রোমেনার বিয়ে by মহীবুল আজিজ
রোমেনার বিয়ে। শুনে মুন্সিপাড়ার লোকেরা হতভম্ব। তারা বলে, কালিয়া বেইন্নার মাইয়ারে বিয়া দি ফ্যালাদ্দে চও! রোমেনার হয়তো ঠিক আগের দিন সকালেই জন্ম হয়নি। সে আইএ পড়ে এবং সামনের বছর পরীক্ষা দিলে তার বিএ পড়ার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। আর আইএ, বিএ কিছু না পড়লেও তার বিয়ে কোথাও ঠেকে থাকার মতো ব্যাপার নয়। যারা তার বিয়ের কথা শুনে অবাক হয়, মাত্র কদিন আগে সেই তারাই মন্তব্য করেছিল, এরিম্মা আগুন’র ডইল্লা মাইয়ারে বিয়া গরিবার লাই পক্কল জান দি ফ্যালাইব! তাদের সেই যুবকদের কথা মনে পড়ে যারা রোমেনাকে বিয়ে না করতে চেয়েও প্রায় মরতে বসেছিল। একজন গেটে দাঁড়ানো রোমেনাকে অপলক দেখতে গিয়ে তার হোন্ডা না ইয়ামাহা নিয়ে সরাসরি নালায়। এক শিশি-বোতলঅলা কলেজফেরত রিকশা থেকে নামা রোমেনাকে স্থির দৃষ্টিতে গাঁথতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে তার শিশি-বোতলের সম্ভার ভেঙে একশেষ। এক রংমিস্ত্রি কলেজগামী রোমেনাকে একদৃষ্টিতে দেখতে গিয়ে শেষে মই থেকে পিছলে পড়ে কোমর ভেঙে শয্যাশায়ী।রোমেনার বিয়েকে কেন্দ্র করে মুন্সিপাড়ার লোকেরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এক পক্ষের ধারণা, রোমেনার বাবা চাইলে আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে পারত। মেয়ের বিয়ের জন্য তার কাঠের ব্যবসায় একটুও ক্ষতি হচ্ছিল না। সে কেন অন্তত মেয়েটার আইএ পর্যন্ত অপেক্ষা করে না, তা নিয়ে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। অন্য পক্ষের ধারণা, হয়তো রোমেনার বিয়ের ঘটনাটির জন্য সে নিজেই দায়ী। ম্যাট্রিক পাস করতে না-করতেই এবং আইএর দ্বিতীয় বর্ষে উঠতে না-উঠতেই তিনজন যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্কের গল্প ছড়িয়ে পড়ে নানা দিকে। তারা একে একে আসে এবং চলে যায়; কিন্তু রোমেনার জীবনীর উপাদান হিসেবে তারা থেকেই যায়। পাড়ার লোকেরা অবশ্য যুবকদের সঙ্গে রোমেনার সম্পর্কবিপর্যয়ের জন্য যুবকদেরই দায়ী করে। কারও কারও ধারণা, এ ক্ষেত্রে পাড়ার লোকেরা খানিকটা পক্ষপাতদুষ্ট হয়েই রোমেনার পক্ষ নেয়। তারা অন্য পাড়ার যুবকদের নীতিগতভাবেই সমর্থন জোগায় না। কারণ, রোমেনা তাদের পাড়ারই কন্যা। এ রকম সম্পর্কবিপর্যয়ের ঘটনা-পরম্পরায় তারা রোমেনার জন্য একটুও উদ্বিগ্ন হয় না—হয় যুবকদের জন্য। একে একে যুবকেরা এভাবে রোমেনাশূন্য হয়ে পড়লে তাদের মধ্যে নেমে আসবে প্রবল হতাশা এবং তখন তারা বেপথু হয়ে তাদের নিজ নিজ জীবনের ঠিকানাই হারিয়ে ফেলবে। তখন তারা রোমেনা বা তার পরিবারের কারও নয়, বস্তুত দেশ ও জাতির সমূহ বোঝায় পরিণত হবে। ফলে রোমেনার বিবাহ-সংস্থিতি তাদের জন্য অসংখ্য যুবকের রক্ষাকবচ হয়ে দেখা দেয়। তবে তারা খানিকটা করুণার বশেই ভাবে যে রোমেনার বাবা চাইলে সম্পর্কবিপর্যয়ের শিকার সেই তিনজন যুবকের মধ্য থেকে একজনকে কি রোমেনার বর হিসেবে পছন্দ করতে পারত না?
শুনে অন্য পক্ষ বলে, প’অল নি কনো! ওরা তো চ্যাংড়া ছেলে, বিয়েরই কী বোঝে, আর সংসারেরই বা কী বোঝে, বেকার যুবকেরা প্রেমিক হিসেবে যত ভালোই হোক না কেন, স্বামী হিসেবে ঠিক ততটাই অযোগ্য। বিয়ে করে তারা খাওয়াবে কী রোমেনাকে! বিয়ে বা সংসারের রোমেনাই বা কী বোঝে! যখন সে জানতে পেল যে তার বিয়ে মানে তার জন্য এমন একজন লোককে ঠিক করা হয়েছে, যার সঙ্গে তাকে তার বাকি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে; শুনে খুব মন খারাপ হয় রোমেনার। তখন তার সেই তিন যুবকের কথা মনে পড়ে, যারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে তার স্বামী হওয়ার পক্ষে উপযুক্ত ছিল। বিশেষ করে একটি যুবকের কথা তার খুব মনে পড়তে থাকে—যার সঙ্গে অনায়াসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায় ক্লান্তিহীন। রোমেনার সখী তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে সেই যুবকটি সারা জীবন ধরে তার গল্প শুনলেও ক্লান্ত হওয়ার নয়। কিন্তু চাইলেই কি আর তাকে বিয়ে করা যায়! রোমেনা ভালো করে বোঝেও না যে কী করে বিয়ে করতে হয়। সে জানে যে তাকে ভালো করে সেজেগুজে মঞ্চে গিয়ে বসতে হবে। তার ছোট বোন এবং চাচাতো ভাইবোনেরা বলে যে বিয়েতে তারা গেট ধরবে এবং কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা না দিলে তারা বরকে ঢুকতে দেবে না। রোমেনা অনুনয়-বিনয় করে, হুনিয়েরে পোয়া যুদি যা গই! হাসতে হাসতে খুন রোমেনার সখীরা, এরিম্মা আগুন’র ডইল্লা মাইয়া ফেলি বর যাইব কডে! আইচ্ছা, আঁরা আরও এক হাজার টেঁয়া ছারি দিলাম। ওরা রোমেনাকে আশ্বস্ত করে, চার হাজার টাকার বিনিময়ে ওরা বরকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেবে। মঞ্চ হয় রোমেনাদের ভাড়াবাড়ির ছাদেই। পারলার থেকে সাজিয়ে আনার পর রোমেনাকে দেখে অল্প ও অধিক বয়স্ক সবারই এক কথা, রোমেনা যে এরিম্মা পরির ডইল্লা সোন্দর, তা তাদের জানা ছিল না। তারা রোমেনার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়, কী জানি তার হবু বর তার এমন সৌন্দর্যের কদর করবে তো! নাকি রোমেনার বিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে আলোচিত একটি এক শতভাগ বেখাপ্পা মেলবন্ধনের ইতিহাসে পরিণত হবে! বিয়ে উপলক্ষে সারা দিন মাইকে গান বাজে—আরফিন রুমী, বালাম, হাবিব, পড়শী,
ন্যান্সি, মিলা এ রকম অজস্র গানে মাতোয়ারা হয়ে থাকে সারাটা পাড়া। শুনে মুন্সিপাড়ার লোকেরা বলে, পক্কলে ইন কী গান বাজার! তবু গান থামে না এবং সন্ধ্যা হয়ে আসা পর্যন্ত সব গান কমপক্ষে চারবার করে লোকেদের শোনা হয়ে যায়। এভাবেই একসময় রোমেনার বিয়ের শুভক্ষণ উপস্থিত হয়। আজকাল বিয়েবাড়ির বিয়ের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার কোনো সম্পর্ক থাকে না। বিয়ে যখন হওয়ার হবে, খাওয়াদাওয়া যথাসময়েই শুরু হয়ে যায়। চারতলা বাড়ির সুসজ্জিত ছাদে সুস্বাদ খাবারের ঘ্রাণ আর নানা রকম ফুলের ঘ্রাণ মিলে একটা নতুন রকম ঘ্রাণের উদ্ভব ঘটলেও লোকেদের অভিজ্ঞ নাসারন্ধ্র ঠিকই দুই ঘ্রাণকে দুই পাশে রেখে বরাগমনের জন্য প্রতীক্ষা করে। তারা মনে মনে অসম্ভব সুন্দরী রোমেনার জন্য যথাসম্ভব সুন্দর একটি পাত্র প্রত্যাশা করে। কারণ, অসুন্দর কোনো দিন সুন্দরের কদর বোঝে না। কাজেই সুন্দরে-অসুন্দরে মিলনও হয় না। অনেকেই খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়েও বর ও কনের জন্য নির্ধারিত মঞ্চাসনের সামনে বসে থাকে। অধিকাংশ লোকই মুন্সিপাড়ার। রাত ১০টার দিকে একটা প্রবল হইচইয়ের শব্দে সবাই চমকে উঠলে দেখা গেল চমৎকার শেরওয়ানি পরিহিত বর লোক-লস্করে ঘেরাও হয়ে মঞ্চে এসে বসেছে। শুনলে মনে হতে পারে যে বর বলে কথিত যুবকটি সহজেই ঢুকে পড়ল। তা কিন্তু নয়। রোমেনার ছোট ভাইবোন এবং চাচাতো ভাইবোনদের গেট-প্রকল্প পেরিয়ে তবেই তাকে আসতে হয়েছে। তখন তার আশপাশে থাকা যুবকদের গুঞ্জনকে মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করলে বোঝা যায়,
চার হাজার টাকার বিনিময়ে তারা বেশ শক্ত একটা বৈতরণি পেরিয়ে আসতে পেরেছে। বরের মুখে সহাস্য একটা ভাব এবং সে তার মুখটিকে রুমালে আংশিক ঢাকলেও সেই হাস্যময়তাকে গোপন করতে পারেনি। ফলে তাকে এক-আধটু গঞ্জনার শিকার হতেই হয়—হয়তো সেসব মধুর গঞ্জনাই, রোমেনারে বিয়া গরিৎ পারি পোয়া ক্যান্ খুশি দেইক্কো না! শোনা যায়, বিয়ে পড়ানোর কাজি প্রচণ্ড যানজটে পড়েছেন, তিনি এলেই বিয়েটা পড়ানো হয়ে যাবে। বর বলে কথিত ছেলেটির নাম যে ইয়াসিন, সেটা অচিরে জানা হয়ে যায়। ইয়াসিন তার জন্য নির্দিষ্ট আসনে বসে কি বসে না! তখন তারই বয়সী এক যুবক তার কানের ভেতরে প্রায় মুখ গুঁজে দিয়ে কিছু একটা বলে। শুনে ইয়াসিনের কপাল কুঁচকায়। কপালটি রুমালের আওতামুক্ত থাকায় সামনে বসে থাকা মেহমানদের নজরে সেটা না পড়ে যায় না। বিষয়টা হয়তো আরও গুরুতর কিছু। কেননা, ইয়াসিন তার হাতে ধরা রুমালের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যায় এবং তার দাঁত-মুখ-ঠোঁট প্রভৃতি শারীরিক অবস্থানের আকস্মিক ভাষা পরিবর্তন এমন উৎকট হয়ে দেখা দেয় যে লোকেরা তাতে মহা সংশয়ে পড়ে। বিয়ে করতে গেলে, পরমা সুন্দরী কনেকে বউ করে ঘরে তুলতে যাওয়া কোনো যুবকের পক্ষে সেসব খুবই বেমানান ঠেকে। মেহমানেরা ধৈর্য ধরে সবটা বিষয় খেয়াল করার চেষ্টা চালায়। ইয়াসিন যে কজন যুবক দ্বারা পরিবৃত, বোঝা যায় তারা তার সঙ্গে আসা তারই লোক। তাদের একজন ইয়াসিনকে কানে কানে যা বলে তা আর কানে কানের প্রসঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকে না। জানা যায় যে এরই মধ্যে ভেতরে একটা প্রবল কোলাহলের সৃষ্টি হয়েছে। রোমেনার ভাইবোন ও অন্য আত্মীয়রা মঞ্চে এসে অবস্থান নেওয়া বর ও তার পারিপার্শ্বিককে জানায়, যে চার হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের অর্গল-মুক্তি ঘটেছে,
মানে বর যে চার হাজার টাকা নগদ দিয়ে এসেছে বাড়ির গেটে ঢোকার সময়, সে টাকার মধ্যে দুটো এক হাজার টাকার নোট আসল নয়—জাল বা নকল। এখন হবু বর যদি এমন শুভক্ষণে বা প্রারম্ভকালেই নকলের আশ্রয় নেয়, তবে তার কাছ থেকে মুন্সিপাড়ার লোকেরা বাকি জীবন আর কী আশা করতে পারে! শুনে ইয়াসিন ও বরপক্ষ জোর প্রতিবাদ জানায়। তারা বলে যে টাকা যে জাল—এটা তারা এমন নিশ্চয়তাসহকারে বলে কী করে! তখন কনেপক্ষের লোকেরা বলে যে টাকা যে জাল সেটা অকাট্য। কারণ, টাকায় নিরাপত্তা সুতো নেই। বরের লোকেরা পাল্টা বলে যে কনেপক্ষের লোকেরাই জাল টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে এখন আরও টাকা তাদের কাছ থেকে আদায় করতে চায়। তখন কনেপক্ষের যুবক স্থানীয় সদস্যরা হবু বর ইয়াসিনকে ‘মাগির পুত’ বলে অভিহিত করে। সেটা জেনে ইয়াসিন তার হাতের রুমাল ছুড়ে ফেলে এবং সে কনেপক্ষের লোকেদের ‘খানকির পুত’ বলে অভিহিত করে। একটা অস্থিরতা, ছোটাছুটি, বিশৃঙ্খলা সহসা সবকিছুকে গ্রাস করে এমন বেলাগাম হয়ে পড়ে যে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াসিনের সঙ্গে আসা যুবকেরা তাদের সুবিন্যস্ত ও বর্ণিল পরিধেয় শার্টগুলোর হাতা গুটিয়ে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ভেতরমুখো হয়। শব্দ শুনে মঞ্চের সামনে বসা মেহমানেরা এবং অন্য সবাই বুঝতে পারে যে আক্রমণ এবং আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে সমান্তরালে। এদিকে ভেতর থেকেও একইভাবে যুবকেরা এমনভাবে ছুটে আসে যে তখন একটি পাল্টাপাল্টি ধাওয়া পর্বের আনুষ্ঠানিকতা দেখা দেয় মুহূর্তেই। বরের পক্ষে আসা যুবকেরা বরের পক্ষেই থাকে এবং কনের পক্ষের যুবকেরা যায় বরের বিপক্ষে। কিন্তু বাস্তবে এই দুই পক্ষের যুবকেরা যখন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দেখে নেওয়ার প্রাণপণ বাসনায় মুখোমুখি হয়, তখন কে কোন পক্ষের তা সহজে বোঝা যায় না। হয়তো তারা বোঝে—মানে বর ও কনেপক্ষের যুবকেরা। এসবের মধ্যে একসময় বরকেও চেনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
যুবকদের প্রায় সবাই সজ্জিত এবং তখনই পাগড়ি-পরা কাউকে অকুস্থলে দেখা না গেলে অনেকেই ‘দুলা হডে’ ‘দুলা হডে’ বলে চেঁচাতে থাকলে সবাই দেখে ভিড়ের মধ্যে পাগড়িহীন ও শেরওয়ানি পরা এক যুবক ‘আঁরারে বাটপার পাইয়োছ দে না, তোরা বাটপার, তোরার চইদ্দো গুষ্টি বাটপার, তোরা বেয়াক্কুন খানকির পুত’ বলতে বলতে অমিত বিক্রমে কোনো একদিকে ছুট লাগাতে চায়। আসীন মেহমানেরা, বয়োজ্যেষ্ঠরা, গুরুজনেরা ততক্ষণে বুঝতে পারেন যে মারাত্মক কোনো বিপর্যয় ঘটে গেছে। তারাও দারুণ চঞ্চলতাসহকারে নানা দিক থেকে ছুট লাগিয়ে এসে মঞ্চের দিকে ধাবিত হতে থাকে। এমন হইহুল্লোড়ের মধ্যে ঘটে বিদ্যুৎ-বিপর্যয়। মিনিট খানেকের ভেতর পুনরায় আলো দেখা দেয়। জেনারেটর-পরিবাহিত বিষণ্ন আলোর মধ্যে যুবকদের ভিড়ে হঠাৎ কেটে ফেলা গাছের মতো দুম করে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় কেউ একজন। তার সাদা রঙের শেরওয়ানির মধ্যাঞ্চলে লাল রঙের বিস্তৃতি দেখে অনেকেই বুঝতে পারে যে বর ও কনেপক্ষের মতান্তর-মনান্তর হয়ে আগ্রাসী চরিত্রে ফেটে পড়েছে ইয়াসিনের ওপর। লোকেদের সম্মিলিত চিৎকারে সবার সংবিৎ নাড়া খায়, ও বুক, দুলারে কনে ছুরি মাইজ্জে দে, দুলা মরি যার গই দে এ না! কিন্তু কে ইয়াসিনকে ছুরি মেরেছে তা কেউ বলতে পারে না। এমন ফুলেল সামগ্রিকতায় ছুরি এলই বা কীভাবে, সেটাও কারও পক্ষে জানা সম্ভব হয় না। তাহলে কি সেটি একটি পূর্বনির্ধারিত হত্যাকাণ্ড! তাহলে কি হত্যাকারী অনেক আগে থেকেই ছুরিকাটি তার পকেটে বয়ে নিয়ে এসেছিল! হত্যাকারীটিই বা কোন পক্ষের! জাল টাকার হেতুই কি হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ! এসব কথা ভাবতে ভাবতে মুন্সিপাড়ার লোকেরা উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে। যারা শত অপবাদ সত্ত্বেও রোমেনার সমর্থক, মুন্সিপাড়ার সেসব লোক এমন ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঘটনার পরিণামেও আশা ছাড়ে না। তারা বলে যে ভাগ্যিস যানজটে পড়ার কারণে বিয়ে পড়ানোর কাজির এসে পৌঁছাতে বিলম্ব ঘটে। তাতে আর বিয়ের মূল ঘটনা ঘটে না। নইলে তো রোমেনা বিয়ের মুহূর্তেই বিধবা হয়ে যেত। বিয়ে করতে এসে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর শিকার হওয়া যুবকটির জন্য তাদের হূদয়ে হয়তো খানিকটা করুণা জাগে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ফিরে আসে রোমেনাতেই, রোমেনার ভবিতব্যে—এরিম্মা আগুন’র ডইল্লা মাইয়ারে বিয়া গরিবার লাই পক্কল জান্ দি ফ্যালাইব!
No comments