চট্টগ্রামের শুঁটকির সুখ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও
এক সময় চট্টগ্রামে বিয়ে কিংবা নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ‘লাক্ষা শুঁটকি’ ছাড়া আপ্যায়নের কথা চিন্তা করা যেত না। কালের বিবর্তনে সাগরে লাক্ষার আকাল ও অস্বাভাবিক দাম বেড়ে এটি এখন ‘অনেকটা সোনার হরিণ’। তাই সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা না গেলেও ‘লাক্ষা’ শুঁটকি ঠাঁই নিয়েছে বিত্তবানদের ঘরে। কিন্তু লাক্ষা-রূপচাঁদা ছাড়াও আরও অনেক নানা পদের শুঁটকি এখনও চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মুখরোচক সুস্বাদু প্রিয় খাবার।
এই শুঁটকি এখন শুধু চট্টগ্রামের নয়, এর সুখ্যাতি দেশের নানা প্রান্ত ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে রয়েছে এর বেশ কদর। মূলত কর্ণফুলী নদী ও সাগরের বদৌলতেই চট্টগ্রাম শুঁটকির জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। এ কারণে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ছাড়া শুঁটকির বৃহৎ বাজারও গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামে। সাধারণত ভাদ্র মাস থেকে এর মৌসুম শুরু হয়। প্রায় ৬-৭ মাস মৌসুম থাকে। এ সময় শুঁটকি তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে মাছ শুকানো হয়। বর্ষা শুরু হলে আর মাছ শুকানো যায় না। কিন্তু এই শীতেই বেশি বিক্রি হয় নানা পদের এসব শুঁটকি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অর্ডারে আছদগঞ্জে শুঁটকির ঘাটতি দেখা দেয়। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর বাকলিয়া এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে (কর্ণফুলী সেতু এলাকা) ৯১ সালের আগে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী এখানে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি শুরু করেন।
দেখাদেখিতে বর্তমানে শতাধিক মাচানে শুঁটকি তৈরি চলছে। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে শতাধিক টন শুঁটকি নগরীর পাইকারি বাজার আছাদগঞ্জে সরবরাহ করা হয়। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এখানে শুঁটকি তৈরিতে তুলনামূলক খরচ কম পড়ে। নদী ও সাগর থেকে মাছ আহরণ করে সহজ পথে এখানে আনা যায়। বাকলিয়া ছাড়াও পশ্চিম পটিয়ার কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে ইছানগর, ডাঙাচর, জুলধা, কর্ণফুলী মিলে মোট ৯টি চাঙা নিয়ে শুঁটকি পল্লী গড়ে উঠেছে। প্রতি মৌসুমে অন্তত ৮ কোটি টাকার শুঁটকি কর্ণফুলী তীর থেকে সরবরাহ করা হয়। নগরীর বাকলিয়া তীরে শুঁটকি শুকিয়ে বাজারে সরবরাহকারী হরিপদ দাশ জানান, ৯১ সালে ১০-১২ জন ব্যবসায়ী এখানে শুঁটকি তৈরির কাজ শুরু করেন। দেখাদেখিতে বর্তমানে শতাধিক মাচান গড়ে উঠেছে। এসব শুঁটকি নগরীর পাইকারি বাজার আছাদগঞ্জে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, কোনো কিছু (মেডিসিন) ব্যবহার ছাড়াই প্রকৃতির নিয়মে মাছ শুকানো হয়। সূর্য আর রোদের তাপই হচ্ছে বড় ফরমালিন।
No comments