হৈমন্তী কদম by মৃত্যুঞ্জয় রায়
হেমন্তে যে কদম ফুটতে পারে সে ধারণা ছিল
না। পাবনার মুলাডুলি রেলক্রসিংয়ের কাছে রাজপথের দুই ধারে লাগানো কয়েকটা
শিশু ও কদম গাছে বছর চারেক আগে প্রথম হেমন্ত ঋতুতেও বর্ষাকালের মতো গাছ ভরে
কদম ফুল ফুটতে দেখি। কদম বর্ষার ফুল, কবির ভাষায় বাদল দিনের প্রথম কদম
ফুল। হেমন্তে ফুটবে কেন, এ প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে শুরু করে। খোঁজ
নিতে শুরু করি। ভাবলাম, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। হেমন্তের কদম বোধ হয় তারই
কিছু প্রভাবের ফল। কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে দেশের সব কদম গাছে হেমন্তে ফুল
ফোটে না কেন? পরের বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলেও সেভাবে আর কদমের
অনুসন্ধান করা হয়নি। অবশেষে কাল হেমন্ত ঋতু আগমনের তিন দিন পরই হেমন্তের
ফুল খুঁজতে গিয়ে আবার প্রথম দেখা পাই কদমের। বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পূব
পাশে একটা বাড়ির আঙিনায় অল্প বয়েসী একটা কদম গাছে ফুটেছে মনকাড়া কদম ফুল।
হেমন্তে ফুটছে, তাই বললাম হৈমন্তী কদম। কিন্তু এবারো আরো কয়েকটা কদম ফুলের
গাছ লক্ষ করলাম, সেসব গাছে ফুল নেই। হতে পারে এই গাছটি কদমের কোনো ভিন্ন
জাত বা ভেরিয়েন্ট, যার ফুল বর্ষায় না ফুটে হেমন্তে ফোটে অথবা বছরে দুইবারই
ফোটে। এ বিষয়ে আরো পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া যায়।
এই গাছ নিয়ে প্রাচীন সাহিত্যেও লেখালেখি হয়েছে বেশ। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, কদম লাগালে গ্রামের মঙ্গল হয়। গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ২০ মিটার। আধা পর্ণমোচী বৃক্ষ। কাণ্ড খাড়া ও লম্বা। পাতা সরল ও বড়। ফুল হিসেবে আমরা যে কদম বলটা দেখি, সেটি আসলে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুলের সমষ্টি। চারা হয় বীজ দিয়ে। কদমের আদি নিবাস ভারত, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। কদম ফুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Anthocephalus chinensis ও পরিবার Rubiaceae.
No comments