ঢাকা গেট বেদখল by মাসুম আলী
দোয়েল চত্বর থেকে উত্তরে মোগল স্থাপত্য ঐতিহ্যবাহী ঢাকা গেটের পেছনের অংশ দখল করে এভাবে টিনের ছাপরা তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি গতকাল তোলা l হাসান রাজা |
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বর পেরিয়ে টিএসসি অভিমুখে গেলে যে কারও
নজরে আসবে মোগল ঐতিহ্যের সাক্ষী ‘ঢাকা গেট’। তবে স্থাপনাটি দেখলে সচেতন
যেকোনো মানুষ হতাশ হবেন। মনে বিস্ময় জাগতে পারে, ইতিহাসের এমন
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এই হাল? এই স্থাপনা দেখার কেউ নেই? প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তর কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেউই যথাযথভাবে দায়িত্ব
পালন করছে না স্থাপনাটি রক্ষার। ‘যত্ন’ নয়, বরং দিনের পর দিন শুধু
‘অবহেলাই’ পেয়েছে স্থাপনাটি। বিবর্ণ হয়ে আসা হলুদ রঙের বিশালাকার কয়েকটি
স্তম্ভ। মূল সড়কের দুই পাশে এবং মাঝখানে তিন ভাগে বিভক্ত পুরো স্থাপনাটি।
স্থাপনাটি ইতিহাসের পাতায় ‘মীর জুমলার গেট’ নামে পরিচিত। মোগল আমলের ঢাকা
ছিল বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী। রমনা উদ্যানসংলগ্ন গেটটি নির্মাণ করা হয়েছিল
শহরে প্রবেশের প্রধান তোরণ হিসেবে। সরকারি গেজেটে প্রকাশিত ঢাকার সংরক্ষিত
স্থাপনার তালিকায় মীর জুমলার গেটের নাম থাকলেও এটি এখন বেদখল। সরেজমিনে
দেখা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের পেছনে মীর
জুমলার গেটের পশ্চিম অংশ ব্যবহার করে বানানো হয়েছে টিনের ঘর। গেটের
একপাশের দেয়াল ঘরের দেয়াল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ঘরটি কে ব্যবহার
করছেন, তা তৎক্ষণাৎ বলতে রাজি হননি কেউই। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী জানালেন, এই ঘর ব্যবহৃত হচ্ছে বিজ্ঞান
অনুষদের নার্সারির কর্মচারীর (মালী) থাকার কাজে। থাকেন বেশ কয়েকজন। ঘরে
উঁকি দিয়ে দেখা গেল, দেয়াল ঘেঁষে চুলা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে রান্নার
কাজও চলে। এ কারণে গেটের ওই অংশ কালো হয়ে গেছে, খসে পড়ছে চুন-সুরকি।
দেয়ালের অন্য পাশেরও একই অবস্থা। স্তম্ভের মাঝামাঝি অংশটি সড়ক বিভাজকের
মধ্যে পড়ায় তাতে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার।
ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ মহানগর ইমারত বিধিমালা, ২০০৮-এর ৬১ বিধিতে ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্যবাহী বিশেষ ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো যথাযথ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। গবেষক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবারও আমি এই জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় গেটের অবস্থা দেখে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন আলোকিত প্রতিষ্ঠানের আলোকিত জায়গায় এত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনার এমন অবহেলা অবিশ্বাস্য। শুধু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এ ধরনের মূল্যবান স্থাপনা হারিয়ে যাওয়ার পথে।’ তিনি বলেন, ‘পুরাকীর্তি একটা জাতির গৌরবের বিষয়। কোনো জাতির ঐতিহ্য কত বেশি সমৃদ্ধ, তার প্রমাণ দেয় পুরাকীর্তি। এই স্থাপনাটির এমন বেহাল দশা থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাব। তারা যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমরা শিগগিরই নিজেরা স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে পরিষ্কার করব এই এলাকা।’
যোগাযোগ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন স্থাপনাটির বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে অবগত আছেন বলে জানান। তিনি বলেন,‘আমি খুব অল্প দিন হলো এই অধিদপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছি। স্থাপনা বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। তা ছাড়া, এই জায়গাটি দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়ার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা আছে। এসব নানা বিষয় চিন্তা করে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হলেও সংরক্ষিত স্থাপনাটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি, এ ধরনের ঐতিহ্য-স্মারক সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।’ তিনি গেটের গা ঘেঁষে তৈরি টিনের ঘরটি উচ্ছেদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ মহানগর ইমারত বিধিমালা, ২০০৮-এর ৬১ বিধিতে ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্যবাহী বিশেষ ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো যথাযথ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। গবেষক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবারও আমি এই জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় গেটের অবস্থা দেখে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন আলোকিত প্রতিষ্ঠানের আলোকিত জায়গায় এত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনার এমন অবহেলা অবিশ্বাস্য। শুধু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এ ধরনের মূল্যবান স্থাপনা হারিয়ে যাওয়ার পথে।’ তিনি বলেন, ‘পুরাকীর্তি একটা জাতির গৌরবের বিষয়। কোনো জাতির ঐতিহ্য কত বেশি সমৃদ্ধ, তার প্রমাণ দেয় পুরাকীর্তি। এই স্থাপনাটির এমন বেহাল দশা থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাব। তারা যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমরা শিগগিরই নিজেরা স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে পরিষ্কার করব এই এলাকা।’
যোগাযোগ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন স্থাপনাটির বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে অবগত আছেন বলে জানান। তিনি বলেন,‘আমি খুব অল্প দিন হলো এই অধিদপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছি। স্থাপনা বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। তা ছাড়া, এই জায়গাটি দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়ার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা আছে। এসব নানা বিষয় চিন্তা করে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হলেও সংরক্ষিত স্থাপনাটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি, এ ধরনের ঐতিহ্য-স্মারক সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।’ তিনি গেটের গা ঘেঁষে তৈরি টিনের ঘরটি উচ্ছেদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
No comments