যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশি প্রার্থীদের নিয়ে অন্য রকম আমেজ, আগ্রহ by তবারুকুল ইসলাম
যুক্তরাজ্যের
সাধারণ নির্বাচনে প্রধান তিনটি দল থেকে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১১ জন। এর মধ্যে লেবার পার্টি থেকে সাতজন, লিবারেল
ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম) থেকে তিনজন ও কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন মনোনয়ন
পেয়েছেন।
সাধারণ নির্বাচনে এবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী লড়ছেন। এ কারণে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে অন্য রকম আমেজ, আগ্রহ। এই নির্বাচনকে তাঁরা দেখছেন রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে। আগামী বৃহস্পতিবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত রোববার ছিল নির্বাচনের আগে শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। দেশটির নির্বাচনী ভাষায় দিনটিকে বলা হয় ‘কি সিট ডে’। এদিন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ (মার্জিনাল) আসনগুলোকে শেষবারের মতো ঝালাই করে নিতে প্রচারণা চালানো হয়। লন্ডনের এমন দুটি ‘কি সিট’ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এবং ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে রূপা হক লড়ছেন লেবার দলের প্রার্থী হিসেবে। আসন দুটি এবার লেবার দলের অন্যতম টার্গেট সিট। রোববার ওই দুই আসনে প্রচারণায় অংশ নেন রুশনারা আলী।
২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে লেবার দলের প্রার্থী রুশনারা আলী প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি ওই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। গত নির্বাচনে প্রায় ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়া রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালে সিলেটের বিশ্বনাথে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হ্যাম্পস্ট্যাড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার দলের মনোনয়নে। গতবার এ আসনে এমপি ছিলেন লেবার দলের গ্লেন্ডা জ্যাকসন। টিউলিপ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন কিংস কলেজ থেকে।
লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে লেবার দলে র প্রার্থী রূপা হক কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক। গত নির্বাচনে কনজারভেটিভদের দখলে যাওয়া এ আসনটি এবার লেবারের অন্যতম ‘টার্গেট সিট’। ১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপার আদি বাড়ি পাবনায়।
লেবার দল থেকে লন্ডনের অদূরে বেকেনহাম আসনে প্রার্থী হয়েছেন মেরিনা আহমদ। নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেওয়া মেরিনা ছয় মাস বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন।
লন্ডনের কাছের ওয়েলউইন অ্যান্ড হার্টফিল্ড আসনে লেবার দলের প্রার্থী আনোয়ার বাবুল মিয়া। তিনি লড়ছেন কনজারভেটিভ দলের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপের সঙ্গে।
নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসনে লেবারের প্রার্থী আমরান হোসাইন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করা আমরানের জন্ম যুক্তরাজ্যে, বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে।
লুটনের রিগেইট অ্যান্ড বেনস্ট্যাড আসনে লেবার দলের প্রার্থী আলী আকলাকুল। তাঁর জন্ম লুটনে, আদি বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে।
লিবডেম থেকে মনোনয়ন পাওয়া তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী হলেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, আশুক আহমদ ও মোহাম্মদ সুলতান। সিলেটে জন্ম নেওয়া ব্যবসায়ী প্রিন্স সাদিক লড়ছেন নর্থ হ্যাম্পটন সাউথ আসনে। তিনি ২০০৭ সালে নর্থহ্যাম্পটনশায়ার কাউন্সিল নির্বাচনে বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সেলর।
আশুক আহমদ প্রার্থী হয়েছেন লুটন সাউথ আসনে। তাঁর জন্ম সিলেটের বিয়ানীবাজারে। ওয়েলসের আর্ফন আসনে লিবডেমের প্রার্থী মোহাম্মদ সুলতান। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জন্ম তাঁর।
গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী মিনা রহমান। তিনি লড়ছেন লন্ডনের বার্কিং আসনে। লেবার দলের মার্গারেট হজ ১৯৯৪ সাল থেকে এ আসনের এমপি। এবারও প্রার্থী হয়েছেন মার্গারেট। এটি লেবার দলের একটি নিরাপদ আসন হলেও জয়ের লক্ষ্য নিয়েই প্রচার চালান মিনা। তাঁর জন্ম সিলেটের ছাতকে। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা মিনা চাকরি করেন আবাসন সংস্থার ব্যবস্থাপক হিসেবে।
স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন সুমন হক। স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া সুমনের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। তিনিও লেবার দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে আদালতে হাজিরা দেওয়ায় তাঁর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে দল।
২০১০ সালে লেবার দল থেকে রুশনারা আলীসহ চারজন, লিবডেম ও কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গতবার মনোনয়ন পাওয়া ছয়জনের তিনজনই ছিলেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের প্রার্থী।
এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটির বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহও বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে নির্বাচনী আমেজ বেশি দৃশ্যমান। রোববার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেইনের মধুবন রেস্তোরাঁয় বসে নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছিলেন কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ বাংলাদেশি। কোন দলকে সমর্থন করেন—জানতে চাইলে তাঁরা অনেকটা সমস্বরে বললেন, লেবার পার্টি। কারণ হিসেবে বললেন, লেবার পার্টি অভিবাসীদের প্রতি ভালো আচরণ করে। অবশ্য যেকোনো দলের মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের পক্ষেই তাঁদের অবস্থান। শুধু রেস্তোরাঁয় নয়, সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা অন্যান্য স্থানেও জমে উঠছে নির্বাচনী আলাপ। এসব বাংলাদেশির আশা, এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে।
বাংলাদেশি প্রার্থীদের মধ্যে কতজন বিজয়ী হবেন তা নিয়ে ভাবছেন না লন্ডনের ব্রেন্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলর পারভেজ আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কতজন বিজয়ী হবেন সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে এসব বাংলাদেশি নিজেদের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে দলের এমপি প্রার্থী হওয়ার টিকিট অর্জন করেছেন। এটি নতুন প্রজন্মকে মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য যে অনুপ্রেরণা ও সাহস জোগাবে সেটাই বড় অর্জন।’
মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল পলিসি বিষয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিজস্ব গণ্ডির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশিদের এমন বিচরণ বেশ আশাব্যঞ্জক। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো বাংলাদেশিরাও এ দেশে আসার পর থেকেই নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তারই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে আজকের এই অবস্থান। তিনি বলেন, বর্ণবাদ, বৈষম্য, অধিকার কিংবা অস্তিত্ব সবকিছুই রাজনৈতিক বিষয়। তাই টিকে থাকতে হলে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন অত্যন্ত¯জরুরি। তাঁর মতে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব না থাকলে বৈষম্য থেকে রেহাই পাওয়া কিংবা অধিকার আদায় সম্ভব হয় না।
এবার প্রধান তিনটি দল থেকে ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতসহ এশীয় বংশোদ্ভূত মোট ১০২ জন এমপি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৬, লেবার ৩৪ ও লিবডেম ৩২ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এসব প্রার্থীর বেশির ভাগই ভারতীয় এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। গত মেয়াদে ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আটজন করে এমপি ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে।
সাধারণ নির্বাচনে এবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী লড়ছেন। এ কারণে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে অন্য রকম আমেজ, আগ্রহ। এই নির্বাচনকে তাঁরা দেখছেন রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে। আগামী বৃহস্পতিবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত রোববার ছিল নির্বাচনের আগে শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। দেশটির নির্বাচনী ভাষায় দিনটিকে বলা হয় ‘কি সিট ডে’। এদিন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ (মার্জিনাল) আসনগুলোকে শেষবারের মতো ঝালাই করে নিতে প্রচারণা চালানো হয়। লন্ডনের এমন দুটি ‘কি সিট’ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এবং ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে রূপা হক লড়ছেন লেবার দলের প্রার্থী হিসেবে। আসন দুটি এবার লেবার দলের অন্যতম টার্গেট সিট। রোববার ওই দুই আসনে প্রচারণায় অংশ নেন রুশনারা আলী।
২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে লেবার দলের প্রার্থী রুশনারা আলী প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি ওই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। গত নির্বাচনে প্রায় ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়া রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালে সিলেটের বিশ্বনাথে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হ্যাম্পস্ট্যাড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার দলের মনোনয়নে। গতবার এ আসনে এমপি ছিলেন লেবার দলের গ্লেন্ডা জ্যাকসন। টিউলিপ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন কিংস কলেজ থেকে।
লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে লেবার দলে র প্রার্থী রূপা হক কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক। গত নির্বাচনে কনজারভেটিভদের দখলে যাওয়া এ আসনটি এবার লেবারের অন্যতম ‘টার্গেট সিট’। ১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপার আদি বাড়ি পাবনায়।
লেবার দল থেকে লন্ডনের অদূরে বেকেনহাম আসনে প্রার্থী হয়েছেন মেরিনা আহমদ। নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেওয়া মেরিনা ছয় মাস বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন।
লন্ডনের কাছের ওয়েলউইন অ্যান্ড হার্টফিল্ড আসনে লেবার দলের প্রার্থী আনোয়ার বাবুল মিয়া। তিনি লড়ছেন কনজারভেটিভ দলের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপের সঙ্গে।
নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসনে লেবারের প্রার্থী আমরান হোসাইন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করা আমরানের জন্ম যুক্তরাজ্যে, বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে।
লুটনের রিগেইট অ্যান্ড বেনস্ট্যাড আসনে লেবার দলের প্রার্থী আলী আকলাকুল। তাঁর জন্ম লুটনে, আদি বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে।
লিবডেম থেকে মনোনয়ন পাওয়া তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী হলেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, আশুক আহমদ ও মোহাম্মদ সুলতান। সিলেটে জন্ম নেওয়া ব্যবসায়ী প্রিন্স সাদিক লড়ছেন নর্থ হ্যাম্পটন সাউথ আসনে। তিনি ২০০৭ সালে নর্থহ্যাম্পটনশায়ার কাউন্সিল নির্বাচনে বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সেলর।
আশুক আহমদ প্রার্থী হয়েছেন লুটন সাউথ আসনে। তাঁর জন্ম সিলেটের বিয়ানীবাজারে। ওয়েলসের আর্ফন আসনে লিবডেমের প্রার্থী মোহাম্মদ সুলতান। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জন্ম তাঁর।
গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী মিনা রহমান। তিনি লড়ছেন লন্ডনের বার্কিং আসনে। লেবার দলের মার্গারেট হজ ১৯৯৪ সাল থেকে এ আসনের এমপি। এবারও প্রার্থী হয়েছেন মার্গারেট। এটি লেবার দলের একটি নিরাপদ আসন হলেও জয়ের লক্ষ্য নিয়েই প্রচার চালান মিনা। তাঁর জন্ম সিলেটের ছাতকে। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা মিনা চাকরি করেন আবাসন সংস্থার ব্যবস্থাপক হিসেবে।
স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন সুমন হক। স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া সুমনের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। তিনিও লেবার দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে আদালতে হাজিরা দেওয়ায় তাঁর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে দল।
২০১০ সালে লেবার দল থেকে রুশনারা আলীসহ চারজন, লিবডেম ও কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গতবার মনোনয়ন পাওয়া ছয়জনের তিনজনই ছিলেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের প্রার্থী।
এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটির বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহও বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে নির্বাচনী আমেজ বেশি দৃশ্যমান। রোববার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেইনের মধুবন রেস্তোরাঁয় বসে নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছিলেন কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ বাংলাদেশি। কোন দলকে সমর্থন করেন—জানতে চাইলে তাঁরা অনেকটা সমস্বরে বললেন, লেবার পার্টি। কারণ হিসেবে বললেন, লেবার পার্টি অভিবাসীদের প্রতি ভালো আচরণ করে। অবশ্য যেকোনো দলের মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের পক্ষেই তাঁদের অবস্থান। শুধু রেস্তোরাঁয় নয়, সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা অন্যান্য স্থানেও জমে উঠছে নির্বাচনী আলাপ। এসব বাংলাদেশির আশা, এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে।
বাংলাদেশি প্রার্থীদের মধ্যে কতজন বিজয়ী হবেন তা নিয়ে ভাবছেন না লন্ডনের ব্রেন্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলর পারভেজ আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কতজন বিজয়ী হবেন সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে এসব বাংলাদেশি নিজেদের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে দলের এমপি প্রার্থী হওয়ার টিকিট অর্জন করেছেন। এটি নতুন প্রজন্মকে মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য যে অনুপ্রেরণা ও সাহস জোগাবে সেটাই বড় অর্জন।’
মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল পলিসি বিষয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিজস্ব গণ্ডির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশিদের এমন বিচরণ বেশ আশাব্যঞ্জক। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো বাংলাদেশিরাও এ দেশে আসার পর থেকেই নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তারই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে আজকের এই অবস্থান। তিনি বলেন, বর্ণবাদ, বৈষম্য, অধিকার কিংবা অস্তিত্ব সবকিছুই রাজনৈতিক বিষয়। তাই টিকে থাকতে হলে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন অত্যন্ত¯জরুরি। তাঁর মতে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব না থাকলে বৈষম্য থেকে রেহাই পাওয়া কিংবা অধিকার আদায় সম্ভব হয় না।
এবার প্রধান তিনটি দল থেকে ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতসহ এশীয় বংশোদ্ভূত মোট ১০২ জন এমপি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৬, লেবার ৩৪ ও লিবডেম ৩২ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এসব প্রার্থীর বেশির ভাগই ভারতীয় এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। গত মেয়াদে ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আটজন করে এমপি ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে।
No comments