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে বার্ষিক ৫৩.৮ বিলিয়ন ডলার এবং বৈরী আবহাওয়া ও সমুদ্র উত্তাল নিয়ন্ত্রণে ৩৯.৯ বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। আইআইইডির পরিচালক এন্ড্রিউ নর্টন বলেন, ধনী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে প্রদত্ত অর্থ সহায়তার খুব সামান্য অংশই যায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তহবিলে। তিনি আরও বলেন, প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনের মাধ্যমে একটা অবাধ ও কার্যকরী চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অর্থ তহবিল গঠনে সহায়তা দেবে জাতিসংঘ। ইথিওপিয়া, জাম্বিয়া, ইয়েমেন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে খরা, বন্যা, ঝড় ও উপকূলবর্তী জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক ভোগান্তিতে আছে। এসব দেশে অর্থনৈতিক উৎসের অপ্রতুলতা থাকায় বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারছে না। তারপরেও অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশ বিশ্বকে বাঁচানোর প্রত্যয়ে শামিল হওয়ার চেষ্টা করছে। আইআইইডির রিপোর্ট অনুসারে, বুরকিনা ফাসো, জিবুতি ও জাম্বিয়া- এই ৩ দেশ তাদের নিজেদের সীমানার মধ্যে অর্থের উৎস বের করার ব্যাপারে ‘অভূতপূর্ব প্রতিশ্র“তি’ প্রদান করেছেন। জলবায়ু গবেষণায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস! যুক্তরাষ্ট্রসহ মোট ১৯টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ক্লিন এনার্জি রিসার্চে (পরিবেশবান্ধব জ্বালানিবিষয়ক গবেষণা) পাঁচ বছরের জন্য ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি ডলার ব্যয়ের অঙ্গীকার করেছে।
টেকজায়ান্ট মাইক্রোসফটের স্বত্বাধিকারী বিল গেটস ও ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এ সংক্রান্ত গবেষণায় আরও বেশি অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। গবেষণায় তহবিল বাড়ানোর প্রচারণায় নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এ দেশগুলোই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোর পরিচালক ও কার্বন নির্গমনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এ দেশগুলোর প্রযুক্তি ও ব্যবসা খাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিল গেটস, জর্জ সোরস, মেগ হোয়াইটম্যান ও মার্ক জাকারবার্গ, ভারতের রতন টাটা ও মুকেশ আম্বানি এবং চীনের জ্যাক মা পরিবেশবিষয়ক গবেষণার জন্য বাড়তি ব্যয়ের বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। হোয়াইট হাউসের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ব্রিয়ান ডেসি বলেন, ‘এ প্রতিশ্রুতির ফলে বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর প্রতি এ সংকেত পৌঁছাচ্ছে যে পরিবেশের বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং স্বল্প ব্যয়ে তাদের অর্থনীতির ওপর চাপ না ফেলেই এ সমাধান সম্ভব।’ ক্লিন এনার্জি খাতে ব্যয় করার জন্য শিল্পপতিদের নিয়ে গঠিত এ জোটে প্রায় ১৯ সরকার ও ২৮ জন বিশ্ব ধনকুবের থাকবেন। যৌথ এ উদ্যোগটির ওপর থেকে পর্দা উঠবে মিশন ইনোভেটিভের মাধ্যমে। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভারতের প্রদানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এরই মধ্যে ক্লিন এনার্জির গবেষণা ও বাস্তবায়নে তাদের তহবিল দ্বিগুণ করতে সম্মত হয়েছে। এদিকে বিল গেটসসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করবেন।
No comments