‘ছাড় না দিলে এই মধ্যস্থতা সফল হবে না’ by রিয়াজুল ইসলাম দীপু
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেছেন, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নানদেজ তারানকো বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
তাঁর এই সফর ইতিবাচক। কিন্তু দুই পক্ষ ছাড় না দিলে এই মধ্যস্থতা সফল হবে না। মানবজমিন অনলাইনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খবর অনুসারে শেখ হাসিনা তাঁর অবস্থানে এখনও অনড় রয়েছেন। অপর দিকে খালিদা জিয়াও কাউকে বিশ্বাস করতে নারাজ। এমন অবস্থা হলে সমঝোতা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই আগে ছাড় দিতে হবে। শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ করেন তাহলে হয়ত বিএনপি নমনীয় হবে। এবং তারা সঙ্কট এড়ানো জন্য কিছুটা ছাড় দিতে রাজি হবে। জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাব হাসিনা-খালেদা কারও জন্যই মেনে নেয়া উচিত হবে না বলে মত দিয়ে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক হবে না। দুই জোট সমঝোতায় এসে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থায় যেতে পারলেই ভাল। সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার প্রশ্নে তিনি বলেন, সমরিক হস্তক্ষেপের কোন সম্ভাবনা নেই। আর কখনোই সামরিক হস্তক্ষেপ রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দিতে পারে না। দীর্ঘ মেয়াদে এই হস্তক্ষেপ দেশকে আরও একটি নতুন সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে।
বিভিন্ন সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও মধ্যস্থতার জন্য উদ্যোগ করেছিল জাতিসংঘ। সেটি সফল হয়নি। ১৯৭১ যুদ্ধের সময়ও মধ্যস্থতার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেটিও সফল হয়নি। ৯৬ সালেও একই অবস্থা দেখতে পেয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সংঘাত ছাড়া আমাদের কোন সরকারকেই নমনীয় হতে দেখা যায় নি। ২০০৬ সালেও আওয়ামী লীগের আবদুল জলিল ও বিএনপি’র আব্দুল মান্নান ভুইয়া সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেছিলেন। ছাড় দেয়ার মনোভাব না থাকায় তা সফল হয়নি। এরকরফা কোন নির্বাচন হলে তা শেখ হাসিনার জন্য আত্মঘাতী হবে। নির্বাচনটি দেশীয় বা আর্ন্তজাতিকভাবে গ্রহনযোগ্য হবে না। নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনাও কম। ইতিমধ্যে বিরোধী দলের দুই সপ্তাহের অবরেধে দেশের কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। ভোগন্তিতে পড়েছে সাধারণ জনগণ। পঞ্চদশ সংশোধনীকে চলমান সংকটের মূল কারণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে বলা হয়েছিল আগামী দুটি নির্বাচন কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা তা মেনে নিলে দেশ এতটা সংঘাতে যেত না। আসলে রাষ্ট্রের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা ক্ষমতাকেই বড় করে দেখছেন, এটাই মূল সমস্যা। হুসেই মুহম্মদ এরশাদের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার অবস্থান এখনও প্রশংসনীয় হলেও নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তিনিও এক সময় একতরফা নির্বাচন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যাক তার অবস্থান পরিবর্তন হয় কি না।
No comments