সিরিয়ায় যুদ্ধের ভেতর যুদ্ধ by মিজান মল্লিক
আল নুসরা ফ্রন্টের যোদ্ধা |
সিরিয়ার সরকারবিরোধী সশস্ত্র সংগঠন
ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) অন্যতম শীর্ষ নেতা কামাল হামামিকে সম্প্রতি
হত্যা করেছে জিহাদিরা। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে বিদ্রোহীদের
অভ্যন্তরে উদারপন্থী ও আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট ইসলামপন্থীদের পারস্পরিক
দ্বন্দ্ব।
এফএসএর একজন নেতার ভাইকে অপহরণ করেছে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় জিহাদি সংগঠন নুসরা ফ্রন্ট। সেই নেতা এখন নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর। তিনি এখন সিরিয়ার সীমান্তের ওপারেই তুরস্কের কোথাও অবস্থান করছেন। ভাইয়ের মুক্তিপণ হিসেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ৫০ হাজার মার্কিন ডলার গুনতে হয়েছে তাঁকে। এফএসএর এ নেতা জানেন, নুসরা ফ্রন্ট ওই টাকা দিয়ে কেবল অস্ত্র কিনবে। আর সেই অস্ত্র ব্যবহূত হবে এফএসএর বিরুদ্ধে।
এফএসএর ওই নেতা বলেন, তাঁর বাহিনীকে দুর্বল করে দিতে একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে পাঠানো হয়েছিল। ওই হামলায় ১২ জন নিহত হয়। তখন এফএসএর অধিকাংশ যোদ্ধা কোসায়েরের লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকায় হামলাকারীরা সুযোগ নিয়েছিল।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র বিরোধ চলে আসছে। উদারপন্থী ও চরমপন্থীদের এই বিরোধ প্রায়ই রক্তাক্ত রূপ নেয়। সরকারি বাহিনীর আক্রমণে বিদ্রোহীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের অভ্যন্তরীণ লড়াই থামেনি। এই লড়াইকে গৃহযুদ্ধের অভ্যন্তরে আরেকটি গৃহযুদ্ধ বলা যেতে পারে। এফএসএর জ্যেষ্ঠ নেতা কামাল হামামিকে হারানোর পর তা আরও জোরালো হয়েছে। তিনি লাতাকিয়া প্রদেশে এফএসএর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিগেড পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্রোহীদের দাবি, হামামি এফএসএর সর্বোচ্চ সামরিক পরিষদের সদস্য ছিলেন বলেই তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এফএসএর আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের এই অন্তর্কলহের কারণ কিছুটা স্বার্থগত ও কিছুটা আদর্শিক। এফএসএর কয়েকটি ব্রিগেডের যোদ্ধাদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে উভয়পক্ষই ধার্মিক। তাদের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো এফএসএর ধর্মনিরপেক্ষ অংশটি ভবিষ্যতে সিরিয়াকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু জিহাদিরা দেশে ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।
সরকারবিরোধী এক নারী মন্তব্য করেন, জিহাদিদের এই আধিপত্য গোটা বিপ্লবের জন্য ‘বিপর্যয়কর’। তিনি জানান, বন্দুকধারী কট্টর ইসলামপন্থী যোদ্ধারা নারীদের কঠোর পর্দাপ্রথা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সভা ও কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণে বাধা দিচ্ছে তারা। ওই নারী বলেন, তাঁরা এমন যোদ্ধাদের চান না।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে অনেক বিদেশি যোদ্ধা। মূলত এরাই জিহাদি। বলা হচ্ছে, এফএসএর অভ্যন্তরে যে দুর্নীতি ও অন্তর্কলহ রয়েছে তারই সুযোগ নিচ্ছে জিহাদিরা। এফএসএর লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন একজন বিদ্রোহী। এ জন্য তাঁকে দেশ থেকেই পালাতে হয়েছে।
মোট কথা, সিরিয়ায় বাশারবিরোধী গণবিক্ষোভের প্রথম দিকে যে আদর্শিক চেতনা কাজ করেছে, তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সিরীয় জনগণের অনেকে এখন মনে করছে, শুরুর সেই গণবিপ্লব কলুষিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে নতুন এক ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে। অপহরণ ও ডাকাতির মতো অপরাধের ঘটনাও সেখানে ঘটছে।
প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে সুন্নি মুসলমানদের প্রাধান্য লক্ষণীয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই বিদ্রোহীদের পক্ষ ছেড়ে যাচ্ছে। কারণ, সব দিক বিবেচনা করে তারা সরকারপক্ষকেই ‘মন্দের ভালো’ মনে করছে।
# মিজান মল্লিক, সূত্র: বিবিসি
এফএসএর একজন নেতার ভাইকে অপহরণ করেছে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় জিহাদি সংগঠন নুসরা ফ্রন্ট। সেই নেতা এখন নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর। তিনি এখন সিরিয়ার সীমান্তের ওপারেই তুরস্কের কোথাও অবস্থান করছেন। ভাইয়ের মুক্তিপণ হিসেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ৫০ হাজার মার্কিন ডলার গুনতে হয়েছে তাঁকে। এফএসএর এ নেতা জানেন, নুসরা ফ্রন্ট ওই টাকা দিয়ে কেবল অস্ত্র কিনবে। আর সেই অস্ত্র ব্যবহূত হবে এফএসএর বিরুদ্ধে।
এফএসএর ওই নেতা বলেন, তাঁর বাহিনীকে দুর্বল করে দিতে একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে পাঠানো হয়েছিল। ওই হামলায় ১২ জন নিহত হয়। তখন এফএসএর অধিকাংশ যোদ্ধা কোসায়েরের লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকায় হামলাকারীরা সুযোগ নিয়েছিল।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র বিরোধ চলে আসছে। উদারপন্থী ও চরমপন্থীদের এই বিরোধ প্রায়ই রক্তাক্ত রূপ নেয়। সরকারি বাহিনীর আক্রমণে বিদ্রোহীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের অভ্যন্তরীণ লড়াই থামেনি। এই লড়াইকে গৃহযুদ্ধের অভ্যন্তরে আরেকটি গৃহযুদ্ধ বলা যেতে পারে। এফএসএর জ্যেষ্ঠ নেতা কামাল হামামিকে হারানোর পর তা আরও জোরালো হয়েছে। তিনি লাতাকিয়া প্রদেশে এফএসএর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিগেড পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্রোহীদের দাবি, হামামি এফএসএর সর্বোচ্চ সামরিক পরিষদের সদস্য ছিলেন বলেই তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এফএসএর আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের এই অন্তর্কলহের কারণ কিছুটা স্বার্থগত ও কিছুটা আদর্শিক। এফএসএর কয়েকটি ব্রিগেডের যোদ্ধাদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে উভয়পক্ষই ধার্মিক। তাদের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো এফএসএর ধর্মনিরপেক্ষ অংশটি ভবিষ্যতে সিরিয়াকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু জিহাদিরা দেশে ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।
সরকারবিরোধী এক নারী মন্তব্য করেন, জিহাদিদের এই আধিপত্য গোটা বিপ্লবের জন্য ‘বিপর্যয়কর’। তিনি জানান, বন্দুকধারী কট্টর ইসলামপন্থী যোদ্ধারা নারীদের কঠোর পর্দাপ্রথা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সভা ও কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণে বাধা দিচ্ছে তারা। ওই নারী বলেন, তাঁরা এমন যোদ্ধাদের চান না।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে অনেক বিদেশি যোদ্ধা। মূলত এরাই জিহাদি। বলা হচ্ছে, এফএসএর অভ্যন্তরে যে দুর্নীতি ও অন্তর্কলহ রয়েছে তারই সুযোগ নিচ্ছে জিহাদিরা। এফএসএর লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন একজন বিদ্রোহী। এ জন্য তাঁকে দেশ থেকেই পালাতে হয়েছে।
মোট কথা, সিরিয়ায় বাশারবিরোধী গণবিক্ষোভের প্রথম দিকে যে আদর্শিক চেতনা কাজ করেছে, তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সিরীয় জনগণের অনেকে এখন মনে করছে, শুরুর সেই গণবিপ্লব কলুষিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে নতুন এক ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে। অপহরণ ও ডাকাতির মতো অপরাধের ঘটনাও সেখানে ঘটছে।
প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে সুন্নি মুসলমানদের প্রাধান্য লক্ষণীয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই বিদ্রোহীদের পক্ষ ছেড়ে যাচ্ছে। কারণ, সব দিক বিবেচনা করে তারা সরকারপক্ষকেই ‘মন্দের ভালো’ মনে করছে।
# মিজান মল্লিক, সূত্র: বিবিসি
No comments