চুপসে গেছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো by সেলিম জাহিদ
অনৈক্য, দলাদলি, মামলার ভয় ও পারিপার্শ্বিক নানা চাপে চুপসে গেছে ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলো।
কয়েকটি দলের দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, ইসলামপন্থী দলগুলোর কার্যক্রমের ওপর সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কড়া নজরদারি ও সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে পারিপার্শ্বিক চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় মাঠের কার্যক্রম গুটিয়ে তারা এখন অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে।
দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য সাতটি ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠন হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
এর মধ্যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে নানা ফৌজদারি মামলায় কাবু হয়ে পড়েছে জামায়াত।
দলটির একাধিক সূত্র বলছে, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় অনেকে কারাগারে, বাকিরা গা ঢাকা দিয়ে চলছেন। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরসহ অধিকাংশ জেলায় দলীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে।
এ অবস্থায় গোপনে ও নানা কৌশল অবলম্বন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান ঢাকা মহানগর জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কারাবন্দী ১০ নেতার মধ্যে ইতিমধ্যে দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাইরে থেকে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত আমির, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারিসহ ঢাকা মহানগরের নেতারাও গত কয়েক বছরের বিভিন্ন সহিংসতা ও নাশকতার মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা দাবি করেন, পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক, জামায়াত কখনো সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করে না। এখন পরিস্থিতির আলোকে সতর্কতার সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, এটুকুই।
প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই কয়েক বছর ধরে। গত রোজায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তারের দাবিতে দুই শুক্রবার লালবাগে মিছিল করা ছাড়া চলতি বছর ইসলামী ঐক্যজোটের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি ছিল না।
দলটির সহকারী মহাসচিব আহলুল্লাহ ওয়াছেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে অনেকটা ফোনে ফোনে। জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগটা রক্ষা করছি।’
দলটির অপর একটি সূত্র জানায়, ইসলামী ঐক্যজোটে সম্প্রতি অনৈক্য দেখা দিয়েছে। আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত ও তাঁর ভগ্নিপতি সাখাওয়াত হোসাইনের সঙ্গে মতবিরোধ চলছে দলের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লার সঙ্গে। আবুল হাসানাত দলের মহাসচিব হতে আগ্রহী। এ বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত রমজানে জাতীয় ইসলামী পরিষদ নামে একটি নতুন সংগঠন করেন হাসানাত। সংগঠনটির প্রথম অনুষ্ঠানে পানিসম্পদমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে প্রধান অতিথি করা হয়।
চরমোনাইপীর সৈয়দ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনে প্রকাশ্যে দলাদলি নেই। তবে যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানসহ একটি অংশ দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্তৃত্ব খাটান বলে অভিযোগ আছে। এ অংশকে ডিঙিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
গাজী আতাউর রহমান দাবি করেন, ‘কর্তৃত্ব খাটানোর অভিযোগ ঠিক না। তবে এটা ঠিক যে আমি ছাত্রজীবন থেকেই দলে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছি।’
মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলছিল। হাফেজ্জী হুজুরের বড় ছেলে আহমদুল্লাহ আশরাফ খেলাফত আন্দোলনের আমির ছিলেন। বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে তিনি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হওয়ায় সম্প্রতি ভোটাভুটিতে তাঁরই ভাই আতাউল্লাহ দলের আমির নির্বাচিত হন। আর জাফরুল্লাহ খান পুনরায় মহাসচিব হন। যদিও আহমদুল্লাহ আশরাফের বড় ছেলে হাবিবুল্লাহ মিয়াজি মহাসচিব হতে চেয়েছিলেন। তা হতে না পেরে তিনি নতুন এ কমিটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান এবং নিজের বাবাকে দলের আমির বলে দাবি করেন। এসব দলাদলিতে দলীয় কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ে।
খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান হামিদী দাবি করেন, কমিটি নিয়ে সম্প্রতি বিরোধের মীমাংসা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ চলছে। তবে প্রশাসনের বাধা ও হয়রানির কারণে মিছিল-মিটিং করা যাচ্ছে না। ঘরোয়া বৈঠকের কথা শুনলেও পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসে উপস্থিত হন।’
শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভেঙে যায়। দলটির অবস্থা এখন অনেকটাই ছন্নছাড়া বলে একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে দলের অগোচরে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব হুমায়ুন কবির। এরপর তাঁকে দল থেকে বাদ দিয়ে শায়খুল হাদিসের এক ছেলে মাহফুজুল হককে মহাসচিব করা হয়। এ নিয়ে বিবাদে দলটির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা আবদুর রব ইউসুফী ও তাফাজ্জল হক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দেন।
এখন খেলাফত মজলিসের আমির সিলেটের মাওলানা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে দলের মহাসচিবসহ মূলধারার নেতাদের নানা বিষয়ে বিরোধ চলছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো ছাড়া দলটির সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নেই।
এ দেশে ধর্মভিত্তিক সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। দলটির নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী ও মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাছের মধ্যে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি আবদুর রব ইউসুফী ও তাফাজ্জল হক এবং ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা জুনায়েদ আল হাবিবকে এ দলে যোগদান করিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার পর থেকে এ বিরোধের সৃষ্টি বলে দলীয় একাধিক সূত্র বলছে।
অবশ্য মুফতি ওয়াক্কাছ এ বিরোধের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এসব বাজে কথা। লোকজন খালি খালি কথা ওঠায়।’ তিনি সাংগঠনিক স্থবিরতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এখন তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। সময় হলে জাগবে। আমরা নভেম্বরে কাউন্সিল করব।’
জমিয়তের প্রচার সম্পাদক ওয়ালী উল্লাহ আরমান বলেন, এটা ঠিক যে ২০১৩ সালের ৫ মের আগ পর্যন্ত রাজপথে ইসলামি দলগুলোর যে ভূমিকা ছিল, এখন আর তা নেই। নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং নানা প্রশাসনিক চাপ আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
রাতারাতি গড়ে ওঠা কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কাঠামো প্রায় ভেঙে গেছে। ২০১২ সালে গঠিত এ সংগঠনটি পরের বছর ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে বিশাল সমাবেশ করে দেশ-বিদেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল। এখন এটি অনেকটাই কাগুজে সংগঠনে পরিণত হয়েছে। নানামুখী চাপ, বিভক্তি, হতাশায় সংগঠনটির নেতারা চুপ মেরে গেছেন। এখন মাঝেমধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেন সংগঠনটির নেতারা।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাঈনউদ্দিন রুহী দাবি করেন, হেফাজত একেবারে বিনাশ হয়ে গেছে, তা নয়। তবে সরকারি-বেসরকারি চাপ, নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও সংগঠনের ভেতরে ষড়যন্ত্রের কারণে যতটা দরকার ছিল, ততটা সক্রিয় থাকা সম্ভব হয়নি।
কয়েকটি দলের দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, ইসলামপন্থী দলগুলোর কার্যক্রমের ওপর সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কড়া নজরদারি ও সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে পারিপার্শ্বিক চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় মাঠের কার্যক্রম গুটিয়ে তারা এখন অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে।
দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য সাতটি ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠন হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
এর মধ্যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে নানা ফৌজদারি মামলায় কাবু হয়ে পড়েছে জামায়াত।
দলটির একাধিক সূত্র বলছে, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় অনেকে কারাগারে, বাকিরা গা ঢাকা দিয়ে চলছেন। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরসহ অধিকাংশ জেলায় দলীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে।
এ অবস্থায় গোপনে ও নানা কৌশল অবলম্বন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান ঢাকা মহানগর জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কারাবন্দী ১০ নেতার মধ্যে ইতিমধ্যে দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাইরে থেকে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত আমির, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারিসহ ঢাকা মহানগরের নেতারাও গত কয়েক বছরের বিভিন্ন সহিংসতা ও নাশকতার মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা দাবি করেন, পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক, জামায়াত কখনো সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করে না। এখন পরিস্থিতির আলোকে সতর্কতার সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, এটুকুই।
প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই কয়েক বছর ধরে। গত রোজায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তারের দাবিতে দুই শুক্রবার লালবাগে মিছিল করা ছাড়া চলতি বছর ইসলামী ঐক্যজোটের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি ছিল না।
দলটির সহকারী মহাসচিব আহলুল্লাহ ওয়াছেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে অনেকটা ফোনে ফোনে। জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগটা রক্ষা করছি।’
দলটির অপর একটি সূত্র জানায়, ইসলামী ঐক্যজোটে সম্প্রতি অনৈক্য দেখা দিয়েছে। আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত ও তাঁর ভগ্নিপতি সাখাওয়াত হোসাইনের সঙ্গে মতবিরোধ চলছে দলের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লার সঙ্গে। আবুল হাসানাত দলের মহাসচিব হতে আগ্রহী। এ বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত রমজানে জাতীয় ইসলামী পরিষদ নামে একটি নতুন সংগঠন করেন হাসানাত। সংগঠনটির প্রথম অনুষ্ঠানে পানিসম্পদমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে প্রধান অতিথি করা হয়।
চরমোনাইপীর সৈয়দ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনে প্রকাশ্যে দলাদলি নেই। তবে যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানসহ একটি অংশ দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্তৃত্ব খাটান বলে অভিযোগ আছে। এ অংশকে ডিঙিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
গাজী আতাউর রহমান দাবি করেন, ‘কর্তৃত্ব খাটানোর অভিযোগ ঠিক না। তবে এটা ঠিক যে আমি ছাত্রজীবন থেকেই দলে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছি।’
মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলছিল। হাফেজ্জী হুজুরের বড় ছেলে আহমদুল্লাহ আশরাফ খেলাফত আন্দোলনের আমির ছিলেন। বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে তিনি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হওয়ায় সম্প্রতি ভোটাভুটিতে তাঁরই ভাই আতাউল্লাহ দলের আমির নির্বাচিত হন। আর জাফরুল্লাহ খান পুনরায় মহাসচিব হন। যদিও আহমদুল্লাহ আশরাফের বড় ছেলে হাবিবুল্লাহ মিয়াজি মহাসচিব হতে চেয়েছিলেন। তা হতে না পেরে তিনি নতুন এ কমিটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান এবং নিজের বাবাকে দলের আমির বলে দাবি করেন। এসব দলাদলিতে দলীয় কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ে।
খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান হামিদী দাবি করেন, কমিটি নিয়ে সম্প্রতি বিরোধের মীমাংসা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ চলছে। তবে প্রশাসনের বাধা ও হয়রানির কারণে মিছিল-মিটিং করা যাচ্ছে না। ঘরোয়া বৈঠকের কথা শুনলেও পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসে উপস্থিত হন।’
শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভেঙে যায়। দলটির অবস্থা এখন অনেকটাই ছন্নছাড়া বলে একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে দলের অগোচরে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব হুমায়ুন কবির। এরপর তাঁকে দল থেকে বাদ দিয়ে শায়খুল হাদিসের এক ছেলে মাহফুজুল হককে মহাসচিব করা হয়। এ নিয়ে বিবাদে দলটির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা আবদুর রব ইউসুফী ও তাফাজ্জল হক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দেন।
এখন খেলাফত মজলিসের আমির সিলেটের মাওলানা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে দলের মহাসচিবসহ মূলধারার নেতাদের নানা বিষয়ে বিরোধ চলছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো ছাড়া দলটির সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নেই।
এ দেশে ধর্মভিত্তিক সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। দলটির নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী ও মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাছের মধ্যে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি আবদুর রব ইউসুফী ও তাফাজ্জল হক এবং ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা জুনায়েদ আল হাবিবকে এ দলে যোগদান করিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার পর থেকে এ বিরোধের সৃষ্টি বলে দলীয় একাধিক সূত্র বলছে।
অবশ্য মুফতি ওয়াক্কাছ এ বিরোধের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এসব বাজে কথা। লোকজন খালি খালি কথা ওঠায়।’ তিনি সাংগঠনিক স্থবিরতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এখন তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। সময় হলে জাগবে। আমরা নভেম্বরে কাউন্সিল করব।’
জমিয়তের প্রচার সম্পাদক ওয়ালী উল্লাহ আরমান বলেন, এটা ঠিক যে ২০১৩ সালের ৫ মের আগ পর্যন্ত রাজপথে ইসলামি দলগুলোর যে ভূমিকা ছিল, এখন আর তা নেই। নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং নানা প্রশাসনিক চাপ আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
রাতারাতি গড়ে ওঠা কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কাঠামো প্রায় ভেঙে গেছে। ২০১২ সালে গঠিত এ সংগঠনটি পরের বছর ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে বিশাল সমাবেশ করে দেশ-বিদেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল। এখন এটি অনেকটাই কাগুজে সংগঠনে পরিণত হয়েছে। নানামুখী চাপ, বিভক্তি, হতাশায় সংগঠনটির নেতারা চুপ মেরে গেছেন। এখন মাঝেমধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেন সংগঠনটির নেতারা।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাঈনউদ্দিন রুহী দাবি করেন, হেফাজত একেবারে বিনাশ হয়ে গেছে, তা নয়। তবে সরকারি-বেসরকারি চাপ, নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও সংগঠনের ভেতরে ষড়যন্ত্রের কারণে যতটা দরকার ছিল, ততটা সক্রিয় থাকা সম্ভব হয়নি।
No comments