পিতার কবরে সমাহিত পিন্টু
নয়া পল্টনে পিন্টুকে শেষ শ্রদ্ধা খালেদার -ছবিঃ মানবজমিন |
তিনদফা
জানাজা শেষে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক
এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মরদেহ রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে পিতার
কবরে সমাহিত করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আজিমপুরে পুরাতন কবরস্থানে
তাকে দাফন করা হয়। এর আগে দলের পক্ষ থেকে পিন্টুর কফিনে ফুল দিয়ে শেষ
শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও
ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া পিন্টুর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে
কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের জেলা ও থানা কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন
ও দলের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন
নাসিরউদ্দিন পিন্টু। কারা কর্তৃপক্ষের চিকিৎসার অবহেলায় পিন্টুর অকাল
মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এ ঘটনায় ঢাকা বিভাগীয় জিআইজি
(প্রিজন) গোলাম হায়দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম করেছে
সরকার।
পিন্টুর কফিনে বিএনপির শ্রদ্ধা
গতকাল ভোর পৌনে ৬টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী থেকে পিন্টুর মরদেহ তার হাজারীবাগ মনেশ্বর রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে পিন্টুর মরদেহ নেয়া হয় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সকাল থেকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুরু হয়। এদিকে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন সেখানে। একপর্যায়ে সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড় জমে। কেউ বুকে কালো ব্যাজ ধারন করে কেউ বা আসেন ফুল নিয়ে। সহকর্মীর অকাল মৃত্যুতে বিএনপি ও অঙ্গদলের অনেক নেতাকর্মীকেই দেখা গেছে অশ্রুসজল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি পিন্টুর কফিনের সামনে যান। এসময় কাফনের কাপড়ের বাঁধন খুলে পিন্টুর মরদেহ খালেদা জিয়াকে দেখানো হয়। পিন্টুর নিথর মুখ দেখে বিএনপি চেয়ারপারসন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় তাকে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়। এরপর ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতির কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান খালেদা জিয়া। ফুল দিয়ে পিন্টুর কফিনের পাশে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এরপর দলীয় পতাকা দিয়ে পিন্টুর কফিন ঢেকে দেন খালেদা জিয়া। এসময় তার রুহের মাহফিরাত কামনায় দোয়ায় শরিক হন তিনি। শ্রদ্ধা জানানো শেষে নয়াপল্টন থেকে বাসভবনে ফিরে যান খালেদা জিয়া। এরপর মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, মহিলাদল, ছাত্রদল, ওলামা দল, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পিন্টুর কফিনে ফুল দেয়া হয়। জানাজার জন্য নয়াপল্টনের পূর্বদিকের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে পিন্টুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পিন্টুর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। জানাজার আগে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নাসিরউদ্দিন পিন্টু ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ছিলেন। পিন্টু কেবল একজন উদীয়মান নেতাই নন, দলের একজন সক্রিয় সংগঠকও ছিলেন। তার এই মৃত্যু আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। তার অকাল চলে যাওয়া আমাদের জন্য মর্মান্তিক ও শোকের। আমি তার রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যু রহস্যময়। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাকে রাজশাহী নেয়া হয়েছিল। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে রহস্যময়ভাবে। পিন্টু এত তাড়াতাড়ি এভাবে চলে যাবেন, তা আমরা আশা করিনি। আমরা শোকাহত, মর্মাহত। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, সরকার বিনা চিকিৎসায় পিন্টুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। চিকিৎসার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সরকার তা মানেনি। ২৫শে এপ্রিল পিজি হাসপাতালে তার চিকিৎসা করার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের নির্দেশে কারাকর্তৃপক্ষ চিকিৎসা করেনি। পিন্টুর এই মৃত্যুর জন্য তাদেরকে একদিন বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এদিকে পিন্টুর মৃত্যুশোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া। জানাজায় বিএনপি ও ২০ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আহমেদ আজম খান, মো. শাহজাহান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবদুল লতিফ জনি, আবদুস সালাম আজাদ, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আনোয়ার হোসেন, এমএ মালেক, ২০ দলীয় জোট নেতা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাঈদ আহমেদ, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়াসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। এছাড়া মহিলা দলের নূরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা ও মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, বিলকিস ইসলামসহ শতাধিক নেত্রী পিন্টুর কফিনে শ্রদ্ধা জানান। নয়াপল্টন থেকে সাবেক এমপি পিন্টুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার হাজারীবাগের বাসায়।
জানাজায় ভাইয়ের অভিযোগ
বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে হাজারীবাগ লেদার টেকনলজি কলেজ মাঠে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর তৃতীয় ও সর্বশেষ জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এরপর পিন্টুর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে দাফন করা হয়। জানাজায় পিন্টুর ছোট ভাই নাসিমউদ্দিন আহমেদ রিন্টু বলেন, আমি আবারও বলতে চাই- আমার ভাইকে সরকার পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে। আমি রোববার রাজশাহী কারাগারে আমার ভাইয়ের লাশ আনার জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে জেলার আমাকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। ওই কাগজে সুস্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে রোববার দুপুর ১২টা ২ মিনিটে আমার ভাই অসুস্থ হন। এরপর ১২টা ১০ মিনিটে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার পর আমার ভাইকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি হার্ট অ্যাটাকের রোগী মাত্র ৮ মিনিটে মারা যেতে পারেন না। তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। এসময় তার ছোট ভাই নাসির উদ্দিন আহমেদ রিন্টু জানান, বৃহস্পতিবার বাদ আসর হাজারীবাগ মসজিদে পিন্টুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কুলখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু রোববার সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে রাজশাহী কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু ঘটে। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট থেকে রোববার রাত ১১টায় পিন্টুর মরদেহ গ্রহণ করেন ভাই নাসিম উদ্দিন আহমেদ রিন্টু, চাচাতো ভাই সালাউদ্দিন ও আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খান। এরপর মরদেহ ঢাকার আনার আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীতে হেতেম খাঁ বড় মসজিদ চত্বরে পিন্টুর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন হেতেম খাঁ মসজিদের ইমাম মুফতি ইয়াকুব। এতে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মী অংশ নেন। এদিকে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ড্যাব নেতৃবৃন্দও পিন্টুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
পিন্টুর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটিকে আগামী ৭ই মে’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল বিকালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইডি প্রিজন বজলুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে ঢাকা ডিভিশনাল উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) গোলাম হায়দারকে প্রধান করা হয়েছে। অপর দুই সদস্য হলেন- কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী। তারা দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানান তিনি। তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তারা সোমবার রাতের মধ্যে রাজশাহীতে পৌঁছার পর আজ থেকে তদন্তকাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
পিন্টুর কফিনে বিএনপির শ্রদ্ধা
গতকাল ভোর পৌনে ৬টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী থেকে পিন্টুর মরদেহ তার হাজারীবাগ মনেশ্বর রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে পিন্টুর মরদেহ নেয়া হয় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সকাল থেকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুরু হয়। এদিকে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন সেখানে। একপর্যায়ে সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড় জমে। কেউ বুকে কালো ব্যাজ ধারন করে কেউ বা আসেন ফুল নিয়ে। সহকর্মীর অকাল মৃত্যুতে বিএনপি ও অঙ্গদলের অনেক নেতাকর্মীকেই দেখা গেছে অশ্রুসজল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি পিন্টুর কফিনের সামনে যান। এসময় কাফনের কাপড়ের বাঁধন খুলে পিন্টুর মরদেহ খালেদা জিয়াকে দেখানো হয়। পিন্টুর নিথর মুখ দেখে বিএনপি চেয়ারপারসন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় তাকে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়। এরপর ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতির কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান খালেদা জিয়া। ফুল দিয়ে পিন্টুর কফিনের পাশে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এরপর দলীয় পতাকা দিয়ে পিন্টুর কফিন ঢেকে দেন খালেদা জিয়া। এসময় তার রুহের মাহফিরাত কামনায় দোয়ায় শরিক হন তিনি। শ্রদ্ধা জানানো শেষে নয়াপল্টন থেকে বাসভবনে ফিরে যান খালেদা জিয়া। এরপর মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, মহিলাদল, ছাত্রদল, ওলামা দল, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পিন্টুর কফিনে ফুল দেয়া হয়। জানাজার জন্য নয়াপল্টনের পূর্বদিকের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে পিন্টুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পিন্টুর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। জানাজার আগে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নাসিরউদ্দিন পিন্টু ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ছিলেন। পিন্টু কেবল একজন উদীয়মান নেতাই নন, দলের একজন সক্রিয় সংগঠকও ছিলেন। তার এই মৃত্যু আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। তার অকাল চলে যাওয়া আমাদের জন্য মর্মান্তিক ও শোকের। আমি তার রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যু রহস্যময়। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাকে রাজশাহী নেয়া হয়েছিল। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে রহস্যময়ভাবে। পিন্টু এত তাড়াতাড়ি এভাবে চলে যাবেন, তা আমরা আশা করিনি। আমরা শোকাহত, মর্মাহত। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, সরকার বিনা চিকিৎসায় পিন্টুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। চিকিৎসার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সরকার তা মানেনি। ২৫শে এপ্রিল পিজি হাসপাতালে তার চিকিৎসা করার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের নির্দেশে কারাকর্তৃপক্ষ চিকিৎসা করেনি। পিন্টুর এই মৃত্যুর জন্য তাদেরকে একদিন বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এদিকে পিন্টুর মৃত্যুশোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া। জানাজায় বিএনপি ও ২০ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আহমেদ আজম খান, মো. শাহজাহান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবদুল লতিফ জনি, আবদুস সালাম আজাদ, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আনোয়ার হোসেন, এমএ মালেক, ২০ দলীয় জোট নেতা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাঈদ আহমেদ, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়াসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। এছাড়া মহিলা দলের নূরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা ও মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, বিলকিস ইসলামসহ শতাধিক নেত্রী পিন্টুর কফিনে শ্রদ্ধা জানান। নয়াপল্টন থেকে সাবেক এমপি পিন্টুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার হাজারীবাগের বাসায়।
জানাজায় ভাইয়ের অভিযোগ
বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে হাজারীবাগ লেদার টেকনলজি কলেজ মাঠে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর তৃতীয় ও সর্বশেষ জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এরপর পিন্টুর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে দাফন করা হয়। জানাজায় পিন্টুর ছোট ভাই নাসিমউদ্দিন আহমেদ রিন্টু বলেন, আমি আবারও বলতে চাই- আমার ভাইকে সরকার পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে। আমি রোববার রাজশাহী কারাগারে আমার ভাইয়ের লাশ আনার জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে জেলার আমাকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। ওই কাগজে সুস্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে রোববার দুপুর ১২টা ২ মিনিটে আমার ভাই অসুস্থ হন। এরপর ১২টা ১০ মিনিটে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার পর আমার ভাইকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি হার্ট অ্যাটাকের রোগী মাত্র ৮ মিনিটে মারা যেতে পারেন না। তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। এসময় তার ছোট ভাই নাসির উদ্দিন আহমেদ রিন্টু জানান, বৃহস্পতিবার বাদ আসর হাজারীবাগ মসজিদে পিন্টুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কুলখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু রোববার সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে রাজশাহী কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু ঘটে। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট থেকে রোববার রাত ১১টায় পিন্টুর মরদেহ গ্রহণ করেন ভাই নাসিম উদ্দিন আহমেদ রিন্টু, চাচাতো ভাই সালাউদ্দিন ও আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খান। এরপর মরদেহ ঢাকার আনার আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীতে হেতেম খাঁ বড় মসজিদ চত্বরে পিন্টুর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন হেতেম খাঁ মসজিদের ইমাম মুফতি ইয়াকুব। এতে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মী অংশ নেন। এদিকে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ড্যাব নেতৃবৃন্দও পিন্টুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
পিন্টুর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটিকে আগামী ৭ই মে’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল বিকালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইডি প্রিজন বজলুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে ঢাকা ডিভিশনাল উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) গোলাম হায়দারকে প্রধান করা হয়েছে। অপর দুই সদস্য হলেন- কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী। তারা দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানান তিনি। তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তারা সোমবার রাতের মধ্যে রাজশাহীতে পৌঁছার পর আজ থেকে তদন্তকাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
No comments