জামায়াত নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি by অনুরূপ আইচ
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিষয়টি এখন সব
মহলে আলোচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এ নিয়ে
নানা মতপ্রকাশ করছেন। এ ক্ষেত্রে অনেক পর্যায়ে বিতর্কেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
আমার মতে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে
আওয়ামী লীগ। ৯৬-এর নির্বাচনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তখন যদি জামায়াত না
থাকত, তবে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পথ সুগম হতো না । আরেকটি বিষয় হচ্ছে,
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে সারাদেশে তাদের নেতা-কর্মীরা যাবে কোথায়? অনেক
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, তখন জামায়াতিরা আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে চলে
যাবে। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করবে। এ আশংকা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায় না। যে
দেশে জেএমবি কিংবা হিজবুত তাহরিরের মতো ছোটখাটো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার পর
হিমশিম খেতে হয় সরকারকে, সে দেশে বড় একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পর
পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়া হবে, তা বোধগম্য নয়। আশংকার কথা না হয় আগাম
ভাবলাম না। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে তাদের লাখ লাখ নেতা-কর্মী নিশ্চয়ই দেশত্যাগ
করবে না। তখন তাদের নিরাপদ স্থান হবে বিএনপিতে। এতে বিএনপির ভোট বাড়বে।
সংগঠন হিসেবেও শক্তিশালী হবে। তাতে আওয়ামী লীগের কী লাভ?
নিষিদ্ধ যদি করতে হয়, তবে ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করতে হবে। কিন্তু সে কথা উচ্চারণ করছে না সরকার। জামায়াত যেমন উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে, তেমন রাজনীতি ধর্মভিত্তিক অনেক দলই করে থাকে। এরকম রাজনৈতিক দল বিরোধীদলীয় জোটেও আছে আবার সরকারের মহাজোটেও রয়েছে । সবচেয়ে বড় কথা হল, বর্তমানে আওয়ামী লীগও ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে এক ধরনের উৎসাহিত করছে। তারা রেকর্ডসংখ্যক আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তারা নির্বাচনের আগে বলেছিল বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করবে। সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ বাহাত্তরের সংবিধানের লেবাসে ধর্মভিত্তিক সংবিধান পুনর্বহাল রেখেছে। এতে করে আওয়ামী লীগ বাহাত্তরের সংবিধানের জনক তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই অবজ্ঞা করেছে। এটা কি তারা একবারও ভাবেনি?
সরকার বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহালের নামে ধর্মভিত্তিক সংবিধান বহাল রাখার পর অনেক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ করেছিল। তাতে কান দেয়নি আওয়ামী লীগ। বরং অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে বলতে শুনেছি, আমরা জনগণের ধর্মীয় চেতনাতে আঘাত না দেয়ার জন্য এমনটা করেছি। আওয়ামী লীগ যদি তা-ই মনে করে, তাহলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তো তারা পদদলিত করল। পেছন ফিরে দেখা যাক। পাকিস্তান আমলে এ বঙ্গের তথা পূর্ব পাকিস্তানের ৯০ ভাগ মানুষ ছিল অশিক্ষিত। ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ ছিল ধর্মভীরু। সে সময় আদর্শের পথে অবিচল বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম থেকে মুসলিম শব্দটা ফেলে দিয়েছিলেন অনায়াসে। কারণ তিনি ক্ষমতার রাজনীতি করেননি কখনও। তিনি গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন। দেশের জন্য সপরিবারে আত্মত্যাগ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। প্রশ্ন হল, পাকিস্তান আমলে যদি বঙ্গবন্ধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পরিহার করতে পারেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ কেন তা পারে না? ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পরিহার করে বঙ্গবন্ধু এদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাহলে বর্তমান আওয়ামী লীগ কেন তেমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারল না?
তারা মনে করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের দলীয় সম্পদ। তাই তো শাহবাগের স্বতঃস্ফূর্ত গণজোয়ারে তরুণ প্রজন্ম জয় বাংলা স্লোগান দিলেও জয় বঙ্গবন্ধু বলেনি। এ দায় আওয়ামী লীগের। তারা স্বীকার করুক আর না-ই করুক। শাহবাগের গণজোয়ারের পর আওয়ামী লীগ যদি মনে করে থাকে, এ প্রজন্ম আওয়ামী লীগের পক্ষের, তাহলে ভুল হবে। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের গোপন আঁতাতের সন্দেহ থেকেই শাহবাগে গণজোয়ারের সৃাষ্ট হয়েছিল। সরকার যদি ভেবে থাকে, শুধু জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে গণজাগরণ নিজেদের পক্ষে আনবে, তবে ভুল করবে। ধর্মভিত্তিক উগ্র রাজনৈতিক দল এ দেশে আরও আছে। আরও অনেক রাজনৈতিক দলে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, চোরে চোরে মাসতুত ভাই। অর্থাৎ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা রাজাকাররা ভেতরে ভেতরে সবাই এক। এদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পতাকা তলে এলেও তারা সবাই মুখোশধারী সুবিধাভোগী। কাজেই শুধু জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেই আওয়ামী লীগ অরাজনৈতিক গণজাগরণের সুফল পাবে না। শুধু বিরোধীদলীয় জোটকেন্দ্রিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেই তারা জনগণের সুনজর পাবে না। রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে। রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হলে ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলে রাজনৈতিক সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি ভোগ করবে আওয়ামী লীগ।
অনুরূপ আইচ : লেখক ও সাংবাদিক
নিষিদ্ধ যদি করতে হয়, তবে ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করতে হবে। কিন্তু সে কথা উচ্চারণ করছে না সরকার। জামায়াত যেমন উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে, তেমন রাজনীতি ধর্মভিত্তিক অনেক দলই করে থাকে। এরকম রাজনৈতিক দল বিরোধীদলীয় জোটেও আছে আবার সরকারের মহাজোটেও রয়েছে । সবচেয়ে বড় কথা হল, বর্তমানে আওয়ামী লীগও ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে এক ধরনের উৎসাহিত করছে। তারা রেকর্ডসংখ্যক আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তারা নির্বাচনের আগে বলেছিল বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করবে। সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ বাহাত্তরের সংবিধানের লেবাসে ধর্মভিত্তিক সংবিধান পুনর্বহাল রেখেছে। এতে করে আওয়ামী লীগ বাহাত্তরের সংবিধানের জনক তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই অবজ্ঞা করেছে। এটা কি তারা একবারও ভাবেনি?
সরকার বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহালের নামে ধর্মভিত্তিক সংবিধান বহাল রাখার পর অনেক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ করেছিল। তাতে কান দেয়নি আওয়ামী লীগ। বরং অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে বলতে শুনেছি, আমরা জনগণের ধর্মীয় চেতনাতে আঘাত না দেয়ার জন্য এমনটা করেছি। আওয়ামী লীগ যদি তা-ই মনে করে, তাহলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তো তারা পদদলিত করল। পেছন ফিরে দেখা যাক। পাকিস্তান আমলে এ বঙ্গের তথা পূর্ব পাকিস্তানের ৯০ ভাগ মানুষ ছিল অশিক্ষিত। ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ ছিল ধর্মভীরু। সে সময় আদর্শের পথে অবিচল বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম থেকে মুসলিম শব্দটা ফেলে দিয়েছিলেন অনায়াসে। কারণ তিনি ক্ষমতার রাজনীতি করেননি কখনও। তিনি গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন। দেশের জন্য সপরিবারে আত্মত্যাগ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। প্রশ্ন হল, পাকিস্তান আমলে যদি বঙ্গবন্ধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পরিহার করতে পারেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ কেন তা পারে না? ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পরিহার করে বঙ্গবন্ধু এদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাহলে বর্তমান আওয়ামী লীগ কেন তেমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারল না?
তারা মনে করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের দলীয় সম্পদ। তাই তো শাহবাগের স্বতঃস্ফূর্ত গণজোয়ারে তরুণ প্রজন্ম জয় বাংলা স্লোগান দিলেও জয় বঙ্গবন্ধু বলেনি। এ দায় আওয়ামী লীগের। তারা স্বীকার করুক আর না-ই করুক। শাহবাগের গণজোয়ারের পর আওয়ামী লীগ যদি মনে করে থাকে, এ প্রজন্ম আওয়ামী লীগের পক্ষের, তাহলে ভুল হবে। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের গোপন আঁতাতের সন্দেহ থেকেই শাহবাগে গণজোয়ারের সৃাষ্ট হয়েছিল। সরকার যদি ভেবে থাকে, শুধু জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে গণজাগরণ নিজেদের পক্ষে আনবে, তবে ভুল করবে। ধর্মভিত্তিক উগ্র রাজনৈতিক দল এ দেশে আরও আছে। আরও অনেক রাজনৈতিক দলে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, চোরে চোরে মাসতুত ভাই। অর্থাৎ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা রাজাকাররা ভেতরে ভেতরে সবাই এক। এদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পতাকা তলে এলেও তারা সবাই মুখোশধারী সুবিধাভোগী। কাজেই শুধু জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেই আওয়ামী লীগ অরাজনৈতিক গণজাগরণের সুফল পাবে না। শুধু বিরোধীদলীয় জোটকেন্দ্রিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেই তারা জনগণের সুনজর পাবে না। রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে। রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হলে ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলে রাজনৈতিক সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি ভোগ করবে আওয়ামী লীগ।
অনুরূপ আইচ : লেখক ও সাংবাদিক
No comments