সবার জন্য আর্থিক পরিষেবা টাকার চেয়েও বেশি by ম্যাক্সিমা থরেইগিতা সেরুতি
নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন l ছবি: পিআইডি |
জাতিসংঘ
মহাসচিবের ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট-বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে
এখন বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা। আর্থিক
অন্তর্ভুক্তি, আর্থিক পরিষেবা সম্প্রসারণ বিষয়ে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভূমিকা
নিয়ে তাঁর নিবন্ধটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য
প্রকাশ করা হলো।
সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আমি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন
সম্মেলনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্ক যাই। সেখানে বাংলাদেশ এবং আমার নিজের
দেশ, কিংডম অব নেদারল্যান্ডসসহ ১৯৩টি দেশ কর্তৃক একটি সুদূরপ্রসারী নতুন
বিশ্বজনীন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল। এই পরিকল্পনাটি পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য
উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টাগুলোর একটি পরিকল্পনা হিসেবে কাজ করবে। এটা
দারিদ্র্য, ক্ষুধা, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণসহ সুদূরপ্রসারী উদ্বেগগুলোর প্রতি
মনোযোগ দেবে; সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে এবং সব ধরনের
জটিলতার মধ্যে স্বাভাবিক পৃথিবীকে সুরক্ষা প্রদান করবে।
এসব নতুন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ উচ্চাভিলাষী, তবে আমি এর আশা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতিসংঘে একটি সুগভীর বোধ আশাবাদ দেখেছি। আমি এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রতি বিশ্বনেতাদের অঙ্গীকার জোরদার হওয়ার কথা শুনেছিলাম। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে তাঁরা এসব লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। তাকেই চূড়ান্ত মনে করেননি, বরং চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম মনে করেছেন।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি শুধু অর্থের বিষয় নয়, এটি হলো সুযোগের দ্বার অবারিত করার বিষয়। দরিদ্র মানুষকে তাদের অসচ্ছলতা থেকে সুরক্ষা দিতে, ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে এবং চাহিদা অনুযায়ী জীবন গঠন করতে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলে সেগুলো সবার জন্য কার্যকর একটি দীর্ঘস্থায়ী পৃথিবী গঠন করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের স্পেশাল অ্যাডভোকেট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট হিসেবে আমি বহু বছর ধরে আর্থিক পরিষেবায় দরিদ্র মানুষের প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করার জন্য কাজ করছি। এবং এটা খুবই আনন্দদায়ক যে বাংলাদেশের সরকারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতারা বিষয়টিকে আরও স্থিরসংকল্পের সঙ্গে নিয়েছেন।
নেতারা এখন কেন এই উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করছেন? বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্কদের চল্লিশ শতাংশ ২০০ কোটি মানুষ প্রাথমিক আর্থিক পরিষেবাসমূহ ছাড়া বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। তবে বর্তমানে, প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করতে আমাদের রয়েছে এক অভূতপূর্ব সুযোগ, ডিজিটাল ও মোবাইল প্রযুক্তির মতো নানাবিধ উদ্ভাবনী।
আর্থিক পরিষেবাসমূহ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে মানুষের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। ঢাকায় কাজ করেন এমন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক যখন নগদ অর্থের পরিবর্তে তাঁর পে-চেকটি সরাসরি একটি ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করেন, তখন তিনি তাঁর পুরো পারিশ্রমিক পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন এবং সন্তানের শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে নিরাপদে অর্থ আলাদা করে রাখতে পারেন। সাতক্ষীরা জেলার একজন কৃষক যখন তাঁর শস্যের বিমা গ্রহণ করেন, তখন বন্যা বা অন্য কোনো দুর্যোগ তাঁর ফসলের খেত নষ্ট করে ফেললেও তিনি তাঁর পরিবারের মঙ্গলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন। দুবাইয়ে কর্মরত একজন নির্মাণশ্রমিক যখন মাত্রাতিরিক্ত ফি প্রদান ব্যতিরেকেই একটি ডিজিটাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কালাইয়ে তাঁর পরিবারের কাছে নিরাপদে অর্থ প্রেরণ করেন, তখন তাঁর কষ্টার্জিত বেতনটি আরও বেশি খাবার, পোশাক-আশাক এবং তাঁর স্বজনের পেছনে ব্যয় করতে পারেন।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের নবধারা প্রবর্তনের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আছে। আধুনিক ক্ষুদ্রঋণের সূতিকাগার হিসেবে বাংলাদেশ যথার্থ ধারণাটি আবিষ্কার করতে সহায়তা করেছিল। বর্তমানে এটি নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, বিশেষ করে ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবাসমূহের মাধ্যমে। গ্রাহকেরা ভরসা রাখেন এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন, এমন একটি দরিদ্রবান্ধব আর্থিক ব্যবস্থা কীভাবে তৈরি এবং বণ্টন করতে হয়, তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো সফল মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী, বিকাশ।
তবে আর্থিক পরিষেবাসমূহে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করতে বাংলাদেশ আরও কাজ করতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য। কোনো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩৩ শতাংশ পুরুষের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মাত্র ২৫ শতাংশ মহিলার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যে বৈষম্যটি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন ঘটায়। এই পার্থক্যটুকু কমাতে পারলে তা অবশ্যই লিঙ্গ সমতা অর্জনে সাহায্য করবে, যা হলো দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি। তবে, এটি পরিবারের কল্যাণেও সাহায্য করবে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন কোনো মহিলা গৃহস্থালির আয় নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন তিনি এই আয়ের বেশির ভাগ অংশ খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকেন।
আমি সানন্দে বলছি যে বাংলাদেশ সরকার আর্থিক অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জসমূহকে সরাসরি মোকাবিলা করছে এবং এমন পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে, যা দেশটিকে দরিদ্র মানুষের জন্য আর্থিক প্রবেশাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত করার সুযোগ করে দেবে। বর্তমানে দেশটি জাতীয় ব্যাংক মূলনীতির খসড়া প্রস্তুত করছে, যা মোবাইল আর্থিক পরিষেবাগুলোর বাজারকে সুবিন্যস্ত করবে।
জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কার্যকৌশল তৈরির বিষয়েও গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। একটি বিধিবদ্ধ কার্যকৌশল তৈরি করা হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন সম্ভব হয়। বাংলাদেশের একাধিক সরকারি দপ্তর এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হতে পারে, একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নে যৌথ প্রতিশ্রুতি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জটিল কাজে বাড়তি গতি সঞ্চার করতে পারে।
পৃথিবীব্যাপী আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য যে নাগালের মধ্যে রয়েছে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। গত তিন বছরে ৭০ কোটি মানুষ আর্থিক প্রবেশাধিকার পেয়েছে, যা হলো ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এখনো বাইরে থাকা ২০০ কোটি মানুষের কাছে আমরা যেহেতু পৌঁছাতে চাই, তাই বাংলাদেশকে একটি প্রধান দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে অগ্রগতি একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে যা ঘটবে সেটাই অন্যত্র এই কার্যক্রমের গতিধারা ঠিক করবে।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ গ্রহণ করার মাধ্যমে সমতা ও স্থায়িত্বের দূরদৃষ্টির প্রতি বিশ্ব নিজেই অঙ্গীকার করেছে, যার জন্য প্রয়োজন হবে কঠোর পরিশ্রম, সহযোগিতা ও অধ্যবসায়। তবে এই লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হলে আমাদের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন এমন ভিত্তিসমূহকে দ্রুততার সঙ্গে গঠন করতে হবে। ওই সব ভিত্তির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তি।
এটি দেখতে পাওয়া খুবই উৎসাহব্যঞ্জক যে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জে সাড়া দিয়েছে এবং দরিদ্র মানুষের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে আরও গভীর করে তুলতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে জাতিসংঘে ১৯৩টি দেশ উপলব্ধি করেছে যে এভাবেই দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সাধিত হয়—লক্ষ্য থেকে লক্ষ্যে, ধাপে ধাপে। লাখ লাখ বাংলাদেশির প্রভূত উপকার হতে পারে।
এসব নতুন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ উচ্চাভিলাষী, তবে আমি এর আশা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতিসংঘে একটি সুগভীর বোধ আশাবাদ দেখেছি। আমি এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রতি বিশ্বনেতাদের অঙ্গীকার জোরদার হওয়ার কথা শুনেছিলাম। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে তাঁরা এসব লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। তাকেই চূড়ান্ত মনে করেননি, বরং চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম মনে করেছেন।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি শুধু অর্থের বিষয় নয়, এটি হলো সুযোগের দ্বার অবারিত করার বিষয়। দরিদ্র মানুষকে তাদের অসচ্ছলতা থেকে সুরক্ষা দিতে, ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে এবং চাহিদা অনুযায়ী জীবন গঠন করতে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলে সেগুলো সবার জন্য কার্যকর একটি দীর্ঘস্থায়ী পৃথিবী গঠন করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের স্পেশাল অ্যাডভোকেট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট হিসেবে আমি বহু বছর ধরে আর্থিক পরিষেবায় দরিদ্র মানুষের প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করার জন্য কাজ করছি। এবং এটা খুবই আনন্দদায়ক যে বাংলাদেশের সরকারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতারা বিষয়টিকে আরও স্থিরসংকল্পের সঙ্গে নিয়েছেন।
নেতারা এখন কেন এই উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করছেন? বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্কদের চল্লিশ শতাংশ ২০০ কোটি মানুষ প্রাথমিক আর্থিক পরিষেবাসমূহ ছাড়া বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। তবে বর্তমানে, প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করতে আমাদের রয়েছে এক অভূতপূর্ব সুযোগ, ডিজিটাল ও মোবাইল প্রযুক্তির মতো নানাবিধ উদ্ভাবনী।
আর্থিক পরিষেবাসমূহ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে মানুষের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। ঢাকায় কাজ করেন এমন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক যখন নগদ অর্থের পরিবর্তে তাঁর পে-চেকটি সরাসরি একটি ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করেন, তখন তিনি তাঁর পুরো পারিশ্রমিক পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন এবং সন্তানের শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে নিরাপদে অর্থ আলাদা করে রাখতে পারেন। সাতক্ষীরা জেলার একজন কৃষক যখন তাঁর শস্যের বিমা গ্রহণ করেন, তখন বন্যা বা অন্য কোনো দুর্যোগ তাঁর ফসলের খেত নষ্ট করে ফেললেও তিনি তাঁর পরিবারের মঙ্গলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন। দুবাইয়ে কর্মরত একজন নির্মাণশ্রমিক যখন মাত্রাতিরিক্ত ফি প্রদান ব্যতিরেকেই একটি ডিজিটাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কালাইয়ে তাঁর পরিবারের কাছে নিরাপদে অর্থ প্রেরণ করেন, তখন তাঁর কষ্টার্জিত বেতনটি আরও বেশি খাবার, পোশাক-আশাক এবং তাঁর স্বজনের পেছনে ব্যয় করতে পারেন।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের নবধারা প্রবর্তনের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আছে। আধুনিক ক্ষুদ্রঋণের সূতিকাগার হিসেবে বাংলাদেশ যথার্থ ধারণাটি আবিষ্কার করতে সহায়তা করেছিল। বর্তমানে এটি নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, বিশেষ করে ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবাসমূহের মাধ্যমে। গ্রাহকেরা ভরসা রাখেন এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন, এমন একটি দরিদ্রবান্ধব আর্থিক ব্যবস্থা কীভাবে তৈরি এবং বণ্টন করতে হয়, তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো সফল মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী, বিকাশ।
তবে আর্থিক পরিষেবাসমূহে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করতে বাংলাদেশ আরও কাজ করতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য। কোনো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩৩ শতাংশ পুরুষের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মাত্র ২৫ শতাংশ মহিলার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যে বৈষম্যটি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন ঘটায়। এই পার্থক্যটুকু কমাতে পারলে তা অবশ্যই লিঙ্গ সমতা অর্জনে সাহায্য করবে, যা হলো দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি। তবে, এটি পরিবারের কল্যাণেও সাহায্য করবে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন কোনো মহিলা গৃহস্থালির আয় নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন তিনি এই আয়ের বেশির ভাগ অংশ খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকেন।
আমি সানন্দে বলছি যে বাংলাদেশ সরকার আর্থিক অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জসমূহকে সরাসরি মোকাবিলা করছে এবং এমন পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে, যা দেশটিকে দরিদ্র মানুষের জন্য আর্থিক প্রবেশাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত করার সুযোগ করে দেবে। বর্তমানে দেশটি জাতীয় ব্যাংক মূলনীতির খসড়া প্রস্তুত করছে, যা মোবাইল আর্থিক পরিষেবাগুলোর বাজারকে সুবিন্যস্ত করবে।
জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কার্যকৌশল তৈরির বিষয়েও গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। একটি বিধিবদ্ধ কার্যকৌশল তৈরি করা হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন সম্ভব হয়। বাংলাদেশের একাধিক সরকারি দপ্তর এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হতে পারে, একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নে যৌথ প্রতিশ্রুতি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জটিল কাজে বাড়তি গতি সঞ্চার করতে পারে।
পৃথিবীব্যাপী আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য যে নাগালের মধ্যে রয়েছে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। গত তিন বছরে ৭০ কোটি মানুষ আর্থিক প্রবেশাধিকার পেয়েছে, যা হলো ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এখনো বাইরে থাকা ২০০ কোটি মানুষের কাছে আমরা যেহেতু পৌঁছাতে চাই, তাই বাংলাদেশকে একটি প্রধান দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে অগ্রগতি একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে যা ঘটবে সেটাই অন্যত্র এই কার্যক্রমের গতিধারা ঠিক করবে।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ গ্রহণ করার মাধ্যমে সমতা ও স্থায়িত্বের দূরদৃষ্টির প্রতি বিশ্ব নিজেই অঙ্গীকার করেছে, যার জন্য প্রয়োজন হবে কঠোর পরিশ্রম, সহযোগিতা ও অধ্যবসায়। তবে এই লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হলে আমাদের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন এমন ভিত্তিসমূহকে দ্রুততার সঙ্গে গঠন করতে হবে। ওই সব ভিত্তির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তি।
এটি দেখতে পাওয়া খুবই উৎসাহব্যঞ্জক যে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জে সাড়া দিয়েছে এবং দরিদ্র মানুষের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে আরও গভীর করে তুলতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে জাতিসংঘে ১৯৩টি দেশ উপলব্ধি করেছে যে এভাবেই দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সাধিত হয়—লক্ষ্য থেকে লক্ষ্যে, ধাপে ধাপে। লাখ লাখ বাংলাদেশির প্রভূত উপকার হতে পারে।
No comments