১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্লাস্টিক শিল্পনগরী
দেশে প্লাস্টিক খাতের বিকাশে ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন শিল্পনগরী হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ধলেশ্বরী নদীর কাছে ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কের পাশে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় এ শিল্পনগরী স্থাপন করা হচ্ছে। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। জানা গেছে, এ শিল্পনগরীটি গড়ে উঠলে পুরান ঢাকার আশপাশে অপরিকল্পিত ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে ওঠা কারখানাগুলোকে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এটি তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক শিল্পকারখানা রয়েছে। যার অধিকাংশই বেসরকারি মালিকানাধীন। এর মধ্যে ৫০টি বড়, ১ হাজার ৪৮০টি মাঝারি এবং প্রায় ৩ হাজার ৩০টি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে ৮০ শতাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক এবং ক্ষুদ্র কারখানার ৯০ শতাংশই পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। প্লাস্টিক শিল্প দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এ শিল্পের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে সম্ভাবনাময় এ শিল্পের অবদান বহু গুণ বাড়ানো সম্ভব। প্লাস্টিক শিল্পগুলো মূলত বেসরকারি উদ্যোগে বেশিরভাগই অপরিকল্পিত, অপরিসর এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে উঠেছে। এতে পরিবেশগত ভারসাম্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ কারণে এসব শিল্পকে ঢাকা শহরের নিকটবর্তী কোনো পরিবেশসম্মত স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের পর ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে চরগুলগুলিয়া নামক স্থানে শিল্পনগরীটি স্থাপনের জন্য বিসিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি)
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এরপর একনেক সভায় তা অনুমোদন দেয়া হয়নি। ওই সভায় ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণের যৌক্তিকতা ও অধিগ্রহণের বিষয়ে পুনঃপরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ এবং মন্ত্রণালয়ের এডিপি সভায় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য ২৫ একর জমির প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিক শিল্প মালিকরা ১০০ একর জমির ওপর শিল্পনগরীটি স্থাপনের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পমন্ত্রী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ড্যাপের কারণে ইতিপূর্বে কেরানীগঞ্জের চিহ্নিত স্থানটি স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়। এ পর্যায়ে বিসিক নতুনভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার অন্তর্গত বড়বর্তা এলাকায় নতুনভাবে স্থান নির্বাচন করে। সম্ভাব্যতা কমিটি প্রকল্পের আয়তন ৫০ একর করার সুপারিশ করে। কমিটির সুপারিশ ও শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রকল্পটির আকার ৫০ একর ধরে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। গত ২৫ মে প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাব পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে এটির প্রক্রিয়াকরণ সমাপ্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্পশক্তি বিভাগের সদস্য এসএম গোলাম ফারুক বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিল্পনগরীতে ৩৭০টি শিল্প প্লট স্থাপিত হবে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ মহিলা উদ্যোক্তার জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ৩৭০টি প্লটে কমবেশি ৩৬০টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। এসব শিল্প ইউনিটে ১৮ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে, যা দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এসব বিবেচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
No comments