গ্রিসে ব্যাংক বন্ধের খবরে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে ধস: এক দিনে শীর্ষ ধনীদের ক্ষতি ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা by আশরাফুল ইসলাম

বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা বিশ্বায়নের প্রভাব ভালোই টের পেলেন গত সপ্তাহে। গ্রিসে এক সপ্তাহ ব্যাংক বন্ধ থাকবে—এ খবরে পুঁজিবাজারে যে ধস নামে, তাতে বিল গেটসসহ ৪০০ ধনাঢ্য ব্যক্তি গত সোমবার একসঙ্গে হারিয়েছেন ৭ হাজার কোটি ডলার বা ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে এই অর্থ দিয়ে ২০টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব।
শেয়ারবাজারের পতনে এর আগে কবে শীর্ষ ধনীরা এক দিনে এ রকম বিশাল লোকসানে পড়েছেন, তা এখন রীতিমতো গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংকটের শুরুটা মূলত ইউরোপের দেশ গ্রিসকে নিয়ে। টাকার অভাবে গ্রিস সরকার এক সপ্তাহের জন্য দেশটিতে সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। একটি দেশের পুরো ব্যাংকিং অবস্থা অচল হয়ে পড়ার আতঙ্ক বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বড় পুঁজিবাজারগুলোয়। একই সময়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
অনলাইনে বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেল, পুরো এক সপ্তাহের জন্য আর কোনো দেশ তাদের ব্যাংক বন্ধ করেনি। গ্রিসের ব্যাংকগুলো সাত দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে তাই এ আতঙ্ক।
সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের হিসাবে, ওই এক দিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত স্পেনের বস্ত্র ব্যবসায়ী আমানসিও ওর্তেগা। তিনি হারিয়েছেন ২২০ কোটি ডলার বা ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর শীর্ষ ধনীর তালিকায় তিনি আছেন চতুর্থ অবস্থানে। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের ক্ষতিও একেবারে কম নয়। এক দিনেই তিনি হারিয়েছেন ১৪০ কোটি ডলার। আর ফোর্বস-এর তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা বিনিয়োগগুরু ওয়ারেন বাফেটের ক্ষতি ১৬০ কোটি ডলার। এক দিনে মোট সম্পদের ২ থেকে ৩ শতাংশ হারানো এই ধনীদের জন্য অনেকটাই অভাবনীয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ওলট-পালট না হলে এক বছরেও তাঁদের সম্পদ এত কমে না।
বিল গেটসের ব্যাপারে যেখানে রসিকতা করে বলা হয়, দিনে এক লাখ ডলার করে খরচ করলে ১০০ বছরেও সব টাকা খরচ করে শেষ করতে পারবে না তাঁর পরিবার।
পুঁজিবাজারের এই ধসে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের যখন মাথায় হাত, তখন তা অনেকটা আশীর্বাদ হয়ে এসেছে আফ্রিকার শীর্ষ ধনী আলিকো ডাংগোটের জন্য। একই দিনে তিনি আয় করেছেন ১৮ কোটি ডলার। তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ডাংগোটে সিমেন্টের শেয়ারের দাম প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়ে যায়। এতে তাঁর সম্পদ বেড়ে এক লাফে হয়েছে ১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার।
সব মিলিয়ে এক দিনে বিশ্বের ৪০০ শীর্ষ ধনী তাঁদের মোট সম্পদের দেড় শতাংশ হারিয়েছেন।
বিশ্বের সব বড় পুঁজিবাজারে গত সোমবার সূচক পড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ৬ শতাংশ সূচক কমেছে চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে। এটি দেশটির প্রধান তিন পুঁজিবাজারের একটি। সূচক হারানোর এই ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি শেনজেন পুঁজিবাজার।
চীনের মতো না হলেও কম যায়নি ইউরোপের পুঁজিবাজারগুলোও। ইউরো স্টক ইনডেক্সের সূচক ওই দিন কমে যায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সূচক কমেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুঁজিবাজার সূচক স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর (এসঅ্যান্ডপি) ও নাসডাকের। এ দুই পুঁজিবাজারে সূচক ২ শতাংশের বেশি কমেছে।
ফোর্বস, ব্লুমবার্গের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবমতে, বিশ্বের ৪০০ শীর্ষ ধনীর মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। গ্রিস-সংকটের এক ধাক্কায় এই ধনী ব্যক্তিদের প্রত্যেকে গড়ে হারিয়েছেন ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তাই এ কথা এখন বলাই যায় যে বিশ্বায়নের ধাক্কা সবার গায়েই লাগে।
৪০০ ধনাঢ্য ব্যক্তি এক দিনে ৭ হাজার কোটি ডলার খুইয়েছেন। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে ২০টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব
বিশ্বের শীর্ষ ধনী
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস
হারিয়েছেন ১৪০ কোটি ডলার
বিনিয়োগগুরু
বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেট খুইয়েছেন ১৬০ কোটি ডলার
সর্বোচ্চ ক্ষতি
বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী স্পেনের আমানসিও ওর্তেগার ক্ষতি হয় ২২০ কোটি ডলার
ভাগ্যবান ধনী
আফ্রিকার শীর্ষ ধনী আলিকো ডাংগোটে আয় করেন ১৮ কোটি ডলার

No comments

Powered by Blogger.