জননিরাপত্তাঃ সবকিছু কি ভেঙে পড়ছে?
রাজধানীসহ সারা দেশে খুন-ডাকাতি বেড়ে
গেছে। রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ছিনতাই করা হয়েছে ৩৩ লাখ
টাকা। বাসে-ট্রাকে-পরিবহনে ধর্ষণ ঘটেই চলেছে। বাসাবাড়িতে ডাকাতির খবর হয়ে
উঠেছে নিত্যনৈমিত্তিক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের কারও
কারও দুষ্কৃতি পরিস্থিতিকে আরও বেসামাল করে তুলছে।
সবকিছু কি তাহলে ভেঙে পড়ছে? খুন-রাহাজানির হাত থেকে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও রেহাই পাচ্ছেন না। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁর সরকারি বাসভবনের ভেতরেই ডাকাতি হয়েছে গত রোববার ভোরে। প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাই আর উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার বাসায় ডাকাতি থেকে স্পষ্ট হয়, অপরাধীরা আর ধরা পড়ার ভয় করছে না। মোটামুটি নির্ভয়েই অপরাধ করে যাওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ অপরাধীদের টিকি স্পর্শ করতে পারছে না।
এ অবস্থার জন্য প্রথমেই জবাবদিহি করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি কি পুলিশ বাহিনীকে অপরাধ দমনে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন? নইলে পুলিশের ভয় অপরাধীদের নিরস্ত করতে পারছে না কেন? কোনো সমাজে কোনো দেশেই অপরাধকে একেবারে নির্মূল করা যায় না। তবে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে কিন্তু পুলিশ থাকবে উদাসীন; এমন অবস্থা তো জননিরাপত্তাব্যবস্থা নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকারের টনক থাকলে তো তা নড়ে ওঠার কথা! কিন্তু দেখা যায়, মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান ও মুখপত্ররা ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে’ দাবি করে সন্তোষে ভোগেন। এ ধরনের দায়িত্বহীন সন্তোষে জনমনে অনাস্থা জন্মে।
পুলিশের শক্তি ও জনবল বৃদ্ধি করা হলেও, র্যাবকে বিপুল ক্ষমতা দেওয়া হলেও অপরাধ দমনে সাফল্য খুবই কম। এর অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর তাদের দায়িত্ব পালনে বিরাট রকমের গাফিলতি থাকছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করায় আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। টনক থাকলে সরকারকে এখনই নড়ে বসতে হবে।
সবকিছু কি তাহলে ভেঙে পড়ছে? খুন-রাহাজানির হাত থেকে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও রেহাই পাচ্ছেন না। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁর সরকারি বাসভবনের ভেতরেই ডাকাতি হয়েছে গত রোববার ভোরে। প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাই আর উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার বাসায় ডাকাতি থেকে স্পষ্ট হয়, অপরাধীরা আর ধরা পড়ার ভয় করছে না। মোটামুটি নির্ভয়েই অপরাধ করে যাওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ অপরাধীদের টিকি স্পর্শ করতে পারছে না।
এ অবস্থার জন্য প্রথমেই জবাবদিহি করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি কি পুলিশ বাহিনীকে অপরাধ দমনে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন? নইলে পুলিশের ভয় অপরাধীদের নিরস্ত করতে পারছে না কেন? কোনো সমাজে কোনো দেশেই অপরাধকে একেবারে নির্মূল করা যায় না। তবে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে কিন্তু পুলিশ থাকবে উদাসীন; এমন অবস্থা তো জননিরাপত্তাব্যবস্থা নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকারের টনক থাকলে তো তা নড়ে ওঠার কথা! কিন্তু দেখা যায়, মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান ও মুখপত্ররা ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে’ দাবি করে সন্তোষে ভোগেন। এ ধরনের দায়িত্বহীন সন্তোষে জনমনে অনাস্থা জন্মে।
পুলিশের শক্তি ও জনবল বৃদ্ধি করা হলেও, র্যাবকে বিপুল ক্ষমতা দেওয়া হলেও অপরাধ দমনে সাফল্য খুবই কম। এর অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর তাদের দায়িত্ব পালনে বিরাট রকমের গাফিলতি থাকছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করায় আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। টনক থাকলে সরকারকে এখনই নড়ে বসতে হবে।
ইউএনওকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসায় ডাকাতি
আপডেট: ২৫মে, ২০১৫ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁর
সরকারি বাসভবনে ডাকাতি করা হয়েছে। ডাকাতেরা নিজেদের চরমপন্থী বলে পরিচয়
দেয়।
গতকাল রোববার ভোরের ওই ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক ভবনগুলোতে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ইউএনও কে এম মামুন উজ্জামান জানান, দোতলায় তিনি স্ত্রী ফাহিমা খাতুন এবং দুই মেয়ে ফাতিহা জাহান নুহা (৬) ও মুনতাহা জাহান নওশিনকে (৪) নিয়ে বাস করেন। নিচতলায় একটি কক্ষে পক্ষাঘাতগ্রস্ত শাশুড়ি রহিমা খাতুন ও অন্য একটি কক্ষে নৈশপ্রহরী মামুন হোসেন থাকেন। রোববার রাত তিনটার দিকে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তিনজন দুর্বৃত্ত দোতলার খাবারঘরের জানালার গ্রিল কেটে শয়নকক্ষে প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তদের একজন চোখে টর্চলাইট মেরে ও গলায় অস্ত্র ধরে তাঁকে জিম্মি করে ফেলে। দুর্বৃত্তরা তাঁর (ইউএনওর) নিজের কোনো আগ্নেয়াস্ত্র আছে কি না জানতে চায়। অন্য দুজন সারা ঘর তল্লাশি করে নগদ সাত হাজার টাকা ও আড়াই ভরি সোনার গয়না নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা নিজেদের চরমপন্থী দলের সদস্য বলে নিজেদের পরিচয় দেয়।
ইউএনও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা মর্যাদার ব্যাপার। উপজেলাবাসীকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমার। যদি আমার বাড়িতে ডাকাতি হয়, সাধারণ মানুষের কী হবে?’
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন ও পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসানসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ইউএনওর বাসভবন পরিদর্শন করেছেন। সংরক্ষিত এলাকায় এ ধরনের ডাকাতির ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরের সরকারি বাসভবনে ইউএনও ও আরও দুই কর্মচারী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। একই চত্বরে অবস্থিত ডরমিটরিতে আরও চারজন কর্মচারী বসবাস করেন। এ ছাড়া ইউএনও কার্যালয়সহ উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব কার্যালয় এই চত্বরে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
গতকাল রোববার ভোরের ওই ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক ভবনগুলোতে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ইউএনও কে এম মামুন উজ্জামান জানান, দোতলায় তিনি স্ত্রী ফাহিমা খাতুন এবং দুই মেয়ে ফাতিহা জাহান নুহা (৬) ও মুনতাহা জাহান নওশিনকে (৪) নিয়ে বাস করেন। নিচতলায় একটি কক্ষে পক্ষাঘাতগ্রস্ত শাশুড়ি রহিমা খাতুন ও অন্য একটি কক্ষে নৈশপ্রহরী মামুন হোসেন থাকেন। রোববার রাত তিনটার দিকে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তিনজন দুর্বৃত্ত দোতলার খাবারঘরের জানালার গ্রিল কেটে শয়নকক্ষে প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তদের একজন চোখে টর্চলাইট মেরে ও গলায় অস্ত্র ধরে তাঁকে জিম্মি করে ফেলে। দুর্বৃত্তরা তাঁর (ইউএনওর) নিজের কোনো আগ্নেয়াস্ত্র আছে কি না জানতে চায়। অন্য দুজন সারা ঘর তল্লাশি করে নগদ সাত হাজার টাকা ও আড়াই ভরি সোনার গয়না নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা নিজেদের চরমপন্থী দলের সদস্য বলে নিজেদের পরিচয় দেয়।
ইউএনও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা মর্যাদার ব্যাপার। উপজেলাবাসীকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমার। যদি আমার বাড়িতে ডাকাতি হয়, সাধারণ মানুষের কী হবে?’
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন ও পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসানসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ইউএনওর বাসভবন পরিদর্শন করেছেন। সংরক্ষিত এলাকায় এ ধরনের ডাকাতির ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরের সরকারি বাসভবনে ইউএনও ও আরও দুই কর্মচারী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। একই চত্বরে অবস্থিত ডরমিটরিতে আরও চারজন কর্মচারী বসবাস করেন। এ ছাড়া ইউএনও কার্যালয়সহ উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব কার্যালয় এই চত্বরে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
দিন–দুপুরে গুলি করে ৩৩ লাখ টাকা ছিনতাই
আপডেট: ২৫মে, ২০১৫ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকের দূরত্ব ৫০ গজের মতো। দুটি ব্যাগে ৩৩ লাখ ২৭
হাজার টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তা হেঁটে ব্যাংকে জমা দিতে
যাচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যাংকের ১০-১২ গজ আগে তাঁদের একজনকে গুলি করে টাকাগুলো
ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
রাজধানীর বড় মগবাজারে গতকাল রোববার দিন-দুপুরে এই ছিনতাই হয়। টাকাগুলো ছিল বড় মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডে অবস্থিত ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়ামেরিন ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের। ছিনতাইকারীদের গুলিতে আহত প্রতিষ্ঠানটির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সেলিম আকতারকে (২৯) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, বেলা দেড়টার দিকে সেলিম প্রতিষ্ঠানের আরেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাসকে নিয়ে আউটার সার্কুলার রোডের একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৩৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা জমা দিতে হেঁটে যাচ্ছিলেন। টাকাগুলো ছিল দুটি চামড়ার ব্যাগে। ২০ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগটি ছিল পিন্টুর হাতে। বাকি টাকাভর্তি ব্যাগটি ছিল সেলিমের হাতে। তাঁরা কথা বলতে বলতে ব্যাংক থেকে ১০-১২ গজ দূরে পৌঁছালে পাঁচ-ছয়জন যুবক তাঁদের গতিরোধ করেন। তাঁরা সেলিমকে ধরে তাঁর কাছে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি ব্যাগ শক্ত করে ধরে রাখলে যুবকদের একজন তাঁকে গুলি করেন। গুলি তাঁর বাঁ ঊরুতে বিদ্ধ হলে তিনি ব্যাগটি ছেড়ে দেন।
সেলিমের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা দেখে পিন্টু ভয়ে দৌড়ে নিজেদের কর্মস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ভারসাম্য রাখতে না পারায় তাঁর হাতে থাকা ব্যাগটি রাস্তায় পড়ে যায়। ব্যাগটি উঠাতে গেলে যুবকেরা তাঁকে ধাওয়া দিয়ে গুলি করেন। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে তিনি ভয়ে পাশেই থাকা একটি প্রাইভেট কারের আড়ালে গিয়ে লুকান। এরপর ওই যুবকেরা রাস্তা থেকে ওই ব্যাগটিও তুলে দৌড়ে গলির ভেতরের দিকে চলে যান।
বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, র্যা ব ও পুলিশের কর্মকর্তারা পিন্টুসহ আশপাশের বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার ব্যাপারে তথ্য নিচ্ছিলেন। তখনো আতঙ্কে হাত কাঁপছিল পিন্টুর। অ্যাকুয়ামেরিন ডিস্ট্রিবিউশনে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আতঙ্কগ্রস্ত দেখা যায়। সেখানেও র্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।
পিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ওই যুবকদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। কেউই মুখোশ পরা ছিল না। গুলির আওয়াজ শুনে আশপাশের লোকজন আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ফলে ওই যুবকেরা দৌড়ে নির্বিঘ্নে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়েই চলে যায়।
অ্যাকুয়ামেরিন ডিস্ট্রিবিউশনের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ওষুধ সরবরাহ করেন। প্রতিদিন ওষুধ সরবরাহ করে যে টাকা সংগ্রহ হয় তা প্রতিদিন ব্যাংকেই জমা দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার যে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে, তা গতকাল জমা দিতেই ব্যাংকে যাচ্ছিলেন সেলিম ও পিন্টু। তাঁদের ধারণা, এই ছিনতাই পূর্বপরিকল্পিত।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজধানীর বড় মগবাজারে গতকাল রোববার দিন-দুপুরে এই ছিনতাই হয়। টাকাগুলো ছিল বড় মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডে অবস্থিত ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়ামেরিন ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের। ছিনতাইকারীদের গুলিতে আহত প্রতিষ্ঠানটির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সেলিম আকতারকে (২৯) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, বেলা দেড়টার দিকে সেলিম প্রতিষ্ঠানের আরেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পিন্টু রঞ্জন দাসকে নিয়ে আউটার সার্কুলার রোডের একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৩৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা জমা দিতে হেঁটে যাচ্ছিলেন। টাকাগুলো ছিল দুটি চামড়ার ব্যাগে। ২০ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগটি ছিল পিন্টুর হাতে। বাকি টাকাভর্তি ব্যাগটি ছিল সেলিমের হাতে। তাঁরা কথা বলতে বলতে ব্যাংক থেকে ১০-১২ গজ দূরে পৌঁছালে পাঁচ-ছয়জন যুবক তাঁদের গতিরোধ করেন। তাঁরা সেলিমকে ধরে তাঁর কাছে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি ব্যাগ শক্ত করে ধরে রাখলে যুবকদের একজন তাঁকে গুলি করেন। গুলি তাঁর বাঁ ঊরুতে বিদ্ধ হলে তিনি ব্যাগটি ছেড়ে দেন।
সেলিমের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা দেখে পিন্টু ভয়ে দৌড়ে নিজেদের কর্মস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ভারসাম্য রাখতে না পারায় তাঁর হাতে থাকা ব্যাগটি রাস্তায় পড়ে যায়। ব্যাগটি উঠাতে গেলে যুবকেরা তাঁকে ধাওয়া দিয়ে গুলি করেন। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে তিনি ভয়ে পাশেই থাকা একটি প্রাইভেট কারের আড়ালে গিয়ে লুকান। এরপর ওই যুবকেরা রাস্তা থেকে ওই ব্যাগটিও তুলে দৌড়ে গলির ভেতরের দিকে চলে যান।
বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, র্যা ব ও পুলিশের কর্মকর্তারা পিন্টুসহ আশপাশের বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার ব্যাপারে তথ্য নিচ্ছিলেন। তখনো আতঙ্কে হাত কাঁপছিল পিন্টুর। অ্যাকুয়ামেরিন ডিস্ট্রিবিউশনে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আতঙ্কগ্রস্ত দেখা যায়। সেখানেও র্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।
পিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ওই যুবকদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। কেউই মুখোশ পরা ছিল না। গুলির আওয়াজ শুনে আশপাশের লোকজন আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ফলে ওই যুবকেরা দৌড়ে নির্বিঘ্নে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়েই চলে যায়।
অ্যাকুয়ামেরিন ডিস্ট্রিবিউশনের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ওষুধ সরবরাহ করেন। প্রতিদিন ওষুধ সরবরাহ করে যে টাকা সংগ্রহ হয় তা প্রতিদিন ব্যাংকেই জমা দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার যে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে, তা গতকাল জমা দিতেই ব্যাংকে যাচ্ছিলেন সেলিম ও পিন্টু। তাঁদের ধারণা, এই ছিনতাই পূর্বপরিকল্পিত।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
No comments