সোনালী ব্যাংকের ‘জালিয়াত শাখা’! by অনিকা ফারজানা
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার কাছেই
ইউরেকা সালেহা প্যালেস। এই ভবনের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে বসে তৈরি করা
হয়েছে হাজার হাজার ভুয়া নথিপত্র।
এর মাধ্যমে প্রায় তিন
হাজার ভুয়া ঋণপত্রসহ জাল-জালিয়াতি করে হল-মার্কসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠান
আত্মসাৎ করে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।ওই ফ্ল্যাটের ভাড়ার
চুক্তিপত্রে টিএন ব্রাদার্সের মালিক তাসলিম হাসান ও হল-মার্ক গ্রুপের
কর্ণধার তানভীর মাহমুদের নাম থাকলেও এখানে যাতায়াত করতেন প্যারাগন গ্রুপের
মালিক সাইফুল ইসলাম রাজা ও নকশি নিট কম্পোজিটের মালিক আবদুল মালেক। অর্থ
আত্মসাতে এই অপকর্মে সঙ্গ দিয়েছিলেন সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার ওই
সময়ের ব্যবস্থাপক (বর্তমানে বরখাস্ত) আজিজুর রহমান।প্রথম আলোর অনুসন্ধানে
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের হোটেল রূপসী বাংলা শাখার ঠিক উল্টো দিকেই
(শেরাটন মোড়) নয়তলা ‘ইউরেকা সালেহা প্যালেস’-এর পাঁচতলার দক্ষিণ দিকের
বি-৪ ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দৃশ্যত সোনালী ব্যাংকের আরেকটি শাখা খোলা
হয়েছিল। এই ফ্ল্যাটে কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল সব ছিল। এখানে সোনালী
ব্যাংকের প্রচুর নথিপত্র এনে কাজ করা হতো। রাতে ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমান
সেখানে গিয়ে নথিপত্রে সই করতেন। তবে এই ‘বিশেষ শাখা’র ব্যবস্থাপনার
দায়িত্বে ছিলেন তানভীরের ভায়রা ভাই ও হল-মার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার
আহমেদ।ফ্ল্যাট ও ভবনটির মালিক আবদুর রশীদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা
গেছে, ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ব্যাংক ব্যবস্থাপক
নিজেই। অগ্রিম ভাড়া বাবদ দুই লাখ টাকাও দেন তিনি। অফিস হিসেবে ভাড়া
নেওয়া ফ্ল্যাটটির মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু
ভাড়ার চুক্তিপত্রে সই করা তাসলিম হাসান ও তানভীর মাহমুদকে কখনোই দেখেননি
বাড়ির মালিক আবদুর রশীদ। আবদুর রশীদ ১৮ আগস্ট প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ১
ফেব্রুয়ারি ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া হয় দুই বছরের জন্য। কিন্তু সেখানে
তাঁরা ছিলেন ওই বছরের জুন পর্যন্ত। তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর আগে একটি
হিসাব খোলার সুবাদে তিনি প্রায়ই সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায়
যেতেন। এ কারণে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমানের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের শুরুতে আজিজুর রহমান নির্মাণাধীন ইউরেকা সালেহা
প্যালেসের একটি ফ্ল্যাট ব্যাংকের শাখা অফিস হিসেবে ভাড়া নিতে চান। তখন
পাঁচতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে।
আবদুর
রশীদ জানান, এই কার্যালয়ে জনি ও জালাল নামের দুই কর্মচারীকে তিনি কাজ
করতে দেখেছেন। আজিজুর রহমান প্রায়ই হল-মার্ক গ্রুপের তুষারকে নিয়ে সেখানে
যাওয়া-আসা করতেন। সোনালী ব্যাংকের প্রচুর ফাইলপত্র এখানে আনা হতো। তবে
ব্যাংকের কোনো সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জালাল এখনো সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাতেই পিওন হিসেবে কাজ করছেন। যোগাযোগ করা হলে জালাল বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থাপকের নির্দেশেই তিনি ওই বাসায় রাতে থাকতেন। ওই ফ্ল্যাটে নকশির মালেক, প্যারাগনের রাজা, হল-মার্কের তানভীর ও টিএন ব্রাদার্সের তাসলিম আসা-যাওয়া করতেন। সেখানে কী ধরনের কাজ করা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ হতো। কাগজপত্র আমি কী বুঝব? আমি আজিজুর স্যারের নির্দেশে এখানে অফিস শেষে ওখানে রাতে থাকতাম।’ ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও অন্যরা তিন মাস নিয়মিত ওই ফ্ল্যাটে যাওয়া-আসা করেছেন।
হল-মার্কের তানভীর ও তাঁর স্ত্রী জেসমিনসহ মোট ২৭ জনকে আসামি করে গত বছরের ৪ অক্টোবর ১১টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের মধ্যে হল-মার্কের সাতজন ও সোনালী ব্যাংকের ২০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। রূপসী বাংলা শাখা থেকে হল-মার্ক দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে এসব মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএন ব্রাদার্স ৬৮৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, প্যারাগন ১৪৪ কোটি ৪৪ লাখ, ডিএন গ্রুপ ২৮ কোটি ৫৪ লাখ এবং নকশি নিট গ্রুপ ৬৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক আরও ২৬টি মামলা করেছে।
এ পর্যন্ত হল-মার্কের তানভীর, তুষার ও জেসমিন এবং সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আতিকুর রহমান, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান, জিএম শেখ আলতাফ হোসেন ও মো. সফিজউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাবন্দী। অন্যরা পলাতক। আর জেসমিন জামিনে রয়েছেন।
এসব বিষয়ে দুদকের তদন্ত দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতিমধ্যে ভাড়ার মূল চুক্তিপত্র দুদকে জমা দেওয়ার জন্য ইউরেকা প্যালেসের মালিক আবদুর রশীদ খানকে বলা হয়েছে।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ বলছে, গত বছর হল-মার্কের অনিয়মের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল ব্যাংকের ওই শাখা পরিদর্শন করে দেখতে পায় যে প্রায় আড়াই হাজার নথি গায়েব হয়ে গেছে। এসব নথি ভাড়া করা এই ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়েছিল বলে এখন ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জালাল এখনো সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাতেই পিওন হিসেবে কাজ করছেন। যোগাযোগ করা হলে জালাল বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থাপকের নির্দেশেই তিনি ওই বাসায় রাতে থাকতেন। ওই ফ্ল্যাটে নকশির মালেক, প্যারাগনের রাজা, হল-মার্কের তানভীর ও টিএন ব্রাদার্সের তাসলিম আসা-যাওয়া করতেন। সেখানে কী ধরনের কাজ করা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ হতো। কাগজপত্র আমি কী বুঝব? আমি আজিজুর স্যারের নির্দেশে এখানে অফিস শেষে ওখানে রাতে থাকতাম।’ ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও অন্যরা তিন মাস নিয়মিত ওই ফ্ল্যাটে যাওয়া-আসা করেছেন।
হল-মার্কের তানভীর ও তাঁর স্ত্রী জেসমিনসহ মোট ২৭ জনকে আসামি করে গত বছরের ৪ অক্টোবর ১১টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের মধ্যে হল-মার্কের সাতজন ও সোনালী ব্যাংকের ২০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। রূপসী বাংলা শাখা থেকে হল-মার্ক দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে এসব মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএন ব্রাদার্স ৬৮৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, প্যারাগন ১৪৪ কোটি ৪৪ লাখ, ডিএন গ্রুপ ২৮ কোটি ৫৪ লাখ এবং নকশি নিট গ্রুপ ৬৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক আরও ২৬টি মামলা করেছে।
এ পর্যন্ত হল-মার্কের তানভীর, তুষার ও জেসমিন এবং সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আতিকুর রহমান, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান, জিএম শেখ আলতাফ হোসেন ও মো. সফিজউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাবন্দী। অন্যরা পলাতক। আর জেসমিন জামিনে রয়েছেন।
এসব বিষয়ে দুদকের তদন্ত দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতিমধ্যে ভাড়ার মূল চুক্তিপত্র দুদকে জমা দেওয়ার জন্য ইউরেকা প্যালেসের মালিক আবদুর রশীদ খানকে বলা হয়েছে।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ বলছে, গত বছর হল-মার্কের অনিয়মের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল ব্যাংকের ওই শাখা পরিদর্শন করে দেখতে পায় যে প্রায় আড়াই হাজার নথি গায়েব হয়ে গেছে। এসব নথি ভাড়া করা এই ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়েছিল বলে এখন ধারণা করা হচ্ছে।
No comments