বিচার চাই না, শুভবুদ্ধির উদয় হোক by প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী
দীপনের
শোকাহত বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের উপরিউক্ত বক্তব্য দেশের
বর্তমান পরিস্থিতিতে অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ। গত ৩১ অক্টোবর শনিবার বিকেলে
জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক মালিক ফয়সাল আরেফীন দীপন শাহবাগের নিকটে আজিজ
সুপার মার্কেটে নিজ কার্যালয়ে নৃশংসভাবে খুন হন। একই সময় লালমাটিয়ায় ব্লগার
অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশক শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলা হয় এবং সেখানে
প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে হামলাকারীরা।
তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
দীপনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর প্রথমে টেলিভিশনে দেখতে পাই। একই সময়ে বন্ধুবর মনসুর মুসা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমার ছেলে টেলিফোনে আমাকে একই খবর দেন। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ওই রাতেই আমার স্ত্রীসহ ফজলুল হকের পরিবাগের বাসায় যাই। আমাদের মতো আরো অনেক বন্ধু, সহকর্মী, সুহৃদ শোক জানাতে সেখানে সমবেত হয়েছেন; সবাই বিমর্ষ। আমি ফজলুল হকের পাশেই বসলাম। তিনি তখন আমাদেরকে সেদিনকার দীপন হত্যার পূর্বাপর ঘটনার আংশিক বর্ণনা দিলেন এবং অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে এ কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করলেন। ‘সাংবাদিকদেরকে বলেছি আমি বিচার চাই না, আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ ছেলের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে শোকে মুহ্যমান পিতার এমন প্রতিক্রিয়া, হৃদয়ের এমন আর্তনাদ আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক, আমার কাছে তা ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার। কারণ, আবুল কাশেম ফজলুল হক ছিলেন আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু এবং সহকর্মী। তার চিন্তাচেতনা ও জীবনদর্শনের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম। অতএব, এ ধরনের একজন ব্যক্তির এমন প্রতিক্রিয়া আমার কাছে তাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
দীপনের শ্বশুর অধ্যাপক জালালুর রহমানও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন। তিনি আমার আরেক বন্ধু সহকর্মী এবং নিকট প্রতিবেশী। ঈশা খাঁ রোডে একই বিল্ডিংয়ে আমরা বসবাস করেছি। তার ছেলেমেয়েরা এবং আমার ছেলেরা একই সাথে বেড়ে উঠেছে। অতএব, দীপনের শ্বশুরের পরিবারও আমার খুব কাছের। মোটামুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার একটি অপেক্ষাকৃত নির্মল পরিবেশেই দীপন ও জলি অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে বেড়ে উঠেছিল। কিন্তু কেউ কি কখনো দীপনের এ করুণ পরিণতির কথা ভেবেছিল?
ফজলুল হক ও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের ছাত্র; তিনি পড়তেন বাংলায় আর আমি পড়তাম সমাজবিজ্ঞানে। দু’জনই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। দু’জনই ইস্ট হাউজে থাকতাম। এমএ শেষ বর্ষে একই রুমে থেকেছি। হলের ১৭৬ নম্বর কক্ষটি বলতে গেলে তখন ‘এসএম হল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের’ ঠিকানা ছিল; কারণ আমরা দু’জনই এই সংগঠনের সদস্য ছিলাম এবং তখনকার গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার কারণে স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহির রোষানলে পতিত হয়েছিলাম। সে কাহিনী এখানে অপ্রাসঙ্গিক বিধায় তার বর্ণনা করা থেকে বিরত রইলাম। শুধু বলে রাখতে চাই, আমাদের বন্ধুত্ব ছিল আদর্শভিত্তিক, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ছিল আমাদের অবস্থান। বুদ্ধির মুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতায় ছিলাম অবিচল। ছাত্রজীবন সমাপ্ত করার পর আমরা দু’জনই (কিছুটা সময়ের ব্যবধানে) শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি এবং আমাদের কর্মস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জ্ঞানচর্চার এ পীঠস্থানে বলা যায় যে একসাথেই বিচরণ করেছি এবং প্রায় একই সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। এ নাতিদীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে ফজলুল হকের সাথে সদাসর্বদা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল- এমনটা বলা যাবে না, তবে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। এতে করে আমি বলতে পারি, ছাত্রজীবনে ফজলুল হক যে চিন্তাচেতনার মানুষ ছিলেন, সেখান থেকে তার মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘কঠোর বিচার চাই’র প্রথাগত দাবি তার কাছে মূল্যহীন মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘মামলা করতে হয়, তাই নিয়ম অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা হয়তো আমি রুজু করব, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইন মেনেই মামলা করতে হবে।’ কিন্তু তিনি জানেন, বিচার চাইলেই বিচার পাওয়া যায় না। ন্যায়বিচার নিশ্চিত এখন প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া আসল কথা হলো হত্যা, গুম, খুনের মতো মারাত্মক অপরাধের মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং গুম-খুনের সে কারণ নির্মূলের মধ্যেই এর সমাধান নিহিত আছে। সে পথে না হেঁটে শুধু ‘বিচার চাই’ স্লোগান বিফলে যেতে বাধ্য। তা ছাড়া বর্তমানে এ দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেখানে বিচার দাবি করে লাভ কী? বর্তমান বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটা দেশবাসীর অজানা নয়। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। গণন্ত্রের অনুপস্থিতিতে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অগণতান্ত্রিক সমাজে ‘আইনের শাসনে’র কথা বলা- অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছুই নয়। এহেন পরিস্থিতিতে আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতো একজন সচেতন মানুষ যদি ‘বিচার চাই না’ বলেন, তাহলে কি তাকে দোষ দেয়া যায়? ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’- এটাও তো এ দেশের বাস্তবতা। অনেকেই ফজলুল হকের এ ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন; তাকে অপবাদ দিয়েছেন। তাদের সঙ্কীর্ণ মনমানসিকতার কারণেই আজ এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ফজলুল হক একজন শিক্ষক, একজন সচেতন নাগরিক, চিন্তাশীল মানুষ। এ রাষ্ট্রের কলুষিত রাজনীতির অভিজ্ঞতা তিনি তিলে তিলে সঞ্চয় করেছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন স্বৈরাচারী শাসকদের দাপট, অত্যাচার, নির্যাতন; দেখেছেন বিবাদ, বিভাজনের রাজনীতি; দেখেছেন কিভাবে ছলে বলে কৌশলে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করার প্রয়াস পায়, কী করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করে। এ অভিজ্ঞতার আলোকেই বর্তমান সঙ্কট উত্তরণের জন্য তিনি বিচার দাবি না করে শুভবুদ্ধির উদয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। আবেগতাড়িত হয়ে ফজলুল হক এমন কথা বলেননি; তার উপলব্ধি থেকেই বলেছেন। তিনি যথার্থই অনুধাবন করেছেন যে, বর্তমান সঙ্কটের ধরন রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমঝোতাতেই এর সমাধান নিহিত রয়েছে। আইন, আদালত, পুলিশ বাহিনী দিয়ে এর মূলোৎপাটন সম্ভব নয়।
ইতঃপূর্বে এ ধরনের আরো হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে। ব্লগার অভিজিত হত্যার বিচার কি হয়েছে? তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন প্রবীণ অধ্যাপক ড. অজয় রায় তো ছেলেহত্যার বিচার চেয়েছিলেন? তিনি কি বিচার পেয়েছেন? দেশে অহরহ গুম, খুনের ঘটনা ঘটছে। এর শেষ কোথায়? এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার কি হয়েছে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে জাতি আজ আক্রান্ত। আবার বিচার যদি ন্যায়বিচার না হয়, তাহলে সে বিচার হয় অর্থহীন। পক্ষপাতদূষ্ট বিচার সমাজের ক্ষত আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই ফজলুল হকের মতো অনেকেই মনে করেন, শুধু আইনের বিচারে এ ধরনের সম্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।
বিবদমান সব পক্ষের সমঝোতার জন্য শুভবুদ্ধির উদয়ের প্রয়োজন। তা হলেই সমস্যার সমাধান হবে। বিচার, পুলিশ ও আইন-আদালত দিয়ে তো একজনকে শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু তাতে জাতীয় উন্নতি সম্ভব না। বর্তমান সমস্যা রাজনৈতিকভাবে আগে সমাধান করতে হবে। সেই সাথে নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা। যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা না যায়, শুধু আইনগত ব্যবস্থা দিয়ে এটি সমাধান করা যাবে না। অপরাধ বিজ্ঞানীরা অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অপরাধের সঠিক কারণ নির্ণয় করতে না পারলে অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। শুধু লোক দেখানো কোনো প্রকার শাস্তি দিয়ে অপরাধ দমন সম্ভব নয়। নৃশংস খুনের মতো বড় অপরাধের একটি প্রধান কারণ আজকের বিরাজমান অনৈক্য, বিভাজন ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ। ফজলুল হক সম্ভবত এর প্রতি এ সময়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। জাতি আজ বিভক্ত। জাতীয় ঐক্য সম্পূর্ণ বিনষ্ট। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে আজো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিভেদ-বিদ্বেষ, হিংসা-প্রতিহিংসা ক্রমেই বেড়ে চলছে। ফজলুল হক এ অবস্থার নিরসন চেয়েছেন। তাই তিনি উচ্চারণ করেছেন- ‘যারা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, উভয় পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ এ দেশের সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের উপলব্ধিও একই ধরনের। যেসব শক্তি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, দেশের উন্নতি ও শান্তি চায় এবং গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী, সেসব শক্তির মধ্যে সমঝোতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক রেষারেষি, হিংসা-প্রতিহিংসা পরিহারের প্রয়োজন। এই বিভাজন ও অনৈক্য পরিহারের জন্য ফজলুল হক ‘শুভবুদ্ধির উদয়ে’র জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, আজ রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘শুভবুদ্ধির’র উদয়। কেবল শুভবুদ্ধিই সব অশুভকে বিনাশ ও ধ্বংস করতে পারে। শুভবুদ্ধির উন্মেষের জন্য প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে পারেন।
আজকের সমাজ ও রাষ্ট্রে অশুভ শক্তির যে উত্থান ও আক্রমণ, তাতে করে মানুষের জীবন সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত। অশুভ ও শুভ শক্তির দ্বন্দ্ব চিরন্তন। শুভকে পরাজিত করে অশুভ শক্তি প্রাধান্য বিস্তার করলে সমাজে দেখা দেয় অস্থিরতা, নৈরাজ্য- যা ডেকে আনে ধ্বংস। আর অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির জয় হলে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবতা, বিকশিত হয় সুন্দর; ধ্বংসের বিপরীতে শুরু হয় সৃষ্টি। এরই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক সমাজ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বাংলাদেশেও আমরা অশুভ শক্তির পরাজয় কামনা করি। আমরা চাই সব কিছুতে ‘শুভ’র বিজয় অর্জিত হোক। তা হলেই কেবল আমরা মুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারব। তাই ফজলুল হকের কথার প্রতিধ্বনি করে বলতে চাই- সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
শুভবুদ্ধির উদয়ের জন্য সমাজে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারেন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশাজীবী। এক কথায়, যাদেরকে বলা হয় বুদ্ধিজীবী। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ অশুভ শক্তির পক্ষে কাজ করছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলই এদের প্রধান লক্ষ্য। হীন স্বার্থ চরিতার্থের জন্য এরা অশুভ শক্তির পদলেহনে মত্ত। শাসকের মনোরঞ্জন ও স্তুতিতে এরা দক্ষ ও পটু। পদ-পদবির লোভে তারা নানাভাবে ক্ষমতাবান ও শক্তিধরকে তুষ্ট রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। দালালি ও পদলেহনের প্রতিযোগিতায় যারা অগ্রগামী থাকেন তারা অশুভ শক্তিধরের নৈকট্য লাভ করেন এবং বড় বড় পদবি ও পুরষ্কার লাভ করেন। এ প্রতিযোগিতায় যারা পেছনে থাকেন তারাও ছিটেফোঁটা হালুয়া-রুটি ও ছোটখাটো আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হন না। এরূপ পরিস্থিতিতেও ন্যায় ও সত্যের পূজারি স্বল্পসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে শুভশক্তির পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। শত নিপীড়ন ও নির্যাতনকে উপেক্ষা করে তারা তাদের বিশ্বাসে অবিচল থাকেন। সর্বকালে, সর্বসমাজে এই উদাহরণের প্রমাণ মেলে। মানবেতিহাসে চাটুকার ও দালাল বুদ্ধিজীবীদের অনৈতিক কার্যকলাপের যেমন প্রমাণ পাওয়া যায়- তেমনি নির্লোভ ও ত্যাগী বুদ্ধিজীবীদের ন্যায় ও শুভশক্তির পক্ষে অবস্থানের কাহিনীও লিপিবদ্ধ আছে। আমাদের অবস্থান শুভশক্তির পক্ষে হোক। কামনা করি, সংশ্লিষ্ট সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তা হলে হয়তো ছেলেহারা বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন এবং নিহত দীপনের আত্মাও শান্তি লাভ করবে।
দীপনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর প্রথমে টেলিভিশনে দেখতে পাই। একই সময়ে বন্ধুবর মনসুর মুসা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমার ছেলে টেলিফোনে আমাকে একই খবর দেন। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ওই রাতেই আমার স্ত্রীসহ ফজলুল হকের পরিবাগের বাসায় যাই। আমাদের মতো আরো অনেক বন্ধু, সহকর্মী, সুহৃদ শোক জানাতে সেখানে সমবেত হয়েছেন; সবাই বিমর্ষ। আমি ফজলুল হকের পাশেই বসলাম। তিনি তখন আমাদেরকে সেদিনকার দীপন হত্যার পূর্বাপর ঘটনার আংশিক বর্ণনা দিলেন এবং অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে এ কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করলেন। ‘সাংবাদিকদেরকে বলেছি আমি বিচার চাই না, আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ ছেলের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে শোকে মুহ্যমান পিতার এমন প্রতিক্রিয়া, হৃদয়ের এমন আর্তনাদ আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক, আমার কাছে তা ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার। কারণ, আবুল কাশেম ফজলুল হক ছিলেন আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু এবং সহকর্মী। তার চিন্তাচেতনা ও জীবনদর্শনের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম। অতএব, এ ধরনের একজন ব্যক্তির এমন প্রতিক্রিয়া আমার কাছে তাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
দীপনের শ্বশুর অধ্যাপক জালালুর রহমানও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন। তিনি আমার আরেক বন্ধু সহকর্মী এবং নিকট প্রতিবেশী। ঈশা খাঁ রোডে একই বিল্ডিংয়ে আমরা বসবাস করেছি। তার ছেলেমেয়েরা এবং আমার ছেলেরা একই সাথে বেড়ে উঠেছে। অতএব, দীপনের শ্বশুরের পরিবারও আমার খুব কাছের। মোটামুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার একটি অপেক্ষাকৃত নির্মল পরিবেশেই দীপন ও জলি অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে বেড়ে উঠেছিল। কিন্তু কেউ কি কখনো দীপনের এ করুণ পরিণতির কথা ভেবেছিল?
ফজলুল হক ও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের ছাত্র; তিনি পড়তেন বাংলায় আর আমি পড়তাম সমাজবিজ্ঞানে। দু’জনই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। দু’জনই ইস্ট হাউজে থাকতাম। এমএ শেষ বর্ষে একই রুমে থেকেছি। হলের ১৭৬ নম্বর কক্ষটি বলতে গেলে তখন ‘এসএম হল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের’ ঠিকানা ছিল; কারণ আমরা দু’জনই এই সংগঠনের সদস্য ছিলাম এবং তখনকার গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার কারণে স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহির রোষানলে পতিত হয়েছিলাম। সে কাহিনী এখানে অপ্রাসঙ্গিক বিধায় তার বর্ণনা করা থেকে বিরত রইলাম। শুধু বলে রাখতে চাই, আমাদের বন্ধুত্ব ছিল আদর্শভিত্তিক, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ছিল আমাদের অবস্থান। বুদ্ধির মুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতায় ছিলাম অবিচল। ছাত্রজীবন সমাপ্ত করার পর আমরা দু’জনই (কিছুটা সময়ের ব্যবধানে) শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি এবং আমাদের কর্মস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জ্ঞানচর্চার এ পীঠস্থানে বলা যায় যে একসাথেই বিচরণ করেছি এবং প্রায় একই সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। এ নাতিদীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে ফজলুল হকের সাথে সদাসর্বদা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল- এমনটা বলা যাবে না, তবে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। এতে করে আমি বলতে পারি, ছাত্রজীবনে ফজলুল হক যে চিন্তাচেতনার মানুষ ছিলেন, সেখান থেকে তার মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘কঠোর বিচার চাই’র প্রথাগত দাবি তার কাছে মূল্যহীন মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘মামলা করতে হয়, তাই নিয়ম অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা হয়তো আমি রুজু করব, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইন মেনেই মামলা করতে হবে।’ কিন্তু তিনি জানেন, বিচার চাইলেই বিচার পাওয়া যায় না। ন্যায়বিচার নিশ্চিত এখন প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া আসল কথা হলো হত্যা, গুম, খুনের মতো মারাত্মক অপরাধের মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং গুম-খুনের সে কারণ নির্মূলের মধ্যেই এর সমাধান নিহিত আছে। সে পথে না হেঁটে শুধু ‘বিচার চাই’ স্লোগান বিফলে যেতে বাধ্য। তা ছাড়া বর্তমানে এ দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেখানে বিচার দাবি করে লাভ কী? বর্তমান বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটা দেশবাসীর অজানা নয়। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। গণন্ত্রের অনুপস্থিতিতে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অগণতান্ত্রিক সমাজে ‘আইনের শাসনে’র কথা বলা- অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছুই নয়। এহেন পরিস্থিতিতে আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতো একজন সচেতন মানুষ যদি ‘বিচার চাই না’ বলেন, তাহলে কি তাকে দোষ দেয়া যায়? ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’- এটাও তো এ দেশের বাস্তবতা। অনেকেই ফজলুল হকের এ ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন; তাকে অপবাদ দিয়েছেন। তাদের সঙ্কীর্ণ মনমানসিকতার কারণেই আজ এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ফজলুল হক একজন শিক্ষক, একজন সচেতন নাগরিক, চিন্তাশীল মানুষ। এ রাষ্ট্রের কলুষিত রাজনীতির অভিজ্ঞতা তিনি তিলে তিলে সঞ্চয় করেছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন স্বৈরাচারী শাসকদের দাপট, অত্যাচার, নির্যাতন; দেখেছেন বিবাদ, বিভাজনের রাজনীতি; দেখেছেন কিভাবে ছলে বলে কৌশলে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করার প্রয়াস পায়, কী করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করে। এ অভিজ্ঞতার আলোকেই বর্তমান সঙ্কট উত্তরণের জন্য তিনি বিচার দাবি না করে শুভবুদ্ধির উদয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। আবেগতাড়িত হয়ে ফজলুল হক এমন কথা বলেননি; তার উপলব্ধি থেকেই বলেছেন। তিনি যথার্থই অনুধাবন করেছেন যে, বর্তমান সঙ্কটের ধরন রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমঝোতাতেই এর সমাধান নিহিত রয়েছে। আইন, আদালত, পুলিশ বাহিনী দিয়ে এর মূলোৎপাটন সম্ভব নয়।
ইতঃপূর্বে এ ধরনের আরো হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে। ব্লগার অভিজিত হত্যার বিচার কি হয়েছে? তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন প্রবীণ অধ্যাপক ড. অজয় রায় তো ছেলেহত্যার বিচার চেয়েছিলেন? তিনি কি বিচার পেয়েছেন? দেশে অহরহ গুম, খুনের ঘটনা ঘটছে। এর শেষ কোথায়? এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার কি হয়েছে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে জাতি আজ আক্রান্ত। আবার বিচার যদি ন্যায়বিচার না হয়, তাহলে সে বিচার হয় অর্থহীন। পক্ষপাতদূষ্ট বিচার সমাজের ক্ষত আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই ফজলুল হকের মতো অনেকেই মনে করেন, শুধু আইনের বিচারে এ ধরনের সম্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।
বিবদমান সব পক্ষের সমঝোতার জন্য শুভবুদ্ধির উদয়ের প্রয়োজন। তা হলেই সমস্যার সমাধান হবে। বিচার, পুলিশ ও আইন-আদালত দিয়ে তো একজনকে শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু তাতে জাতীয় উন্নতি সম্ভব না। বর্তমান সমস্যা রাজনৈতিকভাবে আগে সমাধান করতে হবে। সেই সাথে নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা। যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা না যায়, শুধু আইনগত ব্যবস্থা দিয়ে এটি সমাধান করা যাবে না। অপরাধ বিজ্ঞানীরা অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অপরাধের সঠিক কারণ নির্ণয় করতে না পারলে অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। শুধু লোক দেখানো কোনো প্রকার শাস্তি দিয়ে অপরাধ দমন সম্ভব নয়। নৃশংস খুনের মতো বড় অপরাধের একটি প্রধান কারণ আজকের বিরাজমান অনৈক্য, বিভাজন ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ। ফজলুল হক সম্ভবত এর প্রতি এ সময়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। জাতি আজ বিভক্ত। জাতীয় ঐক্য সম্পূর্ণ বিনষ্ট। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে আজো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিভেদ-বিদ্বেষ, হিংসা-প্রতিহিংসা ক্রমেই বেড়ে চলছে। ফজলুল হক এ অবস্থার নিরসন চেয়েছেন। তাই তিনি উচ্চারণ করেছেন- ‘যারা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, উভয় পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ এ দেশের সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের উপলব্ধিও একই ধরনের। যেসব শক্তি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, দেশের উন্নতি ও শান্তি চায় এবং গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী, সেসব শক্তির মধ্যে সমঝোতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক রেষারেষি, হিংসা-প্রতিহিংসা পরিহারের প্রয়োজন। এই বিভাজন ও অনৈক্য পরিহারের জন্য ফজলুল হক ‘শুভবুদ্ধির উদয়ে’র জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, আজ রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘শুভবুদ্ধির’র উদয়। কেবল শুভবুদ্ধিই সব অশুভকে বিনাশ ও ধ্বংস করতে পারে। শুভবুদ্ধির উন্মেষের জন্য প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে পারেন।
আজকের সমাজ ও রাষ্ট্রে অশুভ শক্তির যে উত্থান ও আক্রমণ, তাতে করে মানুষের জীবন সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত। অশুভ ও শুভ শক্তির দ্বন্দ্ব চিরন্তন। শুভকে পরাজিত করে অশুভ শক্তি প্রাধান্য বিস্তার করলে সমাজে দেখা দেয় অস্থিরতা, নৈরাজ্য- যা ডেকে আনে ধ্বংস। আর অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির জয় হলে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবতা, বিকশিত হয় সুন্দর; ধ্বংসের বিপরীতে শুরু হয় সৃষ্টি। এরই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক সমাজ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বাংলাদেশেও আমরা অশুভ শক্তির পরাজয় কামনা করি। আমরা চাই সব কিছুতে ‘শুভ’র বিজয় অর্জিত হোক। তা হলেই কেবল আমরা মুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারব। তাই ফজলুল হকের কথার প্রতিধ্বনি করে বলতে চাই- সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
শুভবুদ্ধির উদয়ের জন্য সমাজে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারেন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশাজীবী। এক কথায়, যাদেরকে বলা হয় বুদ্ধিজীবী। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ অশুভ শক্তির পক্ষে কাজ করছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলই এদের প্রধান লক্ষ্য। হীন স্বার্থ চরিতার্থের জন্য এরা অশুভ শক্তির পদলেহনে মত্ত। শাসকের মনোরঞ্জন ও স্তুতিতে এরা দক্ষ ও পটু। পদ-পদবির লোভে তারা নানাভাবে ক্ষমতাবান ও শক্তিধরকে তুষ্ট রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। দালালি ও পদলেহনের প্রতিযোগিতায় যারা অগ্রগামী থাকেন তারা অশুভ শক্তিধরের নৈকট্য লাভ করেন এবং বড় বড় পদবি ও পুরষ্কার লাভ করেন। এ প্রতিযোগিতায় যারা পেছনে থাকেন তারাও ছিটেফোঁটা হালুয়া-রুটি ও ছোটখাটো আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হন না। এরূপ পরিস্থিতিতেও ন্যায় ও সত্যের পূজারি স্বল্পসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে শুভশক্তির পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। শত নিপীড়ন ও নির্যাতনকে উপেক্ষা করে তারা তাদের বিশ্বাসে অবিচল থাকেন। সর্বকালে, সর্বসমাজে এই উদাহরণের প্রমাণ মেলে। মানবেতিহাসে চাটুকার ও দালাল বুদ্ধিজীবীদের অনৈতিক কার্যকলাপের যেমন প্রমাণ পাওয়া যায়- তেমনি নির্লোভ ও ত্যাগী বুদ্ধিজীবীদের ন্যায় ও শুভশক্তির পক্ষে অবস্থানের কাহিনীও লিপিবদ্ধ আছে। আমাদের অবস্থান শুভশক্তির পক্ষে হোক। কামনা করি, সংশ্লিষ্ট সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তা হলে হয়তো ছেলেহারা বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন এবং নিহত দীপনের আত্মাও শান্তি লাভ করবে।
প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী |
পরিশেষে,
আমি দীপনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং তার শোকসন্তপ্ত বাবা-মা, বোন,
স্ত্রী ও তার ছেলেমেয়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করি।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানী।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানী।
No comments