আবদুল আলী খুনের মিশনে শরিক ছিল শামীম বাহিনীও by ওয়েছ খছরু
শুধু আলফু বাহিনীই নয়, আবদুল আলীর খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল শামীম বাহিনীও। দুই গ্রুপের সদস্যরা এক সঙ্গে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল আবদুল আলীমের ওপর। আবদুল আলী খুনের ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া তিন জনের স্বীকারোক্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আদালতে প্রথমে আলফু বাহিনীর প্রধান আলফু চেয়ারম্যান খুনের ঘটনা স্বীকার করার পর শামীম বাহিনীর ‘অন্যতম নেতা’ সফিক মেম্বারও দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন সিলেটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ স্বীকারোক্তি দেয়। গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের কাছে জানিয়েছে, খুনের ঘটনার পর আলফুকে রক্ষা করতে যুবলীগ নেতা ও কোয়ারির একাংশের নিয়ন্ত্রক শামীম আহমদ দৌড়ঝাঁপ করে। সে আলফুকে রক্ষা করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছে। স্থানীয় এমপিকে ম্যানেজে ব্যর্থ হয়ে শামীমও ঘটনার পর থেকে আড়ালে রয়েছে। আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে আলফু চেয়ারম্যান জানিয়েছে, কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নিয়েই খুন করা হয়েছে আবদুল আলীকে। আর আলফুকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়া হয় সিলেট নগরীর একটি হোটেলে বসে। ওই বৈঠকে আলফু ও শামীম বাহিনীর নিয়ন্ত্রকরা উপস্থিত ছিল। এই পরিকল্পনায় কোম্পানীগঞ্জের অনেক প্রভাবশালীর মৌন সমর্থন ছিল। সুযোগ পেলেই যে কোন সময় আবদুল আলীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল হত্যার পরিকল্পনাকারীরা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শুক্রবার আলফু মিয়ার সহযোগী আলী হোসেন ও আকদ্দছ ফোন করে আলফু মিয়াকে জানায়, ‘আজই আবদুল আলীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ আছে।’ তখন আলফু বলে, ‘তোমরা যেটা ভাল মনে করো সেটাই করো।’ জবানবন্দিতে আলফু বলে, গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর আলী হোসেন ও আকদ্দছ ফোনে জানায় ‘আবদুল আলীকে খতম করে দিয়েছি। আপনি শুধু সাবধানে থাকবেন।’ এদিকে, নিহত আবদুল আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম গ্রেপ্তার হওয়া আলফু চেয়ারম্যান, কোম্পানীগঞ্জের যুবলীগ নেতা শামীম আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান, আজমলসহ কোম্পানীগঞ্জের ৩১ জন আসামির নাম উল্লেখ করেছেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আবদুল আলী নিহত হওয়ার আগে প্রায়ই বলতেন আলফু চেয়ারম্যান, শামীম, আকদ্দছ আলী, আলী হোসেন, ভুট্টো, আজমল বৈঠক করেছেন। সেখানে আবদুল আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে তিনি জানতে পেরেছিলেন বলে তার স্ত্রী হালিমা বেগমকে বলেছেন। শামীমের সহযোগী সফিক মেম্বারও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সে-ও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সফিউল কবির জানান, আবদুল আলী হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি নিহতের স্ত্রী হালিমা বেগম বাদী হয়ে করেছেন। এর প্রধান আসামি আলফু চেয়ারম্যানসহ ৪ জন আটক রয়েছে। অপর মামলাটি করেছেন পুলিশের এসআই রাশেদুল আলম খান বাদী হয়ে। এ মামলায় আটক রয়েছে ৩জন। সব মিলিয়ে দুই মামলায় ৭জন আটক রয়েছে। নিহত আবদুল আলীর ভাই আবদুল হক জানিয়েছেন, তার ভাইকে খুন করতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ৬ মাস আগেও আবদুল আলীর ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। তখন আবদুল আলী প্রাণে বেঁচে গেলেও দু’জন মারা যান। তিনি জানান, তার ভাই বৈধ ব্যবসা করতেন। এ কারণে অবৈধরা তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছিল সব সময়। অপরদিকে, আবদুল আলীর প্রধান প্রতিপক্ষ কোম্পানীগঞ্জের যুবলীগ নেতা শামীমের সঙ্গে একাধিকবার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। আলফু মিয়ার সঙ্গে ততটা বিরোধ ছিল না। আবদুল আলীর পরিবারের সদস্যরা জানান, আলফু মিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল শামীম। দু’টি গ্রুপের সদস্যরা আবদুল আলীর গতিবিধি লক্ষ্য রাখতো। শুক্রবার আবদুল আলীকে একা পেয়ে তারা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।
No comments