যেখানে ৫০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুরের রাজত্ব... by কাজী আরিফ আহমেদ
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের
সবচেয়ে জনবহুল শহর ডেট্রয়েট এখন কুকুরদের দখলে। তারা এখন সেখানে নিজেদের
নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
ধসে পড়া অর্থনীতির করাল
গ্রাসের মুখে ডেট্রয়েটের অনেক বাসিন্দা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাড়িঘর
ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন পোষা কুকুরগুলোকে। বহু
বাড়িঘর এখন জনমানবহীন অবস্থায় পড়ে আছে। চিরচেনা ডেট্রয়েটের রূপ বদলে যেতে
শুরু করেছে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, প্রাণস্পন্দনে ভরপুর ডেট্রয়েট আর
সে ডেট্রয়েট নেই। মনিব ও ঠিকানাবিহীন ৫০,০০০ কুকুর শহরটির রাস্তায় রাস্তায়
ঘুরে বেড়াচ্ছে। খালি বাড়িঘরগুলোতে নিজেদের দখল কায়েম করেছে। মানুষদের মতো
যেন পার্টিরও আয়োজন করছে। সুইমিং পুলে গোসল করছে। ডেট্রয়েটে থেকে যাওয়া
বাসিন্দাদের ঘেউ ঘেউ করে রীতিমতো ভড়কে দিচ্ছে। এই ডেট্রয়েটেই এক সময় বসবাস
ছিল ১৮ লাখ মানুষের। আর এখন সেখানে রয়েছেন মাত্র ৭ লাখ বাসিন্দা। যে
কুকুরগুলো এখন বেওয়ারিশ অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার অধিকাংশই এক সময় কোন
বাড়িতে থাকতো। আদর-যতেœর অভাব ছিল না। তাদের মনিব ছিল। কিন্তু, ভঙ্গুর
অর্থনীতিতে তারা তাদের প্রিয় পোষা কুকুরগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দিতে বাধ্য
হয়েছেন। অর্থাৎ, আত্মরক্ষা তাদের নিজেদেরই করতে হবে। রাস্তায় থাকা কুকুরের
হামলায় পোষা কুকুরের অনেকগুলোই মারা গেছে। যেগুলো বেঁচে গেছে, সেগুলো এখন
বেওয়ারিশ কুকুর দলের সদস্য। মিলেমিশে একাকার। কিছুদিন আগে ২০টি কুকুর দলের
আস্তানা পাওয়া গেছে ওই শহরের খালি বাড়িগুলোতে। এদিকে এতো বিপুল সংখ্যক
কুকুর বেওয়ারিশ হওয়ার ঘটনা পশু অধিকার সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা
মেনে নিতে পারছেন না। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন তারা। হিউমেইন
সোসাইটি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’র মুখপাত্র অ্যামান্ডা অ্যারিংটন বলছিলেন,
গত বছরের অক্টোবরে তিনি ডেট্রয়েটে গিয়েছিলেন। মহাপ্রলয়ের পর যে ধরনের থমথমে
অবস্থা থাকে, তার কাছে এ শহরটিকে ঠিক সে রকম মনে হয়েছিল। কারও কোন ব্যবসা
নেই, কর্মচাঞ্চল্য নেই, বাড়িতে মানুষ ও রাস্তায় কুকুর দৌড়ে বেড়ানো ছাড়া কোন
দৃশ্য চোখে পড়েনি অ্যামান্ডার। তিনি বলেন, যে মনিবরা তাদের কুকুরগুলোকে
ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন, তারা আশা করেছিলেন প্রতিবেশীরা তাদের পোষা
কুকুরগুলোর যত্ন নেবেন। কিন্তু, তেমনটা হয়নি। আর সেটা সম্ভবও নয়। ওই
কুকুরগুলো রাস্তায় বেরিয়েছে ও প্রাকৃতিকভাবে তাদের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এদিকে
ডেট্রয়েটে যে ৩টি পশু আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, তাতে বছরে ১৫ হাজার পশু-পাখিকে
রাখা সম্ভব। বেওয়ারিশ এ কুকুরগুলোর ভাগ্যে কি আছে, তা সময়ই বলে দেবে।
কুকুরগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার। নিঃসন্দেহে ইতিহাসের
পাতায় ঠাঁই করে নেবে তাদের এ দুর্দশা। যানবাহন তৈরির পাওয়ারহাউজ হিসেবে এক
সময় পরিচিত ছিল এই ডেট্রয়েট। কিন্তু, আজ আর এ শহরটিকে চেনার কোন উপায় নেই।
যে অবস্থা চলছে, তাতে ভবিষ্যতে ৫০ হাজার কুকুরের সংখ্যা ছাড়িয়ে ১ লাখ হলে
বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
No comments