মুরসির মৃত্যুদণ্ড দুঃখজনক -সম্পাদকীয় মন্তব্য নিউইয়র্ক টাইমস
নিকট
ভবিষ্যতে মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ
মুরসিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হতে পারে। যে কপট বিচারের মাধ্যমে তাঁর
মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলো, তা খুবই গুরুতর অবিচার।
তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আরও জোরালো কারণ রয়েছে। ইসলামপন্থী মানেই খারাপ—এমন ভিত্তিহীন অভিযোগে মিসর যে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী ও নির্মম অভিযান চালাচ্ছে, সেটা ক্রমেই স্বতঃসিদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীতে পরিণত হচ্ছে। মুরসিকে ফাঁসিতে দেওয়ার মাধ্যমে একজন অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ককে আমরা শহীদ হতে দেখব। এর মাধ্যমে মিসরবাসীকে দুর্ভাগ্যজনক ও অপ্রয়োজনীয় বার্তা দেওয়া হবে। তারা ঐতিহাসিকভাবে জঙ্গিত্ববিরোধী হলেও এর কারণে তারা হয়তো মনে করবে, অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়াটাই দাবি আদায়ের একমাত্র মাধ্যম।
মিসরে গত দুই বছরে সন্ত্রাসী আক্রমণ বেড়েছে, এমনকি সম্প্রতি বিচারকদের ওপরও হামলা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, সশস্ত্র সহিংসতা প্রতিক্রিয়া জানানোর গ্রহণযোগ্য মাধ্যমে পরিণত হচ্ছে। মুরসির রায় হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সিনাইয়ে তিনজন বিচারককে গুলি করে খুন করা হয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে কায়রোর উপশহরে এক বিচারককে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে আন্দোলনের সময় জেল ভাঙার ঘটনায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে শতাধিক সহযোগীসহ মুরসিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সে সময় তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যম সারির নেতা। মুসলিম ব্রাদারহুড এক ইসলামি আন্দোলন, এরা ১৯৭০-এর দশকের সহিংসতার বিরোধিতা করেছে। বিদ্রোহের পর তারাই মিসরের প্রধান শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। তিনিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অগণিত সদস্য জেল থেকে পালিয়েছিলেন, বিপ্লবের শুরুর দিকে তাঁদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছিল।
বিদ্রোহের পরবর্তী সেই স্বল্পস্থায়ী গণতন্ত্রের সময় মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্ব প্রচারণায় ব্যাপক সফলতা দেখালেও শাসনকার্যে তারা ছিলেন একেবারেই অদক্ষ। ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি সংসদের অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু বিচার বিভাগ পরবর্তীকালে দলটি বিলুপ্ত করে দেয়। রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যাপক লড়াই-সংগ্রাম করে মুরসি মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা হন। আর মুরসি ক্ষমতায় আসার এক বছর পরই জন–অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে সেনাপ্রধান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
তারপর থেকেই দেশটির নেতারা ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্মম প্রচারণা শুরু করেন, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করে। গয়রহভাবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়, গণবিচারে তাঁদের বিচার করা হয়। সেই বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। অভিযানের ফলে বহু মিসরীয় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়, দেশটি থেকে উদার মানুষেরা হারিয়ে যায়।
জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক ও পণ্ডিত এমাদ শাহিন বলেছেন, ‘মিসরের রাজনৈতিক মতানৈক্য সমাধানে দেশটির বিচারব্যবস্থাকে কেমন ঝামেলাপূর্ণ, রূঢ় ও নিপীড়নমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়, এটা তার আরেকটি নিদর্শন। নির্মম অবিচারের স্বার্থে যথাযথ প্রক্রিয়া, তথ্য–প্রমাণ ও বিচারের ন্যূনতম মান জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।’ আর এই শাহিন সাহেবকে তাঁর অনুপস্থিতিতে মুরসির সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সনদোস আসেমকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই তরুণী মুরসির গণমাধ্যম সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভাতনিক স্কুল অব গভর্নমেন্টে পাবলিক পলিসি ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছেন।
মিসরের সুন্নি মুসলমানদের শীর্ষ নেতা অর্থাৎ দেশটির প্রধান মুফতিকে এই দণ্ডাদেশে স্বাক্ষর করতে হবে, এরপরই তা বাস্তবায়ন করা যাবে। অভিযুক্তের আইনজীবীরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। কিন্তু দেশটির বিচারব্যবস্থার যে রকম রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার তাঁরা পাবেন কি না, সেটা বলা মুশকিল।
এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্ব দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে: ‘যত দিন না আমরা জান্তাকে পরাজিত ও এই অবৈধ সরকারকে উৎখাত করছি, তত দিন দৈনিক বিপ্লবী প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করুন।’
মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক সমর্থকই এটাকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালানোর আহ্বান হিসেবে ভাবতে পারেন। যদিও নতুন মিসরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। আর যাঁরা মর্মার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করবেন, তাঁরা এটাকে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর মিসরকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তারা অনুমিতভাবেই নীরব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা রায়ের ঘটনায় ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান যে দীর্ঘ মেয়াদে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ছে, সে বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রকে আরও উদ্বিগ্ন হতে হবে। উল্লেখ্য, সেই অভিযানে তারা এ পর্যন্ত সমর্থন দিয়েছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া।
তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আরও জোরালো কারণ রয়েছে। ইসলামপন্থী মানেই খারাপ—এমন ভিত্তিহীন অভিযোগে মিসর যে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী ও নির্মম অভিযান চালাচ্ছে, সেটা ক্রমেই স্বতঃসিদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীতে পরিণত হচ্ছে। মুরসিকে ফাঁসিতে দেওয়ার মাধ্যমে একজন অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ককে আমরা শহীদ হতে দেখব। এর মাধ্যমে মিসরবাসীকে দুর্ভাগ্যজনক ও অপ্রয়োজনীয় বার্তা দেওয়া হবে। তারা ঐতিহাসিকভাবে জঙ্গিত্ববিরোধী হলেও এর কারণে তারা হয়তো মনে করবে, অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়াটাই দাবি আদায়ের একমাত্র মাধ্যম।
মিসরে গত দুই বছরে সন্ত্রাসী আক্রমণ বেড়েছে, এমনকি সম্প্রতি বিচারকদের ওপরও হামলা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, সশস্ত্র সহিংসতা প্রতিক্রিয়া জানানোর গ্রহণযোগ্য মাধ্যমে পরিণত হচ্ছে। মুরসির রায় হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সিনাইয়ে তিনজন বিচারককে গুলি করে খুন করা হয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে কায়রোর উপশহরে এক বিচারককে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে আন্দোলনের সময় জেল ভাঙার ঘটনায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে শতাধিক সহযোগীসহ মুরসিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সে সময় তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যম সারির নেতা। মুসলিম ব্রাদারহুড এক ইসলামি আন্দোলন, এরা ১৯৭০-এর দশকের সহিংসতার বিরোধিতা করেছে। বিদ্রোহের পর তারাই মিসরের প্রধান শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। তিনিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অগণিত সদস্য জেল থেকে পালিয়েছিলেন, বিপ্লবের শুরুর দিকে তাঁদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছিল।
বিদ্রোহের পরবর্তী সেই স্বল্পস্থায়ী গণতন্ত্রের সময় মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্ব প্রচারণায় ব্যাপক সফলতা দেখালেও শাসনকার্যে তারা ছিলেন একেবারেই অদক্ষ। ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি সংসদের অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু বিচার বিভাগ পরবর্তীকালে দলটি বিলুপ্ত করে দেয়। রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যাপক লড়াই-সংগ্রাম করে মুরসি মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা হন। আর মুরসি ক্ষমতায় আসার এক বছর পরই জন–অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে সেনাপ্রধান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
তারপর থেকেই দেশটির নেতারা ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্মম প্রচারণা শুরু করেন, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করে। গয়রহভাবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়, গণবিচারে তাঁদের বিচার করা হয়। সেই বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। অভিযানের ফলে বহু মিসরীয় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়, দেশটি থেকে উদার মানুষেরা হারিয়ে যায়।
জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক ও পণ্ডিত এমাদ শাহিন বলেছেন, ‘মিসরের রাজনৈতিক মতানৈক্য সমাধানে দেশটির বিচারব্যবস্থাকে কেমন ঝামেলাপূর্ণ, রূঢ় ও নিপীড়নমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়, এটা তার আরেকটি নিদর্শন। নির্মম অবিচারের স্বার্থে যথাযথ প্রক্রিয়া, তথ্য–প্রমাণ ও বিচারের ন্যূনতম মান জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।’ আর এই শাহিন সাহেবকে তাঁর অনুপস্থিতিতে মুরসির সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সনদোস আসেমকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই তরুণী মুরসির গণমাধ্যম সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভাতনিক স্কুল অব গভর্নমেন্টে পাবলিক পলিসি ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছেন।
মিসরের সুন্নি মুসলমানদের শীর্ষ নেতা অর্থাৎ দেশটির প্রধান মুফতিকে এই দণ্ডাদেশে স্বাক্ষর করতে হবে, এরপরই তা বাস্তবায়ন করা যাবে। অভিযুক্তের আইনজীবীরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। কিন্তু দেশটির বিচারব্যবস্থার যে রকম রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার তাঁরা পাবেন কি না, সেটা বলা মুশকিল।
এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্ব দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে: ‘যত দিন না আমরা জান্তাকে পরাজিত ও এই অবৈধ সরকারকে উৎখাত করছি, তত দিন দৈনিক বিপ্লবী প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করুন।’
মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক সমর্থকই এটাকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালানোর আহ্বান হিসেবে ভাবতে পারেন। যদিও নতুন মিসরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। আর যাঁরা মর্মার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করবেন, তাঁরা এটাকে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর মিসরকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তারা অনুমিতভাবেই নীরব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা রায়ের ঘটনায় ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান যে দীর্ঘ মেয়াদে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ছে, সে বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রকে আরও উদ্বিগ্ন হতে হবে। উল্লেখ্য, সেই অভিযানে তারা এ পর্যন্ত সমর্থন দিয়েছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া।
No comments