গণবিশ্ববিদ্যালয় : এক অনন্য বিদ্যানিকেতন by মনসুর মুসা
মুক্তবুদ্ধি
ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কোলাহলপূর্ণ ঢাকা শহরের
উপকণ্ঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে স্নিগ্ধ,
মনোরম গ্রামীণ পরিবেশে গণবিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের
সময় মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য তাঁবু গেড়ে যে
প্রতিষ্ঠানের শুভ সংগ্রামী যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা-ই পরবর্তীকালে
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সমন্বিত না হলে
জাতীয় জীবনে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি করা যায় না। এ উপলব্ধি থেকেই
গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক গণবিশ্ববিদ্যালয় নামে এই শিক্ষানিকেতন
প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
লক্ষ্য : জ্ঞানভিত্তিক গণসমাজ গড়ে তোলার মৌলিক লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষার্থীদের দ্বিভাষিক যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে বাংলা ভাষা ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান করা হয়। শুধু ভাষা সাহিত্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়, তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ফলিত বিজ্ঞান, কম্পিউটার প্রযুক্তি, ওষুধ ও চিকিৎসা প্রযুক্তিতে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তাদের জন্যও এ বিষয়গুলো অবশ্যই পাঠ্য। দর্শন, নৈতিকতা ও পরিসংখ্যান- এ বিষয়গুলোর পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা সচেতনভাবে অনুশীলন করা হয়। যে কোনো বিভাগের শিক্ষার্থী যদি সঙ্গীতের প্রেষণা নিয়ে ভর্তি হয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুবিধার্থে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ করে সঙ্গীত বিভাগের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরে থাক, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, অন্যত্র নেই। আরবীয় সভ্যতার পরিচয় জানার জন্য আরবি শিক্ষারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রাচ্যবিদ্যাকে পুনর্জাগরণের জন্য সংস্কৃতি পাঠেরও ব্যবস্থা আছে।
বিশ্বায়ন একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক বাস্তবতা হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত আছে। রাজনীতি ও জনপ্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য সংবলিত বিভিন্ন কোর্স আছে, যা ষাণ্মাসিক শিক্ষাক্রমে কোনো না কোনো কোর্সে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন গণবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে, সে জন্য শিক্ষাক্রমের মধ্যে গ্রামে অবস্থান করে গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জ্ঞান ও সেবা গ্রহণ এবং বিতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাঠ্যক্রম : গণবিশ্ববিদ্যালয় মূলত স্বাস্থ্যবিদ্যা, ওষুধ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈবপদার্থ বিজ্ঞানের প্রসারের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। আইন বিদ্যা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সমাজ জীবনের অপরিহার্য বিষয়। এ দুটো বিষয়ও শিক্ষাক্রমে যথাযথ গুরুত্বসহকারে পঠন-পাঠন করা হয়। পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গতিশীল কর্ম। উন্নয়নশীলতাকে ধারণ করার জন্য রয়েছে শিক্ষকের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ব্যবহারের অপূর্ব সুযোগ। এ বিশ্ববিদ্যালয় গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, একটি অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিকের ব্যাখ্যা অর্থাৎ আমরা ধূমপান করি না- এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোরভাবে মান্য করা হয়। এখানে কেউ ধূমপান করে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ না।
সংশ্লিষ্টতা ও সহযোগিতা : এই পরিকল্পনার বিভিন্ন পর্যায়ে গণবিশ্ববিদ্যালয় আশীর্বাদ লাভ করেছে দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা মানুষের। এ তালিকায় আছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইংরেজি বাংলা অভিধানের সংকলক অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, ড. বিনায়ক সেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমেদ, মাহবু উর রহমান খান, ড. নওজেশ আহমেদ, অধ্যাপক মোঃ ইব্রাহিম, নুরুল কাদির খান, ড. পারভীন হাসান, ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ, সমাজকর্মী শিরিন হক, অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, ড. আহমদ কামাল, ড. ফেরদৌস আজিম, ড. ফ্লোরা মজিদ, ড. সৈয়দা রওশন কাদির খান। প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, শিক্ষাব্রতী, ভাষাসৈনিক ও শিশুসাহিত্যিক হালিমা খাতুন, কথাশিল্পী ও অধ্যক্ষ হোসনে আরা শাহেদ, শিক্ষাব্রতী জাহেদা খানম, মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, উপাচার্য আবুল কাসেম চৌধুরী, নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসসহ আরও অনেকেই।
গবেষণার সুযোগ : গবেষণা একজন শিক্ষককে পড়–য়া থেকে শিক্ষকে রূপান্তর করে। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে গণবিশ্ববিদ্যালয় সচেতন। শিক্ষকদের গবেষণার জন্য অধ্যয়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরও এ ধরনের প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান, বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় রাসায়নিক গবেষণাগার আছে, তেমনি আছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য কম্পিউটার ল্যাবরেটরি। ভাষাশিক্ষার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ভাষা গবেষণাগারের।
গণবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোচিং বিদ্যালয় কিংবা তকমা বিতরণে বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষ যাতে শিক্ষার সুযোগ পেয়ে সুদক্ষ মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। পাঠ অভ্যাস গড়া : গ্রামীণ পরিবেশে নিত্য নতুন পাঠ্যবইয়ের অভাব থাকায় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একটি ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার সপ্তাহে একদিন (সোমবার) গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বই সুলভ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে গণবিশ্ববিদ্যালয়কে সহায়তা করে যাচ্ছেন। গণবিশ্ববিদ্যালয় দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য দরিদ্রদের প্রতি বেশি মনোযোগী। তবে এর মানে এই নয় যে, এখানে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত কিংবা বিদেশীদের স্থান নেই। তাদের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে।
মিথস্ক্রিয়া ও জ্ঞানসৃষ্টি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজধানী থেকে বহুদূরে শান্তি নিকেতনে নির্মাণ করেছিলেন একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় যার নাম বিশ্বভারতী। সেই দৃষ্টান্তের সূত্র ধরে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা আসে, অপরদিকে বিশ্বখ্যাত পণ্ডিতেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন। তাদের মধ্যে অর্থপূর্ণ সংলাপ ও মিথস্ক্রিয়া হয়, যাতে করে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান-সন্ততিরা আধুনিক জীবনের মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞান ভাবনা ও মহৎ মানুষের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।
আবহমান গ্রামীণ ঐতিহ্য : গণবিশ্ববিদ্যালয় গ্রামভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবেশী গ্রামের বিত্তবান মানুষেরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করে তাদের বাসস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব অর্থায়নেও ছাত্রছাত্রী নিবাস তৈরি করেছে। সম্প্রসারণশীল বিশ্ববিদ্যালয় : গণবিশ্ববিদ্যালয় একটি দ্রুত সম্প্রসারণশীল বিশ্ববিদ্যালয়। পড়াশোনার জন্য আছে একটি বিশেষায়িত গ্রন্থাগার, খেলার জন্য আছে বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ। অদূর ভবিষ্যতে আধুনিক জিমনেশিয়াম করার চিন্তা আছে কর্তৃপক্ষের। গণবিশ্ববিদ্যালয় দারিদ্র্য দূরীকরণের অঙ্গীকারবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান। সে জন্য এ বছর গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের কন্যা সন্তানের জন্য ৩০০ বৃত্তির প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে করে গ্রামীণ মেধাবী ছাত্রীরা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মেয়েরা উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে।
গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ যাতে একবিংশ শতাব্দীর মানুষ হিসেবে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে পারে এটাই গণবিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
অধ্যাপক মনসুর মুসা : সাবেক অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
লক্ষ্য : জ্ঞানভিত্তিক গণসমাজ গড়ে তোলার মৌলিক লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষার্থীদের দ্বিভাষিক যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে বাংলা ভাষা ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান করা হয়। শুধু ভাষা সাহিত্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়, তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ফলিত বিজ্ঞান, কম্পিউটার প্রযুক্তি, ওষুধ ও চিকিৎসা প্রযুক্তিতে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তাদের জন্যও এ বিষয়গুলো অবশ্যই পাঠ্য। দর্শন, নৈতিকতা ও পরিসংখ্যান- এ বিষয়গুলোর পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা সচেতনভাবে অনুশীলন করা হয়। যে কোনো বিভাগের শিক্ষার্থী যদি সঙ্গীতের প্রেষণা নিয়ে ভর্তি হয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুবিধার্থে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ করে সঙ্গীত বিভাগের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরে থাক, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, অন্যত্র নেই। আরবীয় সভ্যতার পরিচয় জানার জন্য আরবি শিক্ষারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রাচ্যবিদ্যাকে পুনর্জাগরণের জন্য সংস্কৃতি পাঠেরও ব্যবস্থা আছে।
বিশ্বায়ন একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক বাস্তবতা হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত আছে। রাজনীতি ও জনপ্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য সংবলিত বিভিন্ন কোর্স আছে, যা ষাণ্মাসিক শিক্ষাক্রমে কোনো না কোনো কোর্সে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন গণবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে, সে জন্য শিক্ষাক্রমের মধ্যে গ্রামে অবস্থান করে গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জ্ঞান ও সেবা গ্রহণ এবং বিতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাঠ্যক্রম : গণবিশ্ববিদ্যালয় মূলত স্বাস্থ্যবিদ্যা, ওষুধ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈবপদার্থ বিজ্ঞানের প্রসারের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। আইন বিদ্যা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সমাজ জীবনের অপরিহার্য বিষয়। এ দুটো বিষয়ও শিক্ষাক্রমে যথাযথ গুরুত্বসহকারে পঠন-পাঠন করা হয়। পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গতিশীল কর্ম। উন্নয়নশীলতাকে ধারণ করার জন্য রয়েছে শিক্ষকের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ব্যবহারের অপূর্ব সুযোগ। এ বিশ্ববিদ্যালয় গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, একটি অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিকের ব্যাখ্যা অর্থাৎ আমরা ধূমপান করি না- এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোরভাবে মান্য করা হয়। এখানে কেউ ধূমপান করে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ না।
সংশ্লিষ্টতা ও সহযোগিতা : এই পরিকল্পনার বিভিন্ন পর্যায়ে গণবিশ্ববিদ্যালয় আশীর্বাদ লাভ করেছে দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা মানুষের। এ তালিকায় আছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইংরেজি বাংলা অভিধানের সংকলক অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, ড. বিনায়ক সেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমেদ, মাহবু উর রহমান খান, ড. নওজেশ আহমেদ, অধ্যাপক মোঃ ইব্রাহিম, নুরুল কাদির খান, ড. পারভীন হাসান, ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ, সমাজকর্মী শিরিন হক, অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, ড. আহমদ কামাল, ড. ফেরদৌস আজিম, ড. ফ্লোরা মজিদ, ড. সৈয়দা রওশন কাদির খান। প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, শিক্ষাব্রতী, ভাষাসৈনিক ও শিশুসাহিত্যিক হালিমা খাতুন, কথাশিল্পী ও অধ্যক্ষ হোসনে আরা শাহেদ, শিক্ষাব্রতী জাহেদা খানম, মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, উপাচার্য আবুল কাসেম চৌধুরী, নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসসহ আরও অনেকেই।
গবেষণার সুযোগ : গবেষণা একজন শিক্ষককে পড়–য়া থেকে শিক্ষকে রূপান্তর করে। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে গণবিশ্ববিদ্যালয় সচেতন। শিক্ষকদের গবেষণার জন্য অধ্যয়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরও এ ধরনের প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান, বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় রাসায়নিক গবেষণাগার আছে, তেমনি আছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য কম্পিউটার ল্যাবরেটরি। ভাষাশিক্ষার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ভাষা গবেষণাগারের।
গণবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোচিং বিদ্যালয় কিংবা তকমা বিতরণে বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষ যাতে শিক্ষার সুযোগ পেয়ে সুদক্ষ মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। পাঠ অভ্যাস গড়া : গ্রামীণ পরিবেশে নিত্য নতুন পাঠ্যবইয়ের অভাব থাকায় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একটি ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার সপ্তাহে একদিন (সোমবার) গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বই সুলভ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে গণবিশ্ববিদ্যালয়কে সহায়তা করে যাচ্ছেন। গণবিশ্ববিদ্যালয় দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য দরিদ্রদের প্রতি বেশি মনোযোগী। তবে এর মানে এই নয় যে, এখানে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত কিংবা বিদেশীদের স্থান নেই। তাদের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে।
মিথস্ক্রিয়া ও জ্ঞানসৃষ্টি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজধানী থেকে বহুদূরে শান্তি নিকেতনে নির্মাণ করেছিলেন একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় যার নাম বিশ্বভারতী। সেই দৃষ্টান্তের সূত্র ধরে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা আসে, অপরদিকে বিশ্বখ্যাত পণ্ডিতেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন। তাদের মধ্যে অর্থপূর্ণ সংলাপ ও মিথস্ক্রিয়া হয়, যাতে করে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান-সন্ততিরা আধুনিক জীবনের মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞান ভাবনা ও মহৎ মানুষের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।
আবহমান গ্রামীণ ঐতিহ্য : গণবিশ্ববিদ্যালয় গ্রামভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবেশী গ্রামের বিত্তবান মানুষেরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করে তাদের বাসস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব অর্থায়নেও ছাত্রছাত্রী নিবাস তৈরি করেছে। সম্প্রসারণশীল বিশ্ববিদ্যালয় : গণবিশ্ববিদ্যালয় একটি দ্রুত সম্প্রসারণশীল বিশ্ববিদ্যালয়। পড়াশোনার জন্য আছে একটি বিশেষায়িত গ্রন্থাগার, খেলার জন্য আছে বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ। অদূর ভবিষ্যতে আধুনিক জিমনেশিয়াম করার চিন্তা আছে কর্তৃপক্ষের। গণবিশ্ববিদ্যালয় দারিদ্র্য দূরীকরণের অঙ্গীকারবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান। সে জন্য এ বছর গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের কন্যা সন্তানের জন্য ৩০০ বৃত্তির প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে করে গ্রামীণ মেধাবী ছাত্রীরা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মেয়েরা উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে।
গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ যাতে একবিংশ শতাব্দীর মানুষ হিসেবে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে পারে এটাই গণবিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
অধ্যাপক মনসুর মুসা : সাবেক অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments