বর্ষবরণে টিএসসিতে বখাটেদের থাবা- তরুণীদের আর্তচিৎকার বাঁচাও বাঁচাও
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও শাহবাগ
জুড়ে বর্ষবরণ উৎসব। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী যোগ দেন এতে। এরই মধ্যে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন টিএসসিতে প্রকাশ্যে একদল বখাটের অশ্লীল আক্রমণের
শিকার হন নারীরা। কিশোরী থেকে মধ্যবয়সী কেউই রেহাই পাননি এদের হাত থেকে।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে বখাটেদের নগ্ন উল্লাস। এ সময় আক্রমনের শিকার তরুণীরা
বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাদের সাহায্যে। অথচ পাশেই
দাঁড়িয়ে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন নিষ্ক্রিয়। তারা কেউ এগিয়ে
যাননি। এমনকি পাঁচ বখাটেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পরও ছেড়ে দেয়া হয়।
তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানানো হলেও তিনি কোন
ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। নির্যাতিতাদের উদ্ধার
করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার
সভাপতিসহ কয়েকজন।
মঙ্গলবার বাংলা নতুন বছরকে বরণ উৎসব উপলক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না টিএসসি, সোহরওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায়। এ সুযোগে রাজু ভাস্কর্যের উত্তরদিকে সোহরওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের পাশে একের পর এক বস্ত্র হরণের প্রতিযোগিতা শুরু করে বখাটেরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনটি গ্রুপে বিভক্ত ছিল তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওই ফটকটি ভেতর থেকে বাইরে আসার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। বখাটেদের তিনটি গ্রুপই ওই ফটকের পাশে অবস্থান নিয়ে অসভ্যতায় মেতে ওঠে। নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর আহত ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির সভাপতি লিটন নন্দী জানান, তিনি ও সংগঠনের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন সেনগুপ্ত ও রমনা থানার সাধারণ সম্পাদক অমিত দে শাহবাগ থেকে টিএসসিতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে এক তরুণীকে ঘিরে উল্লাস করছিল এক দল বখাটে। ইতিমধ্যে ওই তরুণীর শাড়ি-ব্লাউজসহ পরনের সব পোশাক টেনে ছিঁড়ে খুলে ফেলে বখাটেরা। যৌন লালসা পূরণের জন্য বিবস্ত্র তরুণীকে নির্যাতন করতে থাকে তারা। লিটন নন্দী বলেন, মনে হচ্ছিল মানুষ না। যেন হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে নারীদের ওপর। তিনি জানান, ওই বিবস্ত্র তরুণীর সঙ্গী যুবক তাকে জড়িয়ে ধরে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। এতে ওই যুবকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারধর করতে থাকে তারা। যুবক ও ওই তরুণী ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন। এর মধ্যেই ভিড় ঠেলে বিবস্ত্র তরুণীকে উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করেন ছাত্র ইউনিয়নের তিন নেতা। পরনের পাঞ্জাবি খুলে বিবস্ত্র তরুণীকে পরিয়ে দেন লিটন নন্দী। তরুণীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে গেলে প্রতিবন্ধকতা শুরু করে বখাটেরা। ওই তরুণীকে নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী ও তার সঙ্গী যুবককে উদ্ধার করে রিকশায় তোলে দেন লিটন ও তার সঙ্গীরা। রিকশাটি ধানমন্ডির শঙ্কর এলাকায় তাদের পৌঁছে দেয়।
নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর আহত অমিত দে জানান, শুধু তরুণী না। তারা কাউকেই রেহায় দেয়নি। কিশোরী থেকে শুরু করে সব বয়সের নারীই তাদের হয়রানির শিকার হয়েছেন। ওই তরুণীকে উদ্ধার করার পরপরই আরও একাধিক নারীর চিৎকার শুনতে পান তারা। কাছে গিয়ে দেখতে পান এক নারী দুই হাত জোর করে বখাটেদের অনুনয় করছেন, আমার বাচ্চাকে ফেরত দাও। বাবা, আমাকে কিছু করো না। আমার বাচ্চা ফেরত দাও। ছয় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন ওই নারী। উদ্যানের ওই ফটক দিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বখাটেরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার শিশুসন্তানকে। শিশুটি তখন ফুটপাথে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয় ওই নারীর ভাইকে। এর মধ্যেই লিটন, অমিত, সুজনসহ কয়েকজন তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। বখাটেদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে তাদের। ততক্ষণে বখাটেরা টেনে খুলে নেয় ওই নারীর শাড়ি। পরে ওই নারী ও তার ভাই এবং সন্তানকে উদ্ধার করেন তারা। বখাটেদের আক্রমনের শিকার এক কিশোরী আর্তনাদ করছিল। ওই কিশোরীকে উদ্ধার করতে গেলে বখাটেরা মারধর করে তাদের। বখাটেদের নির্যাতনে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারায় ওই কিশোরী।
নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে হাত ভেঙে যায় লিটন ও অমিতের। লিটন নন্দী বলেন, প্রথমে টের পাইনি। প্রথম বিবস্ত্র তরুণীকে উদ্ধারের পরে দেখি হাতটা ফুলে গেছে। তখন পুলিশকে হাতজোড় করে বলেছি, প্লিজ এই নারীদের রক্ষা করুন। কিন্তু তারা কোন ভূমিকা পালন করেনি। নীরব দর্শকের মতোই তারা এই অসভ্য তাণ্ডব দেখেছে। এমনকি ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদকে ফোনে বিষয়টি জানিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন লিটন নন্দী। কিন্তু প্রক্টর তাকে হতাশ করে বলেছেন, আমার কি করার আছে। পুলিশ তো আমার কথা শুনে না। লিটন নন্দী জানান, তারা পাঁচজন বখাটেকে আটক করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর খোঁজ নিলে পুলিশ জানায়, তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মেহেদি হাসান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আশরাফুল ইসলামসহ টিএসসি এলাকায় তিনটি স্থানে অবস্থান করছিল পুলিশ। তবে এ বিষয়ে তারা কোন মন্তব্য করেনি। জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামও মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশের কাছে সোপর্দের পর বখাটেদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দায়ী হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। বখাটে ও নির্যাতনের শিকার কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে সিসি ক্যামেরা ছিল। যৌন হয়রানির ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করেছেন ঢাবির প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ। তিনি বলেন, ১লা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা পালন করলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না। ওই ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানান, ফোনে বিষয়টি জানার পর তিনি তা শাহবাগ থানার ওসিকে জানিয়েছেন। পরে ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারীদের যৌন হয়রানিতে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করে গতকাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। পুলিশের নাকের ডগায় এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি অভিযোগ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন সংগঠনগুলোর নেতারা। দুপুরে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন। এতে অভিযোগ করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম জিলানী বলেন, মঙ্গলবারের যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্লিপ্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও মিলন চত্বরে পুলিশের অবস্থানের কাছাকাছি জায়গায় এ ঘটনা ঘটেছে। যেখানে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও সিসি ক্যামেরা ছিল। তার পরেও পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে টালবাহানা করছে। তারা অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। তিনি বলেন, জাতি যখন নববর্ষকে বরণ করে নিচ্ছে তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টিএসসিমুখী গেটে ১৫-২০ জন নারীর ওপর বর্বর হামলা হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ দায়সারা বক্তব্য দিয়ে একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ১লা বৈশাখে দুপুরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলো দিয়ে অবাধে গাড়ি চলতে ও ফুটপাথে দোকানপাট বসতে দেয়া হয়। এর ফলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ জনসাধারণের চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান তারেক, সহসভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়, দপ্তর সম্পাদক আল আমিন, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন সেন গুপ্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাশসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান তারেক মানবজমিনকে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থ গ্রহণ না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবো।
মঙ্গলবার বাংলা নতুন বছরকে বরণ উৎসব উপলক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না টিএসসি, সোহরওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায়। এ সুযোগে রাজু ভাস্কর্যের উত্তরদিকে সোহরওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের পাশে একের পর এক বস্ত্র হরণের প্রতিযোগিতা শুরু করে বখাটেরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনটি গ্রুপে বিভক্ত ছিল তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওই ফটকটি ভেতর থেকে বাইরে আসার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। বখাটেদের তিনটি গ্রুপই ওই ফটকের পাশে অবস্থান নিয়ে অসভ্যতায় মেতে ওঠে। নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর আহত ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির সভাপতি লিটন নন্দী জানান, তিনি ও সংগঠনের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন সেনগুপ্ত ও রমনা থানার সাধারণ সম্পাদক অমিত দে শাহবাগ থেকে টিএসসিতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে এক তরুণীকে ঘিরে উল্লাস করছিল এক দল বখাটে। ইতিমধ্যে ওই তরুণীর শাড়ি-ব্লাউজসহ পরনের সব পোশাক টেনে ছিঁড়ে খুলে ফেলে বখাটেরা। যৌন লালসা পূরণের জন্য বিবস্ত্র তরুণীকে নির্যাতন করতে থাকে তারা। লিটন নন্দী বলেন, মনে হচ্ছিল মানুষ না। যেন হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে নারীদের ওপর। তিনি জানান, ওই বিবস্ত্র তরুণীর সঙ্গী যুবক তাকে জড়িয়ে ধরে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। এতে ওই যুবকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারধর করতে থাকে তারা। যুবক ও ওই তরুণী ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন। এর মধ্যেই ভিড় ঠেলে বিবস্ত্র তরুণীকে উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করেন ছাত্র ইউনিয়নের তিন নেতা। পরনের পাঞ্জাবি খুলে বিবস্ত্র তরুণীকে পরিয়ে দেন লিটন নন্দী। তরুণীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে গেলে প্রতিবন্ধকতা শুরু করে বখাটেরা। ওই তরুণীকে নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী ও তার সঙ্গী যুবককে উদ্ধার করে রিকশায় তোলে দেন লিটন ও তার সঙ্গীরা। রিকশাটি ধানমন্ডির শঙ্কর এলাকায় তাদের পৌঁছে দেয়।
নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর আহত অমিত দে জানান, শুধু তরুণী না। তারা কাউকেই রেহায় দেয়নি। কিশোরী থেকে শুরু করে সব বয়সের নারীই তাদের হয়রানির শিকার হয়েছেন। ওই তরুণীকে উদ্ধার করার পরপরই আরও একাধিক নারীর চিৎকার শুনতে পান তারা। কাছে গিয়ে দেখতে পান এক নারী দুই হাত জোর করে বখাটেদের অনুনয় করছেন, আমার বাচ্চাকে ফেরত দাও। বাবা, আমাকে কিছু করো না। আমার বাচ্চা ফেরত দাও। ছয় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন ওই নারী। উদ্যানের ওই ফটক দিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বখাটেরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার শিশুসন্তানকে। শিশুটি তখন ফুটপাথে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয় ওই নারীর ভাইকে। এর মধ্যেই লিটন, অমিত, সুজনসহ কয়েকজন তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। বখাটেদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে তাদের। ততক্ষণে বখাটেরা টেনে খুলে নেয় ওই নারীর শাড়ি। পরে ওই নারী ও তার ভাই এবং সন্তানকে উদ্ধার করেন তারা। বখাটেদের আক্রমনের শিকার এক কিশোরী আর্তনাদ করছিল। ওই কিশোরীকে উদ্ধার করতে গেলে বখাটেরা মারধর করে তাদের। বখাটেদের নির্যাতনে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারায় ওই কিশোরী।
নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে হাত ভেঙে যায় লিটন ও অমিতের। লিটন নন্দী বলেন, প্রথমে টের পাইনি। প্রথম বিবস্ত্র তরুণীকে উদ্ধারের পরে দেখি হাতটা ফুলে গেছে। তখন পুলিশকে হাতজোড় করে বলেছি, প্লিজ এই নারীদের রক্ষা করুন। কিন্তু তারা কোন ভূমিকা পালন করেনি। নীরব দর্শকের মতোই তারা এই অসভ্য তাণ্ডব দেখেছে। এমনকি ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদকে ফোনে বিষয়টি জানিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন লিটন নন্দী। কিন্তু প্রক্টর তাকে হতাশ করে বলেছেন, আমার কি করার আছে। পুলিশ তো আমার কথা শুনে না। লিটন নন্দী জানান, তারা পাঁচজন বখাটেকে আটক করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর খোঁজ নিলে পুলিশ জানায়, তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মেহেদি হাসান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আশরাফুল ইসলামসহ টিএসসি এলাকায় তিনটি স্থানে অবস্থান করছিল পুলিশ। তবে এ বিষয়ে তারা কোন মন্তব্য করেনি। জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামও মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশের কাছে সোপর্দের পর বখাটেদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দায়ী হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। বখাটে ও নির্যাতনের শিকার কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে সিসি ক্যামেরা ছিল। যৌন হয়রানির ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করেছেন ঢাবির প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ। তিনি বলেন, ১লা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা পালন করলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না। ওই ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানান, ফোনে বিষয়টি জানার পর তিনি তা শাহবাগ থানার ওসিকে জানিয়েছেন। পরে ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারীদের যৌন হয়রানিতে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করে গতকাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। পুলিশের নাকের ডগায় এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি অভিযোগ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন সংগঠনগুলোর নেতারা। দুপুরে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন। এতে অভিযোগ করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম জিলানী বলেন, মঙ্গলবারের যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্লিপ্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও মিলন চত্বরে পুলিশের অবস্থানের কাছাকাছি জায়গায় এ ঘটনা ঘটেছে। যেখানে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও সিসি ক্যামেরা ছিল। তার পরেও পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে টালবাহানা করছে। তারা অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। তিনি বলেন, জাতি যখন নববর্ষকে বরণ করে নিচ্ছে তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টিএসসিমুখী গেটে ১৫-২০ জন নারীর ওপর বর্বর হামলা হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ দায়সারা বক্তব্য দিয়ে একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ১লা বৈশাখে দুপুরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলো দিয়ে অবাধে গাড়ি চলতে ও ফুটপাথে দোকানপাট বসতে দেয়া হয়। এর ফলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ জনসাধারণের চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান তারেক, সহসভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়, দপ্তর সম্পাদক আল আমিন, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন সেন গুপ্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাশসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান তারেক মানবজমিনকে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থ গ্রহণ না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবো।
No comments