ইবোলা মহামারীতে এক এতিমের মরাকান্না
চার
বছরের সুইটি। ইবোলায় মারা গেছেন তার পিতা। পরপারে চলে গেছে বোনও। রক্তবমি
করতে করতে তার মা-ও এখন মৃত্যুপথযাত্রী। সিয়েরা লিওনের সুইটি এখন নিরুপায়।
এক পরিদর্শককে দেখতে পেয়ে নিষ্পাপ এ শিশুটির আকুল আবেদন- ‘তুমি কি আমাকে
নেবে?’ নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সুইটির হৃদয়স্পর্শী এ
কাহিনী। বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্স আসার পর তার মা উঠে পড়েন তাতে। পেছন
পেছন সুইটিও উঠে পড়ে। তাদের পুরো বাড়িতে মড়কের মতো আঘাত হেনেছে ইবোলা।
সুইটির মধ্যে অবশ্য ইবোলার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তারপরও গ্রামের কেউ তার
দায়িত্ব নিতে চায়নি। এমনকি আত্মীয়স্বজনরাও না। সবাই আতঙ্কিত। কোথাও যাওয়ার
জায়গা না থাকায় মায়ের সঙ্গে সে চলে যায় ইবোলা ক্লিনিকের রেড জোন পর্যন্ত।
ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্থানে কাটিয়ে দেয় দু’সপ্তাহেরও বেশি। সেখানে সুইটি ছাড়া আর
যারা সুস্থ রয়েছেন তাদের প্রত্যেকে বিশেষ স্যুট পরিহিত। সুইটির মায়ের
স্বাস্থ্য ক্রমে অবনতি হচ্ছিল। এ অবস্থায় সুইটি ওষুধ খাওয়ার জন্য মাকে
অনুরোধ করতে থাকে। তাকে খাবার খাওয়াতে চেষ্টা করে। মায়ের ময়লা কাপড় ধুয়ে
পরিষ্কার করে নিজ দায়িত্বে। কর্তব্যরত নার্সরা মাত্র ৪ বছরের এ মেয়েটির এসব
প্রচেষ্টা দেখে বাকশূন্য হয়ে পড়েন। তার আসল নাম জানেন না
স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাই মেয়েটিকে তারা নাম দিয়েছেন সুইটি সুইটি। কিছুদিন পর
সুইটিকে এতিম করে দিয়ে ওপারে পাড়ি জমায় তার মা-ও। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মেয়েটি
এরপর ক্লিনিকের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে তার বড় বড় চোখ দিয়ে এদিক ওদিক দেখতে
থাকে। তাকে আশ্রয় দেয়ার কেউ নেই। পরে একটি মোটরগাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া
হয় একটি গ্রুপ হোমে। সেখানকার শূন্য, নিষ্প্রাণ হলওয়ে এখন তার একাকী ঘুরে
বেড়ানোর স্থান। সুইটিকে দত্তক নেয়ার মতো কাউকে খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা করছে
সামাজিক কর্মীরা। বেসরকারি দাতব্য সংস্থা চাইল্ড ফান্ড ইন্টারন্যাশনালের
অর্থায়নে স্থাপিত একটি গ্রুপ হোম এখন ইবোলায় পিতা-মাতা হারানো এতিম শিশুদের
আশ্রয়। সেখানেই রয়েছে সুইটি। সিয়েরা লিওনের পোর্ট লোকোতে এর অবস্থান।
সুইটির এখনও সুস্থ থাকাটাই অবিশ্বাস্য বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
অসুস্থ মায়ের পাশের বিছানাতেই সে ঘুমাতো। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তার আশেপাশেই
মানুষ মারা গেছে অহরহ। স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো তার কোন নিরাপত্তামূলক স্যুট
ছিল না। এছাড়া, প্রতিদিন সকালে মায়ের বিছানাও পরিষ্কার করতো সে। সব সময়
চেষ্টা করতো মায়ের মনোবল চাঙা রাখতে। মায়ের প্রতি সুইটির নিরবচ্ছিন্ন
মনোযোগের কারণেই স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে নাম দিয়েছে সুইটি সুইটি। মায়ের
সঙ্গে টুকরো টুকরো অস্পষ্ট আলাপচারিতা থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের ধারণা
মেয়েটির বয়স চার, তার পিতা নিজেও ছিলেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী আর সুইটির
প্রকৃত নাম সম্ভবত এমবালু কামারা।
তবে শীর্ষ সমাজ কর্মী যিনি সুইটির বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন তিনি বলেছেন তথ্যগুলো নিশ্চিত হওয়া যায় নি। কোন আত্মীয়স্বজন সুইটির খোঁজে যায় নি এখনও। সুইটির মায়ের চিকিৎসায় ছিলেন এমন একজন নবীন স্বাস্থ্য কর্মী উসমান কোরোমা সুইটিকে দেখাশোনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সুইটির মা মৃত্যুর আগে এমন ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন। সরকারি সমাজসেবা কর্মী মুসা কোন্টেহ সুইটির দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে সহায়তা করছেন। কারো কাছে দত্তক দেয়ার আগে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত উসমানের প্রতি তাদের আস্থা অর্জন হয়েছে। মুসা জানালেন, উসমান শিক্ষিত। সে সুইটিকে একটা নতুন জীবন দিতে পারবে। সুইটির মতো এমন অনেক এতিম বাচ্চার ঘটনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের হাতে। আর তাই কবে নাগাদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি তিনি।
তবে শীর্ষ সমাজ কর্মী যিনি সুইটির বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন তিনি বলেছেন তথ্যগুলো নিশ্চিত হওয়া যায় নি। কোন আত্মীয়স্বজন সুইটির খোঁজে যায় নি এখনও। সুইটির মায়ের চিকিৎসায় ছিলেন এমন একজন নবীন স্বাস্থ্য কর্মী উসমান কোরোমা সুইটিকে দেখাশোনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সুইটির মা মৃত্যুর আগে এমন ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন। সরকারি সমাজসেবা কর্মী মুসা কোন্টেহ সুইটির দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে সহায়তা করছেন। কারো কাছে দত্তক দেয়ার আগে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত উসমানের প্রতি তাদের আস্থা অর্জন হয়েছে। মুসা জানালেন, উসমান শিক্ষিত। সে সুইটিকে একটা নতুন জীবন দিতে পারবে। সুইটির মতো এমন অনেক এতিম বাচ্চার ঘটনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের হাতে। আর তাই কবে নাগাদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি তিনি।
No comments