পরিত্যক্ত ভবনে হাজার মানুষের বাস, এজিবি কলোনির ঝুঁকিপূর্ণ দুই ভবন by অরূপ দত্ত
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পূর্ব দিকে এজিবি কলোনির পরিত্যক্ত ভবন দুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ছবিটি রোববার তোলা l সাজিদ হোসেন |
১০
বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও রাজধানীর এজিবি কলোনির দুটি ভবনে বসবাস
করছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। আর ভবন দুটির ৮৮টি ফ্ল্যাট নিয়ে চলছে
বাণিজ্য। গণপূর্ত অধিদপ্তর পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও এখানে কয়েকজন সরকারি
কর্মচারীও পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পূর্ব দিকে এজিবি কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা ভবন দুটির বারান্দায় সিমেন্টের আস্তর থেকে রড বেরিয়ে গেছে। কিছু কিছু ঝুলে আছে। পাঁচটি ঘর ঘুরে দেখা গেল, ছাদের বেশির ভাগ অংশ ফাটা।
ভবন দুটির গায়ে সরকারি কর্তৃপক্ষের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও সাঁটানো দেখে অনেকেরই নির্মম রসিকতা মনে হতে পারে। তাতে লেখা: ‘অত্র ভবন নং ৩৪ ও ৩৬ অতি পুরাতন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিগত ২০/০৩/২০০৫ ইং তারিখে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সেই জন্য এই ভবনে বসবাস মোটেই নিরাপদ নয়। এই ভবনে বসবাস করিলে ভবনজনিত কোন দুর্ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকিবে না।’
বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে অন্য ভবনের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, ‘এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়াই সরকার দায়িত্ব শেষ করেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দুটি ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১০৮। এর মধ্যে ২০টিতে থাকেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার লোক। বাকি ফ্ল্যাটগুলোর তিন শর বেশি পরিবার থাকে। এক একটি ফ্ল্যাটে তিনটি বা কোনোটিতে তারও বেশি পরিবার থাকে। সব মিলিয়ে লোকসংখ্যা প্রায় এক হাজার।
গত ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের পর ভবনগুলোর সব মানুষ নেমে এসেছিল নিচের মাঠে, রাস্তায়। দুপুরের ভূমিকম্পের পর রাতের বেলায়ও অনেক বাসিন্দা ঘরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে সব স্বাভাবিক।
ভবনে থাকার ঝুঁকি নিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। এক বৃদ্ধা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘বাড়ি ভাইঙা পড়লে আমরা মরুম, আপনের কী? আপনে কি আমাগোরে থাকতে দিবেন?’ বৃদ্ধার ছেলে আবদুর রহিম বলেন, নিতান্ত অসহায় হয়ে তাঁরা বাস করছেন। সবাই জানেন, যেকোনো মুহূর্তে ভবন ভেঙে পড়বে। কিন্তু তাঁদের অন্য উপায় নেই। এত কম ভাড়ায় এখানে বাসা পাওয়া যাবে না।
আবদুর রহিমের কথায় দু-তিনজন লোক খেপে গেলেন। একজন বললেন, ‘ভাড়া কিসের রে, আমরা তো বিনা ভাড়ায় থাকি।’ চুপ থাকেন আবদুর রহিম।
পরে নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে চারজন বাসিন্দা জানান, এখানে প্রায় সবাই ভাড়া দিয়েই থাকেন। একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন কাটা। রাতে কুপিবাতি জ্বলে। বেশির ভাগ ঘরে রান্না হয় লাকড়ির চুলায়। পানির লাইন আছে, তবে তার জন্য আলাদা টাকা গুনতে হয়।
ভাড়া কাদের দিতে হয়—এ বিষয়ে বাসিন্দাদের কেউই মুখ খুলতে চান না। পরে জানা যায়, মো. আলম নামের এক ব্যক্তি ১০টি ফ্ল্যাট থেকে মোট ৭০ হাজার টাকা ভাড়া নেন। তিনি নির্দিষ্ট দিন সন্ধ্যায় কলোনিতে আসেন। এ ছাড়া কলোনিরই সরকারদলীয় লোকজন বাকি ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া ওঠান।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘দফায় দফায় উচ্ছেদ করা হলেও বসবাসকারীরা আবারও ঢুকে পড়ে। তাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন কেটে দিয়েও স্থায়ীভাবে বের করা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, সরকারি ২০ জন কর্মকর্তার নামে এখানে ফ্ল্যাট বরাদ্দ ছিল। তাঁরা মামলা করায় ওঠানো যাচ্ছে না। এই ২০ জনকে অন্যত্র পুনর্বাসন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভবন
দুটি ভেঙে ফেলা হবে বলে প্রধান প্রকৌশলী জানান।
যারা ভাড়া নেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন—এই প্রশ্নে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, যারা বাণিজ্য করছে, তারা নিশ্চয়ই মাস্তান শ্রেণির। চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পূর্ব দিকে এজিবি কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা ভবন দুটির বারান্দায় সিমেন্টের আস্তর থেকে রড বেরিয়ে গেছে। কিছু কিছু ঝুলে আছে। পাঁচটি ঘর ঘুরে দেখা গেল, ছাদের বেশির ভাগ অংশ ফাটা।
ভবন দুটির গায়ে সরকারি কর্তৃপক্ষের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও সাঁটানো দেখে অনেকেরই নির্মম রসিকতা মনে হতে পারে। তাতে লেখা: ‘অত্র ভবন নং ৩৪ ও ৩৬ অতি পুরাতন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিগত ২০/০৩/২০০৫ ইং তারিখে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সেই জন্য এই ভবনে বসবাস মোটেই নিরাপদ নয়। এই ভবনে বসবাস করিলে ভবনজনিত কোন দুর্ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকিবে না।’
বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে অন্য ভবনের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, ‘এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়াই সরকার দায়িত্ব শেষ করেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দুটি ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১০৮। এর মধ্যে ২০টিতে থাকেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার লোক। বাকি ফ্ল্যাটগুলোর তিন শর বেশি পরিবার থাকে। এক একটি ফ্ল্যাটে তিনটি বা কোনোটিতে তারও বেশি পরিবার থাকে। সব মিলিয়ে লোকসংখ্যা প্রায় এক হাজার।
গত ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের পর ভবনগুলোর সব মানুষ নেমে এসেছিল নিচের মাঠে, রাস্তায়। দুপুরের ভূমিকম্পের পর রাতের বেলায়ও অনেক বাসিন্দা ঘরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে সব স্বাভাবিক।
ভবনে থাকার ঝুঁকি নিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। এক বৃদ্ধা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘বাড়ি ভাইঙা পড়লে আমরা মরুম, আপনের কী? আপনে কি আমাগোরে থাকতে দিবেন?’ বৃদ্ধার ছেলে আবদুর রহিম বলেন, নিতান্ত অসহায় হয়ে তাঁরা বাস করছেন। সবাই জানেন, যেকোনো মুহূর্তে ভবন ভেঙে পড়বে। কিন্তু তাঁদের অন্য উপায় নেই। এত কম ভাড়ায় এখানে বাসা পাওয়া যাবে না।
আবদুর রহিমের কথায় দু-তিনজন লোক খেপে গেলেন। একজন বললেন, ‘ভাড়া কিসের রে, আমরা তো বিনা ভাড়ায় থাকি।’ চুপ থাকেন আবদুর রহিম।
পরে নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে চারজন বাসিন্দা জানান, এখানে প্রায় সবাই ভাড়া দিয়েই থাকেন। একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন কাটা। রাতে কুপিবাতি জ্বলে। বেশির ভাগ ঘরে রান্না হয় লাকড়ির চুলায়। পানির লাইন আছে, তবে তার জন্য আলাদা টাকা গুনতে হয়।
ভাড়া কাদের দিতে হয়—এ বিষয়ে বাসিন্দাদের কেউই মুখ খুলতে চান না। পরে জানা যায়, মো. আলম নামের এক ব্যক্তি ১০টি ফ্ল্যাট থেকে মোট ৭০ হাজার টাকা ভাড়া নেন। তিনি নির্দিষ্ট দিন সন্ধ্যায় কলোনিতে আসেন। এ ছাড়া কলোনিরই সরকারদলীয় লোকজন বাকি ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া ওঠান।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘দফায় দফায় উচ্ছেদ করা হলেও বসবাসকারীরা আবারও ঢুকে পড়ে। তাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন কেটে দিয়েও স্থায়ীভাবে বের করা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, সরকারি ২০ জন কর্মকর্তার নামে এখানে ফ্ল্যাট বরাদ্দ ছিল। তাঁরা মামলা করায় ওঠানো যাচ্ছে না। এই ২০ জনকে অন্যত্র পুনর্বাসন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভবন
দুটি ভেঙে ফেলা হবে বলে প্রধান প্রকৌশলী জানান।
যারা ভাড়া নেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন—এই প্রশ্নে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, যারা বাণিজ্য করছে, তারা নিশ্চয়ই মাস্তান শ্রেণির। চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments