গুজরাটে সহিংসতায় নিহত ৭
ভারতের গুজরাটে কোটার দাবিতে প্যাটেল সম্প্রদায়ের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় বুধবার সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ এলাকায় দাঙ্গার আশংকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হয়েছে সেনা মোতায়েন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও দ্য হিন্দুর। মঙ্গলবার শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দাবিতে দিনব্যাপী সমাবেশ সহিংস আকার ধারণ করে। গুজরাটের ২০ শতাংশ মানুষ প্যাটেল সম্প্রদায়ের হওয়ায় তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিুবর্গের মানুষ হওয়ায় তাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সমাবেশে প্রায় তিন লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করে। মঙ্গলবার সমাবেশের নেতৃত্বদানকারী নেতা হারদিক প্যাটেলকে (২২) আটক করা হয়। এর ফলে রাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা অন্তত ৭০টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এদিকে, হারদিক এক বিবৃতিতে বলেন, পুলিশ আমার সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর চড়াও হয়েছে, আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে যেন আমরা জঙ্গি। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
মঙ্গলবারের সমাবেশে আহ্বান করা ধর্মঘট ও কর্তৃপক্ষের জারি করা কারফিউয়ের কারণে রাজ্যের প্রধান নগর আহমেদাবাদ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, আহমেদাবাদ, সুরাট, মেহসানা, বিশনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। আহমেদাবাদ ও সুরাটের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারির পাশাপাশি কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করা হয়েছে। এসব এলাকাসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তর গুজরাটে উত্তেজিত জনতা একজন মন্ত্রী ও দুজন আইনপ্রণেতার কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দুটি ব্যাংকের এটিএম বুথেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, ভারতের জটিল সামাজিক কাঠামোতে কোটা প্রথা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কলেজে ভর্তি বা ছোট ও মাঝারি মানের শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে এ প্রথার কারণে অনেককে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। পেশায় ব্যবসায়ী হারদিক প্যাটেল সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়। সরকার যদি আমাদের দাবি না মানে, তাহলে ২০১৭ সালে এ রাজ্যে আর পদ্ম ফুটবে না।’ মূলত এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে হারদিক প্যাটেল গুজরাটে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপির ভাগ্যে কী ঘটতে পারে, সে দিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। গুজরাটে বিজেপির সঙ্গে প্যাটেল সম্প্রদায়ের সম্পর্কটা এতদিন ভালোই ছিল। তাই প্যাটেলদের দাবি না মানলে বিজেপির নির্বাচনী প্রতীক পদ্ম যে হালে পানি পাবে না, সে সমীকরণটি মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন হারদিক প্যাটেল। ভারতে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য ওবিসি কোটা আছে। এ কোটার মাধ্যমে রাষ্ট্র অনগ্রসর সম্প্রদায়কে শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সুযোগ করে দেয়। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আনন্দিবেন প্যাটেল। যিনি এ সম্প্রদায়েরই। তবে কোটার দাবিতে প্যাটেলদের আন্দোলনের সঙ্গে একমত নন মুখ্যমন্ত্রী।
No comments