ড. এ টি এম শামসুল হুদার পর্যবেক্ষণ
ঢাকা
উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শুরু থেকেই লেভেল
প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম
শামসুল হুদা। গতকাল বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিন সিটি
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি দলের সঙ্গে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে কিছুটা সমকক্ষতা থাকার দরকার। কিন্তু বিএনপির
নমিনেশনে প্রথমেই গোলমালের সৃষ্টি হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে তাদের
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। প্রার্থিতা বাতিল
হয়ে যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ৭টি মামলা থাকায় বাড়ি
থেকে বের হতে পারেননি। বিএনপির এসব অন্তর্নিহিত সমস্যা অনেক অসুবিধার
সৃষ্টি করেছে। শামসুল হুদা বলেন, এ সিটি নির্বাচনে তাদের কর্মীবাহিনী
ঠিকভাবে গুছিয়ে আনতে পারেননি। যে কারণে অনেক জায়গায় তাদের পোলিং এজেন্ট ছিল
না। ভোট দিতে গিয়ে গুলশান মডেল স্কুল সেন্টারে দেখলাম আনিসুল হক (আওয়ামী
লীগ সমর্থিত প্রার্থী) ছাড়া কোন প্রার্থীর এজেন্ট নেই। এ স্কুলের ১৫টি
বুথেও অন্য কোন এজেন্ট দেখিনি। এজেন্ট সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথম
অভিযোগ ছিল, আগের রাতেই ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপি সমর্থিত পোলিং এজেন্টদের বারণ
করা হয়েছে। দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল, পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে এলেও পুলিশ তাদের
ঢুকতে দেয়নি। তৃতীয় অভিযোগ, পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে ঢুকার পর তাদের বের
করে দেয়া হয়েছে। এখানেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে সমস্যা ছিল। এ সমস্যাতো
নির্বাচন কমিশনের। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় টেলিভিশনের মাধ্যমে মির্জা
আব্বাসের স্ত্রীর অভিযোগ শুনতে পেলাম। তিনি বলছেন, তার লোকজনকে সরিয়ে
দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে স্পেসিফিক বলেছেন কোন কেন্দ্র থেকে কত
জনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই মহিলা বলেছেন, আমি একটি কেন্দ্রে গেলাম, চোখের
সামনে আমার ১০ জন পোলিং এজেন্টের মধ্যে ৯ জনকে নিয়ে গেল। তার অভিযোগটি
স্থান ও কালভেদে স্পেসিফিক ছিল। এ বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার
দরকার ছিল নির্বাচন কমিশনের। এ রকম কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এ বিষয়টি
নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসারের
দায়িত্ব ছিল। কোন সমস্যা হলে নির্বাচন কমিশনকে তারা বিষয়টি জানিয়ে বলবে,
আমরা পারছি না, আপনারা আমাদের সহায়তা করেন। তাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে
শুনতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যা দেখলাম, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা
হচ্ছে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই, আমরা জানি না। রিটার্নিং কর্মকর্তা
সার্টিফিকেট দিচ্ছে, ভোট ভালভাবেই হচ্ছে কোন অসুবিধা নেই। প্রধান নির্বাচন
কমিশনার বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, ভাল হয়েছে। তাহলে যেসব কথা এসেছে ওই সব
স্পেসিফিক কথার তদন্ত করে একটি রিপোর্ট আসা প্রয়োজন ছিল। সেটা কিন্তু হয়নি।
আমার প্রশ্ন নির্বাচন নিয়ে কথা উঠবে কেন? যত ভালই নির্বাচন করা হয় না কেন
কিছু না কিছু অভিযোগ উঠবেই। বেশি অভিযোগ আসতে থাকলে বা প্রধান দলের
প্রার্থীরা অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন করলে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এর
জবাবদিহিতারও বিষয় রয়েছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী বহিরাগতদের কতটুকু কন্ট্রোল করেছে এনিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। অভিজাত
এলাকা গুলশান ভোট কেন্দ্রটির ভেতরে ঢুকতে গিয়ে বিশেষ দলের মাস্তান টাইপের
লোক দেখলাম। যারা খুব সহজেই ভেতরে যাতায়াত করছে। বাইরে প্রচুর লোকের সমাবেশ
দেখতে পেলাম। সাধারণত এত লোক থাকার কথা নয়। তাদের চেকিং বা জিজ্ঞাসাবাদ
করার কোন বিষয় দেখিনি। যে কারণে নির্বাচন যতটা সুন্দর হওয়ার কথা ছিল ততটা
সুন্দর হয়নি। এ নির্বাচনে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় ছিল, সব সময় নির্বাচনী
আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। অনেক এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
নিয়োগ করা হলেও তাদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। শুধু পুলিশের একটি তৎপরতা দেখলাম।
নির্বাচনের আগের দিন চার জনকে টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের সময়ের
মতো তাৎক্ষণিক ট্রায়ালের কোন ব্যবস্থা দেখিনি। তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা
করলেন কি? বিএনপি ভোট বর্জন না করলে ফলাফল কেমন হতো? এমন প্রশ্নের জবাবে
হুদা বলেন, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। আসলে বর্জন বিষয়টা রাজনৈতিক দলের
ভবিষ্যতের জন্য খুব খারাপ। হঠাৎ করে তারা বর্জন করলো তা ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া
কাণ্ডারি চলে গেলে সঙ্গে থাকা লোকজনের কি অবস্থা হবে? কাউন্সিলরদের কি হবে?
ক্যাম্পেইন করার সময় তাদের সাহায্য সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। আপনারা সবাই
একসঙ্গে কাজ করলেন। বর্জন করার সময় মেয়রদের তুলে নিলেন। এটা দলের মধ্যে
বিভিন্ন লেভেলে যে বন্ডিং হয়, এদিক থেকে কাজটা ভাল হয়নি। দলীয় দৃষ্টিকোণ
থেকে ভাল হয়নি। ফলাফলের দিক থেকে তিনটার মধ্যে সম্ভাবনা ছিল। তারা এটা নষ্ট
করে ফেললেন। কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে অনেকে জিততে পারতেন। ঘোষণা দেয়ার পর
অনেক ভোটার নিরুৎসাহিত হয়নি।
No comments