শাস্তি ও জরিমানার আওতায় আসছে ৫ লাখ করদাতা
ব্যক্তি শ্রেণীর আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০শে নভেম্বর। কিন্তু ১৭ লাখ করদাতার মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ১০ লাখ ২৭,৬২৩ জন। এর মধ্যে চার শ্রেণীর করদাতার রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। এ সংখ্যাটা বাদ দিলে বাকি প্রায় ৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল না করায় তারা শাস্তির পাশাপাশি জরিমানার আওতায় আসবেন। সম্প্রতি নির্দিষ্ট সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়া করদাতাদের সনাক্ত করে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর সূত্র জানায়, ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। তবে ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ইটিআইএন) দ্বারা নিবন্ধন নিয়েছেন ১৩ লাখ ৩২,৩৫৪ জন করদাতা। এর মধ্যে পুরনো করদাতা ৯ লাখ ৫৬,৮৭৩ জন। আর নতুন ৩ লাখ ৭৫,৪৮০ জন। চলতি অর্থবছরের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময় থাকলেও এ সময়ে রিটার্ন দাখিল করেছেন ১০ লাখ ২৭,৬২৩ জন করদাতা। যা মোট ১৭ লাখ করদাতার তুলনায় ৬ লাখ ৭২,৩৭৭ জন কম। সূত্র জানায়, রিটার্ন দাখিল না করা এসব করদাতাদের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যার অংশ হিসেবে তাদের শনাক্ত করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর আইনের ১২৪ ধারায় বলা হয়েছে, করদাতা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে উপ-কর কমিশনার করদাতার আয় অনুসারে ১০% জরিমানা করবেন। সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়সীমার পর প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা করতে পারবেন। তবে ১৩০ ধারা অনুসারে শাস্তি আরোপের আগে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কেন রিটার্ন দাখিল করেননি করদাতার কাছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে। যদি করদাতা সুনির্দিষ্ট কারণ উপস্থাপন করতে পারেন তবে তার শাস্তি কমানোর বিধান রয়েছে। এ ছাড়া চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশ ৭৫-এর সংশোধনীতে যে চার শ্রেণীর করদাতার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয় তারা এ জরিমানার আওতামুক্ত থাকবেন। সংশোধনী অনুযায়ী যে সব করদাতা ১,৬০০ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবনের মালিক; যে করদাতার একটি টিআইএন আছে, যে করদাতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একজন সদস্য প্রার্থী হয়েছেন এবং যে করদাতার বাসায় একটি টেলিফোন আছে তার যদি চলতি করবর্ষে করযোগ্য কোন আয় না থাকে তবে তার জন্য রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক নয়। এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের হিসাব মতে, এ চার শ্রেণীর করদাতার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক না হলেও এ সংখ্যা দেড় লাখের বেশি হবে না। তাই পৌনে ছয় লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল না করায় ৫ লাখের মতো করদাতাকে জরিমানার আওতায় আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের আয়কর এক সদস্য বলেন, এনবিআরের হিসাব মতে, ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। প্রতি বছরই বারবার সময় বাড়ালেও নির্দিষ্ট সময়ে অনেক করদাতাই রিটার্ন জমা দেন না। গত বছর নির্ধারিত সময়ে ৮ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত জরিমানাসহ এ সংখ্যা ১১ লাখে ছাড়িয়েছিল। তবে গত বছর জরিমানার পরিমাণ অনেক কম ছিল। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর রিটার্ন জমা দেয়ার হার বেড়েছে। তবে প্রকৃত করদাতার চেয়ে তা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ কম। তাই এ বছর রিটার্ন জমা না দেয়া করদাতাদের জরিমানার বিষয়ে একটু কঠোর হবে এনবিআর।
No comments