কৌশলের খেলায় জয়ী কে?
বিস্ময়কর
তো বটেই। উন্নয়নশীল একটি দেশের দুই সিটির তিন করপোরেশন নির্বাচন। জাতিসংঘ,
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য- কার দৃষ্টি ছিল না এ
নির্বাচনে। ভোটের আগেই তাদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল, অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। তাদের আহ্বানে যে কোন সাড়া মিলেনি তা অবশ্য তেমন
বিস্ময় তৈরি করতে পারেনি। সুসম্পন্ন হয়েছে গায়েবি ভোট। কাগজে-কলমে স্থানীয়
নির্বাচন। আসলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লড়াইও। নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিনে দুই
নেত্রীর মিডিয়ার সামনে আসা শুধু প্রতীকী দৃশ্য ছিল না। এ লড়াইয়ে কে জিতলেন?
স্কোরবোর্ড বলছে, আওয়ামী লীগ-৩, বিএনপি ০। কিন্তু কখনও কখনও স্কোরবোর্ড
আস্ত একটি গাধা। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের কথাটি মনে রাখতে
হবে। যে কোন উপায়ে জেতা আদৌ জেতা নয়। ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনীতিকদের
একটি বড় অংশের বিশ্বাস ছিল, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা
উচিত ছিল। তারা মনে করতেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ এবং গণমাধ্যমের কারণে এ
যুগে ভোটে কারচুপি সম্ভব নয়। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি জয়ের সুযোগ
হাতছাড়া করে বলেও তাদের ধারণা। ওই নির্বাচন বয়কট প্রশ্নে বিএনপির জ্যেষ্ঠ
নেতাদের মধ্যে রীতিমতো ফাটল ধরেছিল। বিএনপি নেতাদের একটি অংশের ধারণা ছিল
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে জয়লাভ করতো। সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত
খালেদা জিয়াই নিয়েছিলেন। তবে নিশ্চিতভাবেই এ নিয়ে দোটানা ছিল তার মধ্যে।
মঙ্গলবারের নির্বাচন সে অর্থে ‘মুক্তি’ই নিয়ে এসেছে সাবেক এই
প্রধানমন্ত্রীর জন্য। এখন বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত
ছিল শতভাগ সঠিক। খালেদা জিয়া এবারের সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে যে কতটা
আন্তরিক ছিলেন তার প্রমাণ দিতে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যেও প্রচারাভিযানে অংশ
নেন। কিন্তু তার গাড়িবহরে প্রকাশ্যে যেভাবে পুলিশের সামনে হামলা হয়েছে তাতে
অনেকেরই ধারণা ছিল, এটা মারাত্মক উসকানি। তিনি যাতে নির্বাচন থেকে সরে
দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন, সেটা নিশ্চিত করতেই ওই হামলা চালানো হয়। কিন্তু তিনি
সরে দাঁড়াননি।
আর পশ্চিমা কূটনীতিকরা হতভম্ব হয়েছেন মঙ্গলবারের নির্বাচনে কারচুপি দেখে। কারণ এ নির্বাচনে হার-জিতের ফলাফল ছিল খুবই সামান্য। এর আগে প্রমাণ হয়েছে, অর্ধ ডজন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিএনপি সমর্থকরা মেয়র হতে পারলেও তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোন ফল দেয়নি। এমনকি তাদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। কারও স্থান হয়েছে কারাগারে। তিনটি মেয়র পদ পেলেও বিএনপির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতো না। বরং এ নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হতে দিলে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো। আর তারা যেহেতু ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন দিতে চায় না, তাই সিটি নির্বাচনকে অবাধে হতে দিয়ে একটা রাজনৈতিক বৈধতার হাতিয়ার সংগ্রহের সুযোগ তার সামনে ছিল। কিন্তু এ নির্বাচনের কারচুপির খবর এখন সারা দুনিয়াতেই ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার করে বলেছে, ভোট জালিয়াতির বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট তারা পেয়েছে। দেশীয় পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয়। সব দেশ এবং সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে, অনিয়মের তদন্তের। কিন্তু বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে- তদন্তটা করবে কে? যারা কারচুপি করেছেন তারাই? অনেকে মনে করেন ভাবমূর্তি বা গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির সুযোগ বিবেচনায় নিলে শেখ হাসিনার জন্য সেটা যত বড় সত্য, সেটা সে তুলনায় বেগম খালেদা জিয়ার জন্য তিন সিটিতে বিজয়ও কিছু মাত্র নয়। তবে লাভ যেটা বেগম জিয়ার হয়েছে সেটা অনেকের মতে, বয়কট প্রশ্নে যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল সেটা কেটে গেছে। এ নির্বাচনে টিকে থাকার অর্থই ছিল তিন মেয়রকে একটি ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ‘গৌরব’ অর্জনে সাহায্য করা। এ কারণে বিএনপি শিবির মনে করে, দীর্ঘদিন পর হলেও কৌশলের খেলায় তারা জয়লাভ করেছেন। ভোটের পরপরই হরতালের মতো অকার্যকর কোন কর্মসূচি না দিয়েও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্ব।
আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতা প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ কিছুদিন আগে বিএনপি শিবিরে একটি আচমকা চমক সৃষ্টি করেছিলেন। কারণ তিনি সুপারিশ করেছিলেন, শেখ হাসিনার অধীনেও বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচনে যেতে পারে। আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী দাবি করেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনপূর্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে শেখ হাসিনা বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ ৫টি মন্ত্রণালয় দিতে চেয়েছিলেন। এটা কেন নেয়া হয়নি, সেজন্য অনেকে বিএনপিকে করুণা করতেও পিছপা হন না। কিছুদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দাবি করেন, বেগম খালেদা জিয়া সুযোগ নষ্ট করেছেন। তিনি নির্বাচনে এলে ‘লাভবান’ হতেন। মঙ্গলবারের ভোট অবশ্য পরিষ্কার করে দিয়েছে, তিনি কেমন লাভবান হতেন।
নির্বাচনে নিরপেক্ষ রেফারির ধারণা একান্তই বাংলাদেশের নিজস্ব। যদিও দুনিয়ার বেশ কয়েকটি দেশেই এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে থাকে। এ দেশে ক্ষমতাসীনদের ভোটের মাঠ দখলের ইতিহাস নতুন কিছু নয়। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিয়মিতই তা হয়ে আসছে। যে কারণে ক্ষমতাসীনরা কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হতেন না। এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পর প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচনকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায়। কিন্তু গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর বিএনপির আমলেই প্রথম কলঙ্কিত হয় মাগুরার উপনির্বাচন। যে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিকে সামনে নিয়ে আসে। গণদাবি উপেক্ষা করে ১৫ই ফেব্রুয়ারির গায়েবি ভোট করে বিএনপি। যদিও সে সংসদের মেয়াদ ছিল একেবারেই স্বল্প। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত তিনটি সংসদ নির্বাচন ছিল গ্রহণযোগ্য। ৫ই জানুয়ারিতে আবারও গায়েবি ভোটে ফিরে যায় বাংলাদেশ। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বেশির ভাগ দলই অংশ নেয়নি। এখন তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর নির্বাচনে নিরপেক্ষ রেফারির দাবি উচ্চকিত হচ্ছে।
ক্ষমতাসীনদের প্রতি দুর্বল একদল বুদ্ধিজীবী কয়েক বছর ধরে বলে আসছেন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলেই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচনে সরকারের তেমন কোন ভূমিকা নেই। তবে দিনে দিনে তাদের আওয়াজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দেয়ার পর একবার এক কমিশনার দাঁড়িয়ে নিজের মেরুদণ্ড থাকার প্রমাণ দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেরুদণ্ডের অবস্থা আরও একবার প্রমাণ হলো মঙ্গলবার। যদিও এর আগেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। যখন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েও একদিন পরেই কমিশন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসে খুব সম্ভবত কোন নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো সেনানিবাসে সেনা মোতায়েন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের অবশ্য কোন অনুশোচনাও নেই। দখল উৎসবের দিন শেষে তিনি অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সবাইকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। আমরাও তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের পরম সৌভাগ্য এমন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমরা পেয়েছি। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের একটি ভূমিকার কথাও ইদানীং আলোচিত হচ্ছিল। হয়তো এ কারণেই মঙ্গলবারের নির্বাচনের সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তাদের ক্যাডারদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল সাংবাদিকরা। পুলিশ পদে পদে বাধা দিয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যামেরা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ১৫ সাংবাদিক।
আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো- স্লোগানটি একসময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু হালজমানায় তৈরি হয়েছে নতুন স্লোগান- আপনার ভোট আমি দেবো। জয়তু, গায়েবি ভোট।
আর পশ্চিমা কূটনীতিকরা হতভম্ব হয়েছেন মঙ্গলবারের নির্বাচনে কারচুপি দেখে। কারণ এ নির্বাচনে হার-জিতের ফলাফল ছিল খুবই সামান্য। এর আগে প্রমাণ হয়েছে, অর্ধ ডজন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিএনপি সমর্থকরা মেয়র হতে পারলেও তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোন ফল দেয়নি। এমনকি তাদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। কারও স্থান হয়েছে কারাগারে। তিনটি মেয়র পদ পেলেও বিএনপির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতো না। বরং এ নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হতে দিলে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো। আর তারা যেহেতু ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন দিতে চায় না, তাই সিটি নির্বাচনকে অবাধে হতে দিয়ে একটা রাজনৈতিক বৈধতার হাতিয়ার সংগ্রহের সুযোগ তার সামনে ছিল। কিন্তু এ নির্বাচনের কারচুপির খবর এখন সারা দুনিয়াতেই ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার করে বলেছে, ভোট জালিয়াতির বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট তারা পেয়েছে। দেশীয় পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয়। সব দেশ এবং সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে, অনিয়মের তদন্তের। কিন্তু বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে- তদন্তটা করবে কে? যারা কারচুপি করেছেন তারাই? অনেকে মনে করেন ভাবমূর্তি বা গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির সুযোগ বিবেচনায় নিলে শেখ হাসিনার জন্য সেটা যত বড় সত্য, সেটা সে তুলনায় বেগম খালেদা জিয়ার জন্য তিন সিটিতে বিজয়ও কিছু মাত্র নয়। তবে লাভ যেটা বেগম জিয়ার হয়েছে সেটা অনেকের মতে, বয়কট প্রশ্নে যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল সেটা কেটে গেছে। এ নির্বাচনে টিকে থাকার অর্থই ছিল তিন মেয়রকে একটি ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ‘গৌরব’ অর্জনে সাহায্য করা। এ কারণে বিএনপি শিবির মনে করে, দীর্ঘদিন পর হলেও কৌশলের খেলায় তারা জয়লাভ করেছেন। ভোটের পরপরই হরতালের মতো অকার্যকর কোন কর্মসূচি না দিয়েও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্ব।
আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতা প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ কিছুদিন আগে বিএনপি শিবিরে একটি আচমকা চমক সৃষ্টি করেছিলেন। কারণ তিনি সুপারিশ করেছিলেন, শেখ হাসিনার অধীনেও বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচনে যেতে পারে। আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী দাবি করেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনপূর্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে শেখ হাসিনা বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ ৫টি মন্ত্রণালয় দিতে চেয়েছিলেন। এটা কেন নেয়া হয়নি, সেজন্য অনেকে বিএনপিকে করুণা করতেও পিছপা হন না। কিছুদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দাবি করেন, বেগম খালেদা জিয়া সুযোগ নষ্ট করেছেন। তিনি নির্বাচনে এলে ‘লাভবান’ হতেন। মঙ্গলবারের ভোট অবশ্য পরিষ্কার করে দিয়েছে, তিনি কেমন লাভবান হতেন।
নির্বাচনে নিরপেক্ষ রেফারির ধারণা একান্তই বাংলাদেশের নিজস্ব। যদিও দুনিয়ার বেশ কয়েকটি দেশেই এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে থাকে। এ দেশে ক্ষমতাসীনদের ভোটের মাঠ দখলের ইতিহাস নতুন কিছু নয়। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিয়মিতই তা হয়ে আসছে। যে কারণে ক্ষমতাসীনরা কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হতেন না। এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পর প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচনকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায়। কিন্তু গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর বিএনপির আমলেই প্রথম কলঙ্কিত হয় মাগুরার উপনির্বাচন। যে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিকে সামনে নিয়ে আসে। গণদাবি উপেক্ষা করে ১৫ই ফেব্রুয়ারির গায়েবি ভোট করে বিএনপি। যদিও সে সংসদের মেয়াদ ছিল একেবারেই স্বল্প। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত তিনটি সংসদ নির্বাচন ছিল গ্রহণযোগ্য। ৫ই জানুয়ারিতে আবারও গায়েবি ভোটে ফিরে যায় বাংলাদেশ। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বেশির ভাগ দলই অংশ নেয়নি। এখন তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর নির্বাচনে নিরপেক্ষ রেফারির দাবি উচ্চকিত হচ্ছে।
ক্ষমতাসীনদের প্রতি দুর্বল একদল বুদ্ধিজীবী কয়েক বছর ধরে বলে আসছেন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলেই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচনে সরকারের তেমন কোন ভূমিকা নেই। তবে দিনে দিনে তাদের আওয়াজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দেয়ার পর একবার এক কমিশনার দাঁড়িয়ে নিজের মেরুদণ্ড থাকার প্রমাণ দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেরুদণ্ডের অবস্থা আরও একবার প্রমাণ হলো মঙ্গলবার। যদিও এর আগেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। যখন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েও একদিন পরেই কমিশন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসে খুব সম্ভবত কোন নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো সেনানিবাসে সেনা মোতায়েন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের অবশ্য কোন অনুশোচনাও নেই। দখল উৎসবের দিন শেষে তিনি অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সবাইকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। আমরাও তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের পরম সৌভাগ্য এমন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমরা পেয়েছি। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের একটি ভূমিকার কথাও ইদানীং আলোচিত হচ্ছিল। হয়তো এ কারণেই মঙ্গলবারের নির্বাচনের সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তাদের ক্যাডারদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল সাংবাদিকরা। পুলিশ পদে পদে বাধা দিয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যামেরা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ১৫ সাংবাদিক।
আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো- স্লোগানটি একসময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু হালজমানায় তৈরি হয়েছে নতুন স্লোগান- আপনার ভোট আমি দেবো। জয়তু, গায়েবি ভোট।
No comments