আজও বৈঠক চলছে রওশনের বাসায়
জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় আজ শনিবারও সকাল থেকে বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বৈঠক করছেন।
বৈঠকে অংশ নিয়েছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, লিলি হাসনাত প্রমুখ। তবে গতকালের মতো আজও বৈঠক নিয়ে মুখ খুলছেন না তাঁরা।
এদিকে, পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ গ্রেপ্তার হয়েছেন, না আটক আছেন, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের ওপর ক্ষিপ্ত। গতকাল জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে আজ শনিবার জাতীয় পার্টি সংবাদ সম্মেলন করে অবস্থান পরিষ্কার করবে। তবে বার বার চেষ্টা করেও মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না সাংবাদিকেরা। দলের শীর্ষ নেতারাও সংবাদ সম্মেলন নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।
রওশনের বাসায় গতকাল দিনভর তত্পরতা
এদিকে গতকাল দিনভর রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ দলের একাংশ দফায় দফায় বৈঠক করে। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে তাঁর বাসায় যান আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তাঁরা প্রায় ৪০ মিনিট সেখানে ছিলেন। এ সময় হঠাত্ রওশনের বাসার সামনে র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতি বেড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার চলে যায়। তোফায়েল আহমেদ ওই বাসা থেকে বেরিয়ে সিএমএইচে গিয়ে এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন বলেও রাতে খবর বের হয়।
রওশনসহ পাঁচ মন্ত্রী-উপদেষ্টা নির্বাচনে
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৪৮ আসনে জাপার প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এরপর ৩ ডিসেম্বর এরশাদ আকস্মিক নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এবং পরদিন দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র তুলে নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদসহ সরকারে থাকা জাপার পাঁচজন মন্ত্রী-উপদেষ্টা গতকাল শেষ দিনেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এর মধ্য দিয়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একটি অংশের নির্বাচনে থেকে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু আসনে গতকাল শেষ দিনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে জাপাকে আসন ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদ (ময়মনসিংহ-৪), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত), জিয়াউদ্দিন আহমেদ ববলু (চট্টগ্রাম-৯), মুজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্জ-৩), সালমা ইসলাম (ঢাকা-১) অন্যতম।
তবে জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও তাঁর স্ত্রী রত্না আমিন হাওলাদার গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আর এরশাদ এবং জি এম কাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করলেও তা গৃহীত হয়নি। আর জাপার সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় বলছে, তাঁর মনোনয়ন বহাল আছে।
এরশাদকে নির্বাচনে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে সরকার বিকল্প হিসেবে রওশন-আনিস-বাবলুর নেতৃত্বে জাপার একটি অংশকে নির্বাচনে রাখার কৌশল নেয়। তাঁদের সঙ্গে সরকার ১০ দিন ধরে নানা দেনদরবার ও গোপন সমঝোতা করে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়।
এরপর গত বৃহস্পতিবার এরশাদ নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কাউকে বরাদ্দ না দিতে অনুরোধ জানান। এর ১২ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে এরশাদকে তাঁর বাসা থেকে ‘আটক’ করে সিএমএইচে নেওয়া হয়।
No comments