৩ কোটি টাকার জমির মালিকানা নিয়ে লড়াই
সিলেটের
কুমারপাড়ায় ৩ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক কে, সিটি করপোরেশন নাকি অন্য
কেউ- এ নিয়ে শুরু হয়েছে ‘আইনি লড়াই’। একটি পক্ষ ওই ভূমি তাদের দাবি করে
আদালতে মামলা করেছে। হামলা চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কাজ। এ অবস্থায় সিটি
করপোরেশন কর্তৃপক্ষও বসে নেই। তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ
ডায়েরি করেছে। অনেকেই বলছেন, আইনি ফাঁক থাকায় একটি পক্ষ আদালতে মামলা
ঠুকেছে। এতে তারা অনেকটা সুবিধাও পেতে পারে। আর এটি হলে বেহাত হয়ে যাবে
সিলেট সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৩ কোটি টাকার সম্পত্তি। এ মুহূর্তে
সিলেট সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চলছে মেয়র ছাড়া। সিটি করপোরেশনের প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশাসক
হিসেবেই কাজ চালাচ্ছেন। এর ফলে অনেক কাজে জনসম্পৃক্ততার বিষয়টি পরিষ্কার
হচ্ছে না। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু
কাজ শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় সিটি
করপোরেশনের স্টাফ কোয়ার্টার ভেঙে নতুনভাবে তৈরি করার উদ্যোগ। ওই এলাকায়
জমির পরিমাণ প্রায় ১০ ডিসিমেল। জানা গেছে, জমির মূল্য হবে আনুমানিক ৩ কোটি
টাকা। ডিসিমেল ৩০ লাখ হারে ওই এলাকায় জমি বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, সিলেট
নগরীর কুমারপাড়ায় পানির কুয়ার জন্য ১৯৬৫ সালে প্রায় ১০ শতক জায়গা অধিগ্রহণ
করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কয়েক বছর পর জায়গাটি তৎকালীন সিলেট
পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়। পরে পৌরসভা থেকে সিলেট সিটি
করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ওই জায়গায় স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়।
স্টাফ কোয়ার্টারটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সম্প্রতি সেখানে ৮ তলাবিশিষ্ট আধুনিক
একটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় করপোরেশন। এজন্য কয়েক মাস
আগে পুরনো স্টাফ কোয়ার্টারের জিনিসপত্র নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।
প্রায় দেড় মাস আগে ওই জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরুও করা হয়েছে।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশন নতুন করে কাজ শুরু করার পর ওই এলাকার কয়েকজন
বাসিন্দা জমিটি তাদের দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। নগরীর সওদাগরপাড়ার
মোহাম্মদ ইদ্রিছ ও হাফিজা বানুর উত্তরাধিকারী বলে পরিচয় দেয়া আলী আহমদ ও
আলী আহসান, আলী হায়দারসহ ১৩ ব্যক্তি ওই জায়গার মালিকানা দাবি করে গত ২০শে
এপ্রিল সিলেট সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব মামলা করেন। তারা ওই ১০ শতক
জায়গার ওপর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ
যাতে কোনপ্রকার বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা
প্রার্থনা করেন। বর্তমানে ভূমি দাবিদার অংশের আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে।
এর পরও সিটি করপোরেশনের নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকায় সম্প্রতি উকিল নোটিশও দেন
তারা। পাশাপাশি রোববার বিকালে উত্তরাধিকার দাবিদার অংশের লোকজন কাজ বন্ধ
করতে ওই ভূমিতে যায়। তারা শ্রমিকদের গালাগাল করে কাজ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে
উত্তেজনা দেখা দেয় কুমারপাড়া এলাকা। উত্তরাধিকারী দাবিদার আলী হায়দার বলেন,
১৯৫৬ সালের এসএ রেকর্ড এ জায়গা তার দাদার নামে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ
জায়গা ভোগদখল করে আসছিলেন। সমপ্রতি তাদের জায়গার ওপর নগর ভবন কর্তৃপক্ষ
ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করায় তারা মামলা করেছেন। আদালতে মামলাটি শুনানির
অপেক্ষায় রয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর
আজিজুর রহমান বলেন, ১৯৬৫ সালে নগরীর কুমারপাড়া সওদারগরপাড়াস্থ ১০ শতক জায়গা
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিগ্রহণ করে। প্রায় দেড় মাস আগে ওই জায়গায় আধুনিক
একটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ শুরু করে করপোরেশন। ১০-১৫ দিন আগে একটি
পক্ষ জায়গার মালিকানা দাবি করে নির্মাণকাজে বাধা দেয়। রোববার তারা কিছু
লোক নিয়ে নির্মাণকাজে বাধা দেয়। তিনি বলেন, যারা মালিকানা দাবি করছেন, তারা
ভুয়া। বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী
কর্মকর্তা এনামুল হাবিব মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের নির্মাণকাজে
বাধা দেয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এতে পুলিশের সহায়তা চাওয়া
হয়েছে। এখন সিটি করপোরেশন সেখানে ফের কাজ শুরু করবে।
No comments