সিএমএইচ থেকে বিশেষ বার্তায় এইচ এম এরশাদ : আমি অসুস্থ নই, গ্রেফতারের জন্য আটকে রাখা হয়েছে
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমাকে গ্রেফতারের জন্য এখানে আটকে রাখা হয়েছে।’
গতকাল সন্ধ্যায় সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) থেকে তার বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জারের মাধ্যমে বিশেষ বার্তায় তিনি এ তথ্য জানান। একতরফা নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এইচ এম এরশাদকে তার বাসা থেকে নিয়ে যায়। এরপর তারা তাকে সিএমএইচে ভর্তি করেন।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, এখন এরশাদকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আর তার অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদকে একতরফা নির্বাচনের সহযাত্রী করতে সব ধরনের তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে গতকাল
দিনভর রওশনের গুলশানের বাসভবনে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় রওশনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রওশনকে ৪৭টি আসন দিতে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ ব্যাপারে পূর্ণ নিশ্চয়তার অপেক্ষায় রয়েছেন রওশন।
তবে গতকাল সন্ধ্যায় পাঠানো বিশেষ বার্তায় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘোষিত তফসিলে জাতীয় পার্টি আসন্ন জতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবেন না বলে আবারো খোলাসা করে জানিয়েছেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে চিকিত্সার নামে আটকে রাখার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মীকে ধৈর্য ধরার এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিচ্ছি। আমি কাউকে আমার মুখপাত্র নিযুক্ত করিনি। একজন নেতা (মুজিবুল হক চুন্নু) পার্টির মুখপাত্র হিসেবে বিবৃতি দিচ্ছেন বলে শুনেছি। তিনি যদি এটা করে থাকেন, তাহলে এর দায়িত্বও তার নিজের। এবং এটি তার নিজস্ব মতামত হিসেবে বিবেচিত হবে। পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী যে কোনো কাজের জন্য আমি যে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।’
এরশাদ বলেন, ‘পার্টির মহাসচিব রুুহুল আমিন হাওলাদার ও আমার ভাই এবং পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের আমার কাছ থেকে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেবেন। ববির মাধ্যমে আমি গণমাধ্যমকে আমার বক্তব্য জানাবো। অন্য কারো বক্তব্য, বিবৃতি এবং প্রচারণায় আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় পার্টি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এজন্য ইতোমধ্যেই আমাদের দলের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থেই এটা দরকার বলে তিনি মনে করছেন।
এদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ছাড়া জাতীয় পার্টির বিকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব এবিএম রুুহুল আমিন হাওলাদার।
গতকাল সন্ধ্যায় বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এইচ এম এরশাদ যতদিন আছেন ততদিন দলে বিকল্প চেয়ারম্যান মেনে নেয়া হবে না। এরশাদই চেয়ারম্যান থাকবেন।’
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে এরশাদের সিদ্ধান্তে আমরা অটল। দেশ ও জাতির স্বার্থে সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় এরশাদ এখন সিএমএইচে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেব। রাতে একটি বৈঠক শেষে কর্মসূচি সম্পর্কে জানানো হবে।’ মনোনয়ন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২৯০টি আসনে জাতীয় পার্টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল। দলের সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। রাতে জানানো হবে কত আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়েছে।’ এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব পটুয়াখালী-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এর আগে গতকাল দুপুরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের অভিযোগ করে বলেছেন, এরশাদকে অস্বাভাবিকভাবে হাসপাতাল নেয়া হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে হাওলাদার কমপ্লেক্সে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ব্রিফিং চলাকালে উপস্থিত নেতাকর্মীরা রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরকারের দালাল দালাল বলে স্লোগান দিতে থাকে।
সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদকে স্বাভাবিকভাবে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। তিনি জানান, নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে এরশাদ তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তিনি (এরশাদ) আজকের (গতকাল) মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও সতর্ক করে দেন। রওশন এরশাদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কি-না, জানতে চাইলে কাদের বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এখনো জীবিত এবং দেশেই আছেন। কাজেই কাউকে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার সম্ভাবনা নেই। চেয়ারম্যান দেশের বাইরে গেলে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে কি-না, সেটি পরের ব্যাপার।
No comments