আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে -ড্যান মজিনা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো না মজিনার
২০১১
সালের ২৪শে নভেম্বর থেকে ২০১৪’র ২১শে ডিসেম্বর। ঢাকায় ড্যান মজিনার ১১২২
দিনের দূতিয়ালি মিশন শেষ হচ্ছে আজ। মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা করবেন
তিনি। এরই মধ্যে দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পাবনার ৩ কৃষক পর্যন্ত,
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন তিনি।
কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে প্রধানমন্ত্রীর বেলায়। তিন সপ্তাহের অপেক্ষার পরও
শেখ হাসিনার দেখা পাননি বিদায়ী রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশে মিশন শেষ করার মধ্য দিয়ে ৩৩ বছরের বর্ণাঢ্য কূটনৈতিক জীবনেরও ইতি টেনে অবসর গ্রহণ করতে চলেছেন ড্যান মজিনা। গতকাল ছিল তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন। গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে অনুষ্ঠিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঢাকার প্রায় ৩৭ মাসের কাজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা যেমন দেন, তেমনি নিজের ব্যক্তিগত নানা অনুভূতিও প্রকাশ করেন খোলা মনে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে অংশীদারি পর্যায়ে উন্নীত করার মিশন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন জানিয়ে বিদায়ী দূত বললেন, পূর্ণ সন্তুষ্টি নিয়ে আজ আমি ফিরে যাচ্ছি। এখানে দায়িত্ব নেয়ার এক সপ্তাহের মাথায় (২০১১’র ১লা ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে কেবল অংশীদারি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া-ই নয়, এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এবং এক যুগের বেশি সময় থেকে ঝুলে থাকা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি (টিকফা) সই করা-এ ৩ স্বপ্নের কথা জানান তিনি। বলেন, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সাবেক) ঢাকা সফর করেছেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারি সংলাপ চুক্তি সই করেছেন। কেবল চুক্তি সই নয়, দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন রাউন্ড হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বিস্তৃত, গভীর ও শক্তিশালী উল্লেখ করে মজিনা বলেন, দুই দেশের জনগণের কল্যাণে আমাদের এ অংশীদারিত্ব। এটি আজ যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে- এখানে যারা বসে আছেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে যারা রয়েছেন, আমি সহ অনেকেরই এটি ধারণার বাইরে ছিল। কিন্তু এটিই আজ বাস্তব। দুই দেশের সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার বিষয়টি তার আমলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দাবি করে মার্কিন দূত বলেন, এটি এখন দিনে দিনে আরও এগিয়ে যাবে। সম্পর্ক উন্নয়ন তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং-কে উদ্ধৃত করে ড্যান মজিনা বলেন, কিপ ইয়োর আইস অন দি প্রাইজ, আমার দৃষ্টি হচ্ছে সেই প্রাইজের দিকে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নত করার জন্যই আমি নিবেদিত থেকেছি। আমার কার্যক্রমে আমি তুষ্ট, কারও প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।
৫ই জানুয়ারি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত: সংবাদ সম্মেলনের উন্মুক্ত সেশনে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী মার্কিন দূত বলেন, যে কেউ গুগলে সার্চ করে ৬ই জানুয়ারিতে প্রকাশিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিটি দেখে নিতে পারেন। আজ পর্যন্ত আমাদের অবস্থান এটিই। ওই নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল বলে জনমনে একটি ধারণা রয়েছে দাবি করে দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি অনলাইন পোর্টালের রিপোর্টার এ নিয়ে রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে ড্যান মজিনা বলেন, কার ধারণা কি জানি না। এটুকু শুধু বলতে পারি- রাজনীতির মাঠে যুক্তরাষ্ট্র কোন দলকে সমর্থন দেয় না। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হলেও সরকারের সঙ্গে দেশটির টানাপড়েন চলছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই এটি শুরু হয়েছে, চলছে এখনও। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন দূতের দেখা-সাক্ষাৎ হলেও একান্ত সাক্ষাৎ অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। মার্কিন দূতাবাস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মজিনার বিদায়ী সাক্ষাতের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ আগেই কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়ে অনুরোধ করেছে। কিন্তু তখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তাকে সময় দেয়নি। কেন এমন হচ্ছে? জানতে চান এক সাংবাদিক। মজিনার জবাব, ‘আমার কোন ধারণা নেই।’ রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার সবচেয়ে বড় সফলতা কি? জানতে চাইলে তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে অবদান রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এটাকে ‘বিরাট সাফল্য’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘ল্যান্ড অব ম্যাজিক বাংলাদেশ’-এর যত চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশকে ‘ল্যান্ড অব ম্যাজিক’ আখ্যা দিয়ে ড্যান মজিনা বলেন, কোন মানদ-েই এ দেশ গরিব হতে পারে না। আমি বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ঘুরে দেখেছি। বাংলাদেশ অবশ্যই সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। এর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অবকাঠামোর ঘাটতি, দুর্নীতি, আইনের শাসনের অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্তরায়- মন্তব্য করে বিদায়ী দূত বলেন, আমি মনে করি এ সব প্রতিবন্ধকতাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সম্ভাবনা কাজে লাগানো এবং চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে বাংলাদেশ আগামীর এশিয়ান টাইগার হতে পারে- এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তৈরী পোশাক, চামড়া শিল্প, ঔষধ এবং তথ্য প্রযুক্তি- বাংলাদেশের চারটি বড় সম্ভাবনা। এটি বাংলাদেশ তথা এশিয়ান টাইগারের চার শক্তিশালী পা। তবে এসব শিল্পের বিকাশে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রানা প্লাজা ও তাজরীনের বিয়োগান্তু ঘটনা তৈরী পোশাক খাতের চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই খাতকে ঝুঁকিমুক্ত করে বিশ্বমানে উন্নীত করার পথে বেশ কিছু উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ওই অগ্রগতি পর্যালোচনায় ৩ সচিব ও ৫ রাষ্ট্রদূতের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হয়। আমি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি ওই উদ্যোগ সফল হলে তৈরী পোশাকে বাংলাদেশ এক নম্বর ইন্ডাস্ট্রি হবে। সাভারে নতুন ভাবে স্থাপিত চামড়া পল্লীর সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন- এখানে বানানো জুতা, ব্যাগ ও অন্যান্য চামড়াজাত দ্রব্য একসময় গোটা আমেরিকায় পাওয়া যাবে। ঔষধ শিল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল উল্লেখ করে মজিনা বলেন, আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ড্রাগ এজেন্সি থেকে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঔষধ আমেরিকায় রপ্তানি হবে। আমিসহ অনেকেই হবে এর ক্রেতা। একজন মার্কিন ব্যবসায়ীকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে বানানো সফটওয়্যার উন্নয়নের খরচ ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে ৬০ শতাংশ কম। সেই ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ১০০০ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারকে চাকরি দেয়ার জন্য খুঁজেছিলেন, কিন্তু মাত্র ৪৫ জন সে সুযোগ নিতে পেরেছেন। সার্বিক অর্থে বাংলাদেশের জন্য এখন দরকার শিক্ষাখাতে বিপ্লব উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবলমাত্র মানসম্মত শিক্ষাই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার উপায় খুঁজছেন: বাংলাদেশের সঙ্গে আগামী দিনেও কাজ করার উপায় খুঁজছেন জানিয়ে ড্যান মজিনা বলেন, ক্যালিফোর্নিয়াতে পরিবারের সঙ্গে বড়দিন উদ্যাপন করে জানুয়ারি মাসে অবসরে যাচ্ছি। এখানে আমার উত্তরসূরি মার্সিয়া বার্নিক্যাট খুব দ্রুত যোগ দেবেন। আমার কাছে অনেক অফার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সম্পৃক্ত থাকার কোন অফার আমি এখনও পাইনি। আশা করি পাবো। আমি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চাই। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে মজিনা বলেন, চমৎকার বাংলাদেশ সম্পর্কে না বলা কথাগুলো আমি আমার দেশের নাগরিকদের আরও বেশি করে জানাতে চাই।
বাংলাদেশে মিশন শেষ করার মধ্য দিয়ে ৩৩ বছরের বর্ণাঢ্য কূটনৈতিক জীবনেরও ইতি টেনে অবসর গ্রহণ করতে চলেছেন ড্যান মজিনা। গতকাল ছিল তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন। গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে অনুষ্ঠিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঢাকার প্রায় ৩৭ মাসের কাজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা যেমন দেন, তেমনি নিজের ব্যক্তিগত নানা অনুভূতিও প্রকাশ করেন খোলা মনে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে অংশীদারি পর্যায়ে উন্নীত করার মিশন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন জানিয়ে বিদায়ী দূত বললেন, পূর্ণ সন্তুষ্টি নিয়ে আজ আমি ফিরে যাচ্ছি। এখানে দায়িত্ব নেয়ার এক সপ্তাহের মাথায় (২০১১’র ১লা ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে কেবল অংশীদারি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া-ই নয়, এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এবং এক যুগের বেশি সময় থেকে ঝুলে থাকা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি (টিকফা) সই করা-এ ৩ স্বপ্নের কথা জানান তিনি। বলেন, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সাবেক) ঢাকা সফর করেছেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারি সংলাপ চুক্তি সই করেছেন। কেবল চুক্তি সই নয়, দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন রাউন্ড হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বিস্তৃত, গভীর ও শক্তিশালী উল্লেখ করে মজিনা বলেন, দুই দেশের জনগণের কল্যাণে আমাদের এ অংশীদারিত্ব। এটি আজ যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে- এখানে যারা বসে আছেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে যারা রয়েছেন, আমি সহ অনেকেরই এটি ধারণার বাইরে ছিল। কিন্তু এটিই আজ বাস্তব। দুই দেশের সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার বিষয়টি তার আমলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দাবি করে মার্কিন দূত বলেন, এটি এখন দিনে দিনে আরও এগিয়ে যাবে। সম্পর্ক উন্নয়ন তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং-কে উদ্ধৃত করে ড্যান মজিনা বলেন, কিপ ইয়োর আইস অন দি প্রাইজ, আমার দৃষ্টি হচ্ছে সেই প্রাইজের দিকে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নত করার জন্যই আমি নিবেদিত থেকেছি। আমার কার্যক্রমে আমি তুষ্ট, কারও প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।
৫ই জানুয়ারি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত: সংবাদ সম্মেলনের উন্মুক্ত সেশনে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী মার্কিন দূত বলেন, যে কেউ গুগলে সার্চ করে ৬ই জানুয়ারিতে প্রকাশিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিটি দেখে নিতে পারেন। আজ পর্যন্ত আমাদের অবস্থান এটিই। ওই নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল বলে জনমনে একটি ধারণা রয়েছে দাবি করে দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি অনলাইন পোর্টালের রিপোর্টার এ নিয়ে রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে ড্যান মজিনা বলেন, কার ধারণা কি জানি না। এটুকু শুধু বলতে পারি- রাজনীতির মাঠে যুক্তরাষ্ট্র কোন দলকে সমর্থন দেয় না। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হলেও সরকারের সঙ্গে দেশটির টানাপড়েন চলছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই এটি শুরু হয়েছে, চলছে এখনও। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন দূতের দেখা-সাক্ষাৎ হলেও একান্ত সাক্ষাৎ অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। মার্কিন দূতাবাস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মজিনার বিদায়ী সাক্ষাতের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ আগেই কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়ে অনুরোধ করেছে। কিন্তু তখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তাকে সময় দেয়নি। কেন এমন হচ্ছে? জানতে চান এক সাংবাদিক। মজিনার জবাব, ‘আমার কোন ধারণা নেই।’ রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার সবচেয়ে বড় সফলতা কি? জানতে চাইলে তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে অবদান রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এটাকে ‘বিরাট সাফল্য’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘ল্যান্ড অব ম্যাজিক বাংলাদেশ’-এর যত চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশকে ‘ল্যান্ড অব ম্যাজিক’ আখ্যা দিয়ে ড্যান মজিনা বলেন, কোন মানদ-েই এ দেশ গরিব হতে পারে না। আমি বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ঘুরে দেখেছি। বাংলাদেশ অবশ্যই সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। এর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অবকাঠামোর ঘাটতি, দুর্নীতি, আইনের শাসনের অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্তরায়- মন্তব্য করে বিদায়ী দূত বলেন, আমি মনে করি এ সব প্রতিবন্ধকতাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সম্ভাবনা কাজে লাগানো এবং চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে বাংলাদেশ আগামীর এশিয়ান টাইগার হতে পারে- এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তৈরী পোশাক, চামড়া শিল্প, ঔষধ এবং তথ্য প্রযুক্তি- বাংলাদেশের চারটি বড় সম্ভাবনা। এটি বাংলাদেশ তথা এশিয়ান টাইগারের চার শক্তিশালী পা। তবে এসব শিল্পের বিকাশে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রানা প্লাজা ও তাজরীনের বিয়োগান্তু ঘটনা তৈরী পোশাক খাতের চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই খাতকে ঝুঁকিমুক্ত করে বিশ্বমানে উন্নীত করার পথে বেশ কিছু উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ওই অগ্রগতি পর্যালোচনায় ৩ সচিব ও ৫ রাষ্ট্রদূতের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হয়। আমি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি ওই উদ্যোগ সফল হলে তৈরী পোশাকে বাংলাদেশ এক নম্বর ইন্ডাস্ট্রি হবে। সাভারে নতুন ভাবে স্থাপিত চামড়া পল্লীর সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন- এখানে বানানো জুতা, ব্যাগ ও অন্যান্য চামড়াজাত দ্রব্য একসময় গোটা আমেরিকায় পাওয়া যাবে। ঔষধ শিল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল উল্লেখ করে মজিনা বলেন, আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ড্রাগ এজেন্সি থেকে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঔষধ আমেরিকায় রপ্তানি হবে। আমিসহ অনেকেই হবে এর ক্রেতা। একজন মার্কিন ব্যবসায়ীকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে বানানো সফটওয়্যার উন্নয়নের খরচ ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে ৬০ শতাংশ কম। সেই ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ১০০০ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারকে চাকরি দেয়ার জন্য খুঁজেছিলেন, কিন্তু মাত্র ৪৫ জন সে সুযোগ নিতে পেরেছেন। সার্বিক অর্থে বাংলাদেশের জন্য এখন দরকার শিক্ষাখাতে বিপ্লব উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবলমাত্র মানসম্মত শিক্ষাই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার উপায় খুঁজছেন: বাংলাদেশের সঙ্গে আগামী দিনেও কাজ করার উপায় খুঁজছেন জানিয়ে ড্যান মজিনা বলেন, ক্যালিফোর্নিয়াতে পরিবারের সঙ্গে বড়দিন উদ্যাপন করে জানুয়ারি মাসে অবসরে যাচ্ছি। এখানে আমার উত্তরসূরি মার্সিয়া বার্নিক্যাট খুব দ্রুত যোগ দেবেন। আমার কাছে অনেক অফার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সম্পৃক্ত থাকার কোন অফার আমি এখনও পাইনি। আশা করি পাবো। আমি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চাই। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে মজিনা বলেন, চমৎকার বাংলাদেশ সম্পর্কে না বলা কথাগুলো আমি আমার দেশের নাগরিকদের আরও বেশি করে জানাতে চাই।
No comments