৩৩ বছর পর ফিরলো দৃষ্টিশক্তি
কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপনে ফের একবার
সাফল্যের স্বাক্ষর রাখলেন মার্কিন চিকিৎসকরা। ৬৬ বছর বয়সী ল্যারি হেস্টার
৩৩ বছর পর তার হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। ৩৩ বছরে প্রথমবারের মতো
পৃথিবীর আলো দেখেছেন তিনি। আক্ষরিক অর্থে এ ডিভাইসটি ল্যারির দৃষ্টিশক্তি
সম্পূর্ণ ফিরিয়ে দেবে না। তবে এর মাধ্যমে তিনি দরজা থেকে দেয়ালকে পৃথক করার
মতো কাজ করতে পারবেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় পথচারীর জন্য অঙ্কিত জেব্রা
ক্রসিং চিহ্নিত করতে পারবেন। এরই মধ্যে পুকুরে সাদা হাঁসের সাঁতার কাটা,
পূর্ণিমা, হলুদ ফুল দেখতে পেরে বেশ পুলকিত ল্যারি। এগুলো আর কোনদিন তিনি
দেখতে পাবেন, সেটা স্বপ্নেও ভাবেননি। স্ত্রী জেরির সঙ্গেও দারুণ উপভোগ্য
সময় কাটছে ল্যারির। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। আধুনিক চিকিৎসা
বিজ্ঞানে সবচেয়ে যুগান্তকারী ও নব-সংযোজিত চিকিৎসার একটি হচ্ছে, বায়োনিক
চোখ প্রতিস্থাপন। জটিল ও সূক্ষ্ম এ চিকিৎসায় মানুষ তার হারানো দৃষ্টিশক্তি
আংশিকভাবে ফিরে পেতে পারেন। একটি বস্তুর গঠনের সঙ্গে অন্য বস্তুর গঠনের
ভিন্নতা শনাক্ত করতে পারেন। ৩০ বছর বয়সের গণ্ডি পেরোননি তখনও। ল্যারির চোখে
‘রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা’ রোগ শনাক্ত করলেন বিশেষজ্ঞরা। সে সময় তারা বুঝতে
পারেননি ল্যারি তার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে বসবেন এবং এ রোগের কোন
চিকিৎসাও তাদের জানা ছিল না। গত ১লা অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম ব্যক্তি
হিসেবে বায়োনিক চোখে দৃষ্টি ফিরে পান সৌভাগ্যবান এ মার্কিনি। বায়োনিক
চোখটির বৈজ্ঞানিক নাম আর্গাস ২ রেটিনাল প্রোসথেটিক ডিভাইস। মস্তিষ্কে আলোক
সংকেতসমূহ ও সংবেদন প্রেরণে সাহায্য করে ডিভাইসটি। তারবিহীন প্রযুক্তি
ব্যবহার করে একটি সেন্সর বসানো হয় চোখে। চোখে প্রতিস্থাপিত বিশেষ চশমায়
বসানো থাকে অতি ক্ষুদ্র ক্যামেরা। ক্যামেরায় পাঠানো কোন বস্তু থেকে
প্রতিফলিত আলোক সঙ্কেত মস্তিষ্কে প্রেরণ করে সেন্সর। এভাবে মস্তিষ্কে
বস্তুটির গঠনের একটি ছবি তৈরি হয়। গত ১০ই সেপ্টেম্বর ল্যারির চোখে সেন্সর
প্রতিস্থাপন করা হয় এবং ৩ সপ্তাহ পর সেটি সক্রিয় করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই
ল্যারি, তার স্ত্রী ও পরিবারের বাকি সদস্যরা ভীষণ উচ্ছ্বসিত। বিশ্বে
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিপ্লবে আমূল বদলে গেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। আধুনিক
চিকিৎসা ব্যবস্থায় কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ
প্রতিস্থাপন আগের মতো অসাধ্য কোন ঘটনা নয়। বায়োনিক চোখ প্রতিস্থাপনের
মাধ্যমে মানুষ যাতে তার হারানো দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে ফিরে পান, সেজন্য
একের পর এক গবেষণা চলছে। অচিরেই বড় কোন সাফল্য ধরা দিতে পারে বিজ্ঞানীদের
হাতে।
No comments