খালেদার বিবৃতি প্রত্যাহারের নেপথ্যে...
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার নামে দেয়া একটি বিবৃতি প্রত্যাহার নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে বিএনপিসহ বিরোধী জোটে। নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে নেয়া হচ্ছে খোঁজ-খবর। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গাজীপুরে গাড়ি পোড়ানো মামলার চার্জশিট দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যের ভাষা ছিল বেশ কড়া। এমন কি সে সংবাদ সম্মেলন থেকে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যতদিন তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে বাধা রয়েছে ততদিন যেন তার বিরুদ্ধে বলা কোন বক্তব্যও প্রচার বা প্রকাশ করা না হয়।
২০১৪ সালের শেষদিকে ও চলতি বছরে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে একাধিক সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় দেয়া বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন। গতকাল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রসঙ্গতই সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান জানতে চান গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের মূল এজেন্ডা ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট’ এর বাইরে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলের ও জোটের নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরে তা জানানো হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরপর হঠাৎ করেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে একটি বিবৃতিতে পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনের স্বাক্ষরে বিবৃতিটি পাঠানো হয় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে। অন্যান্য সময় ই-মেইলে খালেদা জিয়ার বিবৃতি পাঠানোর পর ফোনে বা মোবাইলে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে খোঁজ-খবর নেয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার পাঠানো বিবৃতির ব্যাপারে তেমন কোন তাগিদ ছিল না।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়ার বিবৃতিই ছিল প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বিবৃতিতে দেখা যায়, বিষয় অন্য। বিবৃতির ভাষাও বেশ কৌতুহলময়। প্রথমত, বিবৃতিতে দেয়া হয়েছে জয়পুরহাট জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক এমপি মোজাহার হোসেন প্রধানকে কারাগেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে। কিন্তু বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার তরফে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, ‘হিংসা-বিদ্বেষের পথ ছেড়ে আসুন একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আমরা আগের মতো একসঙ্গে কাজ করি। জনগণের রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-আস্থা আছে। আপনাদের ভয় কিসে?
আমি শঙ্কিত-হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি দেশের মৃতপ্রায় গণতন্ত্রকে কফিনে পুরে ফেলবে একদিন। সরকার যেন সেই কাজটি করতেই বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। আমি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা এজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। কারণ এখন যে নীতিতে সরকার দেশ চালাচ্ছেÑ তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেইমানি ছাড়া কিছু নয়।’ খালেদা জিয়ার নামে দেয়া বিবৃতির এমন ভাষা ও নরম আহ্বান দেখে অনেকেই কৌতুহলী হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন উঠেÑ দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগকারি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামিনের আদেশ স্থগিত বা একাধিক জাতীয় নেতার ইস্যু বাদ দিয়ে জয়পুরহাট জেলা বিএনপি সভাপতির ঘটনায় কেন খালেদা জিয়া এমন বিবৃতি দিতে গেলেন? নেতাকর্মীদের কাছে কৌতুহলের বিষয় হচ্ছেÑ একজন জেলা নেতাকে কারাফটকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে কেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন উদাত্ত আহ্বান?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যে একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল সেটা প্রকাশ করে। বিষয়টি নেতাকর্মীদের দৃষ্টিগোচর হলে দলের নানামহলে প্রশ্ন ওঠে। সূত্র জানায়, দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিষয়টি খালেদা জিয়ার নজরে আনেন। নেতারা চেয়ারপারসনকে জানান, যেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের প্রসঙ্গে দলের তরফে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে সেখানে এই বিবৃতিতে কেন? এছাড়া খালেদা জিয়ার বিবৃতির পর স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে গণমাধ্যমে। এতে দলের বৃহস্পতিবারের মূল এজেন্ডা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি জেনে খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হন এবং বিবৃতিটি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এদিকে রাত সোয়া নয়টার সময় দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে একটি এসএমএস পাঠানো হয়। এতে লেখা হয়, ‘স্টেটম্যান্ট অব বিএনপি চেয়ারপারসন হুইচ হ্যাজ বিন সেন্ট অলরেডি উইল বি স্টপড বাট কনডোলেন্স প্রেস রিলিজ উইল বি ব্রডকাস্টড এ্যান্ড প্রিন্টেড।’ কিন্তু ততক্ষণে বেশিরভাগ দৈনিক পত্রিকা খালেদা জিয়ার বিবৃতি নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি মেকআপে বসিয়ে ফেলেছে। দু’একটি পত্রিকা প্রেসেও চলে গেছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে ঝুলছে খালেদা জিয়ার বিবৃতির বক্তব্য। খালেদা জিয়ার বিবৃতি প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে দলের দপ্তরে ফোন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আমাকে বিবৃতিটি পাঠাতো নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং পরে প্রত্যাহারে খবর জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি এর বেশি কিছু জানি না। অন্যদিকে সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন বিষয়টিকে ভুল আখ্যায়িত করে বলেন, পরের দিনের বিবৃতিটি আগেরদিন পাঠানো হয়েছে।
এদিকে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের বিবৃতি দেয়ার ব্যাপারে দলের শীর্ষ মহল কিছুই জানেন না। একটি সাধারণ বিবৃতির মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানের মতো গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান মানানসই নয়। কিন্তু দলের মুখপাত্রসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অনেক সময় নিজেদের গরজ অনুযায়ী গণমাধ্যমে এ ধরনের বিবৃতি পাঠান। নিজেদের ক্ষমতা ও অবস্থানের চর্চা করতে তারা এ ধরনের অতিউৎসাহী কাজ করেন। তাদের অতিউৎসাহী মনোভাব ও আচরণের কারণে অতীতে এ ধরনের অনেক বিবৃতিতে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। যা দলের সমন্বয়হীনতার প্রকাশ ঘটায়।
সূত্র জানায়, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন এ বিবৃতিটি দেয়ার ব্যাপারে মুখপাত্রকে জানান। মুখপাত্রের তৈরি করা খসড়া হাতে পাওয়ার পর তিনি তা গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথমদিকে খালেদা জিয়া যখন তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন তখনও এধরনের বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বিবৃতি পাঠালেও দলের তৎকালীন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমদের বরাতে অনেকটা সাংঘর্ষিক বিষয় ও বক্তব্যযুক্ত বিবৃতি পাঠানো হয় গোপন জায়গা থেকে। একপর্যায়ে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সেটা বন্ধ হয়। খালেদা জিয়ার অজান্তে তারই নামে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান সম্বলিত বিবৃতি পাঠানোর বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বিষয়টির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, চেয়ারপারসনের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয়ার কথা আমাকে জানানো হয়। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকার কারণে কার্যালয়ে ছিলাম না। পরে আমি বিবৃতির খসড়া তৈরি করে কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেই। তবে বৃহস্পতিবার দলের সংবাদ সম্মেলন ও চেয়ারপারসনের শোকবার্তাসহ একাধিক সংবাদ থাকার কারণে এটি শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ভুল করে দপ্তর থেকে গতকালই তা পাঠিয়ে দেয়া হয়। যা পরে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বিবৃতি শুক্রবার পাঠানো হবে।
২০১৪ সালের শেষদিকে ও চলতি বছরে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে একাধিক সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় দেয়া বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন। গতকাল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রসঙ্গতই সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান জানতে চান গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের মূল এজেন্ডা ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট’ এর বাইরে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলের ও জোটের নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরে তা জানানো হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরপর হঠাৎ করেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে একটি বিবৃতিতে পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনের স্বাক্ষরে বিবৃতিটি পাঠানো হয় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে। অন্যান্য সময় ই-মেইলে খালেদা জিয়ার বিবৃতি পাঠানোর পর ফোনে বা মোবাইলে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে খোঁজ-খবর নেয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার পাঠানো বিবৃতির ব্যাপারে তেমন কোন তাগিদ ছিল না।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়ার বিবৃতিই ছিল প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বিবৃতিতে দেখা যায়, বিষয় অন্য। বিবৃতির ভাষাও বেশ কৌতুহলময়। প্রথমত, বিবৃতিতে দেয়া হয়েছে জয়পুরহাট জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক এমপি মোজাহার হোসেন প্রধানকে কারাগেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে। কিন্তু বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার তরফে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, ‘হিংসা-বিদ্বেষের পথ ছেড়ে আসুন একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আমরা আগের মতো একসঙ্গে কাজ করি। জনগণের রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-আস্থা আছে। আপনাদের ভয় কিসে?
আমি শঙ্কিত-হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি দেশের মৃতপ্রায় গণতন্ত্রকে কফিনে পুরে ফেলবে একদিন। সরকার যেন সেই কাজটি করতেই বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। আমি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা এজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। কারণ এখন যে নীতিতে সরকার দেশ চালাচ্ছেÑ তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেইমানি ছাড়া কিছু নয়।’ খালেদা জিয়ার নামে দেয়া বিবৃতির এমন ভাষা ও নরম আহ্বান দেখে অনেকেই কৌতুহলী হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন উঠেÑ দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগকারি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামিনের আদেশ স্থগিত বা একাধিক জাতীয় নেতার ইস্যু বাদ দিয়ে জয়পুরহাট জেলা বিএনপি সভাপতির ঘটনায় কেন খালেদা জিয়া এমন বিবৃতি দিতে গেলেন? নেতাকর্মীদের কাছে কৌতুহলের বিষয় হচ্ছেÑ একজন জেলা নেতাকে কারাফটকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে কেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন উদাত্ত আহ্বান?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যে একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল সেটা প্রকাশ করে। বিষয়টি নেতাকর্মীদের দৃষ্টিগোচর হলে দলের নানামহলে প্রশ্ন ওঠে। সূত্র জানায়, দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিষয়টি খালেদা জিয়ার নজরে আনেন। নেতারা চেয়ারপারসনকে জানান, যেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের প্রসঙ্গে দলের তরফে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে সেখানে এই বিবৃতিতে কেন? এছাড়া খালেদা জিয়ার বিবৃতির পর স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে গণমাধ্যমে। এতে দলের বৃহস্পতিবারের মূল এজেন্ডা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি জেনে খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হন এবং বিবৃতিটি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এদিকে রাত সোয়া নয়টার সময় দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে একটি এসএমএস পাঠানো হয়। এতে লেখা হয়, ‘স্টেটম্যান্ট অব বিএনপি চেয়ারপারসন হুইচ হ্যাজ বিন সেন্ট অলরেডি উইল বি স্টপড বাট কনডোলেন্স প্রেস রিলিজ উইল বি ব্রডকাস্টড এ্যান্ড প্রিন্টেড।’ কিন্তু ততক্ষণে বেশিরভাগ দৈনিক পত্রিকা খালেদা জিয়ার বিবৃতি নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি মেকআপে বসিয়ে ফেলেছে। দু’একটি পত্রিকা প্রেসেও চলে গেছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে ঝুলছে খালেদা জিয়ার বিবৃতির বক্তব্য। খালেদা জিয়ার বিবৃতি প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে দলের দপ্তরে ফোন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আমাকে বিবৃতিটি পাঠাতো নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং পরে প্রত্যাহারে খবর জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি এর বেশি কিছু জানি না। অন্যদিকে সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন বিষয়টিকে ভুল আখ্যায়িত করে বলেন, পরের দিনের বিবৃতিটি আগেরদিন পাঠানো হয়েছে।
এদিকে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের বিবৃতি দেয়ার ব্যাপারে দলের শীর্ষ মহল কিছুই জানেন না। একটি সাধারণ বিবৃতির মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানের মতো গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান মানানসই নয়। কিন্তু দলের মুখপাত্রসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অনেক সময় নিজেদের গরজ অনুযায়ী গণমাধ্যমে এ ধরনের বিবৃতি পাঠান। নিজেদের ক্ষমতা ও অবস্থানের চর্চা করতে তারা এ ধরনের অতিউৎসাহী কাজ করেন। তাদের অতিউৎসাহী মনোভাব ও আচরণের কারণে অতীতে এ ধরনের অনেক বিবৃতিতে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। যা দলের সমন্বয়হীনতার প্রকাশ ঘটায়।
সূত্র জানায়, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন এ বিবৃতিটি দেয়ার ব্যাপারে মুখপাত্রকে জানান। মুখপাত্রের তৈরি করা খসড়া হাতে পাওয়ার পর তিনি তা গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথমদিকে খালেদা জিয়া যখন তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন তখনও এধরনের বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বিবৃতি পাঠালেও দলের তৎকালীন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমদের বরাতে অনেকটা সাংঘর্ষিক বিষয় ও বক্তব্যযুক্ত বিবৃতি পাঠানো হয় গোপন জায়গা থেকে। একপর্যায়ে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সেটা বন্ধ হয়। খালেদা জিয়ার অজান্তে তারই নামে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান সম্বলিত বিবৃতি পাঠানোর বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বিষয়টির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, চেয়ারপারসনের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয়ার কথা আমাকে জানানো হয়। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকার কারণে কার্যালয়ে ছিলাম না। পরে আমি বিবৃতির খসড়া তৈরি করে কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেই। তবে বৃহস্পতিবার দলের সংবাদ সম্মেলন ও চেয়ারপারসনের শোকবার্তাসহ একাধিক সংবাদ থাকার কারণে এটি শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ভুল করে দপ্তর থেকে গতকালই তা পাঠিয়ে দেয়া হয়। যা পরে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বিবৃতি শুক্রবার পাঠানো হবে।
No comments