লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য অপেক্ষা by কাফি কামাল
সিটি
করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক
বরাদ্দ এবং আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চলছে সপ্তাহ ধরে। অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা
শুরু হয়েছে আরও আগেই। ভোটের আগে প্রচারণার সুযোগ আছে আর মাত্র ১১ দিন।
কিন্তু এখন পর্যন্ত গণসংযোগ, মিছিল-মিটিংয়ের মতো প্রচারণায় সক্রিয় হতে
পারছেন না বিরোধী জোট সমর্থিত প্রার্থীরা। তাদের বেশির ভাগই মামলার আসামি।
২০ দলের আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত নানা নৈরাজ্যকর ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একের
পর এক মামলা হয়েছে রাজধানীর প্রতিটি থানায়। গ্রেপ্তার এড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই
তারা রয়েছেন আত্মগোপনে। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর
বিএনপি, জাতীয়তাবাদী ঘরানার বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে একাধিক
প্রতিনিধি দল গেছেন নির্বাচন কমিশনে। সেখানে তারা পরামর্শ ও দাবি জানানোর
ক্ষেত্রে একটি বিষয়েই সর্বাধিক জোর দিয়েছিলেন। তা হলো, সুষ্ঠু নির্বাচনের
পরিবেশ তৈরির স্বার্থে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সময় যাতে বিরোধী
জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা না হয়। প্রথমদিকে নির্বাচন
কমিশন বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও এক পর্যায়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানায়।
কিন্তু বাস্তবে তার তেমন কোন প্রতিফলন নেই। প্রার্থী ও বিরোধী নেতারা
নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য আগাম জামিনের আবেদন করেছেন আদালতে।
জামিনের অপেক্ষায় আছেন তারা। যাদের ওপর মামলার চাপ কম তারাও
স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। তাদের পক্ষে দলের
নেতাকর্মী, অনুসারী ও স্বজনরা প্রচারণার চেষ্টা করলেও পদে পদে বাধার মুখে
পড়ছেন। প্রতিদিনই বিরোধী প্রার্থীদের প্রচারণা চলাকালে দু’চারজন করে
কর্মীকে আটক করছে পুলিশ। ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে লিফলেট। অভিযান চালানো হচ্ছে
প্রার্থীসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে। পরিবারের সদস্যদেরও নানাভাবে
শাসানো হচ্ছে। এমনকি ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অনেক প্রার্থীর
পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন-এর কার্যালয়ে। তার
ওপর সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় দেখাচ্ছেন ভয়-ভীতি। ফলে
গ্রেপ্তার আতঙ্ক, নতুন মামলায় জড়ানো, হামলার আশঙ্কা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
হয়রানির ভয়ে সক্রিয় হতে পারছেন না বিরোধী প্রার্থী এবং তাদের লোকজন। মিছিল,
মিটিং পরের কথা ডিসিসি’র অনেক ওয়ার্ডে পোস্টারই সাঁটতে পারেননি তারা।
উল্টো প্রতিনিয়ত পুলিশের তাড়া খেয়ে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। গোপনে যাতে
কেউ বাসায়ও যাতায়াত করতে না পারেন সেজন্য প্রার্থীর বাড়ির সামনে ও আশপাশে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। সিটি নির্বাচনে বিরোধী জোট
সমর্থিত প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন জাতীয়তাবাদী ঘরানার বিশিষ্ট নাগরিক ও
পেশাজীবীদের সংগঠন ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর ব্যানারে। দুইবার উদ্যোগ নিয়েও
প্রার্থীরা জামিন না পাওয়ার কারণে তাদের প্রার্থী পরিচয় অনুষ্ঠান বাতিল
করেছে সংগঠনটি। ফলে প্রচারণায় পিছিয়ে পড়ছেন বিরোধী জোট সমর্থিত প্রার্থীরা।
প্রতিদিনই এমন অভিযোগ করছেন বিএনপি, ২০দলীয় জোট, আদর্শ ঢাকা আন্দোলন ও
প্রার্থীরা। এদিকে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন দলের
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি উচ্চ আদালতে
হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেছেন। গতকাল ছিল এ ব্যাপারে রায় ঘোষণার দিন। সেদিন
তাকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশনার পাশাপাশি তাকে
প্রচারণায় অংশ না নিতে নির্দেশনা দিয়েছিল আদালত। গতকাল রায় এসেছে বিভক্ত।
ফলে তিনি এখনও প্রচারণার মাঠে নামতে পারেননি। এমনকি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেও
কোন বক্তব্য দিতে পারছেন না। এদিকে জামিনের ব্যাপারে উচ্চ আদালত থেকে
সিদ্ধান্ত না পেলেও গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনার ওপর আস্থা রেখে বাসায়
ফিরেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা
আব্বাস। তবে আদালতের নির্দেশনার কারণে মুখ বন্ধ রেখেছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের
তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি আদালতের নির্দেশনার প্রতি সম্মান রেখে
চলতে চান।
ওদিকে মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস প্রশাসনের প্রতি অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণায় সব প্রার্থীর সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, প্রতিদিন আমাদের গণসংযোগকালে লিফলেট বিতরণকালে পুলিশ কখনও লিফলেট বিতরণকারীদের ধাওয়া করছে, কখনও লিফলেট ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কোন ধরনের আচরণ আমি জানতে চাই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করাতো দূরের কথা এখন আমরা গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণায় প্রশাসন কর্তৃক হয়রানির শিকার হচ্ছি। ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রচারণার মাঠে রয়েছেন। কিন্তু তিনিও অভিযোগ করে বলেছেন, আমরা এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছি না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানানো হয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি বলেছেন, জনগণের ভালোবাসা পেতে নয় বরং তার সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষ ভোট দিতে পারবে কিনা সেটা। এদিকে গত শুক্রবার বিকাল ৩টায় কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হক। এলাকার বাসিন্দারা তার প্রচারণায় অংশ নেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ছুটে যায় পুলিশের একটি দল। গ্রেপ্তার আতঙ্কে মুহূর্তেই প্রচারণা থেকে সরে পড়ে সবাই। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় কামরাঙ্গীরচরের করিমাবাদ এলাকায় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রাশেদ আলম খোকন প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশ গেলে গ্রেপ্তার এড়াতে খোকনসহ অন্যরা নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জে চলে যান। এ ব্যাপারে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশন দুঃখজনকভাবেই নির্লিপ্ত রয়েছে। বিরোধী জোট সমর্থিত প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। সবখানে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। লিফলেট ছিনিয়ে নিচ্ছে, মিছিল করতে গেলে ধাওয়া দিচ্ছে, আটক করা হচ্ছে। প্রার্থী ও তাদের পক্ষে যারা কাজ করছেন তাদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। পাড়ায়-মহল্লায় গিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্ক, নতুন মামলায় জড়িয়ে দেয়া এবং শারীরিক হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন বিরোধী প্রার্থী ও তাদের লোকজন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোন কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, নির্বাচনে যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকার কথা সেখানে এখন বিরাজ করছে ভীতিকর পরিবেশ। ফলে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থীরা প্রচারণায় পিছিয়ে পড়ছে। এদিকে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন কেউই চাচ্ছে না সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক। কারণ সরকার এখনও সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস সহ অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। নতুন নতুন মামলার ফাঁদে জড়ানো হচ্ছে।
ওদিকে অভিযান, খোঁজখবর নেয়া এবং বাসাবাড়ির সামনে পুলিশের অবস্থানের কারণে প্রচারণায় মাঠে নামার সাহস পাচ্ছেন না কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রায় সবাই। দু-চারজন প্রচারণার মাঠে নামলেও তারা মেয়র সমর্থকদের প্রচারণার সঙ্গে সমন্বয় করে জনসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকা উত্তরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবুল মেছেরের বাড়ির সামনে ও আশপাশে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। আবুল মেছের জানান, রাজনৈতিক মামলার জালে আটকে তিনি এখনও প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামতে পারেননি। ঢাকা উত্তরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়েজ আহমেদ রাজনৈতিক মামলায় আত্মগোপনে থাকায় স্ত্রী আলপনা আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামলেও কর্মীরা তার সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিতে সাহস পাচ্ছেন না। একই পরিস্থিতি ঢাকা দক্ষিণ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের। তার অনুপস্থিতিতে সীমিত পরিসরে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী। ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হকের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিদিন এক-দুবার পুলিশ এসে খোঁজখবর নিচ্ছে। বিএনপির সমর্থন না পেলেও বিএনপি নেতা হিসেবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. নাঈম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও তিনি পুলিশি হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। বাড্ডা থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এ জি এম শামসুল হকের বাসায় প্রতিদিন একাধিকবার টহল দিচ্ছে পুলিশ। ৮ মামলার আসামি শামসুল হক বর্তমানে ৩ মামলায় জামিনের অপেক্ষা করছেন আত্মগোপনে থেকেই। একই পরিস্থিতি ঢাকা দক্ষিণের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ১২ মামলার আসামি গোলাম হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ১৬ মামলার আসামি শামসুল হুদা কাজল, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ২১ মামলার আসামি আরিফুল ইসলাম, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী ৬ মামলার আসামি মীর হোসেন মীরুসহ বেশির ভাগের। এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ সাহেদ মন্টু বর্তমানে কারাগারে। তার পক্ষে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী নাসিমা বানু।
ওদিকে মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস প্রশাসনের প্রতি অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণায় সব প্রার্থীর সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, প্রতিদিন আমাদের গণসংযোগকালে লিফলেট বিতরণকালে পুলিশ কখনও লিফলেট বিতরণকারীদের ধাওয়া করছে, কখনও লিফলেট ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কোন ধরনের আচরণ আমি জানতে চাই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করাতো দূরের কথা এখন আমরা গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণায় প্রশাসন কর্তৃক হয়রানির শিকার হচ্ছি। ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রচারণার মাঠে রয়েছেন। কিন্তু তিনিও অভিযোগ করে বলেছেন, আমরা এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছি না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানানো হয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি বলেছেন, জনগণের ভালোবাসা পেতে নয় বরং তার সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষ ভোট দিতে পারবে কিনা সেটা। এদিকে গত শুক্রবার বিকাল ৩টায় কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হক। এলাকার বাসিন্দারা তার প্রচারণায় অংশ নেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ছুটে যায় পুলিশের একটি দল। গ্রেপ্তার আতঙ্কে মুহূর্তেই প্রচারণা থেকে সরে পড়ে সবাই। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় কামরাঙ্গীরচরের করিমাবাদ এলাকায় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রাশেদ আলম খোকন প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশ গেলে গ্রেপ্তার এড়াতে খোকনসহ অন্যরা নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জে চলে যান। এ ব্যাপারে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশন দুঃখজনকভাবেই নির্লিপ্ত রয়েছে। বিরোধী জোট সমর্থিত প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। সবখানে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। লিফলেট ছিনিয়ে নিচ্ছে, মিছিল করতে গেলে ধাওয়া দিচ্ছে, আটক করা হচ্ছে। প্রার্থী ও তাদের পক্ষে যারা কাজ করছেন তাদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। পাড়ায়-মহল্লায় গিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্ক, নতুন মামলায় জড়িয়ে দেয়া এবং শারীরিক হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন বিরোধী প্রার্থী ও তাদের লোকজন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোন কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, নির্বাচনে যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকার কথা সেখানে এখন বিরাজ করছে ভীতিকর পরিবেশ। ফলে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থীরা প্রচারণায় পিছিয়ে পড়ছে। এদিকে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন কেউই চাচ্ছে না সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক। কারণ সরকার এখনও সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস সহ অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। নতুন নতুন মামলার ফাঁদে জড়ানো হচ্ছে।
ওদিকে অভিযান, খোঁজখবর নেয়া এবং বাসাবাড়ির সামনে পুলিশের অবস্থানের কারণে প্রচারণায় মাঠে নামার সাহস পাচ্ছেন না কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রায় সবাই। দু-চারজন প্রচারণার মাঠে নামলেও তারা মেয়র সমর্থকদের প্রচারণার সঙ্গে সমন্বয় করে জনসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকা উত্তরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবুল মেছেরের বাড়ির সামনে ও আশপাশে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। আবুল মেছের জানান, রাজনৈতিক মামলার জালে আটকে তিনি এখনও প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামতে পারেননি। ঢাকা উত্তরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়েজ আহমেদ রাজনৈতিক মামলায় আত্মগোপনে থাকায় স্ত্রী আলপনা আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামলেও কর্মীরা তার সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিতে সাহস পাচ্ছেন না। একই পরিস্থিতি ঢাকা দক্ষিণ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের। তার অনুপস্থিতিতে সীমিত পরিসরে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী। ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শহিদুল হকের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিদিন এক-দুবার পুলিশ এসে খোঁজখবর নিচ্ছে। বিএনপির সমর্থন না পেলেও বিএনপি নেতা হিসেবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. নাঈম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও তিনি পুলিশি হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। বাড্ডা থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এ জি এম শামসুল হকের বাসায় প্রতিদিন একাধিকবার টহল দিচ্ছে পুলিশ। ৮ মামলার আসামি শামসুল হক বর্তমানে ৩ মামলায় জামিনের অপেক্ষা করছেন আত্মগোপনে থেকেই। একই পরিস্থিতি ঢাকা দক্ষিণের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ১২ মামলার আসামি গোলাম হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ১৬ মামলার আসামি শামসুল হুদা কাজল, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ২১ মামলার আসামি আরিফুল ইসলাম, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী ৬ মামলার আসামি মীর হোসেন মীরুসহ বেশির ভাগের। এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ সাহেদ মন্টু বর্তমানে কারাগারে। তার পক্ষে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী নাসিমা বানু।
No comments