উড়ছেন মেহজাবীন by মোশাররফ রুমী
মেহজাবীন ভেবেছিলেন এবার হয়তো ঈদটা বাবার
সঙ্গে করা হবে না। কারণ ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত প্রবাসে থাকা বাবা
আসেননি। কিন্তু ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখেন সেই প্রিয় মুখটি। সন্তানদের
সঙ্গেই ঈদের সময়টুকু কাটাতে দেশে চলে এসেছেন মেহজাবীনের বাবা।
বাবাকে পেয়েই যেন ঈদের পরিপূর্ণতা চলে আসে তার। এবার ঈদে
মেহজাবীন কোন ঈদি না পেলেও ছোট ভাইবোনদের ঈদি দিয়েছেন। বাবার কাছ থেকে ঈদি
নেয়ার কথা থাকলেও ঈদের দিন একটি রেডিও অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়েছিল বলে তাকে
দ্রুত তৈরি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়। তাই ঈদি নিতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু ঈদি না পেলেও সে দুঃখ মেহজাবীন ভুলে গিয়েছিলেন অন্যরকম ঈদ আনন্দ
এবার মুঠোবুন্দি করেছেন বলে। সে আনন্দ তার ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক। এবারের ঈদে
প্রচার হওয়া তার অভিনীত নাটক-টেলিফিল্ম সব ক’টিই ব্যাপক প্রশংসিত হয়। আর সে
সূত্রে প্রশংসার জোরালো হাওয়া এসে লাগে মেহজাবীনের গায়েও। তাই তো সুখের
পাখা লাগিয়ে এখন ভাললাগার আকাশে উড়ছেন তিনি। এবারের ঈদে মেহজাবীন অভিনীত
বেশ ক’টি নাটক প্রচার হয়েছে। এসবের মধ্যে দেশ টিভিতে প্রচারিত ‘বাঘবন্দী
দ্য মাইন্ড গেম’ নাটকটিতে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন তিনি। এ
নাটকে মেহজাবীন অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূরের বিপরীতে। কেমন লেগেছিল
নূরের বিপরীতে অভিনয় করতে? মেহজাবীন বলেন, সত্যি বলতে কি, অন্য অনেকের মতো
আমার মধ্যে নার্ভাস বিষয়টি কাজ করেনি। কারণ নূর আঙ্কেল আমাকে অনেক সহযোগিতা
করেছেন। তাই আমি সাবলীলভাবেই অভিনয় করতে পেরেছি। এ নাটকটি ছাড়া মেহজাবীন
মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত সোহান খান রচিত ও সঞ্জয় বড়ুয়া পরিচালিত ‘জামাই
ধরা’ নাটকে ও চ্যানেল আইতে প্রচারিত নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘চেনা হয়ে
যায় অচেনা’ টেলিফিল্মটিতে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। ‘জামাই ধরা’
নাটকে তিনি চিত্রনায়ক আমিন খানের বিপরীতে এবং ‘চেনা হয়ে যায় অচেনা’
টেলিফিল্মে তিনি সম্রাটের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। তবে চ্যানেল আইতে
প্রচারিত ইরানী বিশ্বাসের রচনা ও পরিচালনায় ‘তবুও প্রতীক্ষায়’ নাটকটিতে
মেহজাবীনের অনবদ্য অভিনয় দর্শকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। মেহজাবীন তার
আজকের এ বিশাল সাফল্যের পেছনে তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং লাক্স-চ্যানেল
আইয়ের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বারবার। সেই সঙ্গে তিনি
শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তার প্রয়াত নানি জাহানারা বেগমকে। ২০১১ সালে
মেহজাবীন তার নানিকে হারিয়েছেন। দাদা সিরাজউদ্দৌলা, দাদি আয়েশা বেগম এবং
নানা সাদেক চৌধুরীকেও ভীষণ মিস করেন তিনি। তারা তিনজন আজ প্রয়াত।
মেহজাবীনের ‘মেহজাবীন’ নামটি রেখেছেন তার মা। পরিবারের সবার কাছে তিনি
পরিচিত জেনিফার নামে। আর এ নামটিই একসময় তার ভীষণ ভাল লাগলেও এখন মেহজাবীন
নামটিই যেন শুনতে তার ভাল লাগে। তার মাও যেন এ নিয়ে প্রচণ্ড খুশি। ছোটবেলা
মেহজাবীনের কেটেছে বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বাইরে। ওমানের ‘সোহার’ ও
‘মাসকাট’ স্কুলে পড়াশোনার পর তিনি পড়াশোনা করেছেন দুবাইয়ের একটি স্কুলে।
এখন তিনি দেশে পড়ছেন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে।
কাজের চাপে মেহজাবীন এখন পড়াশোনায় সেভাবে সময় দিতে পারছেন না। কিন্তু
পড়াশোনাটা তিনি শেষ করতে চান। লাক্সের অনেকেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে নিজেকে
জড়িয়ে নিলেও মেহজাবীন এখনও ছবিতে কাজ করা শুরু করেননি। মোস্তফা সরয়ার
ফারুকীর পরিচালনায় তিনি শুরু করবেন ‘ডুঁবো শহর’ ছবির কাজ। এ ছবিতে তিনি
অভিনয় করবেন নূশরাত ইমরোজ তিশার সঙ্গে। মেহজাবীন বলেন, অনেক দেরিতে হলেও
চলচ্চিত্রে কাজ করতে যাচ্ছি। তাই ছবিটি নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার। আমি আমার
সাধ্যমতো ভালভাবে নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করব। এদিকে এবারের ঈদে
নাটক-টেলিফিল্মের উজ্জ্বল উপস্থিতির পাশাপাশি মেহজাবীনকে ব্যাপক আলোচনায়
এনেছে তার পারফরম করা লাক্স এবং বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন দু’টি। অন্যদিকে ঈদের
পর রকু রহমানের নির্দেশনায় সজলের বিপরীতে একটি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে
আবারও কাজে ফিরেছেন মেহজাবীন।
No comments