ইউক্রেন ও ইউরোপের শেষ সুযোগ by জর্জ সরোস
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী পাঁচ বছর সে যে পথে হাঁটবে, তা তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে নির্ধারণ হয়ে যাবে।
বছরের পর বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজের সমস্যাগুলো জট পাকিয়ে ফেলেছে, সফলতার সঙ্গেই। কিন্তু এখন তাকে নিজের অস্তিত্বের সংকটের দুটি উৎস মোকাবিলা করতে হবে: গ্রিস ও ইউক্রেন। সেটা আবার অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে।
সব পক্ষই গ্রিসের দীর্ঘদিনের সঞ্চিত সমস্যা আনাড়ির মতো মোকাবিলা করেছে। এদিকে এখন আবেগ এত উচ্চগ্রামে উঠেছে যে তালগোল পাকানোই সবচেয়ে গঠনমূলক বিকল্পে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু ইউক্রেনের ব্যাপারটা ভিন্ন। এটা অনেকটা সাদা-কালো ব্যাপার। রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন আগ্রাসন করছেন আর ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যবোধ ও নীতি রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
তার পরও ইউরোপ ইউক্রেনের সঙ্গে গ্রিসের মতো আচরণ করছে। এটা ভুল পথ, এতে যে ফল হবে তাও ভুল। পুতিন ইউক্রেনে নিজের ভিত্তি শক্ত করছেন, আর ওদিকে ইউরোপ গ্রিসকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত।
ইউক্রেনে পুতিন আর্থিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যাতে দেশটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এটাই তাঁর অভীপ্সা। এতে তিনি দায়দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন। সামরিক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো ইউক্রেনের একটি অংশ দখল করতে পারেন, কিন্তু তাতে তাঁর দায় থাকবে। ফলে এটাই তিনি ভালো মনে করছেন। দুবার সামরিক জয়ের পরও যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তিনি সেই নজির স্থাপন করেছেন।
দুটি যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইউক্রেনের অবস্থান দুর্বল হয়েছে, এতে পুতিনের সফলতার মাত্রা বোঝা যায়। মিনস্ক-১ স্বাক্ষরিত হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে আর মিনস্ক-২ স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু এই সফলতা সাময়িক আর ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে ছাড়তেও পারে না।
এটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতির মৌলিক গলদ। তা না হলে রাশিয়া কীভাবে ইউক্রেনের মিত্রদের বোকা বানায়, যারা মুক্ত দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেয়? সমস্যা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে যেভাবে ফোঁটা ফোঁটা পানি দিয়ে জীবিত রেখেছে, ইউক্রেনকেও সে সেভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। ফলে ইউক্রেনের অবস্থা তথৈবচ আর পুতিন সেখানে দ্রুত এগোনোর মওকা পেয়ে গেছেন। হাইব্রিড যুদ্ধ ও হাইব্রিড শান্তির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ তাঁর আছে। ওদিকে ইউক্রেন ও তার মিত্ররা সাড়াই দিতে পারছে না।
ইউক্রেনের অবস্থা খুব দ্রুতই খারাপ হচ্ছে। যে আর্থিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা আমি আগে থেকেই করছিলাম, সেটা এই ফেব্রুয়ারিতে ঘটে গেল। আবার রিভনিয়ার মূল্য কয়েক দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ পড়ে গেলে দেশটির ন্যাশনাল ব্যাংককে ব্যাংকিং খাত টিকিয়ে রাখতে প্রচুর টাকা ঢোকাতে হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে, যেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও সুদের হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করে।
তারপর প্রেসিডেন্ট পেত্রো পরোশেঙ্কো চাপাচাপি শুরু করলে বিনিময় হার ২০১৫ সালের ইউক্রেনের বাজেটের সময় যে ভিত্তি হার ছিল, তার পর্যায়ে চলে আসে। কিন্তু উন্নতি হলেও তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই সাময়িক বিপর্যয় গণমানুষের আত্মবিশ্বাস নাড়িয়ে দিয়েছে, আর যেসব কোম্পানির হার্ড কারেন্সি ঋণ রয়েছে, তাদের ব্যালান্সশিটও দুর্বল হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে যে হিসাবের ভিত্তিতে ইউক্রেনের কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে, সেটাকেও দুর্বল করে দিয়েছে এই বিপর্যয়। আইএমএফের এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি অনুমোদিত হওয়ার আগেই তা অপর্যাপ্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলো নিজেদের আর্থিক দীনতার সম্মুখীন হয়ে অতিরিক্ত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা প্রদানের আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ইউক্রেন এখনো খাদের কিনারে টালমাটালভাবে হাঁটছে।
একই সময়ে ইউক্রেনে এক মৌলিক সংস্কার কর্মসূচি ব্যাপক গতিতে এগিয়ে চলেছে, আর তা ধীরে ধীরে ইউক্রেনের জনগণ ও ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে। অবনতিশীল বাহ্যিক পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারে চলমান সফলতার মধ্যে যোজন যোজন ব্যবধান রয়েছে। এতে কিয়েভের আকাশ-বাতাসে এক অবাস্তবতার আবহ বিরাজ করছে।
একটি সম্ভাব্য পরিণতি এমন হতে পারে যে পুতিন তাঁর সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জন করে ফেলল আর ইউক্রেনের প্রতিরোধও ভেঙে পড়ল। তখন ইউরোপ শরণার্থীতে ভরে যাবে, সেই সংখ্যাটা ২০ লাখ হলেও অবাস্তব মনে হবে। অনেকেই মনে করেন, এটা দ্বিতীয় শীতলযুদ্ধের সূচনা করবে। এর পরিণতি এ রকম হতে পারে: ইউরোপে বিজয়ী পুতিনের অনেক বন্ধু জুটতে পারে আর রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও অকার্যকর হয়ে যাবে।
ইউরোপের ক্ষেত্রে এটা হবে সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার। এতে সে আরও বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এই মহাদেশটি পুতিনের রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। তখন হয়তো ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্তিত্বই থাকবে না (বিশেষ করে গ্রিস যদি ইউরোজোন ত্যাগ করে)।
সম্ভাব্যতার বিবেচনায় পরিণতি হিসেবে এ রকম হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি: ইউরোপ ফোঁটা ফোঁটা পানি দিয়ে ইউক্রেনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। ইউক্রেন হয়তো ধ্বংস হবে না, কিন্তু কায়েমি গোষ্ঠীগুলো আবারও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারে আর নতুন ইউক্রেন পুরোনো ইউক্রেনের পথ ধরবে। পুতিনের কাছে এটা পূর্ণাঙ্গ পতনের মতোই আনন্দদায়ক হবে। কিন্তু এতে পুতিনের বিজয়ের নিশ্চয়তা হ্রাস পেতে পারে। কারণ, এর ফলে দ্বিতীয় শীতলযুদ্ধ শুরু হতে পারে, যেটাতে রাশিয়া হারবে। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমটিতে হেরেছিল। পুতিনের রাশিয়া চায়, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে উঠুক। আর তেলের দাম বিদ্যমান অবস্থায় থাকলে তার মুদ্রার সঞ্চয় আগামী দু–তিন বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে।
‘ট্র্যাজেডি অব দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’, এই লড়াইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়টির নাম আমি এ রকমই দিয়েছি। ইউক্রেন যে নীতি রক্ষার চেষ্টা করছে, সেটা পরিত্যাজ্য হবে। যে নীতির ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিচালিত হচ্ছে। আর নিজেকে রক্ষার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হবে। তবে নতুন ইউক্রেনকে সফল করতে চাইলে এর চেয়ে কম টাকাতেই সে তা করতে পারে।
নতুন ইউক্রেন এখনো জীবিত আছে, সে নিজেকে রক্ষা করতে সংকল্পবদ্ধও বটে। যদিও ইউক্রেনের নিজের শক্তি রাশিয়ার সামনে কিছুই না, তার মিত্ররা চাইলে যা প্রয়োজনীয় তা করতে পারে। সেটা হয়তো মুখোমুখি সামরিক সংঘাত নাও হতে পারে বা মিনস্ক চুক্তির লঙ্ঘনও না হতে পারে। এটা করলে শুধু ইউক্রেনেরই উপকার হবে না, ইউরোপীয় ইউনিয়নও তার হারানো মূল্যবোধ ও নীতি ফিরে পেতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমি এটাই চাই।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জর্জ সরোস: সরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান।
বছরের পর বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজের সমস্যাগুলো জট পাকিয়ে ফেলেছে, সফলতার সঙ্গেই। কিন্তু এখন তাকে নিজের অস্তিত্বের সংকটের দুটি উৎস মোকাবিলা করতে হবে: গ্রিস ও ইউক্রেন। সেটা আবার অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে।
সব পক্ষই গ্রিসের দীর্ঘদিনের সঞ্চিত সমস্যা আনাড়ির মতো মোকাবিলা করেছে। এদিকে এখন আবেগ এত উচ্চগ্রামে উঠেছে যে তালগোল পাকানোই সবচেয়ে গঠনমূলক বিকল্পে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু ইউক্রেনের ব্যাপারটা ভিন্ন। এটা অনেকটা সাদা-কালো ব্যাপার। রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন আগ্রাসন করছেন আর ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যবোধ ও নীতি রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
তার পরও ইউরোপ ইউক্রেনের সঙ্গে গ্রিসের মতো আচরণ করছে। এটা ভুল পথ, এতে যে ফল হবে তাও ভুল। পুতিন ইউক্রেনে নিজের ভিত্তি শক্ত করছেন, আর ওদিকে ইউরোপ গ্রিসকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত।
ইউক্রেনে পুতিন আর্থিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যাতে দেশটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এটাই তাঁর অভীপ্সা। এতে তিনি দায়দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন। সামরিক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো ইউক্রেনের একটি অংশ দখল করতে পারেন, কিন্তু তাতে তাঁর দায় থাকবে। ফলে এটাই তিনি ভালো মনে করছেন। দুবার সামরিক জয়ের পরও যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তিনি সেই নজির স্থাপন করেছেন।
দুটি যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইউক্রেনের অবস্থান দুর্বল হয়েছে, এতে পুতিনের সফলতার মাত্রা বোঝা যায়। মিনস্ক-১ স্বাক্ষরিত হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে আর মিনস্ক-২ স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু এই সফলতা সাময়িক আর ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে ছাড়তেও পারে না।
এটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতির মৌলিক গলদ। তা না হলে রাশিয়া কীভাবে ইউক্রেনের মিত্রদের বোকা বানায়, যারা মুক্ত দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেয়? সমস্যা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে যেভাবে ফোঁটা ফোঁটা পানি দিয়ে জীবিত রেখেছে, ইউক্রেনকেও সে সেভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। ফলে ইউক্রেনের অবস্থা তথৈবচ আর পুতিন সেখানে দ্রুত এগোনোর মওকা পেয়ে গেছেন। হাইব্রিড যুদ্ধ ও হাইব্রিড শান্তির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ তাঁর আছে। ওদিকে ইউক্রেন ও তার মিত্ররা সাড়াই দিতে পারছে না।
ইউক্রেনের অবস্থা খুব দ্রুতই খারাপ হচ্ছে। যে আর্থিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা আমি আগে থেকেই করছিলাম, সেটা এই ফেব্রুয়ারিতে ঘটে গেল। আবার রিভনিয়ার মূল্য কয়েক দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ পড়ে গেলে দেশটির ন্যাশনাল ব্যাংককে ব্যাংকিং খাত টিকিয়ে রাখতে প্রচুর টাকা ঢোকাতে হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে, যেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও সুদের হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করে।
তারপর প্রেসিডেন্ট পেত্রো পরোশেঙ্কো চাপাচাপি শুরু করলে বিনিময় হার ২০১৫ সালের ইউক্রেনের বাজেটের সময় যে ভিত্তি হার ছিল, তার পর্যায়ে চলে আসে। কিন্তু উন্নতি হলেও তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই সাময়িক বিপর্যয় গণমানুষের আত্মবিশ্বাস নাড়িয়ে দিয়েছে, আর যেসব কোম্পানির হার্ড কারেন্সি ঋণ রয়েছে, তাদের ব্যালান্সশিটও দুর্বল হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে যে হিসাবের ভিত্তিতে ইউক্রেনের কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে, সেটাকেও দুর্বল করে দিয়েছে এই বিপর্যয়। আইএমএফের এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি অনুমোদিত হওয়ার আগেই তা অপর্যাপ্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলো নিজেদের আর্থিক দীনতার সম্মুখীন হয়ে অতিরিক্ত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা প্রদানের আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ইউক্রেন এখনো খাদের কিনারে টালমাটালভাবে হাঁটছে।
একই সময়ে ইউক্রেনে এক মৌলিক সংস্কার কর্মসূচি ব্যাপক গতিতে এগিয়ে চলেছে, আর তা ধীরে ধীরে ইউক্রেনের জনগণ ও ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে। অবনতিশীল বাহ্যিক পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারে চলমান সফলতার মধ্যে যোজন যোজন ব্যবধান রয়েছে। এতে কিয়েভের আকাশ-বাতাসে এক অবাস্তবতার আবহ বিরাজ করছে।
একটি সম্ভাব্য পরিণতি এমন হতে পারে যে পুতিন তাঁর সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জন করে ফেলল আর ইউক্রেনের প্রতিরোধও ভেঙে পড়ল। তখন ইউরোপ শরণার্থীতে ভরে যাবে, সেই সংখ্যাটা ২০ লাখ হলেও অবাস্তব মনে হবে। অনেকেই মনে করেন, এটা দ্বিতীয় শীতলযুদ্ধের সূচনা করবে। এর পরিণতি এ রকম হতে পারে: ইউরোপে বিজয়ী পুতিনের অনেক বন্ধু জুটতে পারে আর রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও অকার্যকর হয়ে যাবে।
ইউরোপের ক্ষেত্রে এটা হবে সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার। এতে সে আরও বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এই মহাদেশটি পুতিনের রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। তখন হয়তো ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্তিত্বই থাকবে না (বিশেষ করে গ্রিস যদি ইউরোজোন ত্যাগ করে)।
সম্ভাব্যতার বিবেচনায় পরিণতি হিসেবে এ রকম হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি: ইউরোপ ফোঁটা ফোঁটা পানি দিয়ে ইউক্রেনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। ইউক্রেন হয়তো ধ্বংস হবে না, কিন্তু কায়েমি গোষ্ঠীগুলো আবারও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারে আর নতুন ইউক্রেন পুরোনো ইউক্রেনের পথ ধরবে। পুতিনের কাছে এটা পূর্ণাঙ্গ পতনের মতোই আনন্দদায়ক হবে। কিন্তু এতে পুতিনের বিজয়ের নিশ্চয়তা হ্রাস পেতে পারে। কারণ, এর ফলে দ্বিতীয় শীতলযুদ্ধ শুরু হতে পারে, যেটাতে রাশিয়া হারবে। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমটিতে হেরেছিল। পুতিনের রাশিয়া চায়, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে উঠুক। আর তেলের দাম বিদ্যমান অবস্থায় থাকলে তার মুদ্রার সঞ্চয় আগামী দু–তিন বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে।
‘ট্র্যাজেডি অব দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’, এই লড়াইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়টির নাম আমি এ রকমই দিয়েছি। ইউক্রেন যে নীতি রক্ষার চেষ্টা করছে, সেটা পরিত্যাজ্য হবে। যে নীতির ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিচালিত হচ্ছে। আর নিজেকে রক্ষার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হবে। তবে নতুন ইউক্রেনকে সফল করতে চাইলে এর চেয়ে কম টাকাতেই সে তা করতে পারে।
নতুন ইউক্রেন এখনো জীবিত আছে, সে নিজেকে রক্ষা করতে সংকল্পবদ্ধও বটে। যদিও ইউক্রেনের নিজের শক্তি রাশিয়ার সামনে কিছুই না, তার মিত্ররা চাইলে যা প্রয়োজনীয় তা করতে পারে। সেটা হয়তো মুখোমুখি সামরিক সংঘাত নাও হতে পারে বা মিনস্ক চুক্তির লঙ্ঘনও না হতে পারে। এটা করলে শুধু ইউক্রেনেরই উপকার হবে না, ইউরোপীয় ইউনিয়নও তার হারানো মূল্যবোধ ও নীতি ফিরে পেতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমি এটাই চাই।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জর্জ সরোস: সরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান।
No comments