ফলাফল বাতিল ও পুনর্নির্বাচনের দাবি মির্জা আব্বাসের
ভোট
কারচুপির নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের কাছে ২৮শে এপ্রিল
নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও পুনর্নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস।
গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ
দাবি জানান। চিঠিতে মির্জা আব্বাস বলেন, একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ
নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
অংশ নিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের শুরু থেকেই আমাদের কর্মী-সমর্থকদের
বিভিন্নভাবে হয়রানি, গ্রেপ্তার ও পুলিশ নির্যাতন করছিল, যা বারবার
লিখিতভাবে অবহিত করে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না মর্মে শঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম।
নির্বাচনকালীন সময়ে মাঠে সেনাবাহিনী ও প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা
বসানোর দাবি করেছিলাম। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। যার বাস্তব প্রতিফলন
দেখতে পাই ২৮শে এপ্রিল নির্বাচনের দিন। মির্জা আব্বাস বলেন, আমার প্রতিপক্ষ
ইলিশ মাছ প্রতীকের প্রার্থী সাঈদ খোকনের কর্মী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ,
যুবলীগসহ সন্ত্রাসীরা নির্বাচন আচরণবিধি-২০১০ লঙ্ঘন করে ভোটকেন্দ্রের
প্রবেশমুখে ক্যাম্প বসিয়ে পোলিং এজেন্টদের চেক করে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি
দেয়। যখন আমার ‘মগ’ মার্কার এজেন্ট প্রবেশ করতে যায় তখন তাকে ধাওয়া দিয়ে
কেন্দ্রের এলাকা ছাড়া, মারধর, আহত এবং কোথাও কোথাও তাদের নিয়োগপত্র কেড়ে
নেয়া হয়। মির্জা আব্বাস বলেন, এসব কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে কেন্দ্রের
দায়িত্বে থাকা অনেক প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যরা। যার কারণে দু-একটি ভোটকেন্দ্র ছাড়া অনেক কেন্দ্রেই আমার পোলিং
এজেন্ট প্রবেশ করতে পারেনি এবং প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আমার পোলিং এজেন্টরা
দু-একটি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে সমর্থ হলেও ৫-১০ মিনিটের মধ্যে তাদের মারধর
করে বা জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক আমার নির্বাচনী
এজেন্ট আফরোজা আব্বাস প্রিজাইডিং অফিসার বরাবরে অভিযোগ করেন। এভাবে
অভিযোগের পাহাড় জমে গেলেও কোন ফল পাইনি। মির্জা আব্বাস বলেন, যার প্রমাণ
প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক রেজাল্ট স্বাক্ষরিত সিট, যেখানে সিটি করপোরেশন
নির্বাচনী আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টের স্বাক্ষর
থাকার কথা, সেখানে তা নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকা-প্রিন্ট মিডিয়া ও
ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে, আমার ‘মগ’ প্রতীকের
এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, যা কোনভাবেই সুষ্ঠু ও সুন্দর
নির্বাচনের প্রমাণ বহন করে না। তিনি বলেন, এমনকি নির্বাচনের দিন কেন্দ্রের
বাইরে কোন ‘মগ’ মার্কার কর্মী-সমর্থকদের দেখা মাত্রই তাদের ওপর চড়াও হয়
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও প্রতিপক্ষের সমর্থকরা এবং মারধর করে। আমার
কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চাইলে
হয় তারা গ্রেপ্তার করে, না হয় নিজেরা ধাওয়া দেয় বা নীরবে দর্শকের ভূমিকা
পালন করে। মির্জা আব্বাস বলেন, ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং,
পোলিং অফিসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ভোটকেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী
লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ইলিশ মাছ প্রতীকের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অবাধে
বিচরণ করেছে। সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে। যার বিভিন্ন
তথ্য-প্রমাণের অংশবিশেষ আপনার বরাবরে পাঠানো হলো। ভোটকেন্দ্রে ইলিশ প্রতীকে
সিল মারার এতই মহোৎসব চলেছে যে, ২৯শে এপ্রিল দৈনিক যুগান্তর নবম পৃষ্ঠা,
দৈনিক প্রথম আলো পঞ্চম পৃষ্ঠা, দৈনিক মানবজমিন তৃতীয় পৃষ্ঠা এবং দৈনিক
ইনকিলাবের শেষ পৃষ্ঠায় আলাদা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার মাছ প্রতীকে
সিল মারার দৃশ্য প্রকাশিত হয়েছে। মির্জা আব্বাস বলেন, অনেক কেন্দ্রে ইলিশ
মাছ প্রতীকে সিল মারা ব্যালট পেপার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং কোথায়ও পুলিশ
সদস্য তা পাহারা দিচ্ছেন, যার প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর
মধ্যে ২৯শে এপ্রিল ডেইলি স্টারের দ্বিতীয়য় পৃষ্ঠায় কমলাপুর, শেরেবাংলা
রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র, যুগান্তর পত্রিকার নবম পৃষ্ঠা সুরিটোলা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৈনিক প্রথম আলোর পঞ্চম পৃষ্ঠায় বাংলাবাজার
গার্লস স্কুল, সমকাল প্রথম পাতায় ধলপুর সিটি করপোরেশন স্কুল, বণিক বার্তায়
সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমাদের সময়ের প্রথম পৃষ্ঠায় বাংলাবাজার সরকারি
বালিকা বিদ্যালয়, নিউ নেশনের শেষ পৃষ্ঠায় সুরিটোলা মডেল প্রাইমারি স্কুল
কেন্দ্র, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতা, ইনকিলাবের শেষ পৃষ্ঠা, ঢাকা
ট্রিবিউনের প্রথম পৃষ্ঠা, যায়যায়দিনের প্রথম পৃষ্ঠায় বিভিন্ন কেন্দ্রের
ঘটনা সচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। ডেইলি স্টারের প্রথম পৃষ্ঠায় সাংবাদিক
লাঞ্ছনার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ,
ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ইলিশ প্রতীকের সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা
প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা ও
প্রত্যক্ষ মদতে ইলিশ মাছ প্রতীকে সিল মারার দৃশ্য ধারণা করেছে। সিইসির কাছে
পাঠানো চিঠিতে মির্জা আব্বাস বলেন, এসবের তথ্য-প্রমাণসহ বিভিন্ন পত্রিকার
রেফারেন্স আপনার বিবেচনার জন্য তুলে ধরা হলো। যেমন: ২৯শে এপ্রিল যুগান্তরের
নবম পৃষ্ঠায় সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ তথা ইলিশ মাছ
প্রতীকের কর্মীরা দলবেঁধে এবং প্রথম পৃষ্ঠায় রাজধানীর খিলগাঁও মডেল স্কুল
অ্যান্ড কলেজে যুবলীগের দুই নেতার প্রকাশ্যে সিল মারার ছবি ছাপা হয়েছে।
যায়যায়দিনের প্রথম পৃষ্ঠায় বাংলাবাজার, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, খিলগাঁও
মডেল কলেজসহ বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রে ইলিশ প্রতীকে সিল মারার দৃশ্য দেখা যায়।
দৈনিক জনতায় দেখা যায়, এক ছাত্রলীগ কর্মী খিলগাঁও মডেল কলেজ কেন্দ্রে
জালভোট দিচ্ছে। নিউ নেশনের শেষ পৃষ্ঠায় অস্ত্রসহ এক যুবলীগ কর্মীর
ভোটকেন্দ্র দখলের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পৃষ্ঠায়
ভোটকেন্দ্র দখল ও ভাঙচুরের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ইনকিলাবের শেষ পৃষ্ঠায়
নাবালক এক শিশুর হাতেও ইলিশ প্রতীকের ব্যালট পেপার তুলে দেয়া হয়েছে সিল
মারার জন্য এবং প্রহসনের এ নির্বাচনে ইলিশ মাছ মার্কার দুই কর্মীর ব্যালট
পেপারে সিল মারার দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচর রসুলপুরের একটি
ভোটকেন্দ্রে ইলিশ মাছ প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার পর ইলিশ
মাছ প্রতীকের কর্মীদের পাহারা দেয়ার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। নিউএজের প্রথম
পৃষ্ঠায় আহছানিয়া মিশন সেন্টারে স্কুলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে সিল
মারার দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। নিউজ টুডের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও
ইলিশ মাছ প্রতীকের কর্মী কর্তৃক বে-আইনিভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারার দৃশ্য
তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে নিউ নেশন, ডেইলি স্টার, ইনডিপেনডেন্ট, নিউজ টুডে,
নয়া দিগন্ত, দিনকাল এবং বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা যেমন- বাংলা নিউজ, শীর্ষ
নিউজ, নতুন বার্তা, ঢাকা টাইমসসহ বিভিন্ন পত্রিকায় এ প্রহসনমূলক ও ভোট
কারচুপির নির্বাচনের দৃশ্য সংবাদ আকারে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক
মিডিয়াও নির্বাচনের নামে ভোটকেন্দ্র দখল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, এজেন্ট
প্রবেশ করতে না দেয়া, মারধর করা, প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসার ও যুবলীগ,
ছাত্রলীগ কর্তৃক ব্যালটে সিল মারার দৃশ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক ও বে-আইনি
কার্যকলাপের দৃশ্য দেশ ও জাতির কাছে তুলে ধরা হয়েছে, যার ভিডিও ফুটেজ
রয়েছে। মির্জা আব্বাস বলেন, বিশেষ করে এই নির্লজ্জতা ও ভোটকেন্দ্র দখলের
মহড়াসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এতই ব্যাপকতা পেয়েছিল যে, আমার নির্বাচনী
এজেন্ট আফরোজা আব্বাসকেও অনেক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি
প্রতিবাদ করার জন্য প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। ঢাকাস্থ সুইডিশ রাষ্ট্রদূত ইউহান ফ্রিসেল
বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণে এসে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। যার
জ্বলন্ত প্রমাণ মানবজমিনের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষের কবলে
সুইডিশ রাষ্ট্রদূত’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর। তা ছাড়া এ নির্বাচন সম্পর্কে
বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত,
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাসহ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি
মুন- যিনি এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন সম্পর্কে তদন্তের জন্য আহ্বান
জানিয়েছেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মির্জা আব্বাস বরেন,
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি, বিভিন্ন মহলের আলোচনা এবং আমার বক্তব্য ও
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার উদ্ধৃতি, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজেই প্রমাণ
করে ২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০১৫’ ছিল
সম্পূর্ণরূপে প্রহসনমূলক, বে-আইনি ও ভোট কারচুপির নির্বাচন, যা ঢাকাবাসীর
নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন এবং দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে
প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০১৫ বাতিল করে ঢাকাবাসীর ভোটাধিকার
ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে পুনরায় তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে একটি
সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি।
No comments