কৃষ্ণগহ্বরে কিছুই হারিয়ে যায় না?
দ্য ব্ল্যাক হোল চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। মুভিস্টোর |
কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশের পর সবকিছুই হারিয়ে যায় বলে যে ধারণার প্রচলন রয়েছে, ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, কৃষ্ণগহ্বরের গ্রাস করা তথ্য হয়তো সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে অন্য কোনো মহাজগতে হাজির হয়। খবর গার্ডিয়ানের। নন্দিত পদার্থবিদ হকিং সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কেটিএইচ রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এক উন্মুক্ত বক্তৃতায় বলেন, ‘যদি মনে করেন, কৃষ্ণগহ্বরে চলে গেছেন—হাল ছেড়ে দেবেন না। সেখানেও পথ আছে, যার মধ্য দিয়ে তথ্য বাইরে যেতে পারে।’ কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যাওয়া তথ্যের পরিণতি কী হয়, তা নিয়ে নতুন একটি তত্ত্ব দিয়েছেন হকিং। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে মহাশূন্যের এমন এক জায়গা, যেখানে অসীম মাধ্যাকর্ষণ যেকোনো বস্তু প্রচণ্ড শক্তিতে টেনে নেয়। তখন সেখানে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত নিয়মগুলোও অকার্যকর হয়ে যায়। হকিং বলছেন, তিনি একটি বিশেষ কৌশলের খোঁজ পেয়েছেন, যার মাধ্যমে কৃষ্ণগহ্বর থেকে তথ্য ফিরে আসতে পারে। কৃষ্ণগহ্বরে যাওয়ার পর কোনো বস্তুর ভৌত অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে মনে হয়, সেটি সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে। কিন্তু মহাবিশ্বের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী এটা অসম্ভব। কৃষ্ণগহ্বরে যাওয়ার পরও কোনো বস্তু কোথাও না কোথাও গিয়ে থামবে। হকিংয়ের যুক্তি, ‘কৃষ্ণগহ্বরের বিকল্প ইতিহাস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গহ্বরটি নিশ্চয়ই অনেক বড় এবং যদি তা আবর্তিত হয়, অবশ্যই এর আরেকটি মহাবিশ্বে যাওয়ার পথ আছে। কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বে ফিরে আসার সুযোগ নেই।
তাই আমি মহাকাশ ভ্রমণে আগ্রহী হলেও, সেটা করতে যাচ্ছি না। এই বক্তৃতার মূল বার্তা হলো কৃষ্ণগহ্বর কালো নয়। সেগুলো চিরন্তন কারাগারও নয়, যেমনটা ভাবা হতো। কৃষ্ণগহ্বর থেকেও বস্তু বেরিয়ে যেতে পারে এবং তা সম্ভবত অন্য কোনো মহাবিশ্বে গিয়ে হাজির হয়।’ হকিং বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা গবেষণার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল বিজ্ঞানীদের কাছে বরাবরই এক ধাঁধা। মহাশূন্যের ওই রহস্যময় স্থানে মাধ্যাকর্ষণ এত বেশি যে তা সবকিছুকেই গ্রাস করে। এমনকি আলো পর্যন্ত সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কোনো তারকা বা নক্ষত্রের মৃত্যুর সময় এমনটা ঘটতে পারে। কোনো আলো বেরোয় না বলেই কৃষ্ণগহ্বর দেখা যায় না।
No comments