মোবাইল ফোনে সারচার্জ নয়, সম্পদ কর বসাতে হবে by প্রতীক বর্ধন
মোবাইল
ফোন ব্যবহারের ওপর সরকার ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই উন্নয়ন সারচার্জ ও লেভি আরোপ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন
দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মুঠোফোন ব্যবহারের বিলের ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ
যুক্ত হবে। এতে সরকার বার্ষিক প্রায় ১৪০ কোটি টাকা আয় করবে বলে ধারণা করা
হচ্ছে। সংসদ বসলে আইনটি হয়তো পাসও হয়ে যাবে। কিন্তু কথা হচ্ছে দেশে
যেখানে আয়কর ফাঁকির প্রবণতা চরম আকার ধারণ করেছে, তখন তা রোধ না করে
সরকারের এই সারচার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত কি গণতান্ত্রিক? প্রথম আলোর এক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২-১৩ করবর্ষে বার্ষিক আয় বিবরণীতে মাত্র ৫ হাজার ৬৬২
জন তাঁদের সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি টাকার ওপরে দেখিয়েছেন। এই পরিসংখ্যান
মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কোটি টাকার ওপরে সম্পদ থাকলে করের ওপর ১০ শতাংশ
অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয়। সে কারণে বিত্তশালীরা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য নানা
রকম ফন্দিফিকির করেন।
অন্যদিকে রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, দেশে করযোগ্য মানুষের সংখ্যা ৬০ লাখের মতো, কিন্তু কর দিচ্ছেন মোট ১৮ লাখের মতো। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখি না। ঢাকা নগরে বাড়িওয়ালাদের অধিকাংশেরই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) পর্যন্ত নেই। এ নিয়ে কিছুদিন বেশ শোরগোলও হলো। তারপর যেই লাউ সেই কদু। চিকিৎসকদের মধ্যেও অনেকে কর ফাঁকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুসারে, আমাদের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে, আর বাকি ৩০ শতাংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, করের সিংহভাগই জোগান দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ কর বেশি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এই রাষ্ট্রে যাঁদের আয় বেশি, তাঁরা কর দেন কম। আর যাঁদের আয় কম, তাঁরাই বেশি কর দেন। এটা কোনো গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থায় যাঁদের আয় বেশি, তাঁদের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে করারোপ করা হয়। নাগরিকদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য কমিয়ে আনতে এটা করা হয়। প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থায় একটি দেশে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ মোট আদায়কৃত করের প্রায় ৫০ শতাংশ হওয়া উচিত। খোদ রাজস্ব বোর্ডই এ কথা বলে।
কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিলের ওপর সারচার্জ বসিয়ে কী লাভ হবে, তা বোধগম্য নয়। সরকারের হিসাব অনুসারে এ খাত থেকে ১৪০ কোটি টাকা আসবে, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে। আমাদের বাজেটের অনুপাতে এ সংখ্যাটা একেবারেই নগণ্য। আবার এই টাকাও যে যথাযথভাবে ব্যয় হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। প্রথম আলোয় খবরটি প্রকাশিত হলে পত্রিকাটির অনলাইনে একজন পাঠকের মন্তব্য এ রকম:
‘আদায়কৃত কর যদি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে জনগণ কর দিতে আপত্তি করবে না। কিন্তু বাস্তবে আদায়কৃত কর সরকারি দল, মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আদায়কৃত করের অর্থ দিয়ে এমন সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়, যাতে মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি দলের নেতা-নেত্রীরা লাভবান হয়।’ সমস্যাটা সেখানেই।
আবার দেশে যাঁরা নিয়মিত কর দিচ্ছেন, তাঁরাও যে রাষ্ট্রের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন, তা-ও নয়। বাণিজ্যের করালগ্রাসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র—অর্থাৎ সব মৌলিক অধিকারই এখন আমজনতাকে আলাদা খরচ করে পেতে হচ্ছে। কর দিয়েও এসব মিলছে না। এ দায়িত্ব নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের। তাকেই নিশ্চিত করতে হবে যে মানুষ কর দিলে প্রাপ্য অধিকার পাবে।
কথা হচ্ছে দুনিয়াজুড়েই মানুষের আয়ের বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে। কিছুদিন আগের এক সংবাদ অনুযায়ী, বিশ্বে যত সম্পদ আছে, তার প্রায় অর্ধেক এখন ধনকুবের ১ শতাংশ মানুষের হাতে। বাকি প্রায় অর্ধেক ৯৯ শতাংশ লোকের হাতে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের বিপরীতে ৯৯ শতাংশের আন্দোলনও আমরা দেখেছি: অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট। ২০১৬ সালের মধ্যে ধনীদের হাতে সম্পদের পরিমাণ অর্ধেক ছাড়িয়ে যাবে। টমাস পিকেটি তাঁর সাড়া জাগানো ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি গ্রন্থে অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও পুঁজিবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু মৌলিক প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সম্পদ উৎপাদনের অনুপাত ব্যাপক হারে বেড়েছে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্রে এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে মুনাফার পরিমাণ কমে আসে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পুঁজি বিনিয়োগ থেকে সৃষ্ট মুনাফার পরিমাণ না কমে উল্টো মজুরির পরিমাণ কমেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে চার দশক আগের তুলনায় বর্তমানে গড় মজুরির পরিমাণ ৭ শতাংশ কম।
তবে এটা অলঙ্ঘনীয় নয়। এরও প্রতিকার আছে, পিকেটি যে কথা বলেছেন: সম্পদ করারোপ, উত্তরাধিকার কর প্রবর্তন, শিক্ষার আওতা বাড়াতে ব্যয় বৃদ্ধি, করপোরেট পরিচালনা বিধি সংস্কার, কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, ব্যাংকের শোষণ বন্ধে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণারোপ প্রভৃতি। আমাদের দেশে যাদের সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি টাকার ওপরে, তাদের ওপর ইতিমধ্যে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু ভিত্তিমূল্যের মানদণ্ডে সম্পদের মূল্যায়ন করা হয় বলে সেটা তেমন কার্যকর হয়নি। গত করবর্ষে এ খাত থেকে মাত্র ১৩১ কোটি এসেছে, এ পরিসংখ্যানই এর অসাড়তার প্রমাণ। এই ফাঁক রোধ করা গেলে সারচার্জ বাবদ আমাদের প্রচুর কর আহরণ করা সম্ভব। শুধু চোখ খুলে আশপাশে তাকালেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। এদিকে আমাদের দেশে এখনো সম্পদ কর প্রবর্তন করা হয়নি। যদিও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেই সম্পদ করের বিধান আছে। অলস ও অনুৎপাদনশীল সম্পদ নিরুৎসাহিত করতে সাধারণত সম্পদ কর আরোপ করা হয়। এর মাধ্যমে অর্জিত কর সুনির্দিষ্টভাবে সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে ব্যবহার করা যায়।
অনেকে বলছেন, আমাদের দেশের মানুষ মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত কথা বলে। সে কারণে এই করারোপ করা যেতেই পারে। কিন্তু এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। মানুষের যা প্রয়োজন, তারা সেটাই করবে। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এই ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে এই সারচার্জের সিংহভাগই আসবে তাদের কাছ থেকে। পরিসংখ্যানের হিসাবে ১ শতাংশ তেমন বড় কিছু না হলেও নীতিগতভাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে সমাজের বিত্তশালীদের আবারও রেহাই দেওয়া হবে। যাঁদের আয় বেশি, তাঁদের কাছ থেকেই রাজস্বের সিংহভাগ আদায় করতে হবে। এটাই সরকারের নীতি হওয়া উচিত। গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার নয়, সুস্থ ও সচ্ছলভাবে বাঁচার অধিকারও- অন্যান্য আরও অনেক কিছুর সঙ্গে।
প্রতীক বর্ধন: সাংবাদিক ও অনুবাদক।
bardhanprotik@gmail.com
অন্যদিকে রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, দেশে করযোগ্য মানুষের সংখ্যা ৬০ লাখের মতো, কিন্তু কর দিচ্ছেন মোট ১৮ লাখের মতো। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখি না। ঢাকা নগরে বাড়িওয়ালাদের অধিকাংশেরই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) পর্যন্ত নেই। এ নিয়ে কিছুদিন বেশ শোরগোলও হলো। তারপর যেই লাউ সেই কদু। চিকিৎসকদের মধ্যেও অনেকে কর ফাঁকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুসারে, আমাদের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে, আর বাকি ৩০ শতাংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, করের সিংহভাগই জোগান দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ কর বেশি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এই রাষ্ট্রে যাঁদের আয় বেশি, তাঁরা কর দেন কম। আর যাঁদের আয় কম, তাঁরাই বেশি কর দেন। এটা কোনো গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থায় যাঁদের আয় বেশি, তাঁদের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে করারোপ করা হয়। নাগরিকদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য কমিয়ে আনতে এটা করা হয়। প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থায় একটি দেশে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ মোট আদায়কৃত করের প্রায় ৫০ শতাংশ হওয়া উচিত। খোদ রাজস্ব বোর্ডই এ কথা বলে।
কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিলের ওপর সারচার্জ বসিয়ে কী লাভ হবে, তা বোধগম্য নয়। সরকারের হিসাব অনুসারে এ খাত থেকে ১৪০ কোটি টাকা আসবে, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে। আমাদের বাজেটের অনুপাতে এ সংখ্যাটা একেবারেই নগণ্য। আবার এই টাকাও যে যথাযথভাবে ব্যয় হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। প্রথম আলোয় খবরটি প্রকাশিত হলে পত্রিকাটির অনলাইনে একজন পাঠকের মন্তব্য এ রকম:
‘আদায়কৃত কর যদি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে জনগণ কর দিতে আপত্তি করবে না। কিন্তু বাস্তবে আদায়কৃত কর সরকারি দল, মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আদায়কৃত করের অর্থ দিয়ে এমন সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়, যাতে মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি দলের নেতা-নেত্রীরা লাভবান হয়।’ সমস্যাটা সেখানেই।
আবার দেশে যাঁরা নিয়মিত কর দিচ্ছেন, তাঁরাও যে রাষ্ট্রের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন, তা-ও নয়। বাণিজ্যের করালগ্রাসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র—অর্থাৎ সব মৌলিক অধিকারই এখন আমজনতাকে আলাদা খরচ করে পেতে হচ্ছে। কর দিয়েও এসব মিলছে না। এ দায়িত্ব নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের। তাকেই নিশ্চিত করতে হবে যে মানুষ কর দিলে প্রাপ্য অধিকার পাবে।
কথা হচ্ছে দুনিয়াজুড়েই মানুষের আয়ের বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে। কিছুদিন আগের এক সংবাদ অনুযায়ী, বিশ্বে যত সম্পদ আছে, তার প্রায় অর্ধেক এখন ধনকুবের ১ শতাংশ মানুষের হাতে। বাকি প্রায় অর্ধেক ৯৯ শতাংশ লোকের হাতে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের বিপরীতে ৯৯ শতাংশের আন্দোলনও আমরা দেখেছি: অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট। ২০১৬ সালের মধ্যে ধনীদের হাতে সম্পদের পরিমাণ অর্ধেক ছাড়িয়ে যাবে। টমাস পিকেটি তাঁর সাড়া জাগানো ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি গ্রন্থে অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও পুঁজিবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু মৌলিক প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সম্পদ উৎপাদনের অনুপাত ব্যাপক হারে বেড়েছে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্রে এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে মুনাফার পরিমাণ কমে আসে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পুঁজি বিনিয়োগ থেকে সৃষ্ট মুনাফার পরিমাণ না কমে উল্টো মজুরির পরিমাণ কমেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে চার দশক আগের তুলনায় বর্তমানে গড় মজুরির পরিমাণ ৭ শতাংশ কম।
তবে এটা অলঙ্ঘনীয় নয়। এরও প্রতিকার আছে, পিকেটি যে কথা বলেছেন: সম্পদ করারোপ, উত্তরাধিকার কর প্রবর্তন, শিক্ষার আওতা বাড়াতে ব্যয় বৃদ্ধি, করপোরেট পরিচালনা বিধি সংস্কার, কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, ব্যাংকের শোষণ বন্ধে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণারোপ প্রভৃতি। আমাদের দেশে যাদের সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি টাকার ওপরে, তাদের ওপর ইতিমধ্যে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু ভিত্তিমূল্যের মানদণ্ডে সম্পদের মূল্যায়ন করা হয় বলে সেটা তেমন কার্যকর হয়নি। গত করবর্ষে এ খাত থেকে মাত্র ১৩১ কোটি এসেছে, এ পরিসংখ্যানই এর অসাড়তার প্রমাণ। এই ফাঁক রোধ করা গেলে সারচার্জ বাবদ আমাদের প্রচুর কর আহরণ করা সম্ভব। শুধু চোখ খুলে আশপাশে তাকালেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। এদিকে আমাদের দেশে এখনো সম্পদ কর প্রবর্তন করা হয়নি। যদিও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেই সম্পদ করের বিধান আছে। অলস ও অনুৎপাদনশীল সম্পদ নিরুৎসাহিত করতে সাধারণত সম্পদ কর আরোপ করা হয়। এর মাধ্যমে অর্জিত কর সুনির্দিষ্টভাবে সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে ব্যবহার করা যায়।
অনেকে বলছেন, আমাদের দেশের মানুষ মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত কথা বলে। সে কারণে এই করারোপ করা যেতেই পারে। কিন্তু এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। মানুষের যা প্রয়োজন, তারা সেটাই করবে। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এই ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে এই সারচার্জের সিংহভাগই আসবে তাদের কাছ থেকে। পরিসংখ্যানের হিসাবে ১ শতাংশ তেমন বড় কিছু না হলেও নীতিগতভাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে সমাজের বিত্তশালীদের আবারও রেহাই দেওয়া হবে। যাঁদের আয় বেশি, তাঁদের কাছ থেকেই রাজস্বের সিংহভাগ আদায় করতে হবে। এটাই সরকারের নীতি হওয়া উচিত। গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার নয়, সুস্থ ও সচ্ছলভাবে বাঁচার অধিকারও- অন্যান্য আরও অনেক কিছুর সঙ্গে।
প্রতীক বর্ধন: সাংবাদিক ও অনুবাদক।
bardhanprotik@gmail.com
No comments