ভোট জালিয়াতির মহোৎসব
কেন্দ্র
দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোটের মহোৎসব এবং বিএনপি সমর্থিত
প্রার্থীদের বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন। দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়
নিশ্চিত করতে দিনের প্রথম ভাগেই তিন সিটির অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে
নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইনশৃংখলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই তারা ছিনিয়ে নেয় ব্যালট পেপার ও ব্যালট
বাক্স। অস্ত্রের মহড়ার পাশাপাশি জোর করে বের করে দেয় বিএনপিসহ
প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টদের। চলে প্রকাশ্যে
ব্যালট পেপারে সিলমারাসহ জাল ভোটের মহোৎসব ও নজিরবিহীন কারচুপি। কোথাও
কোথাও প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারকেও
ভোট দখল প্রক্রিয়ায় সরাসরি যোগ দিতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে
দেখা গেছে, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন
আয়োজন করতে প্রায় পাঁচশ’ ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকলেও তাদের অধিকাংশই ছিলেন
নিষ্ক্রিয়। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ও নিরীহ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই
সামান্য। এ অবস্থায় বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।
এছাড়া ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে হামলা ও সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে দল সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেই বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন কেন্দ্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহু এলাকায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস সেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও গুলি করেছে। সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বেশির ভাগ কেন্দ্র দখল করে নেয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। অনেক কেন্দ্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ঢুকতেই দেয়া হয়নি। যারা ঢুকতে পেরেছেন তাদেরও মারধর ও হুমকি দিয়ে বের করে দেয়া হয় বেলা ১১টার মধ্যেই। প্রতিপক্ষের এজেন্টকে দিগম্বর করার ঘটনাও ঘটেছে তেজগাঁওয়ের একটি কেন্দ্রে। দুপুরে তেজকুনিপাড়ায় ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর ব্যাজ পরে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করায় কয়েক যুবককে মারধরের পর তাদের কাপড় খুলে নেয়া হয়। এমনকি নারী পোলিং এজেন্টও রক্ষা পাননি সরকারদলীয় সমর্থকদের তাণ্ডবের হাত থেকে।
ঢাকা উত্তরের লালকুঠি এলাকায় সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত হন ইসমাত আরা জাহান ওরফে নিলা নামে সংরক্ষিত আসনের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা এ সময় তার কাছে হাতব্যাগে থাকা ৮৫ হাজার টাকা ও সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলা থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। তাদের ক্যামেরা ভাংচুর করা, কেড়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধায় বহু কেন্দ্রে সংবাদকর্মীরাও প্রবেশ করতে পারেননি। জাল ভোট, অনিয়ম ও সংঘর্ষের তথ্য সংগ্রহ এবং ছবি তুলতে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত আটজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ সময় সবুজবাগে রাইজিং বিডির সাংবাদিক ইয়াসিন রাব্বী গুলিবিদ্ধ হন। মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও মানিকনগরের তিনটি কেন্দ্রে সরকার সমর্থকরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর সমর্থকদের। আর এসব কিছুই হয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনকালে নানা অনিয়ম, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের দৃশ্য দেখা গেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার তথ্য দিতেও রাজি ছিলেন না। কয়েকটি কেন্দ্রে খোদ প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের বিরুদ্ধেও জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ ওঠে। রাজধানীজুড়ে যে ক’টি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা ছিল সরকার সমর্থক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। সবুজবাগের কমলাপুর হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে না পেরে পুলিশের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। মানিকনগর মডেল হাইস্কুলে কেন্দ্র দখলে বাধা দেয়ায় পুলিশের ওপর বৃষ্টিও মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ভাংচুর করা হয় পুলিশের কয়েকটি গাড়ি। এ সময় বিজিবি ও র্যাবের শতাধিক সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে শিশুসহ পাঁচজন আহত হন।
ভোট গ্রহণ শেষে বিকালে সূত্রাপুরের লালকুঠি মঈনউদ্দিন চৌধুরী মেমোরিয়াল হল ভোট কেন্দ্রের সামনে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে আহত হন পোলিং অফিসার জজ মিয়া ও ভোটার লিয়াকত শিকদার রাব্বি। তাদের দু’জনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরান ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমি কেন্দ্রে লাঞ্ছিত হন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। এ সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে আহত হন লিটন নামে এক ব্যক্তি। ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হলে পরিবারের সদস্যদের সামনেই লাঞ্ছিত হন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
এতকিছু ঘটলেও পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন নির্বিকার। দাঁড়িয়ে থেকে শুধু দর্শকের ভূমিকাই পালন করতে দেখা গেছে তাদের। শুধু পুরান ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম কলেজ কেন্দ্রে সরকারদলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়ার মোহাম্মদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এখানে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। জাল ভোট দিতে বহিরাগতদেরও দেখা গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। প্রাণহানির কোনো ঘটনা না ঘটলেও নির্বাচনের দিন বেশ কিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নিজেই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে।
এ অবস্থায় দুপুরের আগেই ভোট বর্জন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপি সমর্থিত মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দুপুর গড়াতেই তাদের অনুসরণ করে ভোট বর্জনের খাতায় নাম লেখান আরও বেশ কয়েকজন মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী। অনেকে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানও করেন। বিদেশী কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরাও এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে নির্বাচন নিয়ে খুশি নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীরাও প্রশ্ন তুলেছে এই নির্বাচন নিয়ে। তাদের সমর্থিত মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা না দিলেও তারা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে কারচুপির নজিরবিহীন চিত্র দেখার পর বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টি সমর্থিত দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে কিছু কিছু জায়গায় ভোট কেন্দ্র দখল হতো। কিছু ক্ষেত্রে ভোট চুরি হতো, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই হতো। আড়ালে আবডালে কারচুপি করা হতো। এবার পুরো নির্বাচনটাই আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দখল করে নিয়েছে। ভোট দেয়ার আগেই ভোট শেষ হয়ে গেছে।’
জাতীয় পার্টি সমর্থিত উত্তরের মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুল সকালে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। একতরফা ভোট হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরাসহ শাসক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা খুশি এই নির্বাচন নিয়ে।
বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ প্রেস ব্রিফিংয়ে, নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করে বলেন, মানুষ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পুরো নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে বলেছেন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতেই বিএনপি ভোট বর্জন করেছে।
এর আগে সকালে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপি মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সেই অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, তারা তা মেনে নেবেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য ১৮ এপ্রিল তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৬০ লাখের বেশি ভোটার অধ্যুষিত তিন সিটিতে রেকর্ড সংখ্যক এক হাজার ১৮৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৪৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৯১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৪৯ জন প্রার্থী হন। ৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়। ২০ দিন টানা প্রচারের পর মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে তিন ব্যাটালিয়ন সেনা সদস্যসহ প্রায় ৮০ হাজার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া প্রায় পাঁচশ’ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। যদিও আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার অভিযোগ- আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অধিকাংশ জায়গায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে মিলেমিশে ভোট দখলের উৎসবে মেতে ছিল। কোথাও কোথাও আবার তাদের নীরব দর্শকের ভূমিকায়ও দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তরে ১৬ জন মেয়র প্রার্থীসহ মোট ৩৮৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ সিটিতে সাধারণ ৩৬ ওয়ার্ডে ২৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ডে ৯০ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হন। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন, সাধারণ ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩৯১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৯৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর চট্টগ্রামে মেয়র পদে ১২ জন, ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬২ জন ও ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২১৭ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে আলোচনায় ছিলেন ছয় মেয়র প্রার্থী। তারা হলেন- উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক ও বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল। দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন ও বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাস। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলম। এদের মধ্যে এম মনজুর আলম নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকেও অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রায় সব ভোট কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ এনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করে বিএনপি। মঙ্গলবার ভোট শুরুর চার ঘণ্টার মাথায় দুপুর ১২টার কিছু পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঢাকার দুই সিটির ভোট বর্জনের এই ঘোষণা দেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে পাশে বসিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই ব্যানারেই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম এর ঘণ্টাখানেক আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ আহমদ বলেন, এটা কোনো নির্বাচন হয়নি। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। ভোটবিহীন এ নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এ নির্বাচন আমরা বর্জন করি। এতে গণতন্ত্রের প্রহসন করা হয়েছে। এ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বড় পরাজয় হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের প্রায় কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রায় সব কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। কিছু কেন্দ্রে যেসব এজেন্ট ঢুকেছিল, তাদের সাড়ে ৮টার মধ্যেই বের করে দেয়া হয়েছে। অনেক এজেন্টকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। এ নির্বাচনের শতকরা ৫ ভাগ মানুষও ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন মওদুদ।
সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা আব্বাস বলেন, ঢাকা দক্ষিণে আমার কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ফকিরেরপুলে একটি কেন্দ্রে আমি গেলে সেখানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাকেসহ গণমাধ্যমকর্মীদের লাঞ্ছিত করে। প্রতিটি গলি তারা দখল করে রেখেছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের নারী ভোটারদের অপমানিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোট কেন্দ্র দখল করে তারাই সিল মেরেছে, ভোট ডাকাতি করেছে। সাধারণ ভোটারদের কাউকেই কেন্দ্রের কাছে তারা (ক্ষমতাসীন) ভিড়তে দেয়নি। আফরোজা আব্বাস বলেন, আমি দেখেছি, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যেতে। অনেকে ভোট দিতে গেলে তাদের বলা হয়েছে, ভোট হয়ে গেছে। এটা ভোট ডাকাতি হয়েছে। মানুষের ভোটকে তারা (ক্ষমতাসীন) ছিনতাই করেছে।
অন্যদিকে তাবিথ আউয়াল প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারের কী উদ্দেশ্য ছিল, এরকম তামাশা করার। তিনি বলেন, আমি যেসব কেন্দ্রে ঘুরেছি, কোথাও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের কাউন্সিলরদের এজেন্ট ছাড়া অন্যদের দেখতে পাইনি। আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। পরিদর্শন করা কেন্দ্রে এজেন্ট না দেখে অভিযোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রের সামনে আমাদের এজেন্টের ছিঁড়া ব্যাচ দেখতে পেয়েছি। ভেতরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেও কোনো জবাব পাইনি। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন সিপিবি ও বাসদ সমর্থিত দুই প্রার্থী। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি।
তবে নির্বাচন শেষে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় আনিসুল হক বলেন, খেলতে গেলে ফাউল হয়। এটা মেজর না মাইনর, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে ছোটখাটো কিছু ত্র“টির কথা স্বীকার করেন তিনি। বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট ও মারামারি প্রসঙ্গে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, যে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে, তা আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ও বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে। এটা অনেকটা ভাইয়ে ভাইয়ে গণ্ডগোলের মতো। বিএনপির ভোট বর্জন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৬ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দু-একজন ভোট বর্জন করেছেন, যা সংখ্যার দিক থেকে খুব সামান্য। বেশির ভাগ প্রার্থী নির্বাচনে ছিলেন। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন।
বিকালে সাঈদ খোকন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ঢাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ নির্বাচনে তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছেন। সাধারণ ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছেন। ভয়ভীতি প্রদর্শনের উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা ছিল না।
সরেজমিন দেখা গেছে, জাল ভোটের ব্যাপকতা এত বেশি ছিল যে, ভোট প্রদানকারীরা ব্যালট পেপারের উল্টোপিঠে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছাড়াই ভোট দিয়ে ব্যালটবাক্স ভর্তি করেছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে ইসির সিল দেয়া হয়নি। বেশ কয়েকজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, জোরপূর্বক ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দেয়ায় অনেক ব্যালট পেপারে একজন ব্যক্তির হাতের আঙুলের ছাপ রয়েছে।
সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের দুই ঘণ্টা পরই কেন্দ্র দখলে মরিয়া হয়ে উঠে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই বহিরাগতদের নিয়ে জাল ভোট দেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের জাল ভোটে সহযোগিতা করতে বাধ্য করেন। কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেয়ার সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ডাকা হলেও তারা সহযোগিতা করেনি। উল্টো আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্র দখলকারীদের সহযোগিতা করেন। ওই অবস্থায় পরিস্থিতি জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করণীয় জানতে চাইলে তারাও হাওয়া বুঝে চলার নির্দেশ দেন। ওই সময়ে ক্ষমতাসীনদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা অসহায় আত্মসমর্পণ করেন বলেও জানান তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিপুলসংখ্যক বহিরাগতদের নিয়ে সকাল থেকেই কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নেন। ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থানের ওপর পুলিশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও তা উপেক্ষা করে জাল ভোট দেয়ার উৎসবে মেতে ওঠে বহিরাগতরা। জানা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক বহিরাগত ঢাকায় জড়ো করেন ওইসব এলাকার বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।
মানিকনগর মডেল হাইস্কুলে সংঘর্ষ : বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকা দক্ষিণের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকনগর মডেল হাইস্কুলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল বাসিত খান বাচ্চু ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তফা বাদশার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। ভাংচুর করা হয় পুলিশের দুটি মাইক্রোবাস, একটি পিকআপ ও একটি ভ্যান। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা ধাওয়া দেয় এবং গুলি ছোড়ে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে পুলিশের গুলিতে কালু শীল নামে এক ব্যক্তি আহত হন। পরে বিজিবি সদস্যরাও ঘটনাস্থলে যান।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. শাহজাহান জানান ২০-২৫ জন যুবক এসে প্রত্যেকটি পোলিং বুথে প্রবেশ করে ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়। তারা সিল মারার চেষ্টা করে। এ সময় অপর গ্র“প এসে বাধা দেয়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। একটি বুথের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার সাইদুর রহমান জানান, সামনে যেক’টি ব্যালট পেপার পেয়েছে সব তারা ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারা শুরু করে। সেটা শেষ হওয়ার পর আবার ব্যালট চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালট দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বাধ্য হয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখেন। কেন্দ্রের বাইরে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উত্তেজনা চলতে থাকে। এই কেন্দ্রের কোথাও বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টদের দেখা যায়নি। বুথের পোলিং অফিসার ফারজানা আক্তার জানান, সবক’টি ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে ইলিশ মাছ ও রেডিও মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ভরা হয়।
যাত্রাবাড়ী পঞ্চায়েত কমিউনিটি সেন্টারে অস্ত্রের মহড়া : ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রটি স্থানীয়ভাবে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার নামে পরিচিত। সকাল ৯টার সময় ইলিশ মাছ মার্কার সমর্থক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রটি দখল করে সিল মারা শুরু করে। এ সময় সরকারদলীয় তিন ক্যাডার অস্ত্র হাতে পুলিশ ও র্যাবের সামনেই অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধাওয়া করে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাইসেল হাসান হবির সমর্থকরা বাধা দিলে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। এ অবস্থায় পরে প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখেন। এই কেন্দ্রে দোতলা ও তৃতীয় তলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে নামের ব্যাচ খুলে ইলিশ মাছের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য প্রার্থীদের প্ররোচনা দিতে দেখা যায়। এ সময় ফটো সাংবাদিক রফিকুল্লাহ তাদের ছবি তুললে তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন পুলিশ সদস্যরা। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শহীদুর রহমান জানান, কেন্দ্র দখল করে সিল মারা শুরু করলে আমরা বাধা দেই। তারা পোলিং বুথ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে যায়। কিছু সিল মারলেও সেগুলো বাক্সে ঢুকাতে পারেনি বলে দাবি করেন প্রিসাইডিং অফিসার।
হবির বোন দাবি করে সখিনা ইয়াসমিন নামে এক নারী বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন কেন্দ্র দখল করে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মারধর করেছে এবং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। এ সময় রোকেয়া নামে এক নারী অভিযোগ করেন তিনি ভোট দিতে পারেননি।
কবি নজরুল সরকারি কলেজে সংঘর্ষ : দুপুর ১২টায় ঢাকা দক্ষিণের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইয়ার মোহাম্মদ ইয়ারু (ঘুড়ি) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী সেলিমের (টিফিন কেরিয়ার) প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ইয়ারুর পক্ষে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ ও হাজী সেলিমের পক্ষে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক ইটপাটকেলে কবি নজরুল কলেজ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের গুলি, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পরে র্যাব-বিজিবি ধাওয়া করে ঘটনাস্থল থেকে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রের ভেতর আরও পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা সেখানে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। এ সময়ের মধ্যেও ছাত্রলীগের কর্মীরা ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারতে থাকে। এ অবস্থায় কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার কেন্দ্রে ৩ হাজার ভোটের মধ্যে ৯২৮ ভোট কাস্ট হয়েছে।
বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে হামলা লাঠিচার্জ : ঢাকা দক্ষিণের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে দুপুর ১টার দিকে বকশীবাজারে বদরুন্নেসা সরকারি কলেজে হাজী মোহাম্মদ আলীর সমর্থক ও জিন্নাত আলী জিন্নুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশ উপস্থিত লোকজনকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। পুলিশ কেন্দ্রের ফটক বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীকে সিল মারার সুযোগ করে করে দেয় বলে অভিযোগ করেন মোহাম্মদ আলী ও তার সমর্থকরা। এ সময় তারা জিন্নুর সমর্থকরা ভোটচোর, আওয়ামী লীগ ভোটচোর বলে মিছিল করতে থাকে। এ কেন্দ্রে মগ মার্কা বা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।
আলী আহাম্মেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা দক্ষিণের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আলী আহাম্মেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ব্যাপক জাল ভোট দিতে শুরু করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আনিসুর রহমান আনিসের লোকজন। সকালেই বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাবীবা চৌধুরী ও মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সমর্থকদের বের করে দেয়া হয়। এ কেন্দ্রের হাসিনা নামে এক নারী ভোটারকে ধরা হয়। হাসিনা জানান, তার বাসা কাঁচপুরে। তিনি একটি গার্মেন্টের কর্মী। তাকে এক হাজার টাকা দিয়ে ভোট দিতে আনা হয়। ছবি ও ভোটার নম্বর মিল না থাকায় তাকে আটক করা হয়।
বান্ডেল ধরে জাল ভোট : রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের বান্ডেল নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মার্কায় সিল দেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অপর এক কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট স্থগিত রাখার আবেদন করেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শেখ মো. আরিফুল ইসলাম অবৈধভাবে সিল মারার এই ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, সকাল থেকে ছিলাম। মাঝে একটু ঝামেলা হয়েছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। কিছু ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানিয়েছি।’ ওই কেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। আফরোজা আব্বাস বলেন, ব্যাপক কারচুপি হচ্ছে। আমি বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়েছি। একই অবস্থা দেখেছি। সরকারি দলের লোকজন কেন্দ্র দখল নিয়ে তাদের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে দেখিয়ে আফরোজা বলেন, এই দু’জন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন, তারা নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। প্রত্যেকটা কেন্দ্রেই তারা এ রকম করছে।’
এই কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী শম্পা বসুও। পাশের লুৎফা একাডেমি থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হাজী সেলিম লাঞ্ছিত, নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে আহত ১ : ঢাকা দক্ষিণের ৩৭নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাহাবউদ্দিন জনির সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দলটির নেতা ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম। এ সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে লিটন নামে এক ব্যক্তি আহত হন।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার পর পুরান ঢাকার ৩৭নং ওয়ার্ডের বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহত লিটনকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হাজী সেলিম আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রহমান নিয়াজীর সমর্থকদের নিয়ে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ভোট কেন্দ্রে যান। এ সময় কাউন্সিলর পদে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহাবউদ্দিন জনির সমর্থকরা হাজী সেলিমের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করে। হাজী সেলিমকে হামলার কবল থেকে রক্ষা করতে এ সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী গুলি চালালে লিটনের পায়ে বিদ্ধ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কেতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মো. পারভেজ বলেন, ভোট কেন্দ্রের সামনে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ : ঢাকা দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি করেছে। পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কেন্দ্র দখল ও পাল্টা দখল নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সুরিটোলা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বংশালের সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার পর ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সিনিয়র বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসেন কেন্দ্রের বাইরে ইসির এ নির্দেশনা জানিয়ে বলেন, স্কুলে তিনটি কেন্দ্র। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ৫৬৫ নম্বর কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হল। তবে এ স্কুলে ৫৬৪ ও ৫৬৬ নম্বর কেন্দ্রে ভোট চলবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কেন্দ্রের ভেতর দুটি ব্যালট বাক্স ভাঙা অবস্থায় পড়েছিল। এ সময় বাইরে বিপুলসংখ্যক লোকজন বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা করতে দেখা গেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নিতেশ কুমার সাহা বলেন, বাইরে থেকে লোক এসে হামলা চালিয়েছে। একই স্কুলের অপর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার লুৎফুর রহমান বলেন, আমরা ভোট নেয়া বন্ধ করিনি। তবে গোলযোগের কারণে হয় তো ভোটাররা আসছেন না। ভোটাররা এলেই ভোট নেব। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনারও বিষয়টি স্বীকার করেন।
খিলগাঁওয়ে ব্যালট ছিনতাই : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের দুটি বুথের ব্যালট পেপার নিয়ে গেছে সরকারদলীয় সমর্থকরা। ভোট শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যালয়টির ৫ ও ৬ নম্বর বুথে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ও ভোটার তালিকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ সময় ৩ নম্বর বুথে একাধিক ব্যক্তিকে জাল ভোট দিতে দেখা গেছে। বুথের একাধিক সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার জানান, ‘ভাই জীবনের মায়া কার নেই। আমাদের কিছুই করার ছিল না। এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।
কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে সংঘর্ষ : দক্ষিণের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। জাল ভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল সর্দার অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফুজ্জামান ফরিদের (রেডিও) সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দিয়েছে ও ৩-৪শ’টি ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. শরীফ ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ভোটগ্রহণ স্থগিতের কথা জানান। ব্যাটল ছিনতাইয়ের প্রতিবাদে কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন এক প্রার্থীর সমর্থকরা।
৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ কেন্দ্র দখল : ঢাকা দক্ষিণের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে হাজী ফরহাদ হোসেন মুকুলের (র্যাকেট প্রতীক) পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন প্রার্থী নিজেই। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। হাজী ফরহাদ হোসেন জানান, তার পোলিং এজেন্টদের ৯টি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এসব কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালটে সিল মারছে। এই ওয়ার্ডের সিলভারডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্র নম্বর ১ ও ২, নিটল স্কলার টিউটোরিয়াল অ্যান্ড হাই স্কুল, ওয়ারী সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, ওয়ারী আবদুর রহিম কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্র ১ ও ২, ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়, ফকির চাঁন সর্দার কমিউনিটি সেন্টার, নারিন্দা সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৯টি কেন্দ্র দখল করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভোট জালিয়াতিতে খোদ প্রিসাইডিং অফিসার : ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হয়েও ঢাকা দক্ষিণের নারিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারতে দেখেছেন সাংবাদিকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রিসাইডিং অফিসার ওবায়দুল ইসলামকে ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকেন।
শাঁখারি বাজারে মারামারি : ভোট ছিনতাইকে কেন্দ্র করে শাঁখারি বাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩ জন আহত হয়েছেন। শাঁখারি বাজারের পগোজ স্কুলের ৫৮৬নং কেন্দ্রে (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৭নং ওয়ার্ড) কিছু সময় ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাবুদ্দিন জনির সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢুকাতে থাকে। এ সময় তারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে। ঘটনা জানাজানি হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রহমান মিয়াজী তার সমর্থকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এতে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, সংঘর্ষ হয়। এতে মিয়াজীর সমর্থক বাদল চন্দ্র ঘোষসহ কমপক্ষে তিনজন আহত হন।
টিকাটুলীতে সংঘর্ষ : টিকাটুলী এলাকার মিতালী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। মিতালী স্কুল কেন্দ্রের সামনে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুলের সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আসাদ ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক কমিশনার টিপুর সমর্থকরা বাধা দেয়। এতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বেধে যায়।
হাজারীবাগে সংঘর্ষ : ঢাকা দক্ষিণের হাজারীবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জরিনা শিকদার স্কুলে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সেলিম ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াস রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। হাজারীবাগ থানার ওসি মঈনুল ইসলাম জানান, টিয়ার শেল ছেড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এদিকে কেন্দ্রে বহু ভোটার ভোট দিতে পারেননি।
শুরুতেই সিল : ঢাকা উত্তরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উষা বিদ্যা নিকেতন নামে ওই ভোট কেন্দ্রে দেখা গেছে সকাল সাড়ে ৮টার সময় প্রিসাইডিং অফিসারের উপস্থিতিতে চলছে সিল মারার কাজ। সংবাদ কর্মীদের দেখে দ্রুত তারা সটকে পড়ে। একই ওয়ার্ডের ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা কেন্দ্রের একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে চারজনকে নির্ভয়ে সিল মারতে দেখা যায়। ওই বুথের পাশেরটিতেই প্রিসাইডিং অফিসার প্রবীর কুমার চক্রবর্তীর কক্ষ। হঠাৎ ওই বুথে সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে দুই যুবক বের হয়ে যায়। এ সময় বেঞ্চের ওপর সিল দেয়া ব্যালট পেপারের বই দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
রায়ের বাজারে গোলাগুলি : রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন রায়েরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
মোহাম্মদপুরে পিসি কালচার হাউজিং কেন্দ্রে সংঘর্ষ : মহানগর উত্তরের ৩০নং ওয়ার্ডের আদাবর এলাকার পিসি কালচার হাউজিং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আরিফুর রহমান তুহিন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কমিশনার আবুল হাশেম হাসুর কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ও র্যাবকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করতে দেখা গেছে।
ক্যান্টনমেন্টেই থাকল সেনাবাহিনী : সিটি নির্বাচনে রিজার্ভ অবস্থায় সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে থাকলেও তাদের মাঠে নামানো হয়নি। নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট দখল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ হলেও সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে নির্দেশ দেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগে সিইসি বলেছিলেন, কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডাকের সঙ্গে সঙ্গে মুভ করবে সেনাবাহিনী। তবে মঙ্গলবার সেনা নামানোর বিষয়ে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে থেকেই সেনাবাহিনী রিজার্ভ ছিল। তবে মাঠে সেনা নামানোর মতো কোনো পরিস্থিতি হয়নি। নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এছাড়া ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে হামলা ও সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে দল সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেই বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন কেন্দ্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহু এলাকায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস সেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও গুলি করেছে। সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বেশির ভাগ কেন্দ্র দখল করে নেয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। অনেক কেন্দ্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ঢুকতেই দেয়া হয়নি। যারা ঢুকতে পেরেছেন তাদেরও মারধর ও হুমকি দিয়ে বের করে দেয়া হয় বেলা ১১টার মধ্যেই। প্রতিপক্ষের এজেন্টকে দিগম্বর করার ঘটনাও ঘটেছে তেজগাঁওয়ের একটি কেন্দ্রে। দুপুরে তেজকুনিপাড়ায় ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর ব্যাজ পরে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করায় কয়েক যুবককে মারধরের পর তাদের কাপড় খুলে নেয়া হয়। এমনকি নারী পোলিং এজেন্টও রক্ষা পাননি সরকারদলীয় সমর্থকদের তাণ্ডবের হাত থেকে।
ঢাকা উত্তরের লালকুঠি এলাকায় সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত হন ইসমাত আরা জাহান ওরফে নিলা নামে সংরক্ষিত আসনের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা এ সময় তার কাছে হাতব্যাগে থাকা ৮৫ হাজার টাকা ও সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলা থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। তাদের ক্যামেরা ভাংচুর করা, কেড়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধায় বহু কেন্দ্রে সংবাদকর্মীরাও প্রবেশ করতে পারেননি। জাল ভোট, অনিয়ম ও সংঘর্ষের তথ্য সংগ্রহ এবং ছবি তুলতে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত আটজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ সময় সবুজবাগে রাইজিং বিডির সাংবাদিক ইয়াসিন রাব্বী গুলিবিদ্ধ হন। মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও মানিকনগরের তিনটি কেন্দ্রে সরকার সমর্থকরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর সমর্থকদের। আর এসব কিছুই হয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনকালে নানা অনিয়ম, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের দৃশ্য দেখা গেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার তথ্য দিতেও রাজি ছিলেন না। কয়েকটি কেন্দ্রে খোদ প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের বিরুদ্ধেও জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ ওঠে। রাজধানীজুড়ে যে ক’টি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা ছিল সরকার সমর্থক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। সবুজবাগের কমলাপুর হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে না পেরে পুলিশের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। মানিকনগর মডেল হাইস্কুলে কেন্দ্র দখলে বাধা দেয়ায় পুলিশের ওপর বৃষ্টিও মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ভাংচুর করা হয় পুলিশের কয়েকটি গাড়ি। এ সময় বিজিবি ও র্যাবের শতাধিক সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে শিশুসহ পাঁচজন আহত হন।
ভোট গ্রহণ শেষে বিকালে সূত্রাপুরের লালকুঠি মঈনউদ্দিন চৌধুরী মেমোরিয়াল হল ভোট কেন্দ্রের সামনে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে আহত হন পোলিং অফিসার জজ মিয়া ও ভোটার লিয়াকত শিকদার রাব্বি। তাদের দু’জনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরান ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমি কেন্দ্রে লাঞ্ছিত হন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। এ সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে আহত হন লিটন নামে এক ব্যক্তি। ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হলে পরিবারের সদস্যদের সামনেই লাঞ্ছিত হন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
এতকিছু ঘটলেও পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন নির্বিকার। দাঁড়িয়ে থেকে শুধু দর্শকের ভূমিকাই পালন করতে দেখা গেছে তাদের। শুধু পুরান ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম কলেজ কেন্দ্রে সরকারদলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়ার মোহাম্মদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এখানে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। জাল ভোট দিতে বহিরাগতদেরও দেখা গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। প্রাণহানির কোনো ঘটনা না ঘটলেও নির্বাচনের দিন বেশ কিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নিজেই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে।
এ অবস্থায় দুপুরের আগেই ভোট বর্জন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপি সমর্থিত মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দুপুর গড়াতেই তাদের অনুসরণ করে ভোট বর্জনের খাতায় নাম লেখান আরও বেশ কয়েকজন মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী। অনেকে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানও করেন। বিদেশী কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরাও এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে নির্বাচন নিয়ে খুশি নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীরাও প্রশ্ন তুলেছে এই নির্বাচন নিয়ে। তাদের সমর্থিত মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা না দিলেও তারা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে কারচুপির নজিরবিহীন চিত্র দেখার পর বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টি সমর্থিত দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে কিছু কিছু জায়গায় ভোট কেন্দ্র দখল হতো। কিছু ক্ষেত্রে ভোট চুরি হতো, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই হতো। আড়ালে আবডালে কারচুপি করা হতো। এবার পুরো নির্বাচনটাই আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দখল করে নিয়েছে। ভোট দেয়ার আগেই ভোট শেষ হয়ে গেছে।’
জাতীয় পার্টি সমর্থিত উত্তরের মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুল সকালে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। একতরফা ভোট হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরাসহ শাসক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা খুশি এই নির্বাচন নিয়ে।
বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ প্রেস ব্রিফিংয়ে, নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করে বলেন, মানুষ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পুরো নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে বলেছেন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতেই বিএনপি ভোট বর্জন করেছে।
এর আগে সকালে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপি মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সেই অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, তারা তা মেনে নেবেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য ১৮ এপ্রিল তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৬০ লাখের বেশি ভোটার অধ্যুষিত তিন সিটিতে রেকর্ড সংখ্যক এক হাজার ১৮৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৪৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৯১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৪৯ জন প্রার্থী হন। ৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়। ২০ দিন টানা প্রচারের পর মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে তিন ব্যাটালিয়ন সেনা সদস্যসহ প্রায় ৮০ হাজার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া প্রায় পাঁচশ’ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। যদিও আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার অভিযোগ- আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অধিকাংশ জায়গায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে মিলেমিশে ভোট দখলের উৎসবে মেতে ছিল। কোথাও কোথাও আবার তাদের নীরব দর্শকের ভূমিকায়ও দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তরে ১৬ জন মেয়র প্রার্থীসহ মোট ৩৮৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ সিটিতে সাধারণ ৩৬ ওয়ার্ডে ২৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ডে ৯০ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হন। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন, সাধারণ ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩৯১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৯৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর চট্টগ্রামে মেয়র পদে ১২ জন, ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬২ জন ও ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২১৭ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে আলোচনায় ছিলেন ছয় মেয়র প্রার্থী। তারা হলেন- উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক ও বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল। দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন ও বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাস। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলম। এদের মধ্যে এম মনজুর আলম নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকেও অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রায় সব ভোট কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ এনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করে বিএনপি। মঙ্গলবার ভোট শুরুর চার ঘণ্টার মাথায় দুপুর ১২টার কিছু পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঢাকার দুই সিটির ভোট বর্জনের এই ঘোষণা দেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে পাশে বসিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই ব্যানারেই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম এর ঘণ্টাখানেক আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ আহমদ বলেন, এটা কোনো নির্বাচন হয়নি। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। ভোটবিহীন এ নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এ নির্বাচন আমরা বর্জন করি। এতে গণতন্ত্রের প্রহসন করা হয়েছে। এ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বড় পরাজয় হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের প্রায় কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রায় সব কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। কিছু কেন্দ্রে যেসব এজেন্ট ঢুকেছিল, তাদের সাড়ে ৮টার মধ্যেই বের করে দেয়া হয়েছে। অনেক এজেন্টকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। এ নির্বাচনের শতকরা ৫ ভাগ মানুষও ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন মওদুদ।
সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা আব্বাস বলেন, ঢাকা দক্ষিণে আমার কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ফকিরেরপুলে একটি কেন্দ্রে আমি গেলে সেখানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাকেসহ গণমাধ্যমকর্মীদের লাঞ্ছিত করে। প্রতিটি গলি তারা দখল করে রেখেছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের নারী ভোটারদের অপমানিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোট কেন্দ্র দখল করে তারাই সিল মেরেছে, ভোট ডাকাতি করেছে। সাধারণ ভোটারদের কাউকেই কেন্দ্রের কাছে তারা (ক্ষমতাসীন) ভিড়তে দেয়নি। আফরোজা আব্বাস বলেন, আমি দেখেছি, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যেতে। অনেকে ভোট দিতে গেলে তাদের বলা হয়েছে, ভোট হয়ে গেছে। এটা ভোট ডাকাতি হয়েছে। মানুষের ভোটকে তারা (ক্ষমতাসীন) ছিনতাই করেছে।
অন্যদিকে তাবিথ আউয়াল প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারের কী উদ্দেশ্য ছিল, এরকম তামাশা করার। তিনি বলেন, আমি যেসব কেন্দ্রে ঘুরেছি, কোথাও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের কাউন্সিলরদের এজেন্ট ছাড়া অন্যদের দেখতে পাইনি। আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। পরিদর্শন করা কেন্দ্রে এজেন্ট না দেখে অভিযোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রের সামনে আমাদের এজেন্টের ছিঁড়া ব্যাচ দেখতে পেয়েছি। ভেতরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেও কোনো জবাব পাইনি। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন সিপিবি ও বাসদ সমর্থিত দুই প্রার্থী। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি।
তবে নির্বাচন শেষে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় আনিসুল হক বলেন, খেলতে গেলে ফাউল হয়। এটা মেজর না মাইনর, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে ছোটখাটো কিছু ত্র“টির কথা স্বীকার করেন তিনি। বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট ও মারামারি প্রসঙ্গে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, যে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে, তা আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ও বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে। এটা অনেকটা ভাইয়ে ভাইয়ে গণ্ডগোলের মতো। বিএনপির ভোট বর্জন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৬ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দু-একজন ভোট বর্জন করেছেন, যা সংখ্যার দিক থেকে খুব সামান্য। বেশির ভাগ প্রার্থী নির্বাচনে ছিলেন। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন।
বিকালে সাঈদ খোকন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ঢাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ নির্বাচনে তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছেন। সাধারণ ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছেন। ভয়ভীতি প্রদর্শনের উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা ছিল না।
সরেজমিন দেখা গেছে, জাল ভোটের ব্যাপকতা এত বেশি ছিল যে, ভোট প্রদানকারীরা ব্যালট পেপারের উল্টোপিঠে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছাড়াই ভোট দিয়ে ব্যালটবাক্স ভর্তি করেছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে ইসির সিল দেয়া হয়নি। বেশ কয়েকজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, জোরপূর্বক ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দেয়ায় অনেক ব্যালট পেপারে একজন ব্যক্তির হাতের আঙুলের ছাপ রয়েছে।
সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের দুই ঘণ্টা পরই কেন্দ্র দখলে মরিয়া হয়ে উঠে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই বহিরাগতদের নিয়ে জাল ভোট দেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের জাল ভোটে সহযোগিতা করতে বাধ্য করেন। কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেয়ার সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ডাকা হলেও তারা সহযোগিতা করেনি। উল্টো আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্র দখলকারীদের সহযোগিতা করেন। ওই অবস্থায় পরিস্থিতি জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করণীয় জানতে চাইলে তারাও হাওয়া বুঝে চলার নির্দেশ দেন। ওই সময়ে ক্ষমতাসীনদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা অসহায় আত্মসমর্পণ করেন বলেও জানান তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিপুলসংখ্যক বহিরাগতদের নিয়ে সকাল থেকেই কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নেন। ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থানের ওপর পুলিশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও তা উপেক্ষা করে জাল ভোট দেয়ার উৎসবে মেতে ওঠে বহিরাগতরা। জানা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক বহিরাগত ঢাকায় জড়ো করেন ওইসব এলাকার বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।
মানিকনগর মডেল হাইস্কুলে সংঘর্ষ : বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকা দক্ষিণের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকনগর মডেল হাইস্কুলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল বাসিত খান বাচ্চু ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তফা বাদশার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। ভাংচুর করা হয় পুলিশের দুটি মাইক্রোবাস, একটি পিকআপ ও একটি ভ্যান। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা ধাওয়া দেয় এবং গুলি ছোড়ে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে পুলিশের গুলিতে কালু শীল নামে এক ব্যক্তি আহত হন। পরে বিজিবি সদস্যরাও ঘটনাস্থলে যান।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. শাহজাহান জানান ২০-২৫ জন যুবক এসে প্রত্যেকটি পোলিং বুথে প্রবেশ করে ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়। তারা সিল মারার চেষ্টা করে। এ সময় অপর গ্র“প এসে বাধা দেয়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। একটি বুথের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার সাইদুর রহমান জানান, সামনে যেক’টি ব্যালট পেপার পেয়েছে সব তারা ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারা শুরু করে। সেটা শেষ হওয়ার পর আবার ব্যালট চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালট দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বাধ্য হয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখেন। কেন্দ্রের বাইরে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উত্তেজনা চলতে থাকে। এই কেন্দ্রের কোথাও বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টদের দেখা যায়নি। বুথের পোলিং অফিসার ফারজানা আক্তার জানান, সবক’টি ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে ইলিশ মাছ ও রেডিও মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ভরা হয়।
যাত্রাবাড়ী পঞ্চায়েত কমিউনিটি সেন্টারে অস্ত্রের মহড়া : ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রটি স্থানীয়ভাবে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার নামে পরিচিত। সকাল ৯টার সময় ইলিশ মাছ মার্কার সমর্থক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রটি দখল করে সিল মারা শুরু করে। এ সময় সরকারদলীয় তিন ক্যাডার অস্ত্র হাতে পুলিশ ও র্যাবের সামনেই অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধাওয়া করে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাইসেল হাসান হবির সমর্থকরা বাধা দিলে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। এ অবস্থায় পরে প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখেন। এই কেন্দ্রে দোতলা ও তৃতীয় তলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে নামের ব্যাচ খুলে ইলিশ মাছের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য প্রার্থীদের প্ররোচনা দিতে দেখা যায়। এ সময় ফটো সাংবাদিক রফিকুল্লাহ তাদের ছবি তুললে তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন পুলিশ সদস্যরা। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শহীদুর রহমান জানান, কেন্দ্র দখল করে সিল মারা শুরু করলে আমরা বাধা দেই। তারা পোলিং বুথ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে যায়। কিছু সিল মারলেও সেগুলো বাক্সে ঢুকাতে পারেনি বলে দাবি করেন প্রিসাইডিং অফিসার।
হবির বোন দাবি করে সখিনা ইয়াসমিন নামে এক নারী বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন কেন্দ্র দখল করে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মারধর করেছে এবং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। এ সময় রোকেয়া নামে এক নারী অভিযোগ করেন তিনি ভোট দিতে পারেননি।
কবি নজরুল সরকারি কলেজে সংঘর্ষ : দুপুর ১২টায় ঢাকা দক্ষিণের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইয়ার মোহাম্মদ ইয়ারু (ঘুড়ি) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী সেলিমের (টিফিন কেরিয়ার) প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ইয়ারুর পক্ষে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ ও হাজী সেলিমের পক্ষে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক ইটপাটকেলে কবি নজরুল কলেজ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের গুলি, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পরে র্যাব-বিজিবি ধাওয়া করে ঘটনাস্থল থেকে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রের ভেতর আরও পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা সেখানে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। এ সময়ের মধ্যেও ছাত্রলীগের কর্মীরা ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারতে থাকে। এ অবস্থায় কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার কেন্দ্রে ৩ হাজার ভোটের মধ্যে ৯২৮ ভোট কাস্ট হয়েছে।
বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে হামলা লাঠিচার্জ : ঢাকা দক্ষিণের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে দুপুর ১টার দিকে বকশীবাজারে বদরুন্নেসা সরকারি কলেজে হাজী মোহাম্মদ আলীর সমর্থক ও জিন্নাত আলী জিন্নুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশ উপস্থিত লোকজনকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। পুলিশ কেন্দ্রের ফটক বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীকে সিল মারার সুযোগ করে করে দেয় বলে অভিযোগ করেন মোহাম্মদ আলী ও তার সমর্থকরা। এ সময় তারা জিন্নুর সমর্থকরা ভোটচোর, আওয়ামী লীগ ভোটচোর বলে মিছিল করতে থাকে। এ কেন্দ্রে মগ মার্কা বা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।
আলী আহাম্মেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা দক্ষিণের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আলী আহাম্মেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ব্যাপক জাল ভোট দিতে শুরু করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আনিসুর রহমান আনিসের লোকজন। সকালেই বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাবীবা চৌধুরী ও মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সমর্থকদের বের করে দেয়া হয়। এ কেন্দ্রের হাসিনা নামে এক নারী ভোটারকে ধরা হয়। হাসিনা জানান, তার বাসা কাঁচপুরে। তিনি একটি গার্মেন্টের কর্মী। তাকে এক হাজার টাকা দিয়ে ভোট দিতে আনা হয়। ছবি ও ভোটার নম্বর মিল না থাকায় তাকে আটক করা হয়।
বান্ডেল ধরে জাল ভোট : রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের বান্ডেল নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মার্কায় সিল দেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অপর এক কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট স্থগিত রাখার আবেদন করেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শেখ মো. আরিফুল ইসলাম অবৈধভাবে সিল মারার এই ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, সকাল থেকে ছিলাম। মাঝে একটু ঝামেলা হয়েছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। কিছু ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানিয়েছি।’ ওই কেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। আফরোজা আব্বাস বলেন, ব্যাপক কারচুপি হচ্ছে। আমি বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়েছি। একই অবস্থা দেখেছি। সরকারি দলের লোকজন কেন্দ্র দখল নিয়ে তাদের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে দেখিয়ে আফরোজা বলেন, এই দু’জন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন, তারা নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। প্রত্যেকটা কেন্দ্রেই তারা এ রকম করছে।’
এই কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী শম্পা বসুও। পাশের লুৎফা একাডেমি থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হাজী সেলিম লাঞ্ছিত, নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে আহত ১ : ঢাকা দক্ষিণের ৩৭নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাহাবউদ্দিন জনির সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দলটির নেতা ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম। এ সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে লিটন নামে এক ব্যক্তি আহত হন।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার পর পুরান ঢাকার ৩৭নং ওয়ার্ডের বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহত লিটনকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হাজী সেলিম আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রহমান নিয়াজীর সমর্থকদের নিয়ে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ভোট কেন্দ্রে যান। এ সময় কাউন্সিলর পদে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহাবউদ্দিন জনির সমর্থকরা হাজী সেলিমের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করে। হাজী সেলিমকে হামলার কবল থেকে রক্ষা করতে এ সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী গুলি চালালে লিটনের পায়ে বিদ্ধ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কেতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মো. পারভেজ বলেন, ভোট কেন্দ্রের সামনে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ : ঢাকা দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি করেছে। পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কেন্দ্র দখল ও পাল্টা দখল নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সুরিটোলা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বংশালের সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার পর ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সিনিয়র বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসেন কেন্দ্রের বাইরে ইসির এ নির্দেশনা জানিয়ে বলেন, স্কুলে তিনটি কেন্দ্র। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ৫৬৫ নম্বর কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হল। তবে এ স্কুলে ৫৬৪ ও ৫৬৬ নম্বর কেন্দ্রে ভোট চলবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কেন্দ্রের ভেতর দুটি ব্যালট বাক্স ভাঙা অবস্থায় পড়েছিল। এ সময় বাইরে বিপুলসংখ্যক লোকজন বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা করতে দেখা গেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নিতেশ কুমার সাহা বলেন, বাইরে থেকে লোক এসে হামলা চালিয়েছে। একই স্কুলের অপর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার লুৎফুর রহমান বলেন, আমরা ভোট নেয়া বন্ধ করিনি। তবে গোলযোগের কারণে হয় তো ভোটাররা আসছেন না। ভোটাররা এলেই ভোট নেব। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনারও বিষয়টি স্বীকার করেন।
খিলগাঁওয়ে ব্যালট ছিনতাই : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের দুটি বুথের ব্যালট পেপার নিয়ে গেছে সরকারদলীয় সমর্থকরা। ভোট শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যালয়টির ৫ ও ৬ নম্বর বুথে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ও ভোটার তালিকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ সময় ৩ নম্বর বুথে একাধিক ব্যক্তিকে জাল ভোট দিতে দেখা গেছে। বুথের একাধিক সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার জানান, ‘ভাই জীবনের মায়া কার নেই। আমাদের কিছুই করার ছিল না। এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।
কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে সংঘর্ষ : দক্ষিণের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। জাল ভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল সর্দার অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফুজ্জামান ফরিদের (রেডিও) সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দিয়েছে ও ৩-৪শ’টি ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. শরীফ ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ভোটগ্রহণ স্থগিতের কথা জানান। ব্যাটল ছিনতাইয়ের প্রতিবাদে কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন এক প্রার্থীর সমর্থকরা।
৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ কেন্দ্র দখল : ঢাকা দক্ষিণের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে হাজী ফরহাদ হোসেন মুকুলের (র্যাকেট প্রতীক) পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন প্রার্থী নিজেই। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। হাজী ফরহাদ হোসেন জানান, তার পোলিং এজেন্টদের ৯টি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এসব কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালটে সিল মারছে। এই ওয়ার্ডের সিলভারডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্র নম্বর ১ ও ২, নিটল স্কলার টিউটোরিয়াল অ্যান্ড হাই স্কুল, ওয়ারী সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, ওয়ারী আবদুর রহিম কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্র ১ ও ২, ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়, ফকির চাঁন সর্দার কমিউনিটি সেন্টার, নারিন্দা সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৯টি কেন্দ্র দখল করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভোট জালিয়াতিতে খোদ প্রিসাইডিং অফিসার : ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হয়েও ঢাকা দক্ষিণের নারিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারতে দেখেছেন সাংবাদিকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রিসাইডিং অফিসার ওবায়দুল ইসলামকে ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকেন।
শাঁখারি বাজারে মারামারি : ভোট ছিনতাইকে কেন্দ্র করে শাঁখারি বাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩ জন আহত হয়েছেন। শাঁখারি বাজারের পগোজ স্কুলের ৫৮৬নং কেন্দ্রে (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৭নং ওয়ার্ড) কিছু সময় ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাবুদ্দিন জনির সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢুকাতে থাকে। এ সময় তারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে। ঘটনা জানাজানি হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রহমান মিয়াজী তার সমর্থকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এতে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, সংঘর্ষ হয়। এতে মিয়াজীর সমর্থক বাদল চন্দ্র ঘোষসহ কমপক্ষে তিনজন আহত হন।
টিকাটুলীতে সংঘর্ষ : টিকাটুলী এলাকার মিতালী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। মিতালী স্কুল কেন্দ্রের সামনে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুলের সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আসাদ ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক কমিশনার টিপুর সমর্থকরা বাধা দেয়। এতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বেধে যায়।
হাজারীবাগে সংঘর্ষ : ঢাকা দক্ষিণের হাজারীবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জরিনা শিকদার স্কুলে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সেলিম ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াস রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। হাজারীবাগ থানার ওসি মঈনুল ইসলাম জানান, টিয়ার শেল ছেড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এদিকে কেন্দ্রে বহু ভোটার ভোট দিতে পারেননি।
শুরুতেই সিল : ঢাকা উত্তরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উষা বিদ্যা নিকেতন নামে ওই ভোট কেন্দ্রে দেখা গেছে সকাল সাড়ে ৮টার সময় প্রিসাইডিং অফিসারের উপস্থিতিতে চলছে সিল মারার কাজ। সংবাদ কর্মীদের দেখে দ্রুত তারা সটকে পড়ে। একই ওয়ার্ডের ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা কেন্দ্রের একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে চারজনকে নির্ভয়ে সিল মারতে দেখা যায়। ওই বুথের পাশেরটিতেই প্রিসাইডিং অফিসার প্রবীর কুমার চক্রবর্তীর কক্ষ। হঠাৎ ওই বুথে সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে দুই যুবক বের হয়ে যায়। এ সময় বেঞ্চের ওপর সিল দেয়া ব্যালট পেপারের বই দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
রায়ের বাজারে গোলাগুলি : রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন রায়েরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
মোহাম্মদপুরে পিসি কালচার হাউজিং কেন্দ্রে সংঘর্ষ : মহানগর উত্তরের ৩০নং ওয়ার্ডের আদাবর এলাকার পিসি কালচার হাউজিং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আরিফুর রহমান তুহিন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কমিশনার আবুল হাশেম হাসুর কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ও র্যাবকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করতে দেখা গেছে।
ক্যান্টনমেন্টেই থাকল সেনাবাহিনী : সিটি নির্বাচনে রিজার্ভ অবস্থায় সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে থাকলেও তাদের মাঠে নামানো হয়নি। নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট দখল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ হলেও সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে নির্দেশ দেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগে সিইসি বলেছিলেন, কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডাকের সঙ্গে সঙ্গে মুভ করবে সেনাবাহিনী। তবে মঙ্গলবার সেনা নামানোর বিষয়ে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে থেকেই সেনাবাহিনী রিজার্ভ ছিল। তবে মাঠে সেনা নামানোর মতো কোনো পরিস্থিতি হয়নি। নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।
No comments