রায়হানকে মেরে ফেলা হয়েছে -পরিবারের দাবি
ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ
শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম রায়হানের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি
করেছে নিহতের পরিবার। পরিবারে দাবি, রায়হান ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর
থেকেই তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন ছাত্রাবাসের দুই পরিদর্শক;
কিন্তু লজ্জায় সে পরিবারকে জানায়নি। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সিলিং
ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রায়হানের পিতা শাকের উল্লাহ এমন দাবি
করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রায়হান আত্মহত্যা
করেছে। শুক্রবার সকালে ভাটারা থানাধীন ৯৬৩, শাহজাদপুরের খিলবাড়ীটেকের
ক্যামব্রিয়ানের ১৫ নম্বর ছাত্রাবাসে ষষ্ঠ তলায় ৬০৫ নম্বর কক্ষ থেকে আবাসিক
শিক্ষার্থী রায়হানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রায়হান ক্যামব্রিয়ান
স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। এ ঘটনায়
নিহতের পরিবার থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছে।
লাশ উদ্ধারের পর ছাত্রাবাসের পরিদর্শক ওমর ফারুক ও সহ-পরিদর্শক আশরাফ আলীকে
আটক করে পুলিশ।
নিহতের পিতা শাকের উল্লাহ জানান, ‘তিন মাস আগে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে পৌনে ৪ চার লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি হয় রায়হান। তার ভাইয়ের ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মিরপুর এলাকায় থাকেন; কিন্তু রায়হানকে তার ভাইয়ের ছেলের বাড়িতে না রেখে তাকে কলেজের ছাত্রাবাসে রাখা হয়- যেন সে ভাল পড়াশোনা করে। তিনি আরও বলেন, কলেজের ছাত্রাবাসে ওঠার পরেই সে মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকে। একদিন মোবাইল ফোনেও জানিয়েছে সে অনেক চাপের মধ্যে আছে। ছাত্রাবাসের পরিদর্শক ও সহ-পরিদর্শক তাকে অনেক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। কিন্তু আমরা তার কথাকে কোন গুরুত্ব দিইনি এ জন্য যে, কলেজ কর্তৃপক্ষের সঠিক শাসনেই রায়হান মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু তাকে যে এভাবে নির্যাতন করা হবে তা ভাবতেই পারিনি। রায়হানের ব্যাগ থেকে একটি সিগারেট পাওয়া গেছে এমন একটি ঠুনকো অভিযোগে ছাত্রাবাসের পরিদর্শক ওমর ফারুক তার ছেলেকে রাতের বেলায় মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, রায়হান যদি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় কাপড় দিয়ে আত্মহত্যা করে তা হলে তার হাঁটু কিভাবে মেঝেতে ঠেকে থাকে। এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। শাকের উল্লাহ আরও বলেন, আমি সাধারণ এক মাছ ব্যবাসায়ী। রায়হান এসএসসিতে এ-প্লাস পেয়েছিল। তার ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হয়ে গরিব-দুঃখীদের সেবা করবে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় জমি বিক্রি করে তাকে ঢাকায় পড়তে পাঠানো হয়েছিল।
নিহতের চাচাতো ভাই তারেক ইকবাল জানান, রায়হানের পক্ষে কথা বলার কারণে নিশান নামে এক সহপাঠীকে ছাত্রাবাসের পরিদর্শক ওমর ফারুক এমনভাবে থাপ্পড় ও ঘুষি মেরেছে, তার নাক ও গাল দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তাহলেই বোঝা যায় যে, রায়হানকে কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে নিহতের লাশ কক্সবাজারের বাইতুশ শরফ স্কুল অ্যান্ড কলেজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। যোগাযোগ করা হলে ভাটারা থানার ওসি সরওয়ার হোসেন জানান, কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের চাচা আওয়াল হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার মূল আসামি করা হয়েছে ছাত্রাবাসের পরিদর্শক ওমর ফারুককে। পুলিশ তাদের আদালতে পাঠালে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়। তিনি আরও বলেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই কলেজছাত্র আত্মহত্যা করেছে। তবুও আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।
No comments