চুলচেরা চুক চিন্তা by সাযযাদ কাদির
সামনে জাতীয় নির্বাচন। এর প্রস্তুতি
হিসেবে নানারকম সংযোজন বিয়োজন সংশোধনী এসে সংবিধান থেকে নির্বাচনী বিধি
পর্যন্ত অনেক কিছুই নিজের পছন্দ ও প্রয়োজনমতো সাজিয়ে নিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী।
ধরে নিয়েছেন, তাঁর এ ব্যবস্থা নিখুঁত।
নিñিদ্র। কোথাও ভুল চুক নেই কিছু। অতএব নির্বাচনে তাঁর জয়ের বিষয়টি
নিশ্চিত। তাই বলেছেন, ঠিকঠাক করে নেয়া এ ব্যবস্থা থেকে তিনি সরবেন না
একটুও। তাঁর ভাষায়, ‘এক চুলও নড়বো না।’ এই আপসহীন ঘোষণা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
করেছে সঙ্গে-সঙ্গে। বিরোধী দল বলেছে, ওই ছকপাতা নির্বাচনে যাবেন না তাঁরা।
যাবেন দুর্বার আন্দোলনে। সেই আন্দোলনের ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে যাবে সব কিছু। তাই
নড়াচড়া করার মতো ‘একটি চুলও থাকবে না’। এরপর চুল নিয়ে চুলোচুলি গোছের
চুলচেরা প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এঁদের
বাইরে কলামনিস্ট টকিস্ট ইনটারভিউইস্ট ফেসবুকিস্টরাও যোগ দিয়েছেন এতে।
প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসা বলেছেন, ‘চুল ফেলে দিলেই হয়। তাহলে চুল নিয়ে
এত নড়াচড়া কিংবা মাথাব্যথার কারণ থাকবে না।’ এ কথায় যে গভীর ইঙ্গিত আছে তা
বলছেন অনেকেই।
ছোটবেলায় পাড়ার কাকি-মাসীর মুখে এক ব্যক্তি সম্পর্কে শুনেছিলাম, ‘বড় পাখি ছিলেন, এখন দুগগোটুনটুনি।’ যাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছিল কথাটি - তাঁর অর্থ বিত্ত ক্ষমতা দাপট সবই ছিল এক সময়, কিন্তু নানা অপকর্ম করে খুইয়েছিলেন সবই, তখন ছিলেন প্রায় নিঃস্ব। আমাদের রাজনীতির বড় পাখিরাও ক্ষমতা হারালে একেবারেই টুনটুনি হয়ে যান। তারপর দুষ্কর্ম করে থাকলে প্রতিফল পেতে হয় সেজন্য, প্রতিহিংসারও শিকার হতে হয়। ভয়টা সেখানেই। তাই ক্ষমতায় ওঠার পর নামতে চান না আর, চিরস্থায়ী করতে চান ক্ষমতাকে। এজন্য দেশে-দেশে দেখা যায় আজীবন ক্ষমতাসীন থাকার প্রত্যাশীদের। তবে তাঁদের অনেকেই ভোগ করতে পারেন নি আজীবন ক্ষমতার স্বাদ, নানা হেনস্তার মধ্যে পড়ে চরম শোকাবহ পরিণতি করেছেন আগেভাগেই। সেকালের জুলিয়াস সিজার ও নাপোলেয়ঁ বোনাপার্ত-এর কথা জানেন সবাই, এখানে বলি সাম্প্রতিক কালের উচ্চাভিলাষী ক’জনের কথা। ইন্দোনেশিয়া’র সুকর্ন নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন ১৯৬৩ সালে, চার বছর পরে ক্ষমতাচ্যুত হন, গৃহবন্দি অবস্থায় মারা যান ১৯৭০ সালে। ঘানা’র কোয়ামি নক্রুমা-ও ক্ষমতা হারান চার বছরের মাথায়। হাইতি’র ‘বেবি ডক’ নির্বাসিত হন ১৭ বছর পর। মালাবি’র হেসটিংস বানদা আজীবন ক্ষমতাসীন থাকার অধিকার হারান ২২ বছর পর, পরের বছর পরাজিত হন নির্বাচনে। মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের জাঁ-বেদেল বোকাসা নিজেকে আজীবন সম্রাট ঘোষণা করেছিলেন ১৯৭৬ সালে, তিন বছর পরই তল্পিতল্পা গোটাতে হয়েছে তাঁকে। নিরক্ষীয় গিনি’র ফ্রানসিসকো মাসিয়াস এনগুয়েমা সাত বছরের মাথায় ক্ষমতা ও প্রাণ উভয়ই হারান। তিউনিসিয়া’র হাবিব বরগুইবা ক্ষমতাচ্যুত হন ১২ বছর পর। উগান্ডা’র ইদি আমিনকে দেশ ছেড়ে পাালতে হয় তিন বছরের মাথায়। সিসকেই-এর লেনেক্স সেবে সাত বছরও থাকতে পারেন নি গদিতে। তবে কেউ-কেউ সত্যিই ক্ষমতায় ছিলেন আমৃত্যু।
উল্লিখিত কোনও দেশই তখন পরিচিত ছিল না গণতান্ত্রিক হিসেবে। এখন অনুদারতা ও ব্যাপক দলীয়করণের ফলে গণতান্ত্রিক পরিচিতি হারাতে বসেছে আমাদের দেশও। একটিই ব্যবস্থা ছিল সরকার পরিবর্তনের। এজন্য মান-সম্মান যা-ই বা ছিল কিছুটা। কিন্তু একেও ক্রমশ বিতর্কিত, তারপর অপব্যবহৃত, শেষ বিলুপ্তই করে ফেলা হয়েছে। তারপরও যাঁরা চরম ও চূড়ান্ত ভাষায় কথা বলে থাকেন তাঁরাও পরিস্থিতির মুখে বলেছেন ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। এজন্যই দেখেছি ‘জাতীয় বেঈমান’, ‘অবসরগ্রহণ’, ‘পাগল ও শিশু’ ইত্যাদি বহু ঘোষণা।
পর্যবেক্ষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সংলাপ ও সমঝোতা না হওয়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেয়ার ঘোষণাকে দুর্ভাগ্যজনকই বলছেন। সামনে সঙ্কট ও সংঘাত আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তবে ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই দল-জোট সংঘাত ছাড়া কি সৃষ্টি করেছেন আর? তাঁরা তো বরাবরই আছেন সংঘাতের মধ্যে। আমাদেরও রেখেছেন সংঘাত-সন্ত্রস্ত করে। তাঁদের এ সংঘাত কেবল দীর্ঘায়িতই হয়ে চলছে, আর পরিণত হচ্ছে অব্যাহতভাবে অনিঃশেষ এক চিরস্থায়ী প্রক্রিয়ায়।
বাংলার মানুষ এ প্রক্রিয়া কি দেখে যাবে চিরদিন?
ছোটবেলায় পাড়ার কাকি-মাসীর মুখে এক ব্যক্তি সম্পর্কে শুনেছিলাম, ‘বড় পাখি ছিলেন, এখন দুগগোটুনটুনি।’ যাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছিল কথাটি - তাঁর অর্থ বিত্ত ক্ষমতা দাপট সবই ছিল এক সময়, কিন্তু নানা অপকর্ম করে খুইয়েছিলেন সবই, তখন ছিলেন প্রায় নিঃস্ব। আমাদের রাজনীতির বড় পাখিরাও ক্ষমতা হারালে একেবারেই টুনটুনি হয়ে যান। তারপর দুষ্কর্ম করে থাকলে প্রতিফল পেতে হয় সেজন্য, প্রতিহিংসারও শিকার হতে হয়। ভয়টা সেখানেই। তাই ক্ষমতায় ওঠার পর নামতে চান না আর, চিরস্থায়ী করতে চান ক্ষমতাকে। এজন্য দেশে-দেশে দেখা যায় আজীবন ক্ষমতাসীন থাকার প্রত্যাশীদের। তবে তাঁদের অনেকেই ভোগ করতে পারেন নি আজীবন ক্ষমতার স্বাদ, নানা হেনস্তার মধ্যে পড়ে চরম শোকাবহ পরিণতি করেছেন আগেভাগেই। সেকালের জুলিয়াস সিজার ও নাপোলেয়ঁ বোনাপার্ত-এর কথা জানেন সবাই, এখানে বলি সাম্প্রতিক কালের উচ্চাভিলাষী ক’জনের কথা। ইন্দোনেশিয়া’র সুকর্ন নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন ১৯৬৩ সালে, চার বছর পরে ক্ষমতাচ্যুত হন, গৃহবন্দি অবস্থায় মারা যান ১৯৭০ সালে। ঘানা’র কোয়ামি নক্রুমা-ও ক্ষমতা হারান চার বছরের মাথায়। হাইতি’র ‘বেবি ডক’ নির্বাসিত হন ১৭ বছর পর। মালাবি’র হেসটিংস বানদা আজীবন ক্ষমতাসীন থাকার অধিকার হারান ২২ বছর পর, পরের বছর পরাজিত হন নির্বাচনে। মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের জাঁ-বেদেল বোকাসা নিজেকে আজীবন সম্রাট ঘোষণা করেছিলেন ১৯৭৬ সালে, তিন বছর পরই তল্পিতল্পা গোটাতে হয়েছে তাঁকে। নিরক্ষীয় গিনি’র ফ্রানসিসকো মাসিয়াস এনগুয়েমা সাত বছরের মাথায় ক্ষমতা ও প্রাণ উভয়ই হারান। তিউনিসিয়া’র হাবিব বরগুইবা ক্ষমতাচ্যুত হন ১২ বছর পর। উগান্ডা’র ইদি আমিনকে দেশ ছেড়ে পাালতে হয় তিন বছরের মাথায়। সিসকেই-এর লেনেক্স সেবে সাত বছরও থাকতে পারেন নি গদিতে। তবে কেউ-কেউ সত্যিই ক্ষমতায় ছিলেন আমৃত্যু।
উল্লিখিত কোনও দেশই তখন পরিচিত ছিল না গণতান্ত্রিক হিসেবে। এখন অনুদারতা ও ব্যাপক দলীয়করণের ফলে গণতান্ত্রিক পরিচিতি হারাতে বসেছে আমাদের দেশও। একটিই ব্যবস্থা ছিল সরকার পরিবর্তনের। এজন্য মান-সম্মান যা-ই বা ছিল কিছুটা। কিন্তু একেও ক্রমশ বিতর্কিত, তারপর অপব্যবহৃত, শেষ বিলুপ্তই করে ফেলা হয়েছে। তারপরও যাঁরা চরম ও চূড়ান্ত ভাষায় কথা বলে থাকেন তাঁরাও পরিস্থিতির মুখে বলেছেন ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। এজন্যই দেখেছি ‘জাতীয় বেঈমান’, ‘অবসরগ্রহণ’, ‘পাগল ও শিশু’ ইত্যাদি বহু ঘোষণা।
পর্যবেক্ষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সংলাপ ও সমঝোতা না হওয়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেয়ার ঘোষণাকে দুর্ভাগ্যজনকই বলছেন। সামনে সঙ্কট ও সংঘাত আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তবে ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই দল-জোট সংঘাত ছাড়া কি সৃষ্টি করেছেন আর? তাঁরা তো বরাবরই আছেন সংঘাতের মধ্যে। আমাদেরও রেখেছেন সংঘাত-সন্ত্রস্ত করে। তাঁদের এ সংঘাত কেবল দীর্ঘায়িতই হয়ে চলছে, আর পরিণত হচ্ছে অব্যাহতভাবে অনিঃশেষ এক চিরস্থায়ী প্রক্রিয়ায়।
বাংলার মানুষ এ প্রক্রিয়া কি দেখে যাবে চিরদিন?
No comments