সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করছে by পরিতোষ পাল
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের প্রাথমিক তদন্তে ভারতের জাতীয় ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ) পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর অসংখ্য মডিউলের সন্ধান পেয়েছে। এ ব্যাপারে সমস্ত তথ্য বাংলাদেশের অনুরোধ মেনে তাদের হাতে এক সপ্তাহের মধ্যেই তুলে দেয়া হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তবে রিপোর্ট চূড়ান্ত করার আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান আসিফ ইব্রাহিম মির্জা, এনআইএ ডিরেক্টর শারদকুমার ও এনএসজির প্রধান জয়ন্ত নারায়ণ চৌধুরী গতকাল বর্ধমানে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করার পাশাপাশি তদন্তকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পরে নবান্নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে অজিত দোভাল এনআইএ-র তদন্তে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা চান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূত হিসেবেই মমতার সঙ্গে দোভাল বৈঠক করেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তার সঙ্গে ছিলেন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ স্বরাষ্ট্র সচিব প্রকাশ মিশ্র। তবে এদিন দিল্লি থেকে কলকাতায় আসার আগে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সাংবাদিকদের জানান যে, জঙ্গি সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করছে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অসাধারণ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা একসঙ্গে মিলেই কাজ করছি। তিনি আরও জানান, বর্ধমান কা- তদন্তে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল। তাই এর গুরুতর প্রভাব রয়েছে। এ জন্যই সমন্বিত তদন্তের প্রয়োজন। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে দোভাল রাজ্যের জঙ্গি নেটওয়ার্কের পুরো চিত্রটি তুলে ধরে তার সহযোগিতা চান। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন যে, তার সরকার জঙ্গি-সন্ত্রাস মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সব রকমের সহযোগিতা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বর্ধমান কা-ের তদন্তভার রাজ্য সিআইডির হাত থেকে এনআইএ-র হাতে তুলে দেয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তবে এদিন নবান্নে বৈঠক শেষে বিশেষ স্বরাষ্ট্র সচিব প্রকাশ মিশ্র বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্র একসঙ্গে সন্ত্রাস মোকাবিলায় কাজ করছে। তিনি বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণ একটি সন্ত্রাসের ইস্যু। তাই এই তদন্ত একটি যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে পৌঁছবে। এদিন সকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে আইবি, এনআইএ, এনএসজি’র প্রধানরা দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে তারা খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ স্থলে পৌঁছান। তারা বাড়িটির যে ঘরে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি ঘুরে দেখার পাশাপাশি এটির অবস্থান কি ধরনের জায়গায় তা দেখতে ছাদে উঠেও পরিদর্শন করেন। এমনকি বিস্ফোরণে নিহত ও আহত জঙ্গিদের শিশু সন্তানরা কোথায় থাকতো তারও খোঁজ করেন। এর আগে গত ২৪শে অক্টোবর তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র প্রধান শারদ কুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর পরেই এনআইয়-এর পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় যে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জেএমবি’র সদস্যরাই পশ্চিমবঙ্গে মডিউল তৈরি করে গ্রেনেড তৈরি করতো। সেই গ্রেনেড পাঠানো হতো বাংলাদেশে হামলা চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে। এনআইএ সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে ৫৮টি জঙ্গি মডিউলের সন্ধান পেয়েছেন।
No comments