হঠাৎ করেই চাল আমদানি বেড়ে গেছে by দীন ইসলাম
সরকারি
হিসাব অনুযায়ী, দেশে কোন খাদ্য ঘাটতি নেই। বরং, দেশ চাল রপ্তানি শুরু
করেছে। এমন অবস্থার মধ্যে দেশে হঠাৎ করে চাল আমদানি বেড়ে গেছে। সর্বশেষ
হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আগের অর্থবছরের ১০ মাসের তুলনায়
আমদানি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এনিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
তারা ১লা মে থেকে বোরো সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
তাদের আশঙ্কা- এভাবে চলতে থাকলে বর্তমানে চলতি বোরো সংগ্রহ অভিযানে দেশী
চালের পরিবর্তে ভারতীয় চাল সরকারি গুদামে চলে যাবারও সম্ভাবনা রয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ভারত থেকে নিম্নমানের চাল আমদানি রোধ
করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধের বিষয়টি মন্ত্রিসভার নজরে এনেও
সুবিধা করতে পারেননি। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা না
থাকার কারণে উত্তরের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে হাজার হাজার টন শুল্কমুক্ত
ভারতীয় চাল আমদানি করা হচ্ছে। দেশি চালের চাইতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা
পর্যন্ত দাম কম হওয়ার কারণে বাজার এখন পুরোটা ভারতীয় চালের দখলে। আমদানি
করা এ চালও নিম্নমানের। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রতি তিন বছর পর চালের
গুদাম খালি করতে কম দামে চাল বিক্রি করে থাকে ভারত। আর এ সুযোগে দেশটি থেকে
আমদানি বাড়িয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বৈধ ও অবৈধ উভয় পথে আসছে ভারতীয়
চাল। খাদ্যমন্ত্রী আমদানি বৃদ্ধি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে
চাল আমদানিতে শুল্কারোপের বিষয়ে চিঠিও পাঠান। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচের
কারণে সেটি হালে পানি পায়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গেল
অর্থবছরের পুরো সময়ে দেশে ৩ লাখ ৭৪ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। অথচ চলতি
অর্থবছরের জুলাই থেকে গত ২০শে এপ্রিল ১২ লাখ ৯১ হাজার ৪১০ টন চাল আমদানি
করা হয়েছে। যদিও ২০১২-১৩ অর্থবছরে চাল আমদানির চিত্র আরও অনেক কম ছিল। ওই
অর্থবছরে চাল আমদানি হয় মাত্র ২৮ হাজার ৯৩০ টন। আগের বছরগুলোতে সরকারের
পাশাপাশি বেসরকারি খাত চাল আমদানি করেছিল। চলতি অর্থবছর সরকারিভাবে কোন চাল
আমদানি করা হয়নি, সবই বেসরকারিভাবে আমদানি হয়েছে। আর রপ্তানি হয়েছে মাত্র
২৫ হাজার টন চাল। এদিকে ভারত থেকে চাল আমদানির জোয়ারের কারণে চালকল, চাতাল ও
মিলারদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা
গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের ধান কিনে চাল বাজারজাত করতে গেলে মিলারদের কোটি
কোটি টাকা পুঁজি খাটিয়ে আয়কর ও ব্যাংকের সুদ গুনতে হয়। অথচ শুধু এলসি করে
কোন প্রকার আয়কর না দিয়েই ভারত থেকে হাজার হাজার টন চাল কম দামে আমদানি করে
বাজারজাত করছেন আমদানিকারকরা। ফলে দেশী ও ধানের বাজার ধ্বংস হচ্ছে। ভারতীয়
চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার ফলে উত্তরের বৃহৎ চালের মোকাম দিনাজপুরে বন্ধ হতে
বসেছে চালকলগুলো। এ কারণে ওই এলাকার কুলি শ্রমিক মজুরদের হাঁকডাক কমে গেছে।
দেশী চালের চেয়ে ভারতীয় চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজিতে
প্রায় ২ থেকে ৩ টাকা কম দামে। একই অবস্থা নওগাঁর। সেখানে যে ক’টি চালকল
এখনও চালু রয়েছে তার অধিকাংশ চাল উৎপাদন করে পড়েছে মহাসংকটে। গুদামে পড়ে
রয়েছে শত শত টন চাল। দিন দিন কমছে দাম। আমদানি করা চালের সঙ্গে বাজারমূল্যে
ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না। উৎপাদিত চাল অবিক্রীত থাকায় ও ব্যাংক ঋণের সুদে
জর্জরিত হয়ে ইতিমধ্যে জেলার প্রায় ৮০ ভাগ চালকল ও চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে।
বেকার হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ চাতাল শ্রমিক। ঋণের ভারে জর্জরিত
চাল ব্যবসায়ীরা। এদিকে গত ১লা মে থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের সরকারিভাবে
ধান ও চাল সংগ্রহ মওসুম। এবারে ৩২ টাকা দরে ১০ লাখ টন চাল, ২২ টাকা দরে এক
লাখ টন ধান এবং ২৮ টাকা দরে এক লাখ টন গম সংগ্রহ করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের
নিয়ন্ত্রণাধীন খাদ্য অধিদপ্তর। ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত চলবে ধান ও চাল সংগ্রহ
মওসুম। গম সংগ্রহ হবে ৩০শে জুন পর্যন্ত। আমদানির কারণে এসব সংগ্রহ অভিযানে
কতটুকু সাড়া ফেলবে তা এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বলা যাবে বলে মনে করছেন খাদ্য
অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আমদানি করা চালের দাম কম
পেলে মানুষ বেশি দামে দেশী চাল কিনবে না। এর ফলে সংগ্রহ অভিযানও মার খেতে
পারে।
No comments