বিষফোঁড়া সময় হলেই ফেটে বের হয় by বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
এই ক’দিনে সাগরের পানি কতটা গড়ালো জানি না, তবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পানি অনেক গড়িয়েছে। অসংযত বক্তব্যের জন্য সারা জীবনের আওয়ামী লীগ তোমার লতিফ সিদ্দিকীকে ত্যাগ করেছে। তার মন্ত্রিত্ব গেছে, ’৭৫-এ তোমার কবর দেয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদ গেছে, আগামী সপ্তাহে দলীয় সদস্য পদও যাবে। বড় মজার ব্যাপার, ওয়াশিংটনে কী বলেছেন, কিভাবে বলেছেন তার বক্তব্য যেভাবে এসেছে, তাতেই বিরোধীরা বাজিমাত করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ করলে তার যে কোনো বিরোধীর দরকার পড়ে না, আওয়ামী লীগাররাই আওয়ামী লীগারদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট- সেটা এবার লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রেও প্রমাণ হলো। তুমি তো ভালো করেই জানো, ১৫ বছর হয়ে গেল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে একটা দল গঠন করে মনের কথা, বিবেকের কথা বলার চেষ্টা করছি। এত দিন লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী। হজ নিয়ে আপত্তিকর কথা বলার কারণে রাতারাতি তিনি হয়ে গেলেন আমার বড় ভাই। আমার বিপদ চার দিকে। পরিবারের প থেকে তাকে আল্লাহর কাছে মা চাইতে এবং দেশবাসীর অনুভূতিতে আঘাত লাগায় দেশবাসীর কাছেও মাফ চাইতে অনুরোধ করেছিলাম। মনে হলো হজ নিয়ে, রাসূল সা: নিয়ে কথা বলে তিনি কোনো দোষ করেননি; আমি পরিবারের প থেকে মা চেয়ে যেন সব দোষ করে ফেলেছি। ১১ অক্টোবর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে মা প্রার্থনা এবং তাকে আল্লাহর কাছে মা ও দেশবাসীর কাছে মাফ চাইবার কথা বলায় মনে হয় তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন। প্রথমেই বলেছেন, ‘ও বেটা মা চাইবার কে? ওকে কে মা চাইতে বলেছে? ও আমার পরিবারের কে? ও আমার পে মা চাইবার কে?’ আসলে আমি তার পে মা চাইনি, চেয়েছিলাম পরিবারের প থেকে। এটা সত্য যে, তার সাথে আমার এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। আমার বিবেকের নির্দেশেই কাজটি করেছি। তার নামের শেষে যদি সিদ্দিকী থাকে, তাহলে আশপাশে যারা আমরা সিদ্দিকী আছি তারা এবং তাদের পরিবার পারিবারিক ব্যয়ভার বহন না করলেও আমরা একই পরিবার। তিনি বড়; যেহেতু তার ওপর অভিযোগ, সে অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলার ক্ষেত্রে তার পরেই আমার অবস্থান। তিনি বলতেই পারেন, ‘আমি তার পরিবারের কেউ না।’ কিন্তু ‘সিদ্দিকী পরিবারের কেউ না’Ñ এটা বলার তার কি এখতিয়ার আছে? কিন্তু তার পরও তিনি গায়ের জোরে চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন যাচ্ছেন, তা তিনিই জানেন। আবার মাঝে মাঝেই এক মারাত্মক কথা বলে চলেছেন, তার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন, তিনি তাই করবেন। তার কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের অসুবিধা হয়েছে বুঝতে পেরে অনুশোচনা করেছেন; কিন্তু হজের ব্যাপারে কথা বলে লাখ লাখ মুসলমানের মনে আঘাত দিয়েছেন, তা নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই। কেন যে, আমাকে আবার ধর্ম ব্যবসায়ী, ভণ্ড বলে গালাগাল করেছেন বুঝতে পারছি না। তিনি বড়, সারা জীবন গালাগাল করেছেন, এখনো না হয় করলেন; কিন্তু স্ত্রী কষ্ট পায়, ছেলেমেয়েরা মন খারাপ করে। আমার বুকের ধন কুশিমনি যখন তখন বলত, ‘আমার চাচ্চু কোলে নিয়েছে, আদর করেছে, চেয়ারে বসিয়েছে’Ñ আরো কত কী! সেও যখন শোনে তার বাবাকে গালমন্দ করেছে, তখন কেমন যেন তারও মুখটা ভার হয়ে যায়। তাই কিছুটা স্বস্তি বিঘœ তো হয়েছে। জানি আল্লাহই অসুবিধা দেন, তিনিই আবার দূর করেন; কিন্তু তুমিই বলো, ধর্ম ব্যবসায়ী হতে ধর্মের যে জ্ঞান থাকা দরকার, তা কি আমার আছে? ব্যবসায় করলে তো ওয়াজ-নসিহত করে দু-চার পয়সা উপার্জন করতাম। সারা জীবনে পেলাম কই, দিয়েই গেলাম। আমাদের পে ব্যবসায় করা সম্ভব? যেকোনো ব্যবসায় করতে যে চরিত্রের দরকার তা কি কখনো তৈরি করতে পেরেছি? আর যে ক’দিন বাঁচব, এ সময় অমন দুর্লভ শিা অর্জন করার সময় কি দয়াময় প্রভু আমায় দেবেন?
শরীরটা বেশি ভালো না। কেন যেন ৮-৯ বছর ধরে হয় ছোট ঈদে, না হয় কোরবানিতে একবার না একবার শরীর খারাপ হবেই। কেন যে হয়, বুঝতে পারি না। অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ, অধ্যাপক নাজির আহমেদ রঞ্জু, অধ্যাপক খাজা নাজিম উদ্দিন, অধ্যাপক প্রাণগোপাল দত্তÑ এদের পরামর্শ প্রায়ই নিই; কিন্তু তার পরও এমনটা কেন হয় বুঝতে পারি না। এবারো হয়েছে। এখনো অসুস্থতার রেশ কাটেনি। তার ওপর আগে নাই, পিছে নাই বড় ভাইকে নিয়ে টানাটানির উপরি চাপ সবার ওপর পড়েছে। আওয়ামী লীগের লোক তিনি। তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের যা করার তা করবে। এখন দেখি, আওয়ামী লীগের কোনো ব্যাপার নয়, এখন ছোট ভাই হয়ে বড় মাইনকার চিপায় পড়েছি। যতই বলি আওয়ামী লীগের ব্যাপার, তার পরও কেউ কেউ বলে, হাজার হলেও তো ভাই। হাজার কেন, আরো কম হলেও তিনি আমার ভাই, পিতার মতোÑ এটা অস্বীকার করার উপায় কী? কিন্তু তিনি যে বড় নোংরাভাবে অস্বীকার করে বসেছেনÑ তার কী হবে? তাই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে বড় অবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছি ১৫ বছর, তবুও তারা পিছু ছাড়ছে না। এমন একটা মারাত্মক দল, তারা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। চিহ্নিত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে পারে, মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার। ছেলেদেরকে মেয়ে বানাতে পারে কি না জানি না, তবে পুরুষকে ভেড়া বানাতে পারে।
আমাদের এক ভাতিজা চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকেন। তিনিও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর মতো মহাপণ্ডিত। মাঝে মাঝেই তার গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিতরণ করেন। ক’দিন আগে তিনি বলেছেন, ‘শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু নন, তিনি পাকিস্তানবন্ধু। তিনি ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে অত লোক মারা যেত না। তার ব্যর্থতার কারণে বহু প্রাণহানির জন্য তিনিই দায়ী। শেখ মুজিব খুনি। তাকে জাতির পিতা বলা যায় না।’ আরো কত কী যে বলেছেন! তার ওসব খুব একটা মন দিয়ে পড়ি না, তাই মনেও থাকে না। আলোচনা করতে গেলে, লিখতে হলে সমালোচকের কথাও তুলে ধরতে হয় বলে ওসব মনের মধ্যেও আনার চেষ্টা করি না। যেমনÑ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগাররা প্রিয় রাসূল সা: সম্পর্কে এমন সব জঘন্য উক্তি করেছিল, যেগুলো আগে কখনো ভাবনায়ও আসেনি। কী কী তারা বলেছে বা বলেছিল, তা এখানে তুলে দিতে গেলে আবার মনে করতে হয়, লিখতে হয়, তাই সেসব জঘন্য শব্দ মনে করতেও চাই না, ভুলে যেতে চাই; কিন্তু আওয়ামী লীগ এত পারে, নিজের দলের নেতাকর্মীর কুশপুত্তলিকা পুড়তে পারে; কিন্তু এমন জঘন্য সমালোচনার কোনো জবাব দিতে পারে না, দেয়ও না। একবারও তারা জিয়াপুত্রকে বলল না, আপনার পিতা যদি স্বাধীনতার ঘোষক হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু না হয় ব্যর্থ হয়েছিলেন, আপনার পিতা ঘোষণা দিয়ে স্বাধীন করে দিলেই পারতেন। আসলে বিনা ভোটে জবরদখলকারী সরকার অত্যন্ত দুর্বল প্রধান বিরোধী দলের কারণে মতায় টিকে আছে। এটা তারা নিজেরাও বোঝে না, বিরোধী দলও বোঝে না।
ধীরে ধীরে দেশ আরো অশান্ত হয়ে উঠছে। কয়েক বছর পর ছাত্রদলের এক নয়া কমিটি দেয়া হয়েছে। সে কমিটির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ প্রতিবাদ শুরু হয়েছেÑ এর অর্ধেক সরকারের বিরুদ্ধে হলেও হয়তো সরকার নড়েচড়ে উঠত। মজার ব্যাপার, তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রকৃত নেতৃত্বের সৃষ্টি না হলে ঠাণ্ডা ঘর থেকে চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বে এক সময় না এক সময় বিষফোঁড়া ফেটে বেরোবেই বেরোবে। সেটা যে দলেই হোক, বিষফোঁড়া কোনো দল বিচার করে না। সময় হলেই ফেটে বের হয়।
এই ক’দিনে সাগরের পানি কতটা গড়ালো জানি না, তবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পানি অনেক গড়িয়েছে। অসংযত বক্তব্যের জন্য সারা জীবনের আওয়ামী লীগ তোমার লতিফ সিদ্দিকীকে ত্যাগ করেছে। তার মন্ত্রিত্ব গেছে, ’৭৫-এ তোমার কবর দেয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদ গেছে, আগামী সপ্তাহে দলীয় সদস্য পদও যাবে। বড় মজার ব্যাপার, ওয়াশিংটনে কী বলেছেন, কিভাবে বলেছেন তার বক্তব্য যেভাবে এসেছে, তাতেই বিরোধীরা বাজিমাত করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ করলে তার যে কোনো বিরোধীর দরকার পড়ে না, আওয়ামী লীগাররাই আওয়ামী লীগারদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট- সেটা এবার লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রেও প্রমাণ হলো। তুমি তো ভালো করেই জানো, ১৫ বছর হয়ে গেল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে একটা দল গঠন করে মনের কথা, বিবেকের কথা বলার চেষ্টা করছি। এত দিন লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী। হজ নিয়ে আপত্তিকর কথা বলার কারণে রাতারাতি তিনি হয়ে গেলেন আমার বড় ভাই। আমার বিপদ চার দিকে। পরিবারের প থেকে তাকে আল্লাহর কাছে মা চাইতে এবং দেশবাসীর অনুভূতিতে আঘাত লাগায় দেশবাসীর কাছেও মাফ চাইতে অনুরোধ করেছিলাম। মনে হলো হজ নিয়ে, রাসূল সা: নিয়ে কথা বলে তিনি কোনো দোষ করেননি; আমি পরিবারের প থেকে মা চেয়ে যেন সব দোষ করে ফেলেছি। ১১ অক্টোবর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে মা প্রার্থনা এবং তাকে আল্লাহর কাছে মা ও দেশবাসীর কাছে মাফ চাইবার কথা বলায় মনে হয় তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন। প্রথমেই বলেছেন, ‘ও বেটা মা চাইবার কে? ওকে কে মা চাইতে বলেছে? ও আমার পরিবারের কে? ও আমার পে মা চাইবার কে?’ আসলে আমি তার পে মা চাইনি, চেয়েছিলাম পরিবারের প থেকে। এটা সত্য যে, তার সাথে আমার এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। আমার বিবেকের নির্দেশেই কাজটি করেছি। তার নামের শেষে যদি সিদ্দিকী থাকে, তাহলে আশপাশে যারা আমরা সিদ্দিকী আছি তারা এবং তাদের পরিবার পারিবারিক ব্যয়ভার বহন না করলেও আমরা একই পরিবার। তিনি বড়; যেহেতু তার ওপর অভিযোগ, সে অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলার ক্ষেত্রে তার পরেই আমার অবস্থান। তিনি বলতেই পারেন, ‘আমি তার পরিবারের কেউ না।’ কিন্তু ‘সিদ্দিকী পরিবারের কেউ না’Ñ এটা বলার তার কি এখতিয়ার আছে? কিন্তু তার পরও তিনি গায়ের জোরে চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন যাচ্ছেন, তা তিনিই জানেন। আবার মাঝে মাঝেই এক মারাত্মক কথা বলে চলেছেন, তার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন, তিনি তাই করবেন। তার কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের অসুবিধা হয়েছে বুঝতে পেরে অনুশোচনা করেছেন; কিন্তু হজের ব্যাপারে কথা বলে লাখ লাখ মুসলমানের মনে আঘাত দিয়েছেন, তা নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই। কেন যে, আমাকে আবার ধর্ম ব্যবসায়ী, ভণ্ড বলে গালাগাল করেছেন বুঝতে পারছি না। তিনি বড়, সারা জীবন গালাগাল করেছেন, এখনো না হয় করলেন; কিন্তু স্ত্রী কষ্ট পায়, ছেলেমেয়েরা মন খারাপ করে। আমার বুকের ধন কুশিমনি যখন তখন বলত, ‘আমার চাচ্চু কোলে নিয়েছে, আদর করেছে, চেয়ারে বসিয়েছে’Ñ আরো কত কী! সেও যখন শোনে তার বাবাকে গালমন্দ করেছে, তখন কেমন যেন তারও মুখটা ভার হয়ে যায়। তাই কিছুটা স্বস্তি বিঘœ তো হয়েছে। জানি আল্লাহই অসুবিধা দেন, তিনিই আবার দূর করেন; কিন্তু তুমিই বলো, ধর্ম ব্যবসায়ী হতে ধর্মের যে জ্ঞান থাকা দরকার, তা কি আমার আছে? ব্যবসায় করলে তো ওয়াজ-নসিহত করে দু-চার পয়সা উপার্জন করতাম। সারা জীবনে পেলাম কই, দিয়েই গেলাম। আমাদের পে ব্যবসায় করা সম্ভব? যেকোনো ব্যবসায় করতে যে চরিত্রের দরকার তা কি কখনো তৈরি করতে পেরেছি? আর যে ক’দিন বাঁচব, এ সময় অমন দুর্লভ শিা অর্জন করার সময় কি দয়াময় প্রভু আমায় দেবেন?
শরীরটা বেশি ভালো না। কেন যেন ৮-৯ বছর ধরে হয় ছোট ঈদে, না হয় কোরবানিতে একবার না একবার শরীর খারাপ হবেই। কেন যে হয়, বুঝতে পারি না। অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ, অধ্যাপক নাজির আহমেদ রঞ্জু, অধ্যাপক খাজা নাজিম উদ্দিন, অধ্যাপক প্রাণগোপাল দত্তÑ এদের পরামর্শ প্রায়ই নিই; কিন্তু তার পরও এমনটা কেন হয় বুঝতে পারি না। এবারো হয়েছে। এখনো অসুস্থতার রেশ কাটেনি। তার ওপর আগে নাই, পিছে নাই বড় ভাইকে নিয়ে টানাটানির উপরি চাপ সবার ওপর পড়েছে। আওয়ামী লীগের লোক তিনি। তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের যা করার তা করবে। এখন দেখি, আওয়ামী লীগের কোনো ব্যাপার নয়, এখন ছোট ভাই হয়ে বড় মাইনকার চিপায় পড়েছি। যতই বলি আওয়ামী লীগের ব্যাপার, তার পরও কেউ কেউ বলে, হাজার হলেও তো ভাই। হাজার কেন, আরো কম হলেও তিনি আমার ভাই, পিতার মতোÑ এটা অস্বীকার করার উপায় কী? কিন্তু তিনি যে বড় নোংরাভাবে অস্বীকার করে বসেছেনÑ তার কী হবে? তাই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে বড় অবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছি ১৫ বছর, তবুও তারা পিছু ছাড়ছে না। এমন একটা মারাত্মক দল, তারা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। চিহ্নিত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে পারে, মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার। ছেলেদেরকে মেয়ে বানাতে পারে কি না জানি না, তবে পুরুষকে ভেড়া বানাতে পারে।
আমাদের এক ভাতিজা চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকেন। তিনিও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর মতো মহাপণ্ডিত। মাঝে মাঝেই তার গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিতরণ করেন। ক’দিন আগে তিনি বলেছেন, ‘শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু নন, তিনি পাকিস্তানবন্ধু। তিনি ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে অত লোক মারা যেত না। তার ব্যর্থতার কারণে বহু প্রাণহানির জন্য তিনিই দায়ী। শেখ মুজিব খুনি। তাকে জাতির পিতা বলা যায় না।’ আরো কত কী যে বলেছেন! তার ওসব খুব একটা মন দিয়ে পড়ি না, তাই মনেও থাকে না। আলোচনা করতে গেলে, লিখতে হলে সমালোচকের কথাও তুলে ধরতে হয় বলে ওসব মনের মধ্যেও আনার চেষ্টা করি না। যেমনÑ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগাররা প্রিয় রাসূল সা: সম্পর্কে এমন সব জঘন্য উক্তি করেছিল, যেগুলো আগে কখনো ভাবনায়ও আসেনি। কী কী তারা বলেছে বা বলেছিল, তা এখানে তুলে দিতে গেলে আবার মনে করতে হয়, লিখতে হয়, তাই সেসব জঘন্য শব্দ মনে করতেও চাই না, ভুলে যেতে চাই; কিন্তু আওয়ামী লীগ এত পারে, নিজের দলের নেতাকর্মীর কুশপুত্তলিকা পুড়তে পারে; কিন্তু এমন জঘন্য সমালোচনার কোনো জবাব দিতে পারে না, দেয়ও না। একবারও তারা জিয়াপুত্রকে বলল না, আপনার পিতা যদি স্বাধীনতার ঘোষক হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু না হয় ব্যর্থ হয়েছিলেন, আপনার পিতা ঘোষণা দিয়ে স্বাধীন করে দিলেই পারতেন। আসলে বিনা ভোটে জবরদখলকারী সরকার অত্যন্ত দুর্বল প্রধান বিরোধী দলের কারণে মতায় টিকে আছে। এটা তারা নিজেরাও বোঝে না, বিরোধী দলও বোঝে না।
ধীরে ধীরে দেশ আরো অশান্ত হয়ে উঠছে। কয়েক বছর পর ছাত্রদলের এক নয়া কমিটি দেয়া হয়েছে। সে কমিটির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ প্রতিবাদ শুরু হয়েছেÑ এর অর্ধেক সরকারের বিরুদ্ধে হলেও হয়তো সরকার নড়েচড়ে উঠত। মজার ব্যাপার, তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রকৃত নেতৃত্বের সৃষ্টি না হলে ঠাণ্ডা ঘর থেকে চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বে এক সময় না এক সময় বিষফোঁড়া ফেটে বেরোবেই বেরোবে। সেটা যে দলেই হোক, বিষফোঁড়া কোনো দল বিচার করে না। সময় হলেই ফেটে বের হয়।
No comments