কমিটি দখল নিয়ে দুই গ্রুপ মুখোমুখি by মুসতাক আহমদ
রাজধানীর
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সরকারি দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের কাঁড়ি
কাঁড়ি টাকা আয়ের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার
প্রভাব খাটিয়ে ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য ছাড়াও সব ধরনের কেনাকাটায় ভাগ বসানো
অনেকটা ওপেন সিক্রেট বিষয়। বিশেষ কমিশন দেয়া ছাড়া কোনো ঠিকাদারও এখানে
অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করতে পারেন না। এমনকি স্কুলের সামনে হকারদের কাছে
ভাসমান দোকানের সিট বিক্রিও হয় তাদের নির্দেশে। একটি স্বনামধন্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এই যখন অবস্থা, তখন এসব খাতের মোটা অংকের ভাগ-বাটোয়ারা
নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা নিজেরাই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।
ভেতরের এ দ্বন্দ্ব ক্রমেই চাউর হতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে
এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে এক শ্রেণীর অভিভাবক ও কয়েকজন শিক্ষক মিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়ে দুটি গ্রুপও তৈরি হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে দুই গ্রুপ এক রকম মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এরা দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে স্কুলের বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব এতদিন ছাইচাপা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির (জিবি) নির্বাচন সামনে রেখে তা প্রকাশ পেয়েছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে হাইকোর্টে একাধিক রিট দাখিল হয়েছে। এমনকি দু’গ্রুপ একাধিক দিন পাল্টাপাল্টি মহড়া দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশংকা, পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে- এ নিয়ে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে। এ রকম আশংকায় অভিভাবকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রবিধানমালা’ অনুযায়ী দেশের বেসরকারি পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার একক ক্ষমতা জিবির হাতে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী এবং ৬ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নানা খাতে আদায় করা ফি, প্রতিবছর বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তি, কোচিং, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বদলি, উপরের ক্লাসে শিক্ষার্থী পদোন্নতি, ক্লাস শিক্ষক নিয়োগ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য মনোনয়ন, বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা, স্কুল ড্রেস, ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, আসবাবপত্র, পুরাতন বই বিক্রি, জেনারেটর পরিচালনাসহ নানা খাতের কার্যক্রমে বছরে কোটি কোটি টাকা আদায় ও লেনদেন হয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কার্যক্রমে ব্যাপক অস্বচ্ছতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও বাণিজ্যের ঘটনা ঘটে। তাই প্রতিষ্ঠানের জিবি যাদের দখলে থাকবে, তারাই এ বাণিজ্যের অলিখিত লাইসেন্স(!) পেয়ে যান। এমন প্রত্যাশা ও অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থান্বেষী গ্রুপ দুটি মরিয়া হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। আর এ কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর নির্বাচন আয়োজন সত্ত্বেও কমিটি দখল প্রশ্নে দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আর এটা করতে গিয়েই উচ্চ আদালতে মামলা, এমনকি প্রতিপক্ষকে দমনের লক্ষ্যে কেউ কেউ সরকার প্রধানের নাম ভাঙানোর চেষ্টাও করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে স্কুলটিতে আওয়ামী লীগের একটি অংশের মহড়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও জিবির সদস্য সচিব ড. শাহানআরা বেগম। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক, না অবৈধ ভর্তির জন্য চাপ দিতে এ মহড়ার ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান। বিগত বেশ কয়েকদিন স্কুলটিতে সরেজমিন পরিদর্শনকালে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে যুগান্তর প্রতিবেদকের কয়েক দফা আলাপ হয়। তারা যুগান্তরকে জানান, ৬ জুন স্কুলের জিবির নির্বাচন। এর আগে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে ১ জুন। কিন্তু এ নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সহিংস ঘটনা ঘটলে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেন।
তবে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, এরপরও তারা নির্বাচন চান। কেননা, নিয়মিত কমিটি ও কমিটিতে অধিকাংশ অভিভাবকের কাক্সিক্ষত প্রতিনিধি না থাকায় স্কুলটি একটি ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে তাদের দাবি। দৃষ্টান্ত দিয়ে তারা অভিযোগ করেন, স্কুলে প্রতিবছর বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তি নিয়ে ঘোরতর বাণিজ্য হয়। বৈধভাবে যে ক’জন ভর্তি হয়, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অবৈধভাবে ভর্তি করার ঘটনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত রেটের বেশি ফি নেয়া হয়। এ দশা এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায়ও। অতিরিক্ত ফি নেয়ার কারণে গত নভেম্বরে হাইকোর্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে তলব করেছিলেন। হাইকোর্ট ওই সময় বাড়তি নেয়া ফি ফেরত দিতে নির্দেশও দেন। কিন্তু সব অভিভাবক তাদের কাছ থেকে নেয়া বাড়তি অর্থ ফেরত পাননি বলে নাম প্রকাশ না করে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন। তারা বলেন, গভর্নিং বডি বা জিবি কমিটিতে নির্বাচিত ও সৎ প্রতিনিধি পাঠাতে পারলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতো। এ কারণেই তারা নির্বাচন চান। শান্তিনগর এলাকার দু’জন অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা এসএসসি পাস করলে এ স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়বে। তাই অনেক কিছু বলতে চাইলেও তারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে পারছেন না।’
এ ব্যাপারে স্কুলটিতে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীদের সংগঠন অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু শিক্ষক আর জিবির সদস্যের কারণে স্কুলে লেখাপড়ার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ লেখাপড়ার পরিবর্তে অর্থ আয়ের নেশায় নেমে পড়েছেন। আমরা স্কুলে সংঘটিত সবধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান চাই।
৬ জুন প্রতিষ্ঠানটির জিবির বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিনিধি নির্বাচন। মোট ১৩ সদস্যের জিবির মধ্যে সভাপতি হিসেবে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। পদাধিকার বলে সদস্য সচিব হলেন অধ্যক্ষ। বাকি ১১ সদস্যের মধ্যে ১০টিতে নির্বাচন হচ্ছে। ১০ সদস্যের মধ্যে অভিভাবক প্রতিনিধি কলেজ শাখায় ২, স্কুল শাখায় ২, প্রাথমিকে ১ এবং সংরক্ষিত মহিলা ১ জন। শিক্ষক প্রতিনিধি কলেজ, স্কুল ও সংরক্ষিত মহিনা ১ জন করে ৩ জন এবং দাতা সদস্য ১ জনসহ মোট ১০ জন। প্রাথমিকে শিক্ষক ভোটার না থাকায় এ কোটায় শিক্ষক প্রতিনিধি পদে নির্বাচন হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি গ্রুপ (সিন্ডিকেট) তৈরি হয়েছে। এর একাংশে আছেন আওয়ামী লীগের মতিঝিল থানা শাখার সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। অপর অংশে সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। এদের মধ্যে আশরাফ তালুকদার বিগত প্রায় সাড়ে ৬ বছর ধরে বিদ্যোৎসাহী কোটায় জিবির সদস্য। টিপু বর্তমানে কোনো পদে নেই। নির্বাচন দেয়ায় কমিটিতে বসার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় টিপু নতুন করে কমিটিতে আসার চেষ্টা শুরু করেছেন। যে কারণে তিনি নিজের স্ত্রী ফারজানা ডলিকে জিবির সদস্য পদে প্রার্থী করা থেকে শুরু করে অন্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন কমিটির চেয়ার আঁকড়ে থাকা বিদ্যমান জিবির প্রভাবশালী সদস্যরা নিজেদের কর্তৃত্ব বহাল রাখতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এই অংশটি গোলাম আশরাফ তালুকদারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন বলে জানা গেছে। ওদিকে বসে নেই টিপু গ্রুপ। তারাও যে কোনো মূল্যে নতুন কমিটি গঠন করে তার নিয়ন্ত্রণ কর্তা হতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ডলির বিরুদ্ধে যাকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ড্রেস নির্মাতার স্ত্রী সুলতানা পারভিন রিপা। তিনি জিবির বর্তমান কমিটির কয়েকজন সদস্যের আস্থাভাজন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, টিপু শিক্ষার্থী ‘অবৈধ ভর্তির জন্য চাপ’ দিতে স্কুলে মহড়া দিয়েছেন। স্কুলে ভর্তির যে কলোনি কোটা (৪০ শতাংশ) রয়েছে, তাও তিনি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ওই কোটার বাইরেও ভর্তির জন্য চাপ দিতে এখন তিনি স্কুলে মহড়া দিচ্ছেন। ২২ মে রাতে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে এমন অভিযোগের কথা নিশ্চিত করেন স্কুলের অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা বেগমও। ওই রাতে আওয়ামী লীগের মতিঝিল থানা শাখার সভাপতি ও জিবির বর্তমান সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও ‘অবৈধ ভর্তির চাপ সৃষ্টি’র জন্য মহড়া দেয়ার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার কথাও জানান। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে টিপু বলেন, নির্বাচনে স্ত্রীর পক্ষে প্রচারণার জন্য স্কুলে গিয়েছেন তিনি, ভর্তির চাপ দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি আরও দাবি করেন, ‘স্কুলটিতে বর্তমানে দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের বাপ-দাদারা এটি গড়ে গেছেন। তাই চেয়ে চেয়ে দেখতে পারি না। আমরা জিবি দখল নয়, দুর্নীতির অবসান চাই। তাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলোনি কোটা ৪০ ভাগ রয়েছে। সেটা বৈধ ভর্তি। নির্দিষ্ট শর্তপূরণ না করলে কেউ এ কোটায় ভর্তি হতে পারে না। কিন্তু এবারও বৈধ ভর্তির বাইরে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ৭০ জনকে অবৈধভাবে ভর্তি করা হয়েছে। আমি সেটার প্রতিবাদ করি বলে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ করা হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী কোনো স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক জিবি কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। অথচ আশরাফ তালুকদার গ্রুপের হয়ে ‘ছ’ আদ্যাক্ষরের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক জিবি কমিটিতে নির্বাচিত হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জানা গেছে, এই শিক্ষক প্রার্থিতা দাখিল করলে প্রিসাইডিং অফিসার ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদা খন্দকার প্রবিধানমালার ২-এর থ অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিল করেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে এই প্রার্থী ঢাকা জেলার এডিসির (শিক্ষা) কাছে আপিল করলে তিনিও তা খারিজ করে দেন। এরপরও এই প্রার্থী এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা দাখিল করেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। স্কুলের বিভিন্ন নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০০৩ সালের পর অধিকাংশ সময়ে এই শিক্ষক জিবিতে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে থেকেছেন। সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় প্রমাণ করে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিবি কমিটির পদ কতটা লোভনীয় হতে পারে(!) সূত্র জানায়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি দখলের চেষ্টায় শুধু এই শিক্ষকই হাইকোর্টে রিট মামলা করেননি। নির্বাচন ঠেকানোর জন্য আরও দুটি রিট মামলা হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জিবি নির্বাচনে ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারেন না। এই বিধি দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি মামলা দাখিল হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে দাতা সদস্যদের ভোটার করা নিয়ে পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। সোমবার এ মামলার (দাতা সদস্য) শুনানি অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে। হাইকোর্ট দু’জন দাতা সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক আরও জানিয়েছেন, উল্লিখিত তিনটি মামলার মধ্যে প্রথম দুটির বিষয়ে বিধিমালায় পরিষ্কার করে লেখা থাকা সত্ত্বেও রিট দাখিলের বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মূলত নির্বাচন স্থগিত করে দেয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। কেননা, বর্তমানে উল্লিখিত সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়মবহির্ভূতভাবে জিবির সদস্য আছেন। তার সঙ্গে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্কুলের শীর্ষ শিক্ষকও। তাই নির্বাচন না হলে এই সিন্ডিকেটই বহাল তবিয়তে থাকতে পারবে। বিশেষ করে ১৩ জুন বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে আরেকটি সিন্ডিকেট কমিটি অনুমোদন করানো সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় নির্বাচন স্থগিতের মতো ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যুগান্তরের কাছে অসংখ্য অভিযোগ এসেছে।
জানা গেছে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে এক শ্রেণীর অভিভাবক ও কয়েকজন শিক্ষক মিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়ে দুটি গ্রুপও তৈরি হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে দুই গ্রুপ এক রকম মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এরা দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে স্কুলের বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব এতদিন ছাইচাপা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির (জিবি) নির্বাচন সামনে রেখে তা প্রকাশ পেয়েছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে হাইকোর্টে একাধিক রিট দাখিল হয়েছে। এমনকি দু’গ্রুপ একাধিক দিন পাল্টাপাল্টি মহড়া দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশংকা, পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে- এ নিয়ে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে। এ রকম আশংকায় অভিভাবকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রবিধানমালা’ অনুযায়ী দেশের বেসরকারি পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার একক ক্ষমতা জিবির হাতে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী এবং ৬ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নানা খাতে আদায় করা ফি, প্রতিবছর বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তি, কোচিং, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বদলি, উপরের ক্লাসে শিক্ষার্থী পদোন্নতি, ক্লাস শিক্ষক নিয়োগ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য মনোনয়ন, বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা, স্কুল ড্রেস, ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, আসবাবপত্র, পুরাতন বই বিক্রি, জেনারেটর পরিচালনাসহ নানা খাতের কার্যক্রমে বছরে কোটি কোটি টাকা আদায় ও লেনদেন হয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কার্যক্রমে ব্যাপক অস্বচ্ছতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও বাণিজ্যের ঘটনা ঘটে। তাই প্রতিষ্ঠানের জিবি যাদের দখলে থাকবে, তারাই এ বাণিজ্যের অলিখিত লাইসেন্স(!) পেয়ে যান। এমন প্রত্যাশা ও অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থান্বেষী গ্রুপ দুটি মরিয়া হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। আর এ কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর নির্বাচন আয়োজন সত্ত্বেও কমিটি দখল প্রশ্নে দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আর এটা করতে গিয়েই উচ্চ আদালতে মামলা, এমনকি প্রতিপক্ষকে দমনের লক্ষ্যে কেউ কেউ সরকার প্রধানের নাম ভাঙানোর চেষ্টাও করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে স্কুলটিতে আওয়ামী লীগের একটি অংশের মহড়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও জিবির সদস্য সচিব ড. শাহানআরা বেগম। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক, না অবৈধ ভর্তির জন্য চাপ দিতে এ মহড়ার ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান। বিগত বেশ কয়েকদিন স্কুলটিতে সরেজমিন পরিদর্শনকালে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে যুগান্তর প্রতিবেদকের কয়েক দফা আলাপ হয়। তারা যুগান্তরকে জানান, ৬ জুন স্কুলের জিবির নির্বাচন। এর আগে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে ১ জুন। কিন্তু এ নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সহিংস ঘটনা ঘটলে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেন।
তবে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, এরপরও তারা নির্বাচন চান। কেননা, নিয়মিত কমিটি ও কমিটিতে অধিকাংশ অভিভাবকের কাক্সিক্ষত প্রতিনিধি না থাকায় স্কুলটি একটি ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে তাদের দাবি। দৃষ্টান্ত দিয়ে তারা অভিযোগ করেন, স্কুলে প্রতিবছর বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তি নিয়ে ঘোরতর বাণিজ্য হয়। বৈধভাবে যে ক’জন ভর্তি হয়, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অবৈধভাবে ভর্তি করার ঘটনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত রেটের বেশি ফি নেয়া হয়। এ দশা এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায়ও। অতিরিক্ত ফি নেয়ার কারণে গত নভেম্বরে হাইকোর্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে তলব করেছিলেন। হাইকোর্ট ওই সময় বাড়তি নেয়া ফি ফেরত দিতে নির্দেশও দেন। কিন্তু সব অভিভাবক তাদের কাছ থেকে নেয়া বাড়তি অর্থ ফেরত পাননি বলে নাম প্রকাশ না করে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন। তারা বলেন, গভর্নিং বডি বা জিবি কমিটিতে নির্বাচিত ও সৎ প্রতিনিধি পাঠাতে পারলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতো। এ কারণেই তারা নির্বাচন চান। শান্তিনগর এলাকার দু’জন অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা এসএসসি পাস করলে এ স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়বে। তাই অনেক কিছু বলতে চাইলেও তারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে পারছেন না।’
এ ব্যাপারে স্কুলটিতে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীদের সংগঠন অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু শিক্ষক আর জিবির সদস্যের কারণে স্কুলে লেখাপড়ার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ লেখাপড়ার পরিবর্তে অর্থ আয়ের নেশায় নেমে পড়েছেন। আমরা স্কুলে সংঘটিত সবধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান চাই।
৬ জুন প্রতিষ্ঠানটির জিবির বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিনিধি নির্বাচন। মোট ১৩ সদস্যের জিবির মধ্যে সভাপতি হিসেবে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। পদাধিকার বলে সদস্য সচিব হলেন অধ্যক্ষ। বাকি ১১ সদস্যের মধ্যে ১০টিতে নির্বাচন হচ্ছে। ১০ সদস্যের মধ্যে অভিভাবক প্রতিনিধি কলেজ শাখায় ২, স্কুল শাখায় ২, প্রাথমিকে ১ এবং সংরক্ষিত মহিলা ১ জন। শিক্ষক প্রতিনিধি কলেজ, স্কুল ও সংরক্ষিত মহিনা ১ জন করে ৩ জন এবং দাতা সদস্য ১ জনসহ মোট ১০ জন। প্রাথমিকে শিক্ষক ভোটার না থাকায় এ কোটায় শিক্ষক প্রতিনিধি পদে নির্বাচন হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি গ্রুপ (সিন্ডিকেট) তৈরি হয়েছে। এর একাংশে আছেন আওয়ামী লীগের মতিঝিল থানা শাখার সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। অপর অংশে সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। এদের মধ্যে আশরাফ তালুকদার বিগত প্রায় সাড়ে ৬ বছর ধরে বিদ্যোৎসাহী কোটায় জিবির সদস্য। টিপু বর্তমানে কোনো পদে নেই। নির্বাচন দেয়ায় কমিটিতে বসার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় টিপু নতুন করে কমিটিতে আসার চেষ্টা শুরু করেছেন। যে কারণে তিনি নিজের স্ত্রী ফারজানা ডলিকে জিবির সদস্য পদে প্রার্থী করা থেকে শুরু করে অন্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন কমিটির চেয়ার আঁকড়ে থাকা বিদ্যমান জিবির প্রভাবশালী সদস্যরা নিজেদের কর্তৃত্ব বহাল রাখতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এই অংশটি গোলাম আশরাফ তালুকদারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন বলে জানা গেছে। ওদিকে বসে নেই টিপু গ্রুপ। তারাও যে কোনো মূল্যে নতুন কমিটি গঠন করে তার নিয়ন্ত্রণ কর্তা হতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ডলির বিরুদ্ধে যাকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ড্রেস নির্মাতার স্ত্রী সুলতানা পারভিন রিপা। তিনি জিবির বর্তমান কমিটির কয়েকজন সদস্যের আস্থাভাজন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, টিপু শিক্ষার্থী ‘অবৈধ ভর্তির জন্য চাপ’ দিতে স্কুলে মহড়া দিয়েছেন। স্কুলে ভর্তির যে কলোনি কোটা (৪০ শতাংশ) রয়েছে, তাও তিনি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ওই কোটার বাইরেও ভর্তির জন্য চাপ দিতে এখন তিনি স্কুলে মহড়া দিচ্ছেন। ২২ মে রাতে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে এমন অভিযোগের কথা নিশ্চিত করেন স্কুলের অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা বেগমও। ওই রাতে আওয়ামী লীগের মতিঝিল থানা শাখার সভাপতি ও জিবির বর্তমান সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও ‘অবৈধ ভর্তির চাপ সৃষ্টি’র জন্য মহড়া দেয়ার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার কথাও জানান। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে টিপু বলেন, নির্বাচনে স্ত্রীর পক্ষে প্রচারণার জন্য স্কুলে গিয়েছেন তিনি, ভর্তির চাপ দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি আরও দাবি করেন, ‘স্কুলটিতে বর্তমানে দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের বাপ-দাদারা এটি গড়ে গেছেন। তাই চেয়ে চেয়ে দেখতে পারি না। আমরা জিবি দখল নয়, দুর্নীতির অবসান চাই। তাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলোনি কোটা ৪০ ভাগ রয়েছে। সেটা বৈধ ভর্তি। নির্দিষ্ট শর্তপূরণ না করলে কেউ এ কোটায় ভর্তি হতে পারে না। কিন্তু এবারও বৈধ ভর্তির বাইরে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ৭০ জনকে অবৈধভাবে ভর্তি করা হয়েছে। আমি সেটার প্রতিবাদ করি বলে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ করা হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী কোনো স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক জিবি কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। অথচ আশরাফ তালুকদার গ্রুপের হয়ে ‘ছ’ আদ্যাক্ষরের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক জিবি কমিটিতে নির্বাচিত হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জানা গেছে, এই শিক্ষক প্রার্থিতা দাখিল করলে প্রিসাইডিং অফিসার ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদা খন্দকার প্রবিধানমালার ২-এর থ অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিল করেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে এই প্রার্থী ঢাকা জেলার এডিসির (শিক্ষা) কাছে আপিল করলে তিনিও তা খারিজ করে দেন। এরপরও এই প্রার্থী এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা দাখিল করেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। স্কুলের বিভিন্ন নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০০৩ সালের পর অধিকাংশ সময়ে এই শিক্ষক জিবিতে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে থেকেছেন। সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় প্রমাণ করে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিবি কমিটির পদ কতটা লোভনীয় হতে পারে(!) সূত্র জানায়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি দখলের চেষ্টায় শুধু এই শিক্ষকই হাইকোর্টে রিট মামলা করেননি। নির্বাচন ঠেকানোর জন্য আরও দুটি রিট মামলা হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জিবি নির্বাচনে ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারেন না। এই বিধি দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি মামলা দাখিল হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে দাতা সদস্যদের ভোটার করা নিয়ে পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। সোমবার এ মামলার (দাতা সদস্য) শুনানি অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে। হাইকোর্ট দু’জন দাতা সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক আরও জানিয়েছেন, উল্লিখিত তিনটি মামলার মধ্যে প্রথম দুটির বিষয়ে বিধিমালায় পরিষ্কার করে লেখা থাকা সত্ত্বেও রিট দাখিলের বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মূলত নির্বাচন স্থগিত করে দেয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। কেননা, বর্তমানে উল্লিখিত সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়মবহির্ভূতভাবে জিবির সদস্য আছেন। তার সঙ্গে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্কুলের শীর্ষ শিক্ষকও। তাই নির্বাচন না হলে এই সিন্ডিকেটই বহাল তবিয়তে থাকতে পারবে। বিশেষ করে ১৩ জুন বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে আরেকটি সিন্ডিকেট কমিটি অনুমোদন করানো সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় নির্বাচন স্থগিতের মতো ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যুগান্তরের কাছে অসংখ্য অভিযোগ এসেছে।
No comments